প্রার্থীরা প্রতীক পাবেন ১৮ ডিসেম্বর। এরপর থেকে ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত ১৯ দিন ভোটের প্রচার চালানোর সুযোগ পাবেন প্রার্থীরা।
Published : 11 Dec 2023, 12:28 AM
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রচার শুরু হতে দিন সাতেক বাকি থাকলেও ঢাকার অলিগলি ছেয়েছে ‘ভোট প্রার্থনার’ প্রচার সামগ্রীতে।
ভোটের আগে সব ধরনের প্রচার বন্ধ রাখতে নির্বাচন কমিশন নির্দেশনা দিলেও রাজধানীর চিত্র যে তা নয়, তা রাস্তায় বের হলেই দেখা যাচ্ছে। স্থানীয় সরকারের তরফেও প্রচার সামগ্রী অপসারণের কথা বলা হলেও পুরো ঢাকাতেই নির্বাচনি প্রচার সামগ্রী চোখে পড়ছে।
নির্বাচন সামনে রেখে গত কয়েক মাস ধরেই পোস্টার-ব্যানার দিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছিলেন ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী ও তার সমর্থকরা। এরইমধ্যে গত ১৫ নভেম্বর তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন।
তার দুই দিন বাদে সাংবিধানিক সংস্থাটি প্রার্থী বা সম্ভাব্য প্রার্থীর পোস্টার, ব্যানারসহ নির্বাচনি প্রচারে ব্যবহৃত সব উপকরণ সরানোর ব্যবস্থা নিতে স্থানীয় সরকার বিভাগকে চিঠি দেয়।
ওই চিঠিতে বলা হয়, “সম্ভাব্য প্রার্থীদের পোস্টার, ব্যানার, দেয়াল লিখন, বিলবোর্ড, গেইট, তোরণ বা ঘের, প্যান্ডেল ও আলোকসজ্জা ইত্যাদি প্রচার সামগ্রী ও নির্বাচনি ক্যাম্প থাকলে সেগুলো অপসারণ করার জন্য নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত দিয়েছে।”
তফসিল অনুযায়ী, আগামী ১৭ ডিসেম্বর প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সময় শেষ হবে। পরদিন প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত মোট ১৯ দিন ভোটের প্রচার চালানোর সুযোগ পাবেন প্রার্থীরা।
তবে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় আবাসিক, বাণিজ্যিক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দেয়ালে ইতোমধ্যে নির্বাচনি পোস্টার সাঁটানো হয়েছে, রাস্তায় টানানো হয়েছে ব্যানার।
মনোনয়ন প্রত্যাশীদের আগের পোস্টার-ব্যানার যেমন আছে, তেমনই আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া অনেক প্রার্থী সেই কাতারে শামিল হয়েছেন।
গত দুদিন রাজধানীতে ঘুরে সবচেয়ে বেশি পোস্টার-ব্যানার দেখা গেছে ঢাকা-৭ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোহাম্মদ সোলায়মান সেলিমের।
বাহাদুর শাহ পার্ক, জগন্নাথ কলেজ, আদালত চত্বরের দেয়াল, নয়াবাজার মোড়, বংশাল, নাজিরাবাজার, সিদ্দিক বাজারসহ ওই আসনের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি ভবনের দেয়াল ভরে গেছে নৌকার পোস্টারে। বেশ কিছু জায়গায় সড়কের ওপর দেওয়া হয়েছে ব্যানার।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে মোহাম্মদ সোলায়মান সেলিমের ব্যক্তিগত সহকারী কাজী সম্রাটের মাধ্যমে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তবে সোলায়মানের বক্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি।
রায় সাহেব বাজার এলাকায় ঢাকা-৬ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মোহাম্মদ সাঈদ খোকনের পক্ষে নৌকা মার্কায় ভোট চেয়ে ব্যানার দেখা গেল, যেখানে লেখা ‘৪২ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগ’।
সাঈদ খোকন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমার জানা মতে, কোথাও কোনো পোস্টার-ব্যানার টানানো হয়নি। কারা টানিয়েছে তাও বলতে পারছি না।"
মিরপুরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ঢাকা-১৫ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী গাজী মেজবাউল হোসেন সাচ্চু, এম সাইফুল্লাহ সাইফুল, ঢাকা-১৭ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী সিদ্দিকুর রহমানের পোস্টার দেখা গেছে।
