২০১৯ সালে প্রথমবারের মতো ব্ল্যাক হোলের ছবি তোলে ‘ইভেন্ট হরাইজন’ টেলিস্কোপ। ব্ল্যাক হোল সম্পর্কে বিজ্ঞানীদের জ্ঞানকে আরও গভীর করে তুলেছে এই আবিষ্কার।
Published : 20 Jan 2025, 06:04 PM
বিভিন্ন অ্যাডভেঞ্চারের মধ্যে মানুষের জন্য অন্যতম সেরা অভিযান হচ্ছে মহাকাশ অনুসন্ধান বা গবেষণা। পৃথিবীর গণ্ডি পেরিয়ে মহাবিশ্বের রহস্য উন্মোচন করতে সাহায্য করছে এটি। মহাবিশ্ব কোথা থেকে এসেছে ও কীভাবে এর শুরু তা বুঝতে বিজ্ঞানীদের সাহায্য করে চলেছে মহাকাশ গবেষণা।
কোটি কোটি বছর আগের আলো ধারণ করা শক্তিশালী টেলিস্কোপ থেকে শুরু করে অন্যান্য গ্রহের ওপর চালানো রোবোটিক মিশন পর্যন্ত বিভিন্ন মহাকাশ গবেষণা মহাবিশ্বের উৎপত্তি সম্পর্কে বিজ্ঞানীদের নতুন নতুন সূত্র দিয়েছে। তবে এমনটি কীভাবে সম্ভব হচ্ছে ও কীভাবে এসব তথ্য বের করছেন গবেষকরা?
মহাবিশ্বের শুরু ‘বিগ ব্যাং’ দিয়ে, যা প্রায় ১৩.৮ বিলিয়ন বা এক হাজার তিনশ ৮০ কোটি বছর আগে ঘটে যাওয়া এক বিশাল আকারের বিস্ফোরণ। এ ঘটনাটিই বর্তমানে আমাদের দেখা সব ধরনের পদার্থ, শক্তি ও স্থান তৈরি করেছে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, মহাবিশ্ব একেবারে শুরুতে কেমন ছিল এবং কীভাবে এটি বিবর্তিত হয়ে আজকের ছায়াপথ, তারা ও বিভিন্ন গ্রহে পরিণত হয়েছিল তা তারা জানতে চাইছেন।
মহাকাশ গবেষণায় বড় সাফল্য এনেছে যুক্তরাষ্ট্রের মাহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার হাবল স্পেস টেলিস্কোপ ও জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ বা জেডব্লিউএসটি-এর মতো টেলিস্কোপগুলো।
এসব টেলিস্কোপকে মহাবিশ্বের প্রাথমিক ও দূরের বিভিন্ন অংশ পর্যবেক্ষণ করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে।
আলোর গতিতে ভ্রমণ করলে সময় লাগে না এমন ধারণা সত্যি নয়। ফলে, দূরবর্তী কোনো ছায়াপথের দিকে দেখার বিষয়টি সময়ের দিকে ফিরে তাকানোর মতোই। যেমন– ২০২২ সালে বিগ ব্যাংয়ের কেবল কয়েকশ মিলিয়ন বছর পরে গঠিত ছায়াপথের ছবি তুলেছিল জেডব্লিউএস টেলিস্কোপটি। এ আলো গবেষণা করে প্রাথমিক মহাবিশ্বের অবস্থা সম্পর্কে জানতে পারেন বিজ্ঞানীরা। যেমন– প্রথম তারার গঠন ও এগুলো যে উপাদান দিয়ে তৈরি তা সম্পর্কে।
