“আমাদের খরচের পরিমাণ দিনে দিনে বাড়তেছে আর মানবিক সহায়তা দিনে দিনে কমতেছে,” হতাশার সুর পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেনের কণ্ঠে।
Published : 25 Aug 2023, 01:16 AM
পেছনে জ্বলছে গ্রামের পর গ্রাম, চলছে জঘন্যতম হত্যাযজ্ঞও; প্রাণে বাঁচতে সেই সময়ে জন্মভূমির মায়া ছেড়ে নাফ নদীর এপার-ওপারে কাদামাটি পেরিয়ে রোহিঙ্গাদের অনিশ্চিত এক যাত্রায় হতবাক হয়েছিল বিশ্ব।
অসংখ্য মানুষের অজানা পথ পাড়ি দেওয়ার হৃদয়স্পর্শী সেই মুহূর্তগুলো ছয় বছর পেরিয়ে এখন তা রূপ নিয়েছে কষ্টের এক জীবনে, পরিণত হয়েছে দীর্ঘশ্বাসে। মিয়ানমারের প্রতিশ্রুতি আর বাংলাদেশের চর্তুমুখী প্রচেষ্টার পরও একজন রোহিঙ্গাও ফিরতে পারেননি নিজের বাসভূমে; হতাশাময় সময় গড়িয়েই চলছে।
আশ্রয় শিবিরের কষ্টকর জীবনযাত্রায় লাখো রোহিঙ্গার দিনরাত কাটছে ছন্দহীনভাবে; নিজ বাসভূমে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার স্বপ্ন হচ্ছে দীর্ঘায়িত।
বাংলাদেশ সরকার বলছে, হতাশ রোহিঙ্গারা জড়াচ্ছেন বিভিন্ন অপরাধে, রয়েছে আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতার শঙ্কাও। স্থানীয় প্রতিবেশ ও পরিবেশও পড়েছে বিপন্ন হওয়ার হুমকিতে।
আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আলোচনার টেবিলে ১২ লাখের বেশি রোহিঙ্গার প্রত্যাবাসনের বিষয়টি ঘুরে ফিরে উঠলেও সেটির বাস্তবায়ন যেন এখনও সুদূর পরাহত।
এরমধ্যে ২০২২ সালে ইউক্রেইন-রাশিয়ার যুদ্ধে পশ্চিমা বিশ্বের দৃষ্টি সরে যাওয়ায় আরেক ধাক্কা লাগতে শুরু করেছে রোহিঙ্গা শিবিরে। তথ্য বলছে, অন্য দেশের আশ্রয়ে থাকা বিশাল এ জনগোষ্ঠীর জন্য মানবিক সহায়তা কমে গেছে ব্যাপকমাত্রায়; খাদ্য সহায়তা কমানোর পথে হাঁটতে হয়েছে জাতিসংঘের খাদ্য সংস্থাকেও।
অর্ধযুগ পর এমন অবস্থায় রোহিঙ্গাদের নিয়ে ‘গ্যাঁড়াকলের’ মধ্যে পড়ে থাকার কথা বলছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন; প্রত্যাবাসন শুরুর জন্য সবার সহযোগিতাও চাইলেন তিনি।
মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নির্যাতন থেকে বাংলাদেশ অভিমুখে রোহিঙ্গাদের সেই অনিশ্চিত যাত্রার ছয় বছর পূর্ণ হচ্ছে শুক্রবার। ঢল নামা সেই রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে গিয়ে গত অর্ধযুগে একের পর এক সমস্যার মুখোমুখি কক্সবাজারও যেন পড়েছে অজানা এক সংশয়ের মুখে।
তারিখটি ছিল ২৫ অগাস্ট, ২০১৭ সাল। বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে সেই ঢলের শুরু হয়েছিল; এরপর কয়েক মাসের মধ্যে সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফে আশ্রয় নেয়। যেখানে আগে থেকেই ক্যাম্পে বসবাস করছিল আরও চার লাখ রোহিঙ্গা।
