স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “সোনালী ব্যাংকে ঢোকার আগে সশস্ত্ররা বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র বন্ধ করে।“
Published : 03 Apr 2024, 05:03 PM
বান্দরবানের রুমায় সোনালী ব্যাংকে সশস্ত্র হামলা ও লুটের ঘটনার সঙ্গে পাহাড়ের সশস্ত্র গোষ্ঠী কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) ‘সংশ্লিষ্টতা’ পাওয়ার কথা বলেছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
তিনি বলেছেন, “ব্যাংক ডাকাতির ঘটনায় যা যা করণীয়, সবই করছে সরকার। এ ঘটনায় কুকি চিং নামে একটি সংগঠন জড়িত বলে জানা গেছে। তবে এ বিষয়ে এখনো বিস্তারিত তথ্য জানা যায়নি।”
রুমায় সোনালী ব্যাংকে ওই ডাকাতির ঘটনার পরদিন বুধবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে এ বিষয়ে কথা বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। ওই সময়ই বান্দরবানের রুমায় সোনালী ও কৃষি ব্যাংকের শাখায় দিনে দুপুরে ডাকাতির খবর আসে।
মন্ত্রী বলেন ঘটনার পরপরই পুলিশ ও বিজিবি সেখানে অভিযান চালাচ্ছে। সেনাবাহিনীর সদস্যরাও তাতে যোগ দেবেন।
“পুলিশ মহাপরিদর্শকের নেতৃত্বে একটি টিম সেখানে রয়েছে। তারা সার্বিক দিক খতিয়ে দেখছে।”
মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে শতাধিক সশস্ত্র ব্যক্তি রুমা উপজেলা সদরে সোনালী ব্যাংকটির শাখায় একযোগে হামলা চালায়। এ সময় ব্যাংকের কর্মকর্তা, নিরাপত্তা রক্ষীসহ অন্তত ২০ জনকে মারধর করা হয়; অপহরণ করা হয় ব্যবস্থাপক নেজাম উদ্দিনকে।
জেলা প্রশাসন, পুলিশ সুপার ও সোনালী ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বুধবার সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তারা সোনালী ব্যাংকের বিভিন্ন কক্ষ ঘুরে দেখেন এবং ব্যাংকের ভল্ট পর্যবেক্ষণ করেন ।
পর্যবেক্ষণ শেষে জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, “এখানে ভল্টের বিষয় আছে। কিছু প্রসিডিউয়াল বিষয় আছে। সিআইডির বিষয়ও থাকতে পারে। অন্যান্য ক্রাইম সিন বিষয়ও..। ক্রাইম সীন বিষয়গুলো পুলিশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দেখবে।
"সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। ডিআরবি জব্দ করা আছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পুলিশ, বিজিবি ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা আন্তরিকভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছে।”
ঢাকায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, “আমরা হঠাৎ করে শুনলাম বান্দরবানে ব্যাংক ডাকাতির প্রচেষ্টা হয়েছে। আমাদের কাছে যা তথ্য এসেছে কুকি-চিন; এই গ্রুপটি আগেও জঙ্গি গোষ্ঠীর সঙ্গে আঁতাত করে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছিল। র্যাব ও আর্মি সেই ঘাঁটি সরিয়ে দিয়েছিল।“
“ইদানীং আমরা দেখছিলাম, এই কুকি-চিন আবার বিভিন্নভাবে তাদের অবস্থান জানান দিচ্ছিল। রুমার ঘটনায় এ পর্যন্ত আমরা যা শুনেছি, সোনালী ব্যাংকে ঢোকার আগে তারা বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র বন্ধ করে। তারপর তারা সোনালী ব্যাংকের দিকে অগ্রসর হয়।”
ঘটনার যে তথ্য হাতে এসেছে, তা তুলে ধরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “সেখানে পুলিশ মোতায়েন ছিল এবং অধিকাংশই তারাবির নামাজে ছিলেন। ওই সময় তারা ঢোকে। পুলিশের গার্ড কমান্ডার এএসআই (সহকারী উপপরিদর্শক) মামুনুর রহমান ও কনস্টেবল তৌহিদুল ইসলামকে আহত করে দুটি এসএমজি ও আটটি চাইনিজ রাইফেল লুট করে। উপজেলা কমপ্লেক্সে আনসার বাহিনী যারা ছিল, তাদের শটগানও তারা লুট করে নিয়ে নেয়।“
তিনি বলেন, “আমাদের সোনালী ব্যাংকের ভল্ট একটা ভাঙে, আরেকটি বোধ হয় ভাঙতে পারেনি। এগুলো আমাদের আনুষ্ঠানিক তথ্য নয়। আমরা যেসব তথ্য পেয়েছি সেটা আপনাদের জানলাম। তবে কত টাকা নিয়ে গেছে সেই তথ্য আনুষ্ঠানিকভাবে আমাদের কাছে আসেনি।“
