ভাসান চর: জাতিসংঘ জানাল, ‘পর্যাপ্ত তথ্য’ তারা পায়নি

কক্সবাজারের শরণার্থী শিবির থেকে ভাসান চরে যাওয়ার ক্ষেত্রে রোহিঙ্গারা যেন সব তথ্য জেনে স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারে, তা নিশ্চিত করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Dec 2020, 08:12 AM
Updated : 3 Dec 2020, 08:24 AM

বুধবার এক বিবৃতিতে এই বিশ্ব সংস্থা বলেছে, রোহিঙ্গাদের ভাসান চরে নেওয়ার যে পরিকল্পনা সরকার চূড়ান্ত করেছে, তার সঙ্গে জাতিসংঘের কোনো ধরনের সম্পৃক্ততা নেই।

“এই স্থানান্তর প্রক্রিয়ার প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রমে, অথবা শরণার্থীদের শনাক্ত করার প্রক্রিয়ায় জাতিসংঘকে সম্পৃক্ত করা হয়নি। স্থানান্তরের সার্বিক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে জাতিসংঘের কাছে পর্যাপ্ত তথ্য নেই।”

কক্সবাজারের শরণার্থী শিবির ও তার বাইরে অবস্থান নিয়ে থাকা প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে নিয়ে নানা সামাজিক সমস্যা সৃষ্টির প্রেক্ষাপটে দুই বছর আগে তাদের একটি অংশকে হাতিয়ার কাছে মেঘনা মোহনার দ্বীপ ভাসান চরে স্থানান্তরের পরিকল্পনা নেয় সরকার।

তবে সাগরের ভেতরে জনমানবহীন ওই চরে আশ্রয় নিতে রোহিঙ্গাদের অনাগ্রহের কারণে এতদিন তাদের সেখানে স্থানান্তর সম্ভব হয়নি।

আগামী সপ্তাহে রোহিঙ্গাদের প্রথম দলকে ভাসান চরে নিয়ে যাওয়ার কথা ইতোমধ্যে জানিয়েছে সরকারের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কার্যালয়।

দিনক্ষণ চূড়ান্ত না হওয়ার কথা জানিয়ে প্রত্যাবাসন কার্যালয়ের অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ সামছু দ্দৌজা গত সোমবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, “আগামী ৭-১০ দিনের মধ্যে রোহিঙ্গাদের একটি দলটি ভাসান চরে স্থানান্তরের যাবতীয় প্রস্তুতি চলছে।”

সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে ২৩১২ কোটি টাকা ব্যয়ে মোটামুটি ১৩ হাজার একর আয়তনের ওই চরে ১২০টি গুচ্ছগ্রামের অবকাঠামো তৈরি করে এক লাখের বেশি মানুষের বসবাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

মালয়েশিয়া যেতে ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসা তিন শতাধিক রোহিঙ্গাকে সমুদ্র থেকে উদ্ধার করে ইতোমধ্যে ভাসানচরে নিয়ে রাখা হয়েছে।

এরপর গত ৫ সেপ্টেম্বর কক্সবাজারের শরণার্থী ক্যাম্প থেকে রোহিঙ্গাদের একটি প্রতিনিধি দলকে দেখার জন্য ভাসান চরে পাঠানো হয়।

তারা ফেরার পর তাদের কথা শুনে রোহিঙ্গাদের একাংশ ভাসান চরে যেতে আগ্রহ প্রকাশ করে বলে জানানো হয় সরকারি কর্মকর্তাদের কাছ থেকে।

এক লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে ভাসান চরে স্থানান্তরে সরকারের যে পরিকল্পনা, সেটির সঙ্গে শুরু থেকে দূরত্ব রেখে চলেছে জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থাসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা।

রোহিঙ্গাদের প্রথম দলকে সেখানে নেওয়ার প্রস্তুতির মধ্যে বুধবার জাতিসংঘের বিবৃতিতে বলা হয়, স্থানান্তরের বিষয়ে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা যেন ‘প্রাসঙ্গিক, নির্ভুল এবং হালনাগাদ’ তথ্যের ওপর ভিত্তি করে স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন, তা নিশ্চিত করতে জাতিসংঘ বরাবরই আহ্বান জানিয়ে এসেছে এবং বর্তমান পরিস্থিতিতেও জাতিসংঘ এ বিষয়টির ওপর গুরুত্ব আরোপ করছে।

”ইতোপূর্বে বাংলাদেশ সরকার জানিয়েছে যে ওই দ্বীপে শরণার্থীদের স্থানান্তর হবে স্বেচ্ছামূলক। জাতিসংঘ এই গুরুত্বপূর্ণ প্রতিশ্রুতির প্রতি সম্মান প্রদর্শনের জন্য সরকারকে আহ্বান জানাচ্ছে।”

ভাসান চরে স্থানান্তরিত রোহিঙ্গাদের শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং জীবিকার নিশ্চয়তা বিধানের পাশাপাশি দ্বীপ থেকে মূল ভূখণ্ডে চলাচলের স্বাধীনতা দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে বিবৃতিতে।

”যে সকল শরণার্থী ভাসান চরে স্বেচ্ছায় স্থানান্তরিত হতে চাইবেন, ওই দ্বীপে তাদের শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং জীবিকার নিশ্চয়তা এবং দ্বীপ থেকে মূল ভূ-খণ্ডে চলাচলের স্বাধীনতাসহ সকল মৌলিক অধিকার, এবং মৌলিক সেবা নিশ্চিত করতে জাতিসংঘ গুরুত্ব আরোপ করেছে। এটি ভাসান চরে একটি কার্যক্ষম ও নিরাপদ জনপদের ভিত্তি হিসেবে কাজ করবে।”

স্থানান্তর ঘিরে আলোচনার প্রস্তাব দিয়ে জাতিসংঘ বলছে, “বাংলাদেশ সরকার ভাসান চর প্রকল্পের ঘোষণা দেওয়ার পর থেকে এই পরিকল্পনা সম্পর্কে সম্যক ধারণা সৃষ্টির লক্ষ্যে এবং গুরুত্বপূর্ণ নীতিগত, পদ্ধতিগত এবং বাস্তবায়ন সম্পর্কিত বিষয়গুলো বিবেচনার জন্য গঠনমূলক আলোচনার প্রস্তাব রেখেছে জাতিসংঘ। এই আলোচনা চালিয়ে যেতে জাতিসংঘ এখনও আগ্রহী।”

ভাসান চরে স্থানান্তর বিষয়ে আগে থেকে টেকনিক্যাল প্রোটেকশন এসেসমেন্ট করার প্রস্তাবও দিয়ে আসছে জাতিসংঘ।

সে প্রসঙ্গে বিবৃতিতে বলা হয়, “জাতিসংঘের এই নিরপেক্ষ মূল্যায়নে শরণার্থীদের বাসস্থান হিসেবে ভাসান চরের নিরাপত্তা, প্রায়োগিক সম্ভাব্যতা, স্থায়িত্ব এবং শরণার্থীদের সুরক্ষা কাঠামো এবং তাদের সহায়তা ও সেবা-গ্রহণের অবকাঠামোর সার্বিক পর্যালোচনা করা হবে।

”সরকারের অনুমোদন সাপেক্ষে, জাতিসংঘ প্রায়োগিক এবং সুরক্ষা বিষয়ক মূল্যায়ন করার জন্য প্রস্তুত রয়েছে। জাতিসংঘ সরকারের ভাসান চর প্রকল্প বাস্তবায়নে নিয়োজিত হতে পারবে কি না, সেটা নির্ধারণে এই মূল্যায়নগুলো সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হবে।”

আরও পড়ুন