জাতিসংঘ সেসময় রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর এই হত্যা ও নির্যাতনকে চিহ্নিত করেছিল ‘জাতিগত নিধনের ধ্রুপদী উদাহরণ’ হিসেবে। যুক্তরাষ্ট্র সরকার চলতি বছরের মার্চে রোহিঙ্গাদের উপর চালানো ওই হত্যাযজ্ঞকে ‘জেনোসাইড’ হিসেবে বর্ণনা করেছে।
বাংলাদেশ সীমান্ত খুলে আশ্রয়ের হাত বাড়িয়ে দিলে কক্সবাজার ও উখিয়ার বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে বাঁশ আর প্লাস্টিকের খুপড়ি ঘরে বসবাস শুরু করেন রোহিঙ্গারা। উখিয়ার কুতুপালং পরিণত হয় বিশ্বের সবচেয়ে বড় শরণার্থী শিবিরে; দীর্ঘদিন ধরে পশ্চিমাদের নজরও ছিল এদিকে।
আন্তর্জাতিক চাপের মুখে ২০১৭ সালের শেষ দিকে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে রাজি হয় মিয়ানমারের অং সান সু চি সরকার। ওই বছর সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় চুক্তিতেও সই করে।
পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়াসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনার এক পর্যায়ে ২০১৯ সালে দুই দফায় প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু মিয়ানমার সরকারের প্রতিশ্রুতিতে রোহিঙ্গারা আস্থা রাখতে না পারায় সেই চেষ্টা ভেস্তে যায়।
এরপর আসে করোনাভাইরাস মহামারী, রোহিঙ্গাদের ওপর থেকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মনোযোগেও ঢিল পড়ে। বিশ্বজুড়ে সেই সংকটের মধ্যেই ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে সু চির দ্বিতীয় দফার সরকারকে সরিয়ে ক্ষমতা দখল করেন সামরিক জান্তা জেনারেল মিন অং হ্লাইং। প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় যা আসে নতুন ধাক্কা হিসেবে।
তহবিলে টান: রোহিঙ্গাদের খাদ্য সহায়তা কমিয়ে দিচ্ছে জাতিসংঘ
রোহিঙ্গা: সেই রাষ্ট্রহীন শরণার্থীদের কথা ভুলে গেছে বিশ্ব?
রোহিঙ্গা সঙ্কটের ৫ বছর: আটকে প্রত্যাবাসন, চিন্তা বাড়াচ্ছে জন্মহার
রোহিঙ্গা ঢলের ৪ বছর: ফেরানো আর কতদূর?
বিচার ও স্বভূমে ফেরার অপেক্ষায় রোহিঙ্গাদের ৩ বছর
রোহিঙ্গাদের শরণার্থী জীবনের শেষ কবে?
এখন পর্যন্ত অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে তাকে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়টি আন্তর্জাতিক পর্যায়েও আর সেভাবে আলোচনায় নেই।
সামরিক জান্তা মিয়ানমারের ক্ষমতা দখলের কিছু দিন আগে চীনের নেতৃত্ব প্রত্যাবাসনের বিষয়ে ত্রিপক্ষীয় বৈঠক বসেছিল। তার চূড়ান্ত ফল আর পাওয়া যায়নি। ওই সময় বাংলাদেশ আশা করেছিল, ২০২১ সালের দ্বিতীয়ার্ধে হয়ত প্রত্যাবাসন শুরু করা যাবে। সেই পরিকল্পনা আলোর মুখ দেখেনি।
ফিরে যাওয়ার পথে কতদূরে রোহিঙ্গারা?