ব্ল্যাক হোল, ডার্ক ম্যাটার ও ডার্ক এনার্জির মতো মহাজাগতিক বিভিন্ন ঘটনা গবেষণা করে মহাবিশ্বের গঠনমূলক বিভিন্ন উপাদান বুঝতে বিজ্ঞানীদের সাহায্য করতে পারে মহাকাশ গবেষণা। মহাকাশের বিস্ময়করকম ঘন অঞ্চল ব্ল্যাক হোল, যেখানে মাধ্যাকর্ষণ এত শক্তিশালী যে আলোও এই অঞ্চল থেকে বেরিয়ে আসতে পারে না।
স্যাটেলাইট ও টেলিস্কোপের সাহায্যে এসব রহস্যময় বস্তু পর্যবেক্ষণ করলে ছায়াপথ গঠনে ও মহাবিশ্বের সম্প্রসারণকে প্রভাবিত করার ক্ষেত্রে এদের ভূমিকা বুঝতে পারবেন গবেষকরা। ২০১৯ সালে প্রথমবারের মতো ব্ল্যাক হোলের ছবি তোলে ‘ইভেন্ট হরাইজন’ টেলিস্কোপ। ব্ল্যাক হোল সম্পর্কে বিজ্ঞানীদের জ্ঞানকে আরও গভীর করে তুলেছে এই আবিষ্কার।
মহাবিশ্ব সম্পর্কে বোঝার ক্ষেত্রে মহাকাশ গবেষণার আরেকটি উপায় হচ্ছে মহাজাগতিক বিকিরণ গবেষণা করে এমন বিভিন্ন মিশন। এর মধ্যে রয়েছে বিগ ব্যাং থেকে আসা অবশিষ্ট ছোট আকারের বিকিরণ। যাকে বলা হচ্ছে ‘কসমিক মাইক্রোওয়েভ ব্যাকগ্রাউন্ড’ বা সিএমবি।
‘সিএমবি’-এর বিস্তারিত মানচিত্র তৈরি করেছে ‘প্ল্যাঙ্ক’ মহাকাশযানের মতো বিভিন্ন স্যাটেলাইট, যেখানে তিন লাখ ৮০ হাজার বছরের সময়ের মহাবিশ্বের একটি স্ন্যাপশট তুলে ধরেছে এটি। এই বিকিরণ বিশ্লেষণ করে মহাবিশ্বের বয়স, এর সম্প্রসারণের হার ও এর গঠন সম্পর্কে জানতে পেরেছেন বিজ্ঞানীরা। যার মধ্যে রয়েছে রহস্যময় ডার্ক ম্যাটার ও ডার্ক এনার্জি, যা তৈরি করে মহাবিশ্বের বেশিরভাগ অংশ।
সৌরজগৎ কীভাবে গঠিত হয়েছে তা গবেষণার জন্য অন্যান্য গ্রহ ও এর চাঁদও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বিভিন্ন মহাকাশ মিশনে। ২০২০ সালে নাসার ‘পারসিভ্যারেন্স’ রোভার এমন নমুনা সংগ্রহ শুরু করেছে, যা মঙ্গল গ্রহে কখনও প্রাণের জন্য উপযোগী পরিস্থিতি ছিল কি না তার আভাস দিতে পারে। এসব গ্রহ কীভাবে তৈরি ও বিবর্তিত হয়েছে তা বোঝার মাধ্যমে মহাবিশ্ব কীভাবে নিজেকে সংগঠিত করেছে তা-ও জানা যেতে পারে।
বিজ্ঞানের এতো অগ্রগতির পরও মহাবিশ্ব সম্পর্কে এখনও অনেক রহস্য জানা বাকি রয়ে গেছে। যেমন– বিগ ব্যাং এর কারণ কি? ডার্ক এনার্জি কী ও কেন এটি মহাবিশ্বের দ্রুত সম্প্রসারণ ঘটাচ্ছে? ‘ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি’র ইউক্লিড টেলিস্কোপের মতো ভবিষ্যতের বিভিন্ন মিশনের লক্ষ্য হচ্ছে ডার্ক এনার্জি খতিয়ে দেখা।
মহাকাশ গবেষণার বিষয়টি কেবল শূন্যে রকেট ও রোবট পাঠানোর চেয়ে আরও বেশি কিছু। মহাবিশ্ব কোথা থেকে শুরু ও আশপাশের সবকিছু কীভাবে তৈরি হয়েছিল তা বোঝার এক অন্যন্য যাত্রা এই মহাকাশ গবেষণা।