সংবাদমাধ্যমে ‘অন্যায্য অনুমান, মিথ্যা প্রচার, তথ্যের বিকৃতি এবং ভুল ব্যাখ্যার’ অভিযোগ এনেছেন আনোয়ারা মাহবুব।
Published : 18 Apr 2024, 12:42 AM
ডেইলি স্টারের সাবেক নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আশফাকুল হকের বাসা থেকে ‘পড়ে’ শিশু গৃহকর্মী প্রীতি উরাংয়ের মৃত্যুর ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়ে দেশের ১১৭ নাগরিক যে বিবৃতি দিয়েছিলেন, তার নিন্দা জানিয়েছেন এই সাংবাদিকের মা আনোয়ারা মাহবুব।
ওই ঘটনাকে একটি ‘দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু’ হিসেবে বর্ণনা করে তিনি বিষয়টি নিয়ে “অন্যায্য অনুমান, মিথ্যা প্রচার, তথ্যের বিকৃতি এবং ভুল ব্যাখ্যার” অভিযোগ এনেছেন সংবাদমাধ্যমের বিরুদ্ধে।
বুধবার সংবাদমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, “আমি তদন্তকারীর কাছে সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানাই। এরই সাথে সাথে বাংলাদেশের সকল মিডিয়া হাউস এবং সমাজের সকল স্তরের মানুষের কাছে আবেদন জানাই যে আপনারা দয়া করে সঠিক উপায়ে তথ্য যাচাই-বাছাই এবং সত্যতা বিচার না করে আশফাক-তানিয়া সম্পর্কে কোনো মিথ্যাচার ছড়াবেন না এবং সুবিচার বাধাগ্রস্থ হয় এমন কোনো পরিবেশ সৃষ্টি করবেন না।”
গত ৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার মোহাম্মদপুরের একটি বহুতল ভবনের আট তলা থেকে পড়ে প্রীতি উরাং নামের ওই শিশু গৃহকর্মীর মৃত্যু হয়। সৈয়দ আশফাকুল হকের বাসায় গৃহ সহায়ক হিসেবে ছিল সে।
ভবনের নিচে তার লাশ মেলার পর স্থানীয়রা ‘প্রীতিকে হত্যা করা হয়েছে’ অভিযোগ করে এলাকায় বিক্ষোভ করেন। প্রীতির বাবা লোকেশ উরাং পরদিন মোহাম্মদপুর থানায় মামলা করেন। সৈয়দ আশফাকুল হক ও তার স্ত্রী তানিয়া খন্দকার এখন ওই মামলায় কারাগারে আছেন।
এর আগে ২০২৩ সালের ৬ অগাস্ট ওই বাসা থেকে পড়ে যায় ৭ বছর বয়সী শিশু গৃহশ্রমিক ফেরদৌসী। প্রাণে বাঁচলেও তার শারীরিক অবস্থা ভালো নয়।
ওই ঘটনায় মামলা হলেও সৈয়দ আশফাকুল হক ও তার স্ত্রী মামলা থেকে অব্যাহতি পেয়ে গেছেন ২ লাখ টাকায় আপসরফার মাধ্যমে।
বিষয়গুলো নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে গত ২ এপ্রিল দেশের ১১৭ নাগরিকের এক যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, “প্রীতি উরাংয়ের মৃত্যুকে হত্যাকাণ্ডের নামান্তর বলে আমরা মনে করি। কোনো প্রভাবশালী মহলের চাপে তদন্তকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করা হলে আমরা তা মেনে নেব না।”
একই দিনে ডেইলি স্টার এক প্রতিবেদনে তাদের নির্বাহী সম্পাদককে অব্যাহতি দেওয়ার কথা জানায়। তবে ডেইলি স্টার এর কারণ ব্যাখ্যা করেনি।