এমন পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনকে অগ্রাধিকারে রাখা বাংলাদেশ সরকার বারবার অভিযোগ করে আসছে, আন্তর্জাতিক মহল প্রত্যাবাসনের জন্য মিয়ানমারের উপর যথেষ্ট চাপ প্রয়োগ করতে ব্যর্থ হয়েছে।
এরপর ত্রিপক্ষীয় উদ্যোগের অধীনে কয়েক দফা বৈঠক হয়, ফেরত পাঠানোর জন্য কিছু রোহিঙ্গা শরণার্থীর ভেরিফিকেশন নিয়ে কাজ চলে।
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার কার্যালয় জানায়, প্রত্যাবাসনের জন্য বাংলাদেশ আট লাখের বেশি রোহিঙ্গার তালিকা মিয়ানমারের কাছে পাঠিয়েছে। ওই তালিকা থেকে প্রত্যাবাসনের জন্য প্রাথমিকভাবে এক হাজার ১৪০ জনকে বাছাই করা হয়।
এর মধ্যে ৭১১ জন রোহিঙ্গাকে প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে মিয়ানমারের সম্মতি মিললেও বাকি ৪২৯ জনের ব্যাপারে আপত্তি ছিল। ওই ৪২৯ জন রোহিঙ্গার তথ্য যাচাইয়ের চলতি বছরের মার্চে টেকনাফে আসে মিয়ানমারের একটি প্রতিনিধিদল।
এরপর প্রত্যাবাসনের পরিবেশ দেখতে মিয়ানমারের রাখাইন ঘুরে আসে রোহিঙ্গাদের একটি প্রতিনিধিদল। ফিরে নিজেদের গ্রামের ফেরার ইচ্ছার কথা জানায় তারা।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ত্রিপক্ষীয় উদ্যোগে পাইলট প্রকল্প শুরুর বিষয়টি এখন অনেক দূর এগিয়েছে। তাদেরকে নিজ বাসভূমে ফেরানোর দাবি বাংলাদেশের ছিল, এটাতে তারা প্রাথমিকভাবে সম্মতিও দিয়েছে। বাংলাদেশ সরকার চায় প্রত্যাবাসনটা দ্রুততার সঙ্গে শুরু হোক।
‘মুরুব্বিরা আগে চান গণতন্ত্র’
তবুও ছয় বছরে একজন রোহিঙ্গাকেও ফেরত পাঠাতে না পারার হতাশা প্রকাশ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা এই বেড়াজালে আটক হয়ে আছি।
“এখনও পর্যন্ত একটাও যায় নাই। তবে ভালো খবর হচ্ছে মিয়ানমার নিতে চায়, আমরা দিতে চাই। আর রোহিঙ্গাগুলো যেতে চায়। কারণ, রোহিঙ্গাগুলোর ভবিষ্যৎ ওই দেশেই নির্ভর করে।”
তিনি বলেন, দুই বছরতো মিয়ানমারের সঙ্গে কথাই বন্ধ ছিল কোভিডের কারণে। আর তাদের সরকার পরিবর্তন হয়ে সামরিক সরকার আসায় এখন তাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা হচ্ছে। যাচাই-বাছাইয়ের পর তারা নিয়ে যেতে রাজি হয়েছে।
মোমেন বলেন, “আমরাও পাঠাতে চাই। কিন্তু আমাদের যারা মুরুব্বি আছেন, আন্তর্জাতিক দেশগুলো কিংবা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান আছে, তারা খুব রিলাকটেন্ট। তারা বলছে, না এরা যাওয়া ঠিক হবে না। কারণ ওই দেশে তো গণতন্ত্র নাই। ওইদেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র হলে পরে তারা যাওয়া ভালো।”
লাখ লাখ এই রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন ঠেকাতে আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান বা এনজিওদের কোনো ‘মতলব’ আছে কি না, এমন সন্দেহও প্রকাশ করে তিনি বলেন, “যে লোকগুলো আছে, তারা হতাশাগ্রস্ত। যার ফলে তারা মাদক পাচার করে, মানব পাচার করে, তারা এখন অস্ত্র পাচারও শুরু করেছে।
“নিজেদের মধ্যে মারামারি করে, যখন-তখন নিজেদের লোকদের মেরে ফেলে। দিনে দিনে অবস্থাটা খুব সুখকর না।”
‘মর্যাদাপূর্ণ’ ফিরে যাওয়াই সমাধান: ইউএনএইচসিআর
