খিলক্ষেত থানার ওসি হুমায়ুন কবীর বলেন, “এ বিষয়ে তদন্ত চলছে। কোনো গ্রেপ্তার নেই।”
Published : 01 May 2024, 10:57 PM
বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীরসহ পাঁচজনের নামে রাজধানীর খিলক্ষেত থানায় মামলা করেছে রংধনু গ্রুপ।
রংধনু গ্রুপের মালিকানাধীন একটি জমিতে ঢুকে নিরাপত্তাকর্মীদের মারধর করে ৫০ কোটি টাকা চাঁদা দাবি এবং এক নিরাপত্তাকর্মীর ১৬ হাজার টাকা ও ১৮ হাজার টাকা দামের মোবাইল ছিনতাইয়ের অভিযোগ করা হয়েছে সেখানে।
রংধনু গ্রুপের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ সোহেল রানা মঙ্গলবার খিলক্ষেত থানায় মামলাটি দায়ের করেন
থানার ওসি হুমায়ুন কবীর বুধবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এ বিষয়ে তদন্ত চলছে। কোনো গ্রেপ্তার নেই।”
সায়েম সোবহান ছাড়া জামাল হোসেন মিয়া, আমিনুল, মোশারফ হোসেন ভুঁইয়া ও দুলালের নাম রয়েছে আসামির তালিকায়। এছাড়া অজ্ঞাতপরিচয় এক থেকে দেড়শ জনকে আসামি করা হয়েছে।
এদের মধ্যে মোশারফ হোসেন ভুঁইয়া রূপগঞ্জ পুলিশের ‘তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী’। গতবছর জুন মাসে এক সহযোগীসহ মোশারফকে গ্রেপ্তারের পর র্যাব জানিয়েছিল তার বিরুদ্ধে ৪২টির মত মামলা রয়েছে। এর মধ্যে একটি মামলায় রংধনু গ্রুপের কর্ণধার রফিকুল ইসলামের ওপর হামলার অভিযোগও রয়েছে।
রফিকুল ইসলাম কায়েতপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন, মোশারফ একই ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ছিলেন। দীর্ঘদিন ধরে তাদের দ্বন্দ্ব চলছে, যার মূলে রয়েছে জমির ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ।
রংধনু গ্রুপের কর্মকর্তা সোহেল রানার দায়ের করা মামলাতেও জমি নিয়ে দ্বন্দ্বের উল্লেখ রয়েছে।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, বসুন্ধরা গ্রুপের সঙ্গে রংধনু গ্রুপের ‘দীর্ঘদিনের ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বের’ কারণে বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি সায়েম সোবহান আনভীরের ‘নির্দেশে’ তাদের কিছু লোকজন রংধনু গ্রুপের কাছে ‘৫০ কোটি টাকা চাঁদা দাবি’ করে আসছে।
“এর আগে তারা খিলক্ষেতের বড়ুয়া মৌজায় রংধনু গ্রুপের একটি জমি জবরদখল করার চেষ্টা করলে রংধনু গ্রুপের পক্ষ থেকে গত ৬ এপ্রিল খিলক্ষেত থানায় মামলা করা হয়। এই দ্বন্দ্বের ধারাবাহিকতায় গত সোমবার বেলা আড়াইটার দিকে বিবাদী সায়েম সোবহান আনভীরের উপস্থিতিতে এক থেকে দেড়শ লোক রংধনু গ্রুপের জমিটি দখলের জন্য লাঠিসোঁটা ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে গিয়ে রংধনু গ্রুপের সিকিউরিটি গার্ড শাহ আলমকে বেধড়ক মারধর করে।
“তারা সেখানে রংধনু গ্রুপের বিলবোর্ডটি ভাঙচুর করে। খবর পেয়ে রংধনু গ্রুপের সিকিউরিটি ইনচার্জ শামসুল হক সেখানে গেলে তার মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে বলা হয়, ‘তোর চেয়ারম্যানকে বলবি, ৫০ কোটি টাকা চাঁদা না দিলে এই জমিতে কেউ প্রবেশ করতে পারবে না। এটা আনভীর ভাইয়ের অর্ডার।’
“এরপর তাকে মারধর করে তার মানিব্যাগে থাকা ১৬ হাজার ২৫০ টাকা এবং একটি ১৮ হাজার টাকা দামের ভিভো মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়ে যায় আসামিরা। পরে খিলক্ষেত থানার পুলিশ এলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়।”
মামলা ও অভিযোগের বিষয়ে সায়েম সোবহান আনভীর কিংবা বসুন্ধরা গ্রুপের কোনো বক্তব্য বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম জানতে পারেনি। বসুন্ধরা গ্রুপের প্রেস অ্যান্ড মিডিয়া উপদেষ্টা মোহাম্মদ আবু তৈয়বকে ফোন করলেও তিনি ধরেননি।
বসুন্ধরা ও রংধনু– দুই গ্রুপেরই মূল ব্যবসা আবাসন। এক সময় দুই গ্রুপের মধ্যে বেশ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। ২০২১ সালের জুলাই মাসে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় রংধনু গ্রুপের প্রধান কার্যালয় উদ্বোধন করেন সায়েম সোবহান আনভীর। রূপগঞ্জ এলাকায় দুই গ্রুপের একসঙ্গে ত্রাণ বিতরণের খবরও বিভিন্ন সময়ে সংবাদমাধ্যমে এসেছে।
বসুন্ধরা এমডির পা ধরে রংধনুর চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলামের মাফ চাওয়ার একটি পুরনো ভিডিও গত বছরের শেষ দিকে সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়। এরপর থেকে দুই ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর বিরোধের নানা খবর সংবাদমাধ্যমে আসতে শুরু করে।
তারপর থেকেবসুন্ধরা গ্রুপের মালিকানাধীন পত্রিকা বাংলাদেশ প্রতিদিন ও কালের কণ্ঠ এবং রংধনুর মালিকানাধীন প্রতিদিনের বাংলাদেশ পত্রিকাতেও পাল্টাপাল্টি প্রতিবেদন প্রকাশিত হচ্ছে।