এর দুই সপ্তাহ পর সৈয়দ আশফাকুল হকের বড় ভাই, ডেইলি স্টারের সাবেক নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আনোয়ারুল হক ইমেইলের মাধ্যমে তাদের মায়ের বিবৃতি সংবাদমাধ্যমে পাঠান।
‘একজন মায়ের প্রতিবাদ এবং একটি বিনীত অনুরোধ’ শিরোনামে ওই বিবৃতিতে বলা হয়, প্রীতি উরাংয়ের মৃত্যু একটি বিশাল ধাক্কা হিসাবে আসে আশফাক-তানিয়া দম্পতির জন্য, যারা দুর্ঘটনার সময় ‘ঘুমিয়ে ছিল’।
“পরবর্তীতে তারা দুজনেই আইনের কাছে আত্মসমর্পণ করে। আশফাক দুর্ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে ফোন করে পুলিশকে খবর দেয়। পরে এই দম্পতিকে ৩০৪ ক ধারা বাংলাদেশ পেনাল কোড ১৮৬০ এর অধীনে অবহেলাজনিত মৃত্যুর দায়ে অভিযুক্ত করা হয়, যার তদন্ত এখনো চলছে এবং পুলিশ এখনও কোনও প্রতিবেদন জমা দেয়নি। গত ৭১ দিন ধরে আশফাক ও তানিয়াকে কারাগারে আটক রাখা হয়েছে।”
বিষয়টি নিয়ে ১১৭ জন নাগরিকের বিবৃতির সমালোচনা করে আনোয়ারা মাহবুব তার বিবৃতিতে বলেন, “আমি মনে করিয়ে দিতে চাই তদন্তের সময় এই বিবৃতিগুলি আদালত অবমাননার সমতুল্য কারণ এটি এখন বিচারের বিষয়।”
১১৭ নাগরিকের বিবৃতিতে পুলিশের বিরুদ্ধে ‘নিষ্ক্রিয়তার’ যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন সৈয়দ আশফাকের মা।।
তিনি বলেন, “দুর্ঘটনা ঘটার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই আমার ছেলে ও তার স্ত্রীকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়; পরের দিন দুপুর ২টার দিকে আদালতে হাজির করার আগে প্রায় ২৮ ঘণ্টা মোহাম্মদপুর থানায় আটকে রেখে পুলিশ তাদেরকে একাধিকবার জিজ্ঞাসাবাদ করে। পরে আদালত তাদের হাজতে প্রেরণ করে।
“পরে তাদের কারাগারের গেটে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় এবং পুলিশ হেফাজতে থাকাকালীন আবার চার দিনের জন্য জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পরে মামলাটি পুলিশের গোয়েন্দা শাখার কাছে হস্তান্তর করা হয়। গোয়েন্দারা আশফাক ও তানিয়াকে তাদের হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদ করে এবং পরবর্তীতে আদালতে হাজির করলে তাদেরকে কারাগারে প্রেরণ করে।”
১১৭ নাগরিকের বিবৃতিতে বলা হয়েছিল, “অভিযোগ রয়েছে আশফাকুল হকের স্ত্রী তানিয়া হক প্রায়ই তার বাসায় কর্মরত গৃহকর্মীদের মারধর করতেন। সর্বশেষ প্রীতিকে আট তলা থেকে ফেলে দিয়ে হত্যা করার অভিযোগ উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে।
“প্রীতির বাবা অভিযোগ করেছেন, ওই গৃহে কাজ করার সময় সৈয়দ আশফাকুল হকের পরিবার প্রীতিকে মা-বাবার সঙ্গে কথা বলতে দিত না। শিশুটি পড়ে যাবার আগে প্রায় ১৩ মিনিট ঝুলে ছিল এবং বাঁচার আকুতি জানিয়েছিল। কিন্তু আশফাকুল হকের বাসা থেকে কেউ তাকে সাহায্য করেনি। আশপাশের মানুষজন সাহায্যের জন্য এগিয়ে যেতে চাইলেও ওই বাড়ির নিরাপত্তারক্ষীরা তাদেরকে ভেতরে ঢুকতে দেয়নি।”
