প্রার্থিতা ফিরে পাওয়াদের মধ্যে স্বতন্ত্রই বেশি; নৌকা চেয়ে পাননি পরে স্বতন্ত্র দাঁড়িয়েছেন এমন প্রার্থীও আছেন।
Published : 10 Dec 2023, 10:59 PM
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রার্থী বাছাইয়ে বাদ পড়াদের বেশির ভাগই করেছেন আপিল; রোববার সেসব আপিল শুনানির প্রথম দিনে টিকে গেছেন ৫৬ জন।
মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে প্রার্থীদের অনেকে ভোটের মাঠে লড়াইয়ে নিজের অবস্থান জোড় গলায় জানান দিয়েছেন। ইঙ্গিত দিচ্ছেন বিজয়েরও।
প্রার্থিতা ফিরে পাওয়াদের মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থীই বেশি। এছাড়া আওয়ামী লীগের একজন আর জাতীয় পার্টির রয়েছেন চারজন।
প্রার্থিতা ফিরে পাওয়াদের তালিকায় কিশোরগঞ্জ-৩ আসনের মো. নাসিরুল ইসলাম খান, চট্টগ্রাম-৮ আসনের প্রার্থী আবদুচ ছালাম, নেত্রকোণা-৫ আসনের অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন, বগুড়া-৪ আসনের হিরো আলম, পাবনা-২ আসনের ডলি সায়ন্তনী রয়েছেন।
প্রার্থিতা ফিরে পেয়েই নাসিরুল খান বলেন, “চুন্নুর (জাতীয় পর্টির প্রার্থী মুজিবুল হক চুন্নু) সঙ্গে মাঠে খেলা হবে। চুন্নুর জামানত বাজেয়াপ্ত হবে। ১৯৭০ সাল থেকেই কিশোরগঞ্জ-৩ আওয়ামী লীগের আসন।”
আওয়ামী লীগের প্রার্থী নাসিরুল ইসলাম খানের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছিল মামলা সংক্রান্ত দলিল দিতে না পারায়। একই আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মো. মুজিবুল হক চুন্নুকে আটকাতে তার বিরুদ্ধেও আপিল করেছেন তিনি।
মুন্সীগঞ্জ-১ আসনে বিকল্প ধারার প্রার্থী মাহী বি চৌধুরী প্রার্থিতা ফিরে পাওয়ার পর সাংবাদিকদের বলেন, “বিক্রমপুরের (মুন্সীগঞ্জ) মানুষ শান্তির প্রতীক কুলা মার্কায় একত্রিত হবে। আমরা বলছি রাজনৈতিক চিটা, ময়লা, ধুলা, উড়িয়ে দেবে কুলা। শান্তির রাজনীতির পক্ষে বিক্রমপুরের মানুষ আবারও বিজয় সুনিশ্চিত করবে ইনশাল্লাহ।”
বগুড়া-৪ আসনের প্রার্থী হিরো আলম প্রার্থিতা ফিরে পেয়ে শেষ পর্যন্ত ভোটের মাঠে থাকার ঘোষণা দিয়েছেন। আর ‘রাজনীতিতে নতুন’ ডলি সায়ন্তনী চেয়েছেন দোয়া।
রোববার নির্বাচন কমিশনের নির্বাচন ভবনের অডিটরিয়ামে প্রার্থীদের আপিল শুনানি চলে সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত। প্রথম দিনে ৯৪ জনের শুনানি শেষে ৫৬ জন প্রার্থীতা ফিরে পান বলে জানান ইসির যুগ্ম সচিব মাহবুবার রহমান সরকার।
এছাড়া ৩২ জনের প্রার্থিতা নাকচ হয়েছে এবং ছয়টিই আবেদন সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রাখা হয়েছে।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ৩০ নভেম্বর নির্ধারিত সময়ে ৩০০ আসনে মনোনয়নপত্র জমা হয় ২ হাজার ৭১৬টি। এর মধ্যে বাছাইয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তারা বাতিল করেন ৭৩১ জনের প্রার্থীতা। বৈধ হয়েছে এক হাজার ৯৮৫টি মনোনয়নপত্র। বাছাইয়ে বাদ পড়াদের মধ্যে রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ৫৬১টি আপিল জমা পড়ে কমিশনে।
