দ্বিতীয় দিনে প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন নোয়াখালী-৩ আসনে আওয়ামী লীগের মামুনুর রশীদ কিরণ, সিলেট-২ আসনে গণফোরামের মোকাব্বির খান, রাজশাহী-১ আসনে চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি।
Published : 11 Dec 2023, 10:34 PM
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে আপিলের দ্বিতীয় দিন প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন আরও ৫১ জন। এদেরও বেশিরভাগ স্বতন্ত্র হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন।
সোমবার দিনভর আপিল শেষে নির্বাচন কমিশন ২৬ জন স্বতন্ত্র প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করেছে। বাকিরা দলীয় প্রার্থী।
সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের সভাপতিত্বে শুনানি হয়। দিনভর ৯৯টি আপিল আবেদনের শুনানি হয়।
রোববার প্রথম দিনের শুনানিতে ৫৬ জনের প্রার্থিতা ফিরিয়ে দেওয়া হয়, তাদের মধ্যে স্বতন্ত্র হিসেবে মনোনয়নত্র জমা দিয়েছিলেন ৩৩ জন।
দুদিনে সব মিলিয়ে ১০৭ জন প্রার্থিতা ফিরে পেলেন। এদের মধ্যে ৫৯ জনই স্বতন্ত্র প্রার্থী।
দ্বিতীয় দিন বৈধ ঘোষণা হওয়া দলীয় প্রার্থীদের মধ্যে আছেন নোয়াখালী-৩ আসনে আওয়ামী লীগের মামুনুর রশীদ কিরণ, সিলেট-২ আসনে গণফোরামের মোকাব্বির খান।
মোকাব্বির খান সাংবাদিকদের বলেন, “জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটেছে। নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। এই প্রতিশ্রুতির ব্যত্যয় ঘটলে আবার আমরা জনগণের সামনে হাজির হব।”
দলীয় মনোনয়ন নিয়ে জটিলতায় বাছাইয়ে বাদ পড়েছিলেন গণফোরামের এই প্রার্থী।
স্বতন্ত্রদের মধ্যে এদিন যারা প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন, তাদের মধ্যে আলোচিত হলেন রাজশাহী-১ আসনে চিত্রনায়িকা শারমিন আক্তার নিপা মাহিয়া (মাহিয়া মাহি)।
দারুণ খুশি মাহি বলেন, “টেনশনে ছিলাম যে ন্যায়বিচার পাব কি না। আমি আমার জায়গা থেকে সৎ ছিলাম। আজকে সেটারই প্রতিদান পেয়েছি। আমি শতভাগ বিশ্বাস করতে শুরু করেছি যে, এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হতে যাচ্ছে।”
>> সোমবার ৯৯টি আপিল শুনানি নির্ধারিত ছিল। এর মধ্যে একটি আসনের আপিলকারী শুনানিতে অনুপস্থিত ছিলেন।
>> ৬টি আপিল শুনানি হলেও আদেশ স্থগিত রয়েছে।
>> ৫১টি আপিল গৃহীত হয়, যারা প্রার্থিতা ফিরে পান।
>> ৪১টি আপিল আবেদন নাকচ হয়; রিটার্নিং অফিসারের সিদ্ধান্তই বহাল থাকল।
>> কুমিল্লা-২ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহ আলম খন্দকার আপিল করলেও শুনানিতে আসেননি।
প্রার্থিতা ফিরে পেলেন যারা
আওয়ামী লীগ ও গণফোরাম ছাড়া অন্য যে দলীয় প্রার্থীর আপিল গ্রহণ করা হয়েছে, তারা হলেন:
>> জাতীয় পার্টির বাগেরহাট-২ আসনের হাজরা সহিদুল ইসলাম, ঝালকাঠী-২ আসনের মো. নাসির উদ্দিন, চাঁদপুর-৪ আসনের সাজ্জাদ রশিদ এবং নাটোর-৩ আসনের মো. আনিসুর রহমান।
>> সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের মুন্সীগঞ্জ-২ আসনের নূরে আলম সিদ্দিক, কিশোরগঞ্জ-৬ আসনের মোহাম্মদ আইয়ুব হোসেন ও ঢাকা-৫ আসনের নুরুল আমিন; তৃণমূল বিএনপির ঢাকা-১৪ আসনের মো. নাজমুল ইসলাম, রাজবাড়ী-২ আসনের এসএম ফজলুল হক, বাগেরহাট-২ মরিয়ম সুলতানা ও সিরাজগঞ্জ-২ মো. সোহেল রানা এবং বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির ঢাকা-১৯ আসনের মো. জুলহাস।
>> বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টের (বিএনএফ) ঢাকা-১২ আসনের মো. আতিকুর রহমান নাজিম ও জামালপুর-৪ আসনের তারিখ মাহদী; গণতন্ত্রী পার্টির নোয়াখালী-৪ আসনের সারওয়ার ই দীন, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) ঢাকা-১০ আসনের কেএম শামসুল আলম।
>>জাকের পার্টির খুলনা-১ আসনের মো. আজিজুর রহমান, বিএনএম এর গাইবান্ধা-১ আসনের মো. মোস্তফা মহসিন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদের গাইবান্ধা-৩ আসনের এসএম খাদেমুল ইসলাম খুদি ও মো. মোয়াজ্জেম হোসেন, কুমিল্লা-৫ আসনের আলীমুল ইহছান এবং বাংলাদেশ কংগ্রেসের কুমিল্লা-৮ আসনের মো. হান্নান মিয়া।
স্বতন্ত্র যারা
রংপুর বিভাগের মধ্যে নীলফামারী-৪ আসেনের মোহাম্মদ সিদ্দিকুর আলম; রংপুর-২ আসনের মোছা. সুমনা আক্তার ও গাইবান্ধা-২ মোছা. মাছুমা আখতারের মনোনয়ন বৈধ ঘোষণা হয়েছে।
রাজশাহী বিভাগে মাহিয়া মাহি ছাড়াও বৈধ ঘোষণা হয়েছে নাটোর-৪ আসনের সুজন আহমেদ এবং রাজশাহী-৪ আসনের মো. বাবুল হোসেনের মনোনয়নপত্র।
খুলনা বিভাগে কুষ্টিয়া-১ আসনের মো. নাজমুল হুদা; কুষ্টিয়া-২ আসনের ইফতেখার মাহমুদ; কুষ্টিয়া-৪ আসনের আবদুর রউফ, বাগেরহাট-২ আসনের এসএম আজমল, বাগেরহাট-৪ আসনের মো. জামিল হোসেন, খুলনা-৪ মো. রেজভী মিয়া ও খুলনা-৬ জিএম মাহবুবুল আলমের মনোনয়ন বৈধ ঘোষণা হয়েছে।
আপিল শুনানি: দ্বিতীয় দিনে প্রার্থিতা ফিরে পেলেন অর্ধশতাধিক
প্রথম দিনের শুনানিতে টিকলেন, বাদ পড়লেন যেসব প্রার্থী
ঢাকা বিভাগে রাজবাড়ী-১ আসনের মো. ইমদাদুল হক বিশ্বাস, মুন্সীগঞ্জ-১ আসনের গোলাম সরোয়ার কবীর, কিশোরগঞ্জ-৩ আসনের মো. গোলাম কবির ভূঞা, গাজীপুর-৫ আসনের মো. আমজাদ হোসেন, ঢাকা-৩ আসনের মো. আলী রেজা এবং ঢাকা-৬ আসনের ফারহানা সাঈদ প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন।
ময়মনসিংহ বিভাগে জামালপুর-২ আসনের শাজাহান আলী মণ্ডল ও ময়মনসিংহ-১১ মোহাম্মদ আবদুল ওয়াহেদের আপিল গ্রহণ করে মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা হয়েছে।
সিলেট বিভাগে সুনামগঞ্জ-৪ মো. মোবারক হোসেনও বৈধ প্রার্থী ঘোষিত হয়েছেন।
চট্টগ্রাম বিভাগে কুমিল্লা-২ আসনের মো. আবদুল মজিদ, নোয়াখালী-১ আসনের খন্দকার আল আমিন, চট্টগ্রাম-৬ আসনের শফিউল আজম এবং চট্টগ্রাম-১০ আসনের ফরিদ মাহমুদ নির্বাচনে অংশ নিতে বৈধ প্রার্থী ঘোষিত হয়েছেন।
সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়নি যাদের বিষয়ে
মানিকগঞ্জ-১ ও ৩ আসনের মোহা. জহিরুল আলম রুবেল, রাজশাহী-৫ আসনের বিএসপি মো. আলতাফ হোসেন মোল্লা, বরগুনা-২ আসনে জাতীয় পার্টির মিজানুর রহমানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত এখনও জানানো হয়নি।
যশোর-৪ আসনের রনজিত কুমার রায় এবং ময়মনসিংহ-৮ আসনের ফখরুল ইমাম এর আপিল শুনানির জন্য সোমবার নির্ধারিত ছিল। এ দুটির ওপর আগামী ১৩ ডিসেম্বর শুনা হবে।
রোববার শুরু হওয়া এ আপিল পর্যায়ক্রমে ছয় দিন চলবে। কমিশনের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কোনো ব্যক্তি চাইলে উচ্চ আদালতে যেতে পারবেন।
প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ১৭ ডিসেম্বর। এরপর চূড়ান্ত প্রার্থীর সংখ্যা জানা যাবে।
রিটার্নিং কর্মকর্তারা প্রতীক বরাদ্দ করবেন ১৮ ডিসেম্বর। এরপর প্রচারে নামবেন প্রার্থীরা, যা চলবে ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত। ভোট হবে ৭ জানুয়ারি।