চুক্তি সই, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন দুই বছরে

নিপীড়নের মুখে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের কীভাবে ফেরত পাঠানো হবে, তা চূড়ান্ত করে একটি চুক্তিতে সই করেছে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 Jan 2018, 07:35 AM
Updated : 17 Jan 2018, 04:21 AM

এই ‘ফিজিক্যাল অ্যারেঞ্জমেন্ট’ অনুযায়ী, প্রত্যাবাসনের বিষয়ে সম্মত হওয়ার সময় থেকে দুই বছরের মধ্যে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে। প্রতি সপ্তাহে দেড় হাজার রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নিতে রাজি হয়েছে মিয়ানমার। 

মিয়ানমারের রাজধানী নেপিদোতে সোমবার থেকে জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের দীর্ঘ বৈঠকে চুক্তির খসড়া চূড়ান্ত হওয়ার পর মঙ্গলবার দুই পক্ষ তাতে সই করে বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। 

জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের দীর্ঘ বৈঠকে বাংলাদেশের নেতৃত্ব দেন পররাষ্ট্রসচিব শহীদুল হক। আর মিয়ানমারের নেতৃত্বে ছিলেন দেশটির পররাষ্ট্র সচিব মিন্ট থোয়ে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, ‘আন্তরিক পরিবেশে’ দুই পক্ষের ওই বৈঠকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য ‘ফিজিক্যাল অ্যারেঞ্জমেন্ট’ এর খসড়া চূড়ান্ত করা হয়। ওই খসড়া তৈরি করা হয় দুই দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত সম্মতিপত্র এবং যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনের দলিলের (টার্মস অব রেফারেন্স) ভিত্তিতে।

গত ২৫ অগাস্ট রাখাইনে নতুন করে সেনা অভিযান শুরুর পর এ পর্যন্ত ছয় লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। মিয়ানমারে নিপীড়নের মুখে গত কয়েক দশকে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়ে আছে আরও প্রায় চার লাখ রোহিঙ্গা।

সেনাবাহিনীর ওই অভিযান এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ নিয়ে ব্যাপক আন্তর্জাতিক সমালোচনার মুখে শরণার্থীদের ফেরত নিতে সম্মত হয় মিয়ানমার। রোহিঙ্গাদের ঘরে ফেরার পথ তৈরি করতে গত ২৩ নভেম্বর নেপিদোতে দুই দেশের মধ্যে একটি সম্মতিপত্র স্বাক্ষরিত হয়।

সেখানে বলা হয়, প্রথম দফায় শুধু এবার আসা শরণার্থীদেরই ফেরত নেবে মিয়ানমার। ওই সম্মতিপত্র স্বাক্ষরের তিন সপ্তাহের মধ্যে ‘জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ’ গঠন করে দুই মাসের মধ্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করা হবে এবং যত দ্রুত সম্ভব একটি সুনির্দিষ্ট চুক্তিতে সই করবে দুই দেশ।

তবে সেই ‘জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ’ গঠন করা হয় তিন সপ্তাহ পেরিয়ে যাওয়ার পর, গতবছর ১৯ ডিসেম্বর। ঢাকায় ওই বৈঠকেই যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের টার্মস অব রেফারেন্স ঠিক করা হয়।

সম্মতিপত্রে স্বাক্ষরের ৫৪ দিনের মাথায় দুই পক্ষ মঙ্গলবার ‘ফিজিক্যাল অ্যারেঞ্জমেন্ট’ চূড়ান্ত করল। আর প্রত্যাবাসন শুরুর জন্য সম্মতিপত্রে নির্ধারিত দুই মাস সময় শেষ হচ্ছে ২৩ জানুয়ারি।   

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, রোহিঙ্গাদের পরিচয় যাচাইয়ের জন্য একটি ফরমও চূড়ান্ত করা হয়েছে জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকে। ঠিক হয়েছে, পরিচয় যাচাই ও প্রত্যাবাসনের কাজটি হবে প্রতিটি পরিবারকে একটি ইউনিট ধরে। অনাথ ও ‘অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায়’ জন্ম নেওয়া শিশুদের প্রত্যাবাসনের বিষয়েও বলা হয়েছে চুক্তিতে।  

ওই চুক্তিতে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর জন্য সীমান্তে পাঁচটি ট্রানজিট ক্যাম্প খুলবে বাংলাদেশ। সেখান থেকে তাদের নিয়ে প্রাথমিকভাবে রাখা হবে মিয়ানমারের দুটি ক্যাম্পে। পরে সাময়িকভাবে তাদের থাকার ব্যবস্থা হবে হ্লা পো কুংয়ের অস্থায়ী ক্যাম্পে। পাশাপাশি ফিরে যাওয়া রোহিঙ্গাদের ভিটামাটিতে দ্রুততার সঙ্গে বাড়িঘর পুননির্মাণের ব্যবস্থা নেবে মিয়ানমার।   

বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের জিরো পয়েন্টে যে কয়েক হাজার রোহিঙ্গা অবস্থান করছে,তাদের দিয়েই প্রত্যাবাসন শুরু হতে পারে বলে আভাস পাওয়া গেছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মিয়ানমার সরকার মঙ্গলবারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তাদের বাসিন্দাদের বাংলাদেশে আসা বন্ধ করার ব্যবস্থা তারা নেবে।

রোহিঙ্গাদের যাচাই এবং প্রত্যাবাসন কাজের সুবিধার জন্য দুটি টেকনিক্যাল ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনের বিষয়েও দুই পক্ষ একমত হয়েছে।