সেই বিবৃতিতে বলা হয়, “শিশুটি পড়ে যাওয়ার পরে ওই বাড়ির কেয়ারকেটার তাকে হাসপাতালে ফেলে চলে আসে। পরে সে মারা যায়। লক্ষ্যণীয় হলো, প্রীতির প্রাক-স্কুলের নথি এবং ওই ফ্ল্যাটের ওই সময়ের সিসি টিভি ফুটেজ দুটোই গায়েব হয়ে গেছে। এটাও লক্ষ্যণীয়, এজাহারে প্রীতির বয়স ১৩ বছরের বদলে ১৫ বছর বলে উল্লেখ করা হয়েছে এবং সেই সঙ্গে একে অবহেলাজনিত মৃত্যু বলে উল্লেখ করা হয়েছে।”
গৃহকর্মীকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার ওই অভিযোগ ‘স্পষ্টভাবে অস্বীকার’ করা হয়েছে সৈয়দ আশফাকের মায়ের বিবৃতিতে।
তিনি বলেছেন, “কোনো উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ, কোনও তদন্তকারী এবং এমনকি প্রীতি উরাং এর পরিবারের দায়ের করা মামলাটিও এই ধরনের দাবি করেনি। সুতরাং, কে উক্ত নাগরিকদের কাছে এবং কোন প্রমাণের ভিত্তিতে এই ধরনের অভিযোগ করেছে তা স্পষ্ট নয়।
“আমি জানতে চাই যে উক্ত ১১৭ জন নাগরিকের কাছে এমন কোনো প্রমাণ আছে যা নিশ্চিত করে যে প্রীতি ঐ ফ্ল্যাট থেকে পরে যাওয়ার আগে প্রায় ১৩ মিনিট ধরে গ্রিল থেকে ঝুলছিল। কীসের ভিত্তিতে উক্ত বিবৃতিতে দাবি করা হয়েছে যে আশফাকের বাড়ির সিসিটিভি ফুটেজটি হারিয়ে গেছে তাও স্পষ্ট নয়।”
সিসিটিভির ভিডিওর ব্যাখ্যায় আনোয়ারা মাহবুব লিখেছেন, “আশফাক ও তানিয়া তাদের বাড়ি থেকে মোবাইল ফোনে সরাসরি সম্প্রচারের জন্য শুধুমাত্র চাইনিজ একটি ক্যামেরা ব্যবহার করতেন যেমনটি আজকাল অনেক পরিবার ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান করে। যেহেতু এটি একটি লাইভ ক্যামেরা এবং কোনো ডিভাইস বা মেমোরি কার্ডে কোনো সংরক্ষিত ফুটেজ ছিল না, তাই এই ফুটেজ হারিয়ে যাওয়ার কোনো প্রশ্নই ওঠে না।”
আশফাকের বাসা থেকে পড়ে আরেক গৃহকর্মীর গুরুতর আহত হওয়ার প্রসঙ্গ ধরে ১১৭ নাগরিকের বিবৃতিতে বলা হয়েছিল, “সৈয়দ আশফাকুল হকের ওই ফ্ল্যাট থেকে ২০২৩ তারিখের ৬ আগস্ট ৭ বছরের আরো একজন গৃহকর্মী পড়ে গিয়েছিল বা লাফ দিয়েছিল। সে বেঁচে আছে। তার মেডিকেল রিপোর্টে উল্লেখ আছে, তার জননাঙ্গের গভীর থেকে পায়ুপথ পর্যন্ত ৩-৩-৩ সেন্টিমিটার দীর্ঘ-চওড়া-গভীর ক্ষত রয়েছে। তার জননাঙ্গে অপারেশন করা হয়েছে। সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, পড়ে যাবার আগেই সে দু’পায়ের মাঝে আঘাত পেয়েছিল। সেকারণে সে মরে যেতে চেয়েছিল। পরবর্তীতে ওই শিশুটির পরিবারের সঙ্গে ২ লাখ টাকায় বিষয়টির আপসরফা হয়েছে। যদিও টাকা মধ্যস্বত্বভোগীর কাছে চলে গেছে।”
এসব অভিযোগ নিয়ে আশফাকের মায়ের ভাষ্য: প্রজনন অঙ্গে ক্ষত নিয়ে দাবিটি ‘তীব্র আপত্তিকর’।