অভিনেতা সিদ্দিকুর বলেন, ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনের সময় নির্বাচনি এলাকার বিভিন্ন স্থানে তার পোস্টার রয়েছে।
“এবার দলীয় মনোনয়নও পাইনি, স্বতন্ত্র প্রার্থীও হইনি। এ ধরনের পোস্টার সরানোর বিষয়ে আমার কাছে কেউ কোনো নোটিসও দেয়নি। এখন যেহেতু প্রার্থী নই, সেক্ষেত্রে এসব পোস্টার অপসারণের বিষয়টি আমার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না আশা করি।”
মিরপুর ডেন্টাল কলেজ থেকে ১০ নম্বর গোলচত্বর পর্যন্ত যেতে রাস্তার দুপাশের বিভিন্ন দেয়ালে নৌকা মার্কায় ভোট চেয়ে পোস্টার লাগানো হয়েছে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ১৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. ইসমাঈল মোল্লা এসব পোস্টার লাগিয়েছেন।
সিটি করপোরেশন দেয়ালে পোস্টার লাগানোর বিষয়ে নিরুৎসাহিত করে থাকে, সেখানে একজন কাউন্সিলর হয়ে বিভিন্ন দেয়ালে শতশত পোস্টার লাগিয়েছেন কেন- এমন প্রশ্নের উত্তরে কাউন্সিলর ইসমাঈল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এটি একটি বাজে উদাহরণ হয়েছে।
“আমি এগুলো তুলে ফেলতেছি। এত বেশি পোস্টার লাগাইছি যে তুলে শেষ করতে পারছি না। সময় লাগছে।”
এই এলাকার বিভিন্ন দেয়ালে ঢাকা-১৫ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী এম সাইফুল্লাহ সাইফুলের পোস্টার দেখা গেছে। মিরপুর আদর্শ স্কুলের দেয়ালে বিশাল আকারের ব্যানার টানানো হয়েছে ঢাকা-১৫ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী কামাল আহমেদ মজুমদারের মনোনয়ন চেয়ে।
বাড্ডার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে ঢাকা-১১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এ কে এম রহমত উল্লাহ পোস্টার। এছাড়া তার ছেলে হেদায়েত উল্লাহ রণ, আওয়ামী লীগের কৃষি ও সমবায় বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য আবু তৌহিদ এবং জাতীয় পার্টির মনোনয়ন প্রত্যাশী শামীম আহমেদ রিজভীর কিছু পোস্টার দেখা গেছে।
শাহজাহানপুর, মৌচাক, মালিবাগ এলাকায় বাহাউদ্দিন নাছিমের পক্ষে নৌকায় ভোট চেয়ে পোস্টার টানিয়েছেন তার সমর্থকরা। এছাড়া ঢাকার তেজগাঁওয়ের বিভিন্ন এলাকায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের নামেও পোস্টার দেখা গেছে।
ঢাকা-১৩ আসনের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, “এ নির্বাচনি এলাকায় অধিকাংশ জায়গায় এ ধরনের পোস্টার-ব্যানার অপসারণ করা হয়েছে। কোথাও কোথাও আমাদের নজরে এলেই সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। এটা চলমান রয়েছে।”
দেয়াল লিখন ও পোস্টার লাগানো (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১২ অনুযায়ী দেয়ালে কোনো ধরনের পোস্টার লাগানো নিষেধ। এই আইন বাস্তবায়নে গত ২ জানুয়ারি ডিএনসিসি একটি গণবিজ্ঞপ্তি দেয়।
সেদিনের গণবিজ্ঞপ্তিতে ডিএনসিসি জানায়, আইন অমান্য করে কোনো ব্যক্তি দেয়াল লিখন বা পোস্টার লাগালে ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে সর্বনিম্ন ৫ হাজার এবং সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা যাবে।
অনাদায়ে ১৫ দিন পর্যন্ত বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া যাবে। পাশাপাশি অভিযুক্ত ব্যক্তিকে নিজ খরচে সংশ্লিষ্ট দেয়াল লিখন বা পোস্টার অপসারণের জন্য আদেশ দেওয়া যাবে।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার সাবিরুল ইসলামকে ফোন করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।
ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের পরিচালক (স্থানীয় সরকার) শিবির বিচিত্র বড়ুয়া বলেন, “নির্বাচন সামনে রেখে আগাম প্রচার সামগ্রী অপসারণের নির্দেশনা অনুযায়ী কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এ নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ বা কোথাও সরানো হচ্ছে না- এমন দৃষ্টিগোচর হলে তা রিটার্নিং অফিসার বা সহকারী রিটার্নিং অফিসারের কাছে তথ্য জানালেও সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
যা বলছে দুই সিটি
ডিএনসিসির মেয়র আতিকুল ইসলামের ভাষ্য, তার এলাকায় নিয়মিতই পোস্টার-ব্যানার অপসারণ করা হচ্ছে।
এ ধরনের প্রচার সামগ্রীতে ‘দৃষ্টিদূষণ’ হয় উল্লেখ করে নির্বাচনি প্রচারণায় আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের পরামর্শ দিলেন এ জনপ্রতিনিধি।
“এখন সবকিছুই স্মার্ট হয়ে যাচ্ছে। আমি মনে করি, নির্বাচন কমিশন যদি বলে এবারের নির্বাচনের ক্যাম্পেইনটা ডিজিটাল হোক। এই বিষয়টা যদি আচরণবিধিতে যুক্ত করে যে, প্রচারণা ডিজিটাল মাধ্যমে করতে হবে, তাহলে প্রার্থীরা তা করবে। এটা করা হলে শহর পরিষ্কার থাকবে। আর নতুন প্রজন্মও নতুন কিছু দেখে খুশি হবে।”
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা আবু নাছের বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সব ধরনের পোস্টার-ব্যানার অপসারণে নিয়মিত কার্যক্রম চালাচ্ছে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন।
“গত সপ্তাহজুড়ে আমরা পোস্টার অপসারণ করেছি। একজন ম্যাজিস্ট্রেটকে দিয়ে মোবাইল কোর্ট করা হচ্ছে। আগামী সপ্তাহেও মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে। মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে তিনটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। তবে প্রার্থীদের কাউকে এখনও জরিমানা করা হয়নি।”
ঢাকার বাইরে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ অহরহ
বিএনপির ভোট বর্জনের মধ্যে আগামী ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে আওয়ামী লীগ ও তাদের ‘স্বতন্ত্র’ প্রার্থীরা অনেক এলাকায় পাল্টাপাল্টি অভিযোগ আনছেন। অনেকে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটিতে অভিযোগ করছেন। আবার কোনো সুরাহা না পাওয়ায় হতাশও হচ্ছেন।
সেই সঙ্গে নির্বাচনি এলাকায় আগাম প্রচারের নানা কৌশলও নিচ্ছেন প্রার্থীরা। এরইমধ্যে অনেকেই কারণ দর্শানোর নোটিস পাচ্ছেন।
লক্ষ্মীপুর-১ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান পবন। মনোয়নপত্র বাছাইয়ে ১% ভোটারের স্বাক্ষরের গড়মিলে বাদ পড়েছেন তিনি।
আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েও শান্তি নেই তার। যুবলীগের কেন্দ্রীয় নেতা হয়েও ‘হুমকির মুখে’ চলতে হচ্ছে বলে পবনের ভাষ্য।
বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশনে প্রার্থিতা ফিরে পেতে আপিল করতে এসে তিনি বলেন, “দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে বলার পরই আমি প্রার্থী হয়েছিলাম। এরপর থেকে দলীয় প্রার্থীর লোকজন আমাকে হয়রানি করছে, হুমকি দিচ্ছে।
“এর বিচার চেয়ে আমি নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটি, পুলিশ সুপার, সহকারী রিটার্নিং অফিসার, রিটার্নিং অফিসারের কাছে গিয়েছি। কেউ কিছু আমলে নেয়নি।”
যুবলীগের কেন্দ্রীয় নেতা হয়েও যদি এ অবস্থা হয়, তাহলে অন্যদের কী অবস্থা তা ভেবেই কূল পাচ্ছেন না পবন।
“যাব কোথায় ভাই? ধরেন আমাদের নেতাকর্মীরা ঘরে ঢুকে গেছে। আমার মতো লোকের এ অবস্থা, আর সাধারণ মানুষের কী অবস্থা! বর্তমান এমপিরা, তারা যাকে টার্গেট করছে- যার কাছে সে ধরা খাবে, সেসব লোকদের তারা নিপীড়ন করছে। বিএনপি, জাতীয় পার্টি, তৃণমূল বিএনপি-এরা তাদের শত্রু নয়। স্বতন্ত্র আবার সবাই তাদের শত্রু নয়, উনারাও তো আবার ডামি দাঁড় করিয়ে রেখেছেন।”
