প্রীতি ডেইলি স্টারের নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আশফাকুল হকের বাসায় কাজ করত; ৬ ফেব্রুয়ারি ভবনের নিচ থেকে পুলিশ তার মরদেহ উদ্ধার করে।
Published : 12 Feb 2024, 10:52 PM
ঢাকার মোহাম্মদপুরে বহুতল ভবন থেকে পড়ে গৃহকর্মী প্রীতি উরাংয়ের মারা যাওয়ার ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করেছেন তার বাবা।
সোমবার দুপুরে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের মিতিংগা চা বাগানে কয়েকটি সংগঠনের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে উপস্থিত হয়ে লোকেশ উরাং এই দাবি জানান।
এ সময় প্রীতি উরাংয়ের মা, পরিবারের সদস্য ছাড়াও প্রতিবেশীরা উপস্থিত ছিলেন।
১৫ বছর বয়সী প্রীতি ওই ভবনের বাসিন্দা ডেইলি স্টারের নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আশফাকুল হকের বাসায় কাজ করত। ৬ ফেব্রুয়ারি ভবনের নিচ থেকে পুলিশ তার মরদেহ উদ্ধার করে। সে দুই বছর ধরে ওই বাসায় কাজ করছিল। তার বাড়ি মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার মিতিংগা গ্রামে।
এ ঘটনায় ‘অবহেলায় মৃত্যু সংগঠনের অপরাধে’ মামলার পর সৈয়দ আশফাকুল হক এবং তার স্ত্রী তানিয়া খন্দকারকে কারাগারে রয়েছেন।
প্রীতির মৃত্যুর পেছনে জড়িতদের বিচার দাবি করে রোববারও সচেতন নাগরিক সমাজ মৌলভীবাজারের ব্যানারে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
প্রীতি উরাংয়ের বাড়ির কাছে মিতিংগা চা বাগানে মানববন্ধনের আয়োজন করে উরাং ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষা কমিটি, চা শ্রমিকদের ১০ দফা বাস্তবায়ন সংগ্রাম কমিটি ও বাংলাদেশ ওরাওঁ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন।
বিক্ষোভ সমাবেশ পরবর্তীতে কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) মাধ্যমে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবিতে স্মারকলিপি দেয় উরাং ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষা কমিটি।
গৃহকর্মীর মৃত্যু: সাংবাদিক আশফাক ও স্ত্রী কারাগারে
‘উপর থেকে পড়ে’ গৃহকর্মীর মৃত্যু, স্ত্রীসহ সাংবাদিক থানায়
সমাবেশে প্রীতির বাবা লোকেশ উরাং বলেন, ডেইলি স্টারের মৌলভীবাজার জেলা প্রতিনিধি মিন্টু দেশোয়ারার কথাবার্তার মাধ্যমে তার মেয়ে আশফাকুল হকের বাসায় কাজের জন্য যায়।
শুরু থেকেই মেয়ের তেমন খোঁজ-খবর পাওয়া যেত না অভিযোগ করে লোকেশ বলেন, প্রীতির মৃত্যুর দিন মিন্টু দেশোয়ারা তাদের শ্রীমঙ্গল যেতে বলেন। শ্রীমঙ্গল যাওয়ার পর মেয়ে মারাত্মক অসুস্থ বলে তাদের ঢাকায় নিয়ে যায়। ঢাকা যাওয়ার পর সরাসরি তাদের থানায় নিয়ে যায়।
তিনি বলেন, “গিয়ে মেয়ের মৃত্যু সংবাদ শুনি। পরে মেয়ের মৃতদেহ নিয়ে বাড়ি চলে আসি। মেয়ের মৃত্যুর বিচার চাই।”
উরাং ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষা কমিটির কমলগঞ্জ উপজেলার সাধারণ সম্পাদক পূরণ উরাংয়ের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন সিপিবি মৌলভীবাজার জেলার সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য জহরলাল দত্ত, বাসদ জেলা কমিটির সদস্য ও চা শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক দীপংকর ঘোষ, চা শ্রমিকদের ১০ দফা বাস্তবায়ন সংগ্রাম কমিটির সমন্বয়ক এস এম শুভ, সাংবাদিক সীতারাম বিন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট জেলা কমিটির সভাপতি বিশ্বজিৎ নন্দীসহ প্রীতির প্রতিবেশীরা।
বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, সাংবাদিক মিন্টু দেশোয়ারা শিশু প্রীতিকে স্কুলে পাঠানোর বদলে সৈয়দ আশফাকুল হকের বাসায় কাজে পাঠিয়েছেন। তিনি প্রথমেই দেশের প্রচলিত আইনকে লঙ্ঘন করেছেন এবং সেখানে কাজের পরিবেশ ও নিরাপত্তা আছে কি-না সেটারও খোঁজ নেননি।
আর কোনো চা শ্রমিক সন্তান যাতে শিক্ষাজীবন থেকে ঝরে না পড়ে; পাশাপাশি তাদের জীবন ও জীবিকার উন্নয়নে মজুরি বৃদ্ধির লড়াই আরও শক্তিশালী করার আহ্বান জানান বক্তারা।
গত বছরের ৬ অগাস্টও একই ধরনের ঘটনা ঘটে আশফাকুল হকের বাসার। সেবার নয় বছরের এক শিশু গৃহকর্মী লাফিয়ে পড়ে গুরুতর আহত হয়। ওই ঘটনায় নির্যাতনের অভিযোগ এনে আশফাকুল হক, তার স্ত্রী তানিয়া হক ও শিল্পী নামের আরেক নারীকে আসামি করে মোহাম্মদপুর থানায় মামলা করেন শিশুটির মা।