এমন প্রক্ষাপটে রোহিঙ্গাদের মর্যাদাপূর্ণ ও টেকসই প্রত্যাবাসন নিশ্চিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে নতুন করে প্রচেষ্টা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা (ইউএনএইচসিআর)।
সংকটের ছয় বছর পূর্তি উপলক্ষে সংস্থার এক বিবৃতিতে সংকটের প্রাথমিক সমাধান হিসেবে রোহিঙ্গাদের ‘মর্যাদাপূর্ণ ও টেকসই প্রত্যাবাসন’ এর কথা বলছে সংস্থাটি।
বিবৃতিতে বলা হয়, “রোহিঙ্গা শরণার্থীরা আমাদের সব সময়ই বলে যে নিরাপদে ও স্বেচ্ছায় ফিরে যাওয়ার পরিবেশ তৈরি হলেই তারা মিয়ানমারে যেতে প্রস্তুত।
“আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এটি সম্ভব করার জন্য নতুন করে প্রচেষ্টা নিতে হবে। যেহেতু জাতিসংঘ টেকসই প্রত্যাবাসনের উপযোগী পরিবেশ তৈরির প্রচেষ্টাকে সমর্থন করার জন্য প্রস্তুত রয়েছে; তাই ইউএনএইচসিআর ও এর অংশীদারদের প্রয়োজন মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে নিরবচ্ছিন্ন, অর্থবহ ও অনুমানযোগ্য প্রবেশাধিকার, যেন সেখানে প্রত্যাবাসনে সহায়তা ও পর্যবেক্ষণ করা যায়।”
এতে আরও বলা হয়, “সকলের সম্মিলিত লক্ষ্য হওয়া উচিত মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের নিজ গ্রামে অথবা পছন্দের জায়গায় স্বেচ্ছা প্রত্যাবাসন এবং সেখানে তাদের চলাফেরার স্বাধীনতা, নিবন্ধন, নাগরিকত্বের সুষ্ঠু পরিকল্পনা, পরিষেবা এবং আয়মূলক কাজের সুযোগ নিশ্চিত করা, যেন তারা নতুন করে জীবন গড়তে পারে।”
তহবিলে টান, কমেছে খাদ্য সহায়তা
২০১৭ সাল থেকে জয়েন্ট রেসপন্স প্ল্যান (জেআরপি) নামে রোহিঙ্গাদের জন্য তহবিল সংগ্রহ ও ব্যবস্থাপনার কাজটি করে আসছে জাতিসংঘের নেতৃত্বাধীন স্ট্র্যাটেজিক এক্সিকিউটিভ গ্রুপ।
বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কের কার্যালয়ের সঙ্গে ওই গ্রুপে রয়েছে ইউএনএইচসিআর ও আন্তর্জাতিক অভিবাসী সংস্থা (আইওএম)।
২০১৭ সালের অগাস্টে রোহিঙ্গা ঢল নামার পরপর প্রথম জেআরপিতে চার মাসের ব্যয় ধরা হয়েছিল ৪৩ কোটি ৪১ লাখ ডলার। এর মধ্যে ৭৩ শতাংশ অর্থাৎ ৩১ কোটি ৭২ লাখ ডলার এসেছিল দাতাদের কাছ থেকে।
এখন পর্যন্ত ছয়টি জেআরপির মধ্যে চারটিতে ৭২ শতাংশের বেশি তহবিল এলেও করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে ২০২০ সালে তা ৬০ শতাংশের নিচে নেমে আসে।
২০২২ সালে আহ্বান করা ৮৮ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলারের মধ্যে ৫৫ কোটি ৮৬ লাখ ডলারের তহবিল এসেছিল, যা মোট অংকের ৬৩ দশমিক ৪০ শতাংশ।
চলতি বছরের প্রথম আট মাসের হিসাবে দেখা যাচ্ছে, জেআরপির অধীনে তহবিল আসার ধারা ব্যাপক মাত্রায় কমে এখন পর্যন্ত মাত্র ২৬ কোটি ৮ লাখ ডলারের মানবিক সহায়তা এসেছে। জেআরপিতে প্রয়োজনীয় ৮৭ কোটি ৫৯ লাখ টাকার যা মাত্র ২৯ দশমিক ৮০ শতাংশ।
তহবিল ঘাটতিকে কারণ দেখিয়ে রোহিঙ্গা শিবিরের বাসিন্দাদের খাদ্য সহায়তা মার্চ থেকে কমিয়ে দিয়েছে জাতিসংঘের সংস্থা ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম (ডব্লিউএফপি)।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে খাদ্য সহায়তা বাবদ মাথাপিছু ১২ ডলারের যে বরাদ্দ তারা দিয়ে আসছিল, চলতি বছরের মার্চ থেকে তা ১৭ শতাংশ কমিয়ে ১০ ডলার করা হয়। এরপর সেখান থেকে কমিয়ে এখন ৮ ডলার করা হয়েছে বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন।