বান্দরবানের রুমায় সোনালী ব্যাংকে হামলা ও লুটের ১৬ ঘণ্টার মাথায় বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে থানচি উপজেলার সোনালী ও কৃষি ব্যাংকে ডাকাতি হয়। এ ঘটনার পেছনেও কেএনএফ জড়িত বলে পুলিশের ধারণা।
থানচির ঘটনার প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “আজকে দিনের বেলায় আমরা আবার দেখলাম, থানচিতে তারা সোনালী ও কৃষি ব্যাংকে অ্যাটাক করেছেন। এই অপারেশনটা এখনো চলছে। আমাদের বিজিবি-পুলিশ সেখানে গুলি করছে। এই মুহূর্তে আমরা বলতে পারব না যে কত টাকা নিয়েছে বা ক্ষয়ক্ষতি কী হয়েছে। পুরো তথ্য আনুষ্ঠানিকভাবে আমাদের কাছে আসেনি।”
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আমাদের পর্যাপ্ত ফোর্স সেখানে আছে। যা কিছু করার দরকার সেখান করা হচ্ছে।”
আরো পড়ুন
এবার ভরদুপুরে থানচির দুই ব্যাংকে ডাকাতি
ব্যাংক ম্যানেজার নেজামকে তারাবির নামাজ থেকে তুলে নিয়ে যায় সশস্ত্ররা
রুমায় ব্যাংক লুট: সন্ধান মেলেনি ‘অপহৃত’ ব্যবস্থাপকের
রুমায় ব্যাংক ডাকাতি, সন্দেহে ‘বম পার্টি’
রুমায় ব্যাংকে হামলা, টাকা লুট, ম্যানেজারকে ‘অপহরণ’
কারা এই কেএনএফ
২০২২ সালের শুরুর দিকে বান্দরবানের রুমা উপজেলায় কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) নামে একটি সশস্ত্র সংগঠনের কথা সোস্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে জানা যায়। বম, পাংখোয়া, লুসাই, খিয়াং, খুমি ও ম্রোদের নিয়ে গঠন করা হয়েছে বলে দাবি করা হলেও সেখানে বম জনোগষ্ঠীর কিছু সংখ্যক লোকজন রয়েছে। সে কারণে সংগঠনটি পাহাড়ে ‘বম পার্টি’ নামে পরিচিতি পায়।
কেএনএফের ফেইসবুক পেইজে তারা জানায়, রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাইছড়ি, বরকল, জুরাইছড়ি বিলাইছড়ি ও বান্দরবান জেলার রোয়াংছড়ি, রুমা, থানচি, লামা ও আলীকদমসহ নয়টি উপজেলা নিয়ে ‘কুকি-চিন রাজ্য’ হিসেবে গঠন করা হবে। পরবর্তীতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সশস্ত্র সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে তারা।
‘বম পার্টি’ নামে পরিচিত এই সশস্ত্র সংগঠনটি অর্থের বিনিময়ে নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’ সদস্যদের সামরিক প্রশিক্ষণ দিচ্ছে বলে ২০২২ সালে অক্টোবর মাসে ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করে জানায় র্যাব।
এরপর ২০২২ সালের ১৭ অক্টোবর থেকে জঙ্গি ও কেএনএফ সদস্যদের বিরুদ্ধে রোয়াংছড়ি ও রুমা উপজেলার অভিযান চালায় র্যাব ও সেনা সদস্যের যৌথ বাহিনী। অভিযান চালানো হয় থানচি উপজেলাতেও।
এসব অভিযান চালাতে গিয়ে নিহত হয়েছেন সেনাবাহিনীর বেশ কিছু সদস্য। সংঘাতে কেএএনএফ সদস্যদেরও প্রাণ গেছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের কারণে ২০২২ সালের অক্টোবর থেকে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয় রোয়াংছড়ি, রুমা, থানচি ও আলীকদম উপজেলায়। পরে পর্যায়ক্রমে তিন উপজেলা থেকে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা নেওয়া হয়। সবশেষ রোয়াংছড়ি উপজেলা থেকে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা ওঠে চলতি বছর জানুয়ারিতে।
পুরনো খবর
এবার সরকারি প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে ‘বম পার্টি’র সঙ্গে বৈঠক
এবার ‘বম পার্টি’র সঙ্গে সরাসরি সংলাপের প্রস্তাব
‘সংলাপ চলাকালে সংঘাত চায় না বম পার্টি, পর্যটন নিয়ে আপত্তি’
‘সব পক্ষের ইতিবাচক সাড়া’ পেয়েছে বান্দরবানে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি
বান্দরবানে ‘শান্তি ও স্থিতিশীল’ পরিবেশ ফেরানোর উদ্যোগ
শান্তিপূর্ণ সমাধান হলে সহিংসতায় যাবে না সেনাবাহিনী, বান্দরবানে সেনাপ্রধান
নতুন জঙ্গি দলের ‘পাহাড়ি যোগ’ পেয়েছে র্যাব
জঙ্গি আর পাহাড়ি দলের মিলে যাওয়ার বিপদ যেখানে
পাহাড়ে সশস্ত্র দল; এই ‘বম পার্টি’ কারা?
বান্দরবানে পানি-স্যালাইন বিতরণে গিয়ে বিস্ফোরণে সেনাসদস্য নিহত
কেএনএফ ক্যাম্পে অভিযানের সময় বিস্ফোরণে সেনাসদস্য নিহত