“২০২৩ সালের ৪ আগস্ট দুর্ঘটনার পর ফেরদৌসীকে যখন ঢাকা মেডিকেল কলেজে নেওয়া হয়, তখন ওইখানকার ডাক্তারগণ তার আঘাতটি এইভাবে রেকর্ড করেছেনঃ ‘ল্যাবিয়া মিনোরা থেকে এনাল স্ফিংক্টর পর্যন্ত মাঝখানে ৩ সেমি X ২ সেমি X ২ সেমি পরিমাপের একটি ক্ষত’। ‘ল্যাবিয়া মিনোরা’ শব্দটির সাথে পরিচিত যে কেউ জানবেন যে ল্যাবিয়া মিনোরা হল দুটি ছোট এবং পাতলা ত্বকের টিস্যু যা মহিলা প্রজনন অঙ্গের বাইরে অবস্থিত এবং এটি গভীরে অবস্থিত নয়।
“আমি বিস্মিত যে, এই ১১৭ জন নাগরিক, যাদের মধ্যে অনেকেই শিক্ষা, সাংবাদিকতা, গবেষণা, ফৌজদারি তদন্ত এবং আইনের ক্ষেত্রে অত্যন্ত সম্মানিত এবং দক্ষ, এই ধরনের সংবেদনশীল বিষয়ে তারা কীভাবে এই ধরনের ভুল দাবি করলেন, বিশেষ করে যখন পুলিশের তদন্ত চলছে।”
ফেরদৌসী পড়ে যাওয়ার আগেই আঘাত পেয়েছিল এবং সে কারণে সে নিজের জীবন নিজেই কেড়ে নেবার চেষ্টা করেছিল– এমন অভিযোগও মানতে রাজি নন আশফাকের মা।
তিনি বলেন, “এই ধরনের গুরুতর দাবি কি কেবল কোনো জায়গায় গিয়ে এবং বস্তুগত প্রমাণ ছাড়াই প্রতিষ্ঠিত করা যেতে পারে?
“মাসব্যাপী চলা তদন্তে মোহাম্মদপুর থানার পুলিশ আমার ছেলের কোনো অসঙ্গতি খুঁজে পায়নি এবং পরবর্তীতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেয়, যা পরে ফেরদৌসীর পরিবার এবং ঢাকার সিএমএম আদালত উভয়ই গ্র হণ করে। এরপর আদালত আশফাক ও তানিয়াকে খালাস করে দেয়।”
আনোয়ারা মাহবুব লিখেছেন, “ফেরদৌসী এবং তার পরিবারের জন্য আর্থিক সহায়তার ক্ষেত্রে বলতে চাই যে, এটি কখনই আদালতের বাইরে করা কোনো নিষ্পত্তি ছিল না। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, ট্রেজারি চালান নং ৩১০ এর মাধ্যমে শিশু আইন, ২০১৩ এর অধীনে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিচার বিভাগীয় অ্যাকাউন্টে সবার সম্মতিতে একটি নির্দিষ্ট অংকের অর্থ নভেম্বর ১, ২০২৩ এ জমা দেওয়া হয়।
“তাই সবার শেষে আমি উক্ত বিবৃতিতে করা সমস্ত মিথ্যা দাবি এবং ইঙ্গিত প্রত্যাখ্যান করি। এই ধরনের ধারাবাহিক অপপ্রচার কেবল সমাজকেই কলঙ্কিত করে না, বরং এই বিষয়ে তদন্তের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান এবংব্যাক্তিকেও প্রভাবিত করে।”
বিবৃতিতে তিনি লিখেছেন, “এখানে আমি মনে করিয়ে দিতে চাই সৈয়দ আশফাকুল হক এর স্ত্রী তানিয়া খন্দকারও একটি সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারের সন্তান। তানিয়া খন্দকার ভোলা জেলার ভাষাসৈনিক এবং মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক মরহুম খন্দকার আব্দুল মান্নানের মুক্তিযুদ্ধের শক্তিতে বলিয়ান একজন সুযোগ্য নাতনি।
“আমি নিজে কৃষিতে বিশেষ অবদানের জন্য ১৯৮০ এর দশকে প্রেসিডেন্ট পদকপ্রাপ্ত একজন কৃষিবিদ। আমার ছোট ছেলে আশফাক তার মুক্তিযোদ্ধা বাবার মতই জীবনে সবসময় নিয়ম, নীতি, নৈতিকতা ও আদর্শে আপোষহীন ছিলো এবং এখনো আছে।”
