ডেইলি স্টারের নির্বাহী সম্পাদক আশফাকুল হককে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়ার পাশাপাশি প্রীতি উরাং ও ফেরদৌসীর পরিবারকে ন্যায়বিচার পাওয়ার ক্ষেত্রে সহায়তা করার দাবি জানানো হয়েছে চিঠিতে।
Published : 18 Feb 2024, 03:21 PM
ঢাকার মোহাম্মদপুরে ডেইলি স্টারের নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আশফাকুল হকের বাসা থেকে ‘নিচে পড়ে’ গৃহকর্মীর মৃত্যুর ঘটনায় নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করেছে ‘নিপীড়নের বিরুদ্ধে শাহবাগ’ নামের একটি প্ল্যাটফর্ম।
কিশোরী গৃহকর্মীর মৃত্যুর ওই ঘটনা নিয়ে ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনামের বিবৃতির বিষয়বস্তুতে ‘হতাশা’ প্রকাশ করে তার কাছে একটি খোলা চিঠি দিয়েছে এই মঞ্চ।
‘নিপীড়নের বিরুদ্ধে শাহবাগ’ এর পক্ষে বাংলাদেশ যুব ইউনিয়নের সভাপতি খান আসাদুজ্জামান মাসুম রোববার গণমাধ্যমে এ চিঠি পাঠান।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা চিঠিটি ডেইলি স্টারকে মেইল করেছি। আজকে সরাসরি গিয়েও সম্পাদকের কাছে এটা দেওয়া হয়েছে।
“চিঠিতে অবিলম্বে আমরা ডেইলি স্টারের নির্বাহী সম্পাদক আশফাকুল হককে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি এবং নিহত গৃহকর্মী প্রীতি উরাং ও আরেক গৃহকর্মী ফেরদৌসির পরিবারকে ন্যায়বিচার পাওয়ার ক্ষেত্রে সহায়তা দেওয়ার দাবি জানিয়েছি।“
ডেইলি স্টার সম্পাদকের ব্যক্তিগত সহকারী মাহাদী হাসান রাতুল জানিয়েছেন, ‘নিপীড়নের বিরুদ্ধে শাহবাগ’ এর দেওয়া ওই চিঠি তিনি হাতে পেয়েছেন।
গত ৬ ফেব্রুয়ারি সকালে মোহাম্মদপুরের শাহজাহান রোডে জেনিভা ক্যাম্প সংলগ্ন একটি ভবনের নবম তলায় আশফাকুল হকের ‘বাসা থেকে পড়ে’ মারা যান প্রীতি উরাং। মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার মিত্তিঙ্গা গ্রামের লোকেশ উরাংয়ের মেয়ে প্রীতি প্রায় দুই বছর ধরে ওই বাসায় গৃহ সহায়ক হিসেবে ছিলেন।
প্রীতির মৃত্যুর পর স্থানীয়রা ওই বাড়ির ফটকে জড়ো হয়ে ‘মেয়েটিকে হত্যা করা হয়েছে’ অভিযোগ করে বিক্ষোভ শুরু করে। পরে আশফাক, তার স্ত্রী তানিয়াসহ পরিবারের ছয়জনকে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে এ দম্পতিকে রেখে বাকিদের ছেড়ে দেওয়া হয়।
প্রীতির মৃত্যুর পরদিন ঢাকার মোহাম্মদপুর থানায় তারা বাবা মামলা করেন। আশফাক ও তানিয়ার অবহেলায় ওই কিশোরীর মৃত্যু হয়েছে বলে সেখানে অভিযোগ করা হয়।
ওই মামলায় তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডে পাঠিয়েছে আদালত। মামলাটির তদন্তভার দেওয়া হয়েছে গোয়েন্দা পুলিশের হাতে।
ওই ঘটনার দশদিন পর ডেইলি স্টারের অবস্থান জানিয়ে বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে প্রীতি উরাংয়ের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেন সম্পাদক মাহফুজ আনাম।