রোববার শুরু হওয়া এ আপিল পর্যায়ক্রমে ছয় দিন চলবে। কমিশনের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কোনো ব্যক্তি চাইলে যেতে পারবেন উচ্চ আদালতেও।
নির্বাচনে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ১৭ ডিসেম্বর। এরপর চূড়ান্ত প্রার্থীর সংখ্যা জানা যাবে।
রিটার্নিং কর্মকর্তারা প্রতীক বরাদ্দ করবেন ১৮ ডিসেম্বর। এরপর প্রচারে নামবেন প্রার্থীরা, যা চলবে ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত। আর ভোট হবে ৭ জানুয়ারি।
প্রথম দিনে যারা টিকলেন
প্রার্থিতা ফেরত পাওয়া স্বতন্ত্র প্রার্থীর হলেন- মো. ইউনুস ইসলাম তালুকদার (টাঙ্গাইল ২), এস. এম হাবিবুর রহমান (যশোর-২), মো. জিয়াউল হক জিয়া (জামালপুর-২); মোহাম্মদ আরিফুর রহমান (ফরিদপুর- ১), মোহাম্মদ কবির মিয়া (গোপালগঞ্জ-১) আবদুচ ছালাম (চট্টগ্রাম ৮), মো. খলিলুর রহমান (বরগুনা ১), মোখলেসুর রহমান (মেহেরপুর-২), বিশ্বনাথ সরকার (রংপুর-২), মাহমুদা বেগম (ফরিদপুর-১), মোহাম্মদ শাহজাহান (চট্টগ্রাম-২), আব্দুল মোতালেব (চট্টগ্রাম-১৫), মো. কামরুল হাসান (ঢাকা-৫), মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন (চট্টগ্রাম-১), মোহিত কুমার নাথ (যশোর-৩), মো. আজিজুল ইসলাম (যশোর-৬), মোহাম্মদ শামসুল আলম (বরিশাল-৬), সাজ্জাদ হোসেন (কুমিল্লা-৫), এ ম জাহের (কুমিল্লা-৫), মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম (বরগুনা-১), সৈয়দ নজরুল ইসলাম (চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১), শাহ সারোয়ার কবীর (গাইবান্ধা-২), গোলাম মোহাম্মদ মোস্তফা (শরীয়তপুর-১), মো. জয়নাল আবেদীন (নীলফামারী-২), ফারজানা রাব্বী রুবলী (গাইবান্ধা-৫), সৈয়দ সাফায়েতুল ইসলাম (কিশোরগঞ্জ-১), মো. আনোয়ার হোসেন (নেত্রকোণা- ৫), আবুল কাশেম মুহাম্মদ ফখরুল ইসলাম (ঝালকাঠি-১), রাফিউর রহমান খান ইউসুফজাই (টাঙ্গাইল-৭), খালেদ শওকত আলী (শরীয়তপুর-২), মো. হালিমুল হক মীরু (সিরাজগঞ্জ-৬) এবং মো. আফজাল হোসেন (বগুড়া-৩)।
জাতীয় পার্টি: এটিএম মঞ্জুরুল ইসলাম, তালেবুজ্জামান (নোয়াখালী-২), মো. আক্তারুজ্জামান (যশোর ১), মো. শফিকুল ইসলাম মধু (খুলনা ৬), এম এম নিয়াজ উদ্দিন (গাজীপুর-১)।
আওয়ামী লীগ: মো. নাসিরুল ইসলাম খান (কিশোরগঞ্জ ৩)।
তৃণমূল বিএনপি: শেখ হাবিবুর রহমান (খুলনা ৪), মো. গোলাম মোস্তাফা (জামালপুর-১)।
বিএসপি: মো. মিনহাজ উদ্দিন (ঢাকা-২০), ইউসুফ আলী সুমন (মাদারীপুর-২), এ বি এম জিয়া উদ্দিন (ময়মনসিংহ-১১)।
বিএনএফ: মমতাজ সুলতানা আহমেদ (মুন্সীগঞ্জ-৩), মো. বাচ্ছু শেখ (মুন্সীগঞ্জ-২)।
জাকের পার্টি: মো. মহিদুল ইসলাম (যশোর-৩), এ টি এম মঞ্জুরুল ইসলাম (কুমিল্লা-২)।