রোহিঙ্গা শরণার্থী ও স্থানীয়দের জন্য আসা সহযোগিতা কমে আসার চিত্র তুলে ধরে আরেক বিবৃতিতে ইউএনএইচসিআর বলেছে, “বিশ্বের বৃহত্তম শরণার্থী শিবিরের মানবিক পরিস্থিতি যখন খারাপ হচ্ছে, তখন এই দীর্ঘায়িত সংকটকে ঘিরে চ্যালেঞ্জগুলি ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। তহবিলের তীব্র স্বল্পতার কারণে মানবিক সংস্থাগুলো শুধু অতি গুরুত্বপূর্ণ ও জীবন রক্ষাকারী চাহিদা মেটানোর উপর নজর দিতে বাধ্য হচ্ছে।
“প্রথমবারের মত শরণার্থীদের খাদ্য সহায়তার উপর এটি প্রভাব ফেলেছে; ফলে ক্রমবর্ধমান অপুষ্টি, শিক্ষা কার্যক্রম থেকে ঝরে পড়া, বাল্যবিবাহ, শিশুশ্রম এবং লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার মত করুণ পরিণতির উদ্ভব ঘটছে।”
অগাস্টের মাঝামাঝি পর্যন্ত জেআরপির প্রয়োজনীয় তহবিলের মাত্র ২৮ দশমিক ৯ শতাংশ পাওয়া যাওয়ার কথা তুলে ধরে বিবৃতিতে বলা হয়, “যা একটি বৃহত্তর মানবিক সঙ্কট রোধে সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং পূর্বাভাসযোগ্য আর্থিক সহায়তার প্রয়োজনীয়তাকে হতাশাজনকভাবে তুলে ধরে।”
এতে আরও বলা হয়, “আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসতে হবে, এবং এই দায়িত্বের ভাগ নিতে হবে। এ বছরের ডিসেম্বরে জেনেভাতে আসন্ন গ্লোবাল রিফিউজি ফোরামে রোহিঙ্গাদের সহায়তার জন্য সকল অংশীদারদের ইউএনএইচসিআর আহ্বান জানায়।”
এ বিষয়ে এক প্রশ্নে মোমেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মানবিক সহায়তা ব্যাপকভাবে কমে গেছে। যার কারণে ওদের খাওয়া দাওয়ারও সমস্যা হচ্ছে, ১২ ডলার থেকে ১০ ডলার, এখন ৮ ডলার নির্ধারণ হয়েছে।
“আর আমাদের সরকারের খরচ স্বভাবত কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। আমরা এখন প্রতিবছর ১৯০ কোটি ডলার এদের ব্যবস্থাপনার জন্য খরচ করতেছি। আরও খরচ আছে, ভাসানচরে সাড়ে ৩০০ মিলিয়ন খরচ করে বাড়িঘর বানিয়েছি। আমাদের খরচের পরিমাণ দিনে দিনে বাড়তেছে আর মানবিক সহায়তা দিনে দিনে কমতেছে।”
রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদে সর্বসম্মত প্রস্তাব
রোহিঙ্গা সঙ্কটে বিশ্ব ব্যর্থ: অ্যামনেস্টি
রোহিঙ্গা: বিশ্বব্যাংকের প্রলোভনে পড়বে না তো বাংলাদেশ?
আন্তরিক চেষ্টার ভুল ব্যাখ্যা নয়: রোহিঙ্গাদের নিয়ে বাংলাদেশ
কোভিড টিকা পেলেন প্রথম রোহিঙ্গা শরণার্থী মোহাম্মদ শফি
ছড়িয়ে পড়ছে রোহিঙ্গারা, শঙ্কায় স্থানীয়রা
ভাসান চর: জাতিসংঘ জানাল, ‘পর্যাপ্ত তথ্য’ তারা পায়নি
আন্তরিক চেষ্টার ভুল ব্যাখ্যা নয়: রোহিঙ্গাদের নিয়ে বাংলাদেশ
অনড় অবস্থানের জন্যই রোহিঙ্গা স্থানান্তরে জাতিসংঘকে সম্পৃক্ত করা যায়নি: পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
রোহিঙ্গা: ত্রিপক্ষীয় বৈঠক শেষে আশাবাদী বাংলাদেশ
মিয়ানমারে পরিবর্তন কি রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে কাঁটা হবে?
রোহিঙ্গারা বাস্তুচ্যুত, বিশ্ব ব্যাংকের শরণার্থী নীতি তাদের জন্য নয়: পররাষ্ট্রমন্ত্রী