কোভিড টিকা পেলেন প্রথম রোহিঙ্গা শরণার্থী মোহাম্মদ শফি

বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়ে থাকা মিয়ানমারের নিপীড়িত রোহিঙ্গারা প্রথমবারের মত এল কোভিড টিকার আওতায়।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 August 2021, 09:00 AM
Updated : 10 August 2021, 09:00 AM

করোনাভাইরাস প্রতিরোধে চলমান ৬ দিনের গণ টিকাদান কর্মসূচির চতুর্থ দিন মঙ্গলবার কক্সবাজারের একটি ক্যাম্পে ৬৪ বছর বয়সী রোহিঙ্গা শরণার্থী মোহাম্মদ শফিকে প্রথম কোভিড টিকা দেওয়া হয়।

মহামারীর বিরুদ্ধে সুরক্ষা দিতে গত ৭ ফেব্রুয়ারি দেশে টিকাদান শুরু হয়েছিল। এর ৬ মাস পর রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী সদস্যরা টিকা পাওয়া শুরু করলেন।

প্রথম পর্যায়ে ৫৫ বছর বা তার বেশি বয়সী ৪৮ হাজার ৪০০ জন রোহিঙ্গা এই টিকা পাবেন বলে জানিয়েছেন শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয়ের স্বাস্থ্য সমন্বয়কারী ডা. আবু তোহা।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “সকাল থেকে টিকাদান কর্মসূচি চলছে। আমরা তাদের আগেই টিকার রেজিস্ট্রেশন কার্ড বাসায় দিয়ে এসেছিলাম। সেটা নিয়েই তারা আসছেন।

সকাল থেকে রোহিঙ্গাদের জন্য খোলা বেশ কয়েকটি টিকাকেন্দ্র ঘুরে দেখার কথা জানিয়ে আবু ডা. তোহা বলেন, “সব কেন্দ্রই মানুষে পরিপূর্ণ।”

১৩ ও ১৫ অগাস্ট ছাড়া আগামী ১৮ অগাস্ট পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের টিকা দেওয়ার এই কর্মসূচি চলবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

"৫৫ বছরের বেশি বয়সী যারা, তারা সবাই টিকা পাবেন। এরপর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী টিকার পর্যাপ্ততার ভিত্তিতে অন্যদের টিকা দেওয়া হবে।”

২০১৭ সালে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনা অভিযানে ব্যাপক দমন-পীড়নের মধ্যে রোহিঙ্গারা পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে শুরু করে। তার আগে থেকেই বিভিন্ন সময়ে আসা কয়েক লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে বিভিন্ন ক্যাম্পে অবস্থান করছিলেন।

কক্সবাজার, টেকনাফ আর উখিয়ায় ৩৪টি ক্যাম্প মিলিয়ে মোট সাড়ে ৬ হাজার একর জমিতে গাদাগাদি করে বসবাস করছে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা।

সেখানে করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকানো না গেলে পরিস্থিতি যে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেবে, সে বিষয়ে শুরু থেকেই উদ্বেগ ছিল আন্তর্জাতিক মহলে।

বাংলাদেশে গতবছর মার্চের ৮ তারিখ প্রথম রোগী শনাক্ত হওয়ার ৩৭ দিনের মাথায় কক্সবাজারে প্রথমবারের মত একজন রোহিঙ্গার শরীরে সংক্রমণ ধরা পড়ে। তবে সব পক্ষের চেষ্টায় পরিস্থিতির বড় ধরনের অবনতি ঘটেনি।

সরকারি হিসাবে এখন পর্যন্ত প্রায় তিন হাজার রোহিঙ্গা কোভিডে আক্রান্ত হয়েছেন, মৃত্যু হয়েছে ২৯ জনের।

রোহিঙ্গারা আগ্রহ নিয়ে টিকা নিতে আসছেন জানিয়ে কক্সবাজার জেলার সিভিল সার্জন মাহবুবুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোরকে বলেন, “টিকা নেওয়ার জন্য তাদের যথেষ্ট আগ্রহ রয়েছে। তারা লাইনে দাঁড়িয়ে একে একে টিকা নিচ্ছে।"

উখিয়া ও টেকনাফের ৩৪টি ক্যাম্পের ৫৮টি টিকাকেন্দ্রে টিকাদান কর্মসূচি চলছে। সেখানে দেওয়া হচ্ছে চীনের সিনোফার্মের টিকা।

দেশে গত ৭ ফেব্রুয়ারি দেশে গণ টিকাদান শুরু হলেও ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে কেনা টিকা সময়মতো না পাওয়ায় তার গতি ব্যাহত হয়।

ভারত থেকে টিকা না আসায় চীন থেকে টিকা কিনছে সরকার। পাশাপাশি টিকা সরবরাহের বৈশ্বিক প্ল্যাটফর্ম কোভ্যাক্স থেকেও টিকা আসতে শুরু করেছে।

বর্তমানে দেশে মডার্না ও সিনোফার্মের পাশাপাশি দ্বিতীয় ডোজ হিসেবে অ্যাস্ট্রাজেনেকা এবং ফাইজারের টিকা দেওয়া হচ্ছে।

নতুন করে টিকা আসতে থাকায় বড় পরিসরে ভ্যাকসিন ক্যাম্পেইন করে বিরাট জনগোষ্ঠীকে টিকার আওতায় নিয়ে আসতেই পরীক্ষামূলক ধাপ হিসেবে গত শনিবার থেকে ৬ দিনের টিকা কর্মসূচি চলছে। এর মধ্যে প্রথম তিন দিনে ৪০ লাখের বেশি মানুষ প্রথম ডোজ টিকা পেয়েছেন।