ছেলের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে অভিযোগ করে আনোয়ারা মাহবুব বিবৃতিতে বলেন, “আশফাক তার পেশাগত ৩৩ বছরের জীবনে বলিষ্ঠ ও নির্ভীক সাংবাদিকতার কারণে অনেকের হীন স্বার্থে আঘাতজনিত কারণে তার অনেক পেশাগত প্রতিদ্বন্দ্বী, প্রতিপক্ষ ও শত্রু সৃষ্টি হয়েছে বলে আমি ধারণা করছি।
“তাই সেইসব স্বার্থান্বেষী মহলের ঈর্ষা, ক্ষোভ, রোষের শিকার স্বরূপ নানাবিধ অলীক, কল্পিত, নির্জলা মিথ্যাচার ও অপপ্রচারের মাধ্যমে আশফাক-তানিয়া দম্পতিকে মিডিয়া ট্রায়ালের শিকার বানানো হচ্ছে এবং প্রাপ্য ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিতকরণের সুপরিকল্পিত প্রচেষ্টা বা অপপ্রয়াস চালানো হচ্ছে বলে আমি মনে করি।”
তিনি বলেন, “নানাবিধ বানোয়াট এবং কুরুচিপূর্ণ অপপ্রচারের কারণে উভয় পরিবারেরই বয়োবৃদ্ধ থেকে শুরু করে শিশুরা পর্যন্ত সামাজিক, মানসিক এবং দৈহিক ক্ষতির শিকার হচ্ছেন যা একটি সুষ্ঠ বিচার ব্যবস্থার পরিপন্থি। তাই এসব কুরুচিপূর্ণ এবং উদ্দেশ্যমূলক অপপ্রচারের বিরুদ্ধে আমি তীব্র প্রতিবাদ জানাই।”
ওই ঘটনার অবাধ, সুষ্ঠ, নির্মোহ ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে ‘প্রকৃত সত্য উদঘাটন ও তার ভিত্তিতে ন্যায় বিচার নিশ্চিত করার’ দাবি জানিয়েছেন ৮৫ বছর বয়সী এই মা।
তিনি বলেছেন, “আমি বাংলাদেশের আইনের প্রতি সম্পূর্ণ আস্থাশীল এবং আমি বিশ্বাস করি এই মামলায় সবার জন্য সুবিচার আমরা পাবোই।”
প্রীতি উরাংয়ের মৃত্যুর ঘটনার পরপরই সৈয়দ আশফাকুল হক ও তার স্ত্রীকে নিজেদের হেফাজতে নিয়েছিল পুলিশ। তারপর থেকে তারা কারাগারে। ফলে ঘটনা নিয়ে সরাসরি তাদের কোনো বক্তব্য সাংবদিকরা পাননি।
ফলে মায়ের বিবৃতির মাধ্যমে কার্র্যত ওই পরিবারের প্রথম কোনো বক্তব্য জানা গেল ঘটনার আড়াই মাস পর।
পাল্টা জবাব
১১৭ নাগরিকের বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারী লেখক ও গবেষক প্রিসিলা রাজ ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক ফারহা তানজীম তিতিলসহ কয়েকজন গত মাসে প্রীতি উরাংয়ের পরিবার ও গুরুতর আহত আরেক শিশুর বাড়ি গিয়ে তার সাথে কথা বলেন।
ওই বিবৃতিতে আনা অভিযোগ নিয়ে সৈয়দ আশফাকের মা যেসব প্রশ্ন তুলেছেন, সে বিষয়ে ফারহা তানজীম তিতিলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।
জবাবে তিনি বলেন, “তিনি (সৈয়দ আশফাকের মা) দাবি করেছেন আমাদের আনা অভিযোগ ভিত্তিহীন। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তিনি ঢাকা থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া হয়ে মৌলভীবাজার পর্যন্ত যথেষ্ট খোঁজখবর নিয়ে তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে আনা অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলার মধ্য দিয়ে মাতৃস্নেহ প্রদর্শন করছেন। তার ছেলেকে ও ছেলের বউকে সন্দেহ করার মত যথেষ্ট অভিযোগ আমরা পেয়েছি। তাদের বাসায় এমন ঘটনা একটি নয়, দুটি ঘটেছে।”