‘নিপীড়নের বিরুদ্ধে শাহবাগ’ এর চিঠিতে বলা হয়, গত বছরে আশফাকুল হকের বাসা থেকে পড়ে গিয়ে ৭ বছর বয়সী আরেক গৃহকর্মী ফেরদৌসী আহত হয়েছিল। সে বিষয়টি ডেইলি স্টার সম্পাদক ‘বেমালুম’ চেপে গেছেন।
মাহফুজ আনামকে উদ্দেশ করে চিঠিতে বলা হয়েছে, “(এটা) আপনার মত একজন বলিষ্ঠ সম্পাদকের কাছ থেকে অপ্রত্যাশিত। আমরা যারপরনাই হতাশ হয়েছি। আমরা মনে করি, সত্য প্রকাশের বিপরীতে এই বক্তব্য দিয়ে আপনি এক ধরনের বিভ্রান্তি সৃষ্টির অপচেষ্টা করেছেন মাত্র।”
বিবৃতিতে ডেইলি স্টার সম্পাদক বলেছিলেন, “অভিযুক্ত ব্যক্তি দ্য ডেইলি স্টারের নির্বাহী সম্পাদক হওয়ার কারণে শীর্ষ ইংরেজি দৈনিক পত্রিকা হিসেবে আমরা কি তদন্ত প্রক্রিয়ায় কোনোভাবে প্রভাব বিস্তার করছি?”
সেই প্রসঙ্গ ধরে চিঠিতে বলা হয়, “প্রদত্ত বিবৃতিটি অভিযুক্তের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করা ছাড়া আর কিছুই নয়। এটি একটি প্রভাবশালী পত্রিকার প্রভাব বিস্তারের দুরভিসন্ধি বটে। দ্বিতীয়বার একই ধরনের ঘটনার অবতারণা হলেও একই অভিযুক্ত আশফাকুল হককে দ্য ডেইলি স্টারের নির্বাহী সম্পাদকের পদে বহাল রাখা প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা নয় কি?
“একটি নিরপেক্ষ ও নির্মোহ তদন্তের স্বার্থে আশফাকুল হককে নির্বাহী সম্পাদকের পদ থেকে অপসারণ করে বিবৃতি প্রকাশ করা হলে, সম্পাদক হিসেবে দায়িত্বশীলতা প্রমাণিত হত।”
মাহফুজ আনামের উদ্দেশে চিঠিতে বলা হয়, “একই ব্যক্তির বিরুদ্ধে পরপর একই ধরনের দুটি অভিযোগ উঠে এসেছে, যা আপনি অনুধাবনে ব্যর্থ হয়েছেন। অভিযোগটি বিচারাধীন থাকার পরও আপনি তা বিবৃতিতে উল্লেখ করেননি।
“এমনকি আপনার পত্রিকার পক্ষ থেকে অন্যান্য ঘটনার মত এই দুটি ঘটনায় সরেজমিন অনুসন্ধান করে বিশ্লেষণধর্মী ও তুলনামূলক আলোচনার প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়নি, যা পত্রিকার পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ।“
‘নিপীড়নের বিরুদ্ধে শাহবাগ’ তাদের চিঠিতে বলছে, “আমাদের জানার আগ্রহ, আপনি কি এই অভিযোগগুলো বিষয়ে কোনো প্রকার অনুসন্ধান করেছেন? অনুসন্ধান করেছেন কি কীভাবে ৭ বছরের ফেরদৌসীর পড়ে যাওয়ার ঘটনায় মোহাম্মদপুর থানার তদন্তকারী কর্মকর্তা তথ্যগত ভুল প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করেছে?
“কেন বার বার একই বাড়িতে এমন ঘটনা ঘটছে- বিষয়টি কি একটি দায়িত্বশীল গণমাধ্যম হিসেবে আপনি বিবেচনায় নিয়েছেন? যখন একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে তখন উপযুক্ত আইনি সহযোগিতা প্রদানের জন্য প্রীতির পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন?”