মঙ্গলবার সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের উপস্থাপিত প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন এবং তাদের ভাসান চরে স্থানান্তরের সর্বশেষ অবস্থা নিয়ে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, “সরকারের উচ্চতম পর্যায়ের সিদ্ধান্তে গত ৪ ডিসেম্বর সম্পূর্ণ স্বেচ্ছা সম্মতির ভিত্তিতে এক হাজার ৬৪২ জন রোহিঙ্গার স্থানান্তর সম্পন্ন করা হয়।”
ভাসান চরের পরিবেশ এবং সুযোগ-সুবিধা দেখে ‘বেশিরভাগ রোহিঙ্গা সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন’ বলে প্রতিবেদনে জানানো হয়।
কক্সবাজারের শরণার্থী শিবির ও তার বাইরে অবস্থান নিয়ে থাকা প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে নিয়ে নানা সামাজিক সমস্যা সৃষ্টির প্রেক্ষাপটে দুই বছর আগে তাদের একটি অংশকে হাতিয়ার কাছে মেঘনা মোহনার দ্বীপ ভাসান চরে স্থানান্তরের পরিকল্পনা নেয় সরকার।
সে অনুযায়ী সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে ২৩১২ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রায় ১৩ হাজার একর আয়তনের ওই চরে ১২০টি গুচ্ছগ্রামের অবকাঠামো তৈরি করে এক লাখের বেশি মানুষের বসবাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ধাপে ধাপে সেখানে এক লাখ রোহিঙ্গাকে স্থানান্তরের পরিকল্পনা নেওয়া হয়।
এর প্রথম ধাপে গত শুক্রবার ১ হাজার ৬৪২ জন রোহিঙ্গার একটি দল নোয়াখালীর ভাসানচরে পৌঁছায়।
“এই স্থানান্তর প্রক্রিয়ার প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রমে, অথবা শরণার্থীদের শনাক্ত করার প্রক্রিয়ায় জাতিসংঘকে সম্পৃক্ত করা হয়নি। স্থানান্তরের সার্বিক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে জাতিসংঘের কাছে পর্যাপ্ত তথ্য নেই।”
পরে শুক্রবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে এ বিষয়ে ‘ভুল ব্যাখ্যা’ না দিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানায়।
কয়েক মাস আগে মালয়েশিয়া যেতে ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসা তিন শতাধিক রোহিঙ্গাকে সমুদ্র থেকে উদ্ধার করে আগেই ভাসানচরে নিয়ে রাখা হয়েছিল।
সংসদীয় কমিটি মনে করছে, ওই ৩০৬ জন রোহিঙ্গার নেতিবাচক প্রচারণার কারণেই ভাসান চরে রোহিঙ্গা স্থানান্তরে জাতিসংঘ অনড় অবস্থান দেখাচ্ছে। এজন্য গভীর সমুদ্র থেকে উদ্ধার করে ভাসান চরে নিয়ে যাওয়া ওই রোহিঙ্গাদের কক্সবাজারে বাবা-মা বা নিকট আত্মীয়ের কাছে পাঠিয়ে দেওয়ার সুপারিশ করেছে তারা।
বৈঠক শেষে সংসদীয় কমিটির সভাপতি মুহম্মদ ফারুক খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রোহিঙ্গাদের ভাসান চরে স্থানান্তরে জাতিসংঘের অনড় অবস্থানসহ সার্বিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। জাতিসংঘের এই অবস্থানের মূলে সমুদ্রে ভাসমান অবস্থা থেকে উদ্ধার করা ৩০৬ জন রোহিঙ্গা। তাদের নেতিবাচক প্রচারণার জন্য জাতিসংঘ এই অবস্থান দেখাচ্ছে।”
ফারুক খান বলেন, “ভাসান চরে যে এক হাজার ৬৪২ জন রোহিঙ্গাদের নেওয়া হয়েছে তারা পরিবেশ দেখে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। আমরা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এ বিষয়টি ব্যাপকভাবে প্রচার করতে বলেছি। শিগগিরই সেখানে আরও রোহিঙ্গা যাবে।”
বৈঠক সম্পর্কে সংসদ সচিবালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবর্তনে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা জোরদার করতে কমিটি সুপারিশ করে।
ফারুক খানের সভাপতিত্বে বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম, মো. আব্দুল মজিদ খান, নাহিম রাজ্জাক ও কাজী নাবিল আহমেদ অংশ নেন।