ভুট্টার প্রোটিনের বিভিন্ন বিল্ডিং ব্লকে রয়েছে অ্যামিনো অ্যাসিড, যা ব্যাটারির বিভিন্ন লিথিয়াম আয়নকে আরও সক্ষমতার সঙ্গে চলতে সহায়তা করে।
Published : 17 Apr 2025, 08:51 PM
লিথিয়াম সালফার ব্যাটারিকে আরও কার্যকর ও দীর্ঘমেয়াদি করে তুলতে পারে ভুট্টা– নতুন এক গবেষণায় এমনই দাবি করেছেন গবেষকরা।
কর্ন বা ভূট্টার প্রোটিন ব্যবহার করে ব্যাটারিকে আরও কার্যকর করার নতুন এক উপায় উদ্ভাবন করেছেন ‘ওয়াশিংটন স্টেট ইউনিভার্সিটি’ বা ডব্লিউএসইউ-এর একদল গবেষক।
এ অগ্রগতি বিদ্যুচ্চালিত গাড়ি বা ইভি, নবায়নযোগ্য বা পরিবেশবান্ধব শক্তি ব্যবস্থা ও অন্যান্য ডিভাইসের জন্য আরও ভাল ব্যাটারি তৈরিতে সহায়তা করতে পারে। পাশাপাশি সেগুলোকে আরও পরিবেশবান্ধব করে তুলবে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ।
বহুল ব্যবহৃত লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারির একটি গুরুত্বপূর্ণ বিকল্প হিসেবে বিবেচনা করা হয় লিথিয়াম সালফার ব্যাটারিকে। এরা হালকা প্যাকেজে বেশি শক্তি সঞ্চয় করতে পারে এমন উপাদান ব্যবহার করে যা সাশ্রয়ী ও পরিবেশের জন্য কম বিষাক্ত।
যেমন– এরা লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারিতে ব্যবহৃত কোবাল্ট বা নিকেলের মতো বিভিন্ন ভারী ধাতুর বদলে সালফার ব্যবহার করে, যা পরিবেশে সহজে মেলে, সাশ্রয়ী ও কম ক্ষতিকর।
এসব সুবিধার পরও লিথিয়াম সালফার ব্যাটারি এখনও ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়নি। এর একটি সমস্যা হচ্ছে, ‘শাটল এফেক্ট’। এ কারণে, ব্যাটারির ভেতরে সালফার উপাদান লিক হয়ে ব্যাটারি দ্রুত নষ্ট হতে পারে।
আরেকটি সমস্যা হচ্ছে, ব্যাটারির লিথিয়াম দিকটি কখনও কখনও তীক্ষ্ণ স্পাইক তৈরি করে। যাকে ‘ডেনড্রাইটস’ বলা হয়। এটি ব্যাটারিকে শর্ট সার্কিট করতে পারে ও এর ব্যবহারকে বিপজ্জনক করে তুলতে পারে।
এসব সমস্যা সমাধানে ভুট্টা প্রোটিন ব্যবহার করে নতুন ধরনের ব্যাটারি উপাদান তৈরি করেছেন ডব্লিউএসইউ’র গবেষকরা। এ প্রাকৃতিক উপাদানটিকে কিছুটা নমনীয় প্লাস্টিকের সঙ্গে যোগ করে পাতলা একটি স্তর তৈরি করেছেন তারা, যা বিভাজক হিসেবে হিসেবে ব্যাটারির মাঝখানে বসে।
গবেষকরা বলছেন, এই ভুট্টানির্ভর বিভাজকটি প্রতিরক্ষামূলক বাধার মতো কাজ করে ব্যাটারিতে, যা সালফারের লিক বন্ধ করে ও বিপজ্জনক লিথিয়াম স্পাইক তৈরি হতে বাধা দেয়।
তাদের নতুন নকশাটি একটি ছোট ও বোতাম আকারের ব্যাটারিতে পরীক্ষা করে দেখেছে গবেষণা দলটি। এটি পাঁচশ বার চার্জের পরও সন্তোসজনক সময় পর্যন্ত চার্জ ধরে রাখতে পারে এটি। যার মানে হচ্ছে, বাস্তব ব্যবহারে অনেক বেশি সময় ধরে টিকে থাকতে পারে এটি।
এ গবেষণার প্রধান গবেষকদের একজন অধ্যাপক কেটি ঝংয়ের মতে, এ পদ্ধতিটি সহজ ও কার্যকর। তিনি বলেছেন, গবেষণার এসব ফলাফল ‘চমৎকার’ ও ভবিষ্যতে ব্যাটারির উন্নয়নের জন্য ভালো কাজ করবে।
মূল বিষয় হচ্ছে, ভুট্টার প্রোটিনের বিভিন্ন বিল্ডিং ব্লকে রয়েছে অ্যামিনো অ্যাসিড। এসব অ্যাসিড ব্যাটারির বিভিন্ন উপাদানের সঙ্গে এমনভাবে মিথস্ক্রিয়া করে, যা ব্যাটারির বিভিন্ন লিথিয়াম আয়নকে আরও সক্ষমতার সঙ্গে চলতে সহায়তা করে ও এর শাটল প্রভাবকে থামিয়ে দেয়।
কিন্তু এসব প্রোটিন অণু প্রাকৃতিকভাবে ফোল্ড করা হয়, যা এদের কার্যকারিতাকে সীমিত করে। এদের ফ্ল্যাট করতে ও কর্মসক্ষমতা বাড়ানোর জন্য এতে অল্প পরিমাণে প্লাস্টিক যোগ করেছেন গবেষকরা।
এখন ব্যাটারির ভেতরে এসব ভুট্টার প্রোটিন কীভাবে কাজ করে ও নির্দিষ্ট কোন ধরনের অ্যামিনো অ্যাসিড সবচেয়ে সহায়ক তা আরও ভালো ভাবে খুঁজে দেখছে গবেষণা দলটি।
গবেষণাটি প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘সায়েন্স ডাইরেক্ট’-এ।