“এ বিষয়ে আমরা প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিচারিক প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার অপেক্ষায় আছি,” বলেন তিনি।
Published : 16 Feb 2024, 12:57 AM
ডেইলি স্টারের নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আশফাকুল হকের ‘বাসভবন থেকে পড়ে’ কিশোরী গৃহকর্মীর মৃত্যুর ঘটনায় পত্রিকাটির অবস্থান জানিয়েছেন সম্পাদক মাহফুজ আনাম।
বৃহস্পতিবার রাত সোয়া ১২টায় তিনি এক বিবৃতিতে ১৫ বছর বয়সী প্রীতি উরাংয়ের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন।
মাহফুজ আনাম বলেছেন, “আমরা দ্ব্যর্থহীনভাবে বলতে চাই, ঘটনার সঙ্গে কে জড়িত তা বিবেচনায় না নিয়ে দ্য ডেইলি স্টার এ মামলার বিষয়ে বস্তুনিষ্ঠভাবে এবং সতর্কতা ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে প্রতিবেদন তৈরি ও প্রকাশ করবে; যেমনটি অন্য সব ক্ষেত্রে করে থাকে। আমাদের কোনো প্রতিবেদন কোনোভাবেই প্রভাবিত হবে না বা আমরা আমাদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে কোনো পক্ষপাতিত্ব দেখাব না।
“এ বিষয়ে আমরা প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিচারিক প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার অপেক্ষায় আছি। তবে পাঠকদেরও সতর্ক করতে চাই যে, কিছু ক্ষেত্রে ঘটনাটি বিকৃত ও অতিরঞ্জিত করে প্রকাশ করা হচ্ছে।”
গত ৬ ফেব্রুয়ারি সকাল ৮টার দিকে ঢাকার শাহজাহান রোডের জেনিভা ক্যাম্প সংলগ্ন ভবনের নবম তলার আশফাকুল হকের বাসা থেকে পড়ে মারা যান প্রীতি উরাং। মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার মিত্তিঙ্গা গ্রামের লোকেশ উরাংয়ের মেয়ে প্রীতি প্রায় দুই বছর ধরে ওই বাসায় গৃহ সহায়ক হিসেবে ছিলেন।
খবর পেয়ে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ মেয়েটির লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। সে সময় স্থানীয়রা ওই বাড়ির ফটকে জড়ো হয়ে ‘মেয়েটিকে হত্যা করা হয়েছে’ অভিযোগ করে বিক্ষোভ শুরু করে।
পরে আশফাক, তার স্ত্রী তানিয়াসহ তাদের পরিবারের ছয়জনকে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে এ দম্পতিকে রেখে বাকিদের ছেড়ে দেওয়া হয়।
৭ ফেব্রুয়ারি সকালে মোহাম্মদপুর থানায় এসে মামলা দায়ের করেন লোকেশ উরাং। আশফাকুল ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে ৩০৪ (ক) ধারায় অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগ করা হয়। সেদিন দুই আসামিকে তিন দিনের মধ্যে কারা ফটকে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন বিচারক। বর্তমানে মামলাটির তদন্তভার পড়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের হাতে।
ডেইলি স্টার সম্পাদক বলেন, “প্রীতির মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সৈয়দ আশফাকুল হক ও তার স্ত্রীকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়, ঢাকার একটি আদালত তাদের জামিন নামঞ্জুর করেন এবং বিজ্ঞ বিচারক তাদের কারাগারে পাঠান।
“পরে তাদের জেলগেইটে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় এবং আরেকজন বিজ্ঞ বিচারকের আদেশে বর্তমানে তারা চার দিনের রিমান্ডে রয়েছেন। আইনের এই যথাযথ প্রক্রিয়ায় কোথাও আমাদের কোনো ধরনের হস্তক্ষেপের চিহ্নও নেই। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, আইন কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ ছাড়া নিজস্ব গতিতেই চলবে।”
এ ঘটনা নিয়ে বক্তব্য দিতে দেরি হওয়ার ব্যাখ্যাও দিয়েছেন ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম।
“…গৃহকর্মী প্রীতি উরাংয়ের (১৫) মর্মান্তিক মৃত্যুর ১০ দিন পর বিষয়টি নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হওয়ায় আমি আন্তরিকভাবে ক্ষমাপ্রার্থী। হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ায় জরুরিভিত্তিতে আমাকে নয়া দিল্লিতে কার্ডিওলজিস্টের কাছে যেতে হয়েছিল।
“২৪ ঘণ্টা আগে আমি দেশে ফিরেছি এবং জনমনে উত্থাপিত কিছু প্রশ্ন, বিশেষ করে গত ৬ ফেব্রুয়ারি প্রীতি উরাংয়ের মৃত্যুর বিষয়ে দ্য ডেইলি স্টারের অবস্থান সম্পর্কে জানাতে আপনাদের সামনে এসেছি।”
তিনি বলেন, “নৈতিক সাংবাদিকতার প্রতি দায়বদ্ধতা সম্পর্কে যারা আমাদের প্রতিনিয়ত সচেতন করে চলেছেন, তাদের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। আমরা সমালোচকদেরও ধন্যবাদ জানাই, যারা মনে করেছেন যে, অভিযুক্ত ব্যক্তি দ্য ডেইলি স্টারের উচ্চপদে অধিষ্ঠিত থাকায় আমরা আমাদের মূল্যবোধ থেকে বিচ্যুত হতে পারি।
“আমরা তাদের প্রতিও কৃতজ্ঞ, যারা এ বিষয়ে আমাদের গৃহীত অবস্থান না দেখেই দ্য ডেইলি স্টারকে বিচার করেছেন।”
প্রীতির পরিবারের অভিযোগ, ‘নির্যাতন করে’ তাকে ‘হত্যা’ করা হয়েছে।
বিবৃতিতে মাহফুজ আনাম বলেন, “আমরা সব ধরনের শিশু নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত প্রতিবেদন প্রকাশ করছি এবং শিশুদের অধিকার সমুন্নত রাখতে দ্য ডেইলি স্টারের নীতিতে অটল রয়েছি।
“দরিদ্র, সুবিধাবঞ্চিত ও ছিন্নমূল মানুষের অধিকার সমুন্নত রাখার বিষয়ে আমরা অগ্রগামী এবং এই অবস্থান অক্ষুণ্ন থাকবে। সংখ্যালঘু, বিশেষ করে জাতিগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অধিকার সমুন্নত রাখা আমাদের অন্যতম মূলনীতি।”
গৃহকর্মীর মৃত্যু: সাংবাদিক আশফাক ও তার স্ত্রী ডিবির হাতে
‘প্রীতির মৃত্যুতে জড়িতদের শাস্তি হলে অন্যরা সাহস পাবে না’
প্রীতির মৃত্যু: বিচার না পেলে ‘বৃহত্তর’ আন্দোলনের হুঁশিয়ারি
এভাবে কি গরিবের মেয়েকে ফালানো লাগে: প্রীতির মা
গৃহকর্মীর মৃত্যু: সাংবাদিক আশফাক ও তার স্ত্রী ৪ দিনের রিমান্ডে
প্রীতি উরাংয়ের মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার চাইলেন বাবা
গৃহকর্মীর মৃত্যু: সাংবাদিক আশফাক ও স্ত্রী কারাগারে
গৃহকর্মীর মৃত্যু: সাংবাদিক আশফাক ও স্ত্রীকে রিমান্ডে চায় পুলিশ