এ আসনে আওয়ামী লীগের আনোয়ার হোসেন খান ছাড়া জাতীয় পার্টি, তৃণমূল বিএনপি, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট ও একজন স্বতন্ত্র প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বৈধ হয়েছে।
গত ১ ডিসেম্বর এম এ লতিফের পক্ষে এক মতবিনিময় সভায় অংশ নেন চট্টগ্রাম সিটি মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এম রেজাউল করিম চৌধুরী। ওই ঘটনায় এক ভোটারের লিখিত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিত্রে নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটি ব্যাখ্যা চাইলে লিখিত ব্যাখ্যায় ‘বিধি লঙ্ঘন হয়ে থাকলে দুঃখ প্রকাশ’ করেন মেয়র রেজাউল ও সংসদ সদস্য লতিফ।
আচরণবিধি লঙ্ঘনের এমন পরিস্থিতি বিষয়ে একাদশ সংসদ নির্বাচনের সময় দায়িত্ব পালন করা সাবেক নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম বলেন, বেশি বেশি ‘দলীয় স্বতন্ত্র’ প্রার্থী ভোটে বিশৃঙ্খলার কারণ হতে পারে।
“প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য প্রার্থী বাড়লেও গোলযোগ-সংঘাত হলে ভোটারদের কেন্দ্রে নিয়ে আসাটাই চ্যালেঞ্জ হবে। সেক্ষেত্রে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের এখন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা দেখলেও ভোটের মাঠে কেমন পরিস্থিতি হয় তা ভবিষ্যত বলবে।”
রফিকুল ইসলাম বলেন, “এই অবস্থায় নির্বাচন কমিশনের জন্য এখন বড় চ্যালেঞ্জ হবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের (বিচারিক, নির্বাহী হাকিম, রিটার্নিং অফিসার, পুলিশ, প্রশাসন) নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি আইনের পূর্ণাঙ্গ প্রয়োগ এবং ভোটারদের কেন্দ্রে আনার পরিবেশ নিশ্চিত বিধান করা।”
আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগের মধ্যে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, জানতে চাইলে ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, রিটার্নিং অফিসারের কাছে যখনই কোনো অভিযোগ আসছে তা যাচাই বাছাই করে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। নির্বাহী হাকিমরা মাঠে রয়েছেন, আচরণবিধি লঙ্ঘনে জরিমানা করা হচ্ছে।”
তিনি বলেন, “বিচারিক হাকিম নিয়ে গঠিত নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটি ৭৫ জনেরও বেশি প্রার্থীকে তলব করেছে, ব্যাখ্যা চেয়েছে এবং সতর্ক করে দিচ্ছে। অনুসন্ধান কমিটির প্রতিবেদন ইসি সচিবালয়ে আসার পর তা কমিশনের বিবেচনার জন্য উপস্থাপন করা হবে। এরপরই প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত আসবে।”
আচরণবিধি লঙ্ঘনের ব্যাপক অভিযোগের মধ্যে ইসির অবস্থান ‘নমনীয়’ বলতে নারাজ কর্মকর্তারা।
ইসি কর্মকর্তাদের ভাষ্য, ৩০০ আসনের অন্তত এক তৃতীয়াংশ এলাকায় প্রার্থীদের তলব করার পাশাপাশি ব্যাখ্যা চেয়েছে নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটি। তাতে ভোটের মাঠে আচরণবিধি প্রতিপালনে ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে। অনেক প্রার্থীকে সতর্ক করায় আগামীতে জরিমানা বা প্রার্থিতা বাতিলের মতো কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার একটি ধাপ এগিয়ে রাখা হয়েছে।
ইসির আইন শাখার একজন কর্মকর্তা বলেন, প্রার্থীর অনুসারীদেরও এ বার্তা দেওয়া গেল যে, প্রচারের সময় শুরুর আগে কোনো উসকানিমূলক বক্তব্য, হুমকি বা বাধা দেওয়ার ঘটনার পুনরাবৃত্তি করা যাবে না।
“প্রতিটি ঘটনা হয়তো আলাদা আলাদাভাবে ইসির দৃষ্টিতে আসছে না। এ পর্যন্ত সংসদ সদস্য, দলীয় ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মিলিয়ে অন্তত ৯০ জনকে শোকজ করা হয়েছে। কিন্তু ইতোমধ্যে যারা শোকজ পেয়েছে, তারা পুনরাবৃত্তি ঘটালেই ইসি কঠোর ব্যবস্থা নিতে পারে। কারণ প্রতিটি বিষয়ে তদন্ত প্রতিবেদন কমিশনে আসছে।”
আরও পড়ুন