তিতিল বলেন, “প্রীতি উরাং ১৩ মিনিট ঝুলে ছিল, এটা দেখেছেন মোহম্মদপুরের ওই এলাকার বাসিন্দারা। এলাকাবাসীদের সঙ্গে আমরা কথাবার্তা বলেই এটা জেনেছি। আমাদের বিবৃতিতে সেটা স্পষ্ট করে বলা আছে।”
আশফাকের মায়ের মত ‘পুলিশের ওপর ভরসা রাখতে পারছেন না’ মন্তব্য করে এই শিক্ষক বলেন, “পুলিশ মামলাটিকে নিছক ‘অবহেলাজনিত মামলা’ বলে একটি এজাহার করিয়ে নিয়েছে প্রীতির বাবার কাছ থেকে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর থেকে যে শিশুটিকে কাজ করার জন্য আনা হয়েছিল তার বয়স ছিল সাত বছর। আমরা যৌক্তিক কারণেই শিশুটির নাম বলছি না। মেয়েটির ওপর যে ধরনের নির্যাতন হয়েছে বলে আমাদের ধারণা, তাতে নাম প্রকাশ না করাই ভালো। তার সামনে রয়েছে দীর্ঘ জীবন। তদুপরি সে শিশু।”
তিনি বলেন, “আশফাক সাহেবের বাসায় বারবার কেন শিশু গৃহকর্মী আনা হয়েছে? আমরা নিহত ও নির্যাতিত দুটি মেয়ে ছাড়াও আরো দুটি মেয়ের কথা জানি, যাদের প্রায় একই বয়সে এই বাসায় কাজ করতে আনা হয়েছিল।
“ব্রাহ্মণবাড়িয়ার শিশুটির ক্ষতের পরিমাণ আমরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে সংগ্রহ করা কাগজপত্রের ভিত্তিতে বলেছি। তর্কের খাতিরে যদি সৈয়দ আশফাকের মায়ের দাবি মেনে নিই, তিন সেন্টিমিটার ক্ষতের জায়গায় ক্ষতটি দুই সেন্টিমিটার হয়, তাহলে কি অপরাধ কমে যায়?”
পুরনো খবর...
প্রীতি উরাংয়ের মৃত্যু: ‘স্বাধীন, নিরপেক্ষ’ তদন্তের দাবিতে ১১৭ নাগরিকের বিবৃতি
গৃহকর্মীর মৃত্যু: নির্বাহী সম্পাদক আশফাককে বাদ দিল ডেইলি স্টার
প্রীতি উরাংয়ের মৃত্যু: সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার নিয়ে ‘সংশয়’
গৃহকর্মীর মৃত্যু: যা বললেন ডেইলি স্টার সম্পাদক
প্রীতি উরাংয়ের মৃত্যু: ডেইলি স্টার সম্পাদককে ‘খোলা চিঠি’
প্রীতি উরাং: মিরতিংগা থেকে যেভাবে মৃত্যুর কোলে
সেই ফেরদৌসীকে নিয়ে এখন দিশেহারা পরিবার, প্রয়োজন ভালো চিকিৎসা
গৃহকর্মীর মৃত্যু: জামিন পাননি সাংবাদিক আশফাক ও তার স্ত্রী
গৃহকর্মীর মৃত্যু: রিমান্ড শেষে কারাগারে সাংবাদিক আশফাক ও তার স্ত্রী
‘প্রীতির মৃত্যুতে জড়িতদের শাস্তি হলে অন্যরা সাহস পাবে না’
প্রীতির মৃত্যু: বিচার না পেলে ‘বৃহত্তর’ আন্দোলনের হুঁশিয়ারি
এভাবে কি গরিবের মেয়েকে ফালানো লাগে: প্রীতির মা
গৃহকর্মীর মৃত্যু: সাংবাদিক আশফাক ও তার স্ত্রী ৪ দিনের রিমান্ডে
প্রীতি উরাংয়ের মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার চাইলেন বাবা
গৃহকর্মীর মৃত্যু: সাংবাদিক আশফাক ও স্ত্রী কারাগারে
গৃহকর্মীর মৃত্যু: সাংবাদিক আশফাক ও স্ত্রীকে রিমান্ডে চায় পুলিশ