বিকল্পধারা: মাহী বদরুদ্দোজা চৌধুরী (মুন্সীগঞ্জ-১)।
বাংলাদেশ কংগ্রেস: মো. দেলাব্বর হোসেন (লালমনিরহাট-২), মো. আব্দুল হামিদ (কুড়িগ্রাম-৪), মো. আশরাফুল হোসেন আলম ওরফে হিরো আলম (বগুড়া-৪), মো. আজহারুল ইসলাম খান (নেত্রকোণা-২)।
বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট: মো. জাফর ইকবাল নান্টু (ঢাকা-১৩)।
বিএনএম: শেখ নুরুজ্জামান (যশোর-৫), ডলি সায়ন্তনী (পাবনা-২)।
আদেশ স্থগিত রয়েছে
খোরশেদ আলম খুশু (জাতীয় পার্টি)- ঢাকা-১২; মহা. ফিরোজ আল মামুন (স্বতন্ত্র) কুষ্টিয়া-১; মো. আব্দুর রব (তৃণমূল বিএনপি)- সিলেট-২; সালাহ উদ্দিন আহমেদ (আওয়ামী লীগ)- কক্সবাজার-১; মো. শাহীদ আলম (জাতীয় পার্টি)- খুলনা-৫; জাহিদ ফারুক (আওয়ামী লীগ)- বরিশাল-৫; এম এ আউয়াল (তৃণমূল বিএনপি)- লক্ষ্মীপুর-১ ও মুহিবুর রহমান (স্বতন্ত্র)- সিলেট-২।
টিকলেন না যারা
২৩টি আসনে ২২ জন স্বতন্ত্র প্রার্থীর আপিল নাকচ হয়েছে।
এরা হলেন: খন্দকার আহসান হাবীব (টাঙ্গাইল-৫), সৈয়দ মাহমুদুল ইলাহ (টাঙ্গাইল ৬), সোহানা তাহমিনা (মুন্সীগঞ্জ-২); মোহাম্মদ ইমরান (চট্টগ্রাম-৪), মোহাম্মদ আবুল হোসেন (ময়মনসিংহ-১০), এস এম মোর্ত্তজা রশিদী দারা (খুলনা-৪), হোসাইন মোহাম্মদ ইসলাম (যশোর-৬), কাজী এটিএম আনিছুর রহমান বুলবুল (টাঙ্গাইল-৬), মুহাম্মদ শাহজাহান চৌধুরী (চট্টগ্রাম-৫), স্বপন কুমার সরকার (চট্টগ্রাম-৫), সুব্রত চন্দ্র সরকার (নেত্রকোণা-২), মো. আসাফুদ্দৌলা (বগুড়া-৭), মো. মোস্তাফিজুর রহমান মিলু (বগুড়া-৭), জুলফিকার আলী (বগুড়া-৭), মো. আতাউর রহমান (বগুড়া-৭), নজরুল ইসলাম মিলন (বগুড়া-৭), আনোয়ারুল কবির ওরফে রিন্টু আনোয়ার (ফেনী-৩), মো. আ. মান্নান মুসল্লী (রাজবাড়ী-১ ও ২), এস. এম আরিফুল ইসলাম (ঢাকা-৫), শফী আহমেদ (নেত্রকোণা-৪), নাহিদ ইসলাম (নওগাঁ-৬) এবং মো. নুরুল বশর (কক্সবাজার-৪)।
জাকের পার্টির ছয় জন আপিলেও প্রার্থিতা ফিরে পাননি। এরা হলেন: মো. আব্দুল হালিম মন্ডল (জামালপুর-২), মো. ছমীর উদ্দিন (নেত্রকোণা-১), মো. হাবিবুর রহমান (যশোর-৫), টিপু সুলতান (কুমিল্লা-৯), জাহাঙ্গীর আলম (কুমিল্লা-১০) ও মো. নিজাম উদ্দিন নাছির (চট্টগ্রাম-৩)।
এছাড়া বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির মো. হানিফ দিহিদার (ঢাকা-৬) ও ওমর খৈয়াম নয়ন (গোপালগঞ্জ-২), বিএনএফের জিল্লুর রহমান (রংপুর-২) এবং বিএসপির আফাজ উদ্দিনের (নারায়ণগঞ্জ-১) আপিল প্রত্যাখ্যাত হয়েছে।
প্রথম দিনের শুনানিতে প্রার্থিতা ফিরে পেলেন যারা, বাদ যাদের
আরও পড়ুন
ভোটের প্রার্থিতা নিয়ে ইসিতে ৫৬১ আপিল
প্রার্থিতা ফিরে পেয়ে দোয়া চাইলেন ডলি সায়ন্তনী
ভোটে থাকব শেষ পর্যন্ত, প্রার্থিতা ফিরে পেয়ে হিরো আলম
প্রার্থিতা ফিরে পেলেন অধ্যাপক আনোয়ার
চুন্নর সঙ্গে ‘খেলবেন’ নাসিরুল, রাজনীতির চিটা ‘উড়িয়ে দেবেন’ মাহী