“জাকারবার্গের যে বিষয়টি আমি সবচেয়ে বেশি পছন্দ করি তা হচ্ছে তার অবিচল প্রত্যয়। তিনি কখনোই কিছুই অর্ধেক করে ছেড়ে দেন না, সেটি ব্যবসায় হোক বা জীবনে।”
Published : 17 Apr 2025, 07:06 PM
যুক্তরাষ্ট্রের সাময়িকী টাইম-এর ১০০ প্রভাবশালী ব্যক্তির তালিকায় উঠে এসেছে মার্কিন ধনকুবের ও প্রযুক্তি টাইকুন ইলন মাস্কের নাম। তালিকায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম জায়ান্ট মেটা প্রধান মার্ক জাকারবার্গও।
২০২৫ সালের এই তালিকা বুধবার প্রকাশ করেছে সাময়িকীটি, যেখানে ‘লিডার্স’ শ্রেণিতে পঞ্চম স্থানে রয়েছেন মাস্ক। মার্কিন এই ধনকুবেরের পরই এ তালিকায় আছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান মুহাম্মদ ইউনূস।
প্রভাবশালীর তালিকায় ‘টাইটানস’ শ্রেণিতে দশম স্থানে উঠে এসেছে আমেরিকান পডকাস্টার, ইউএফসি’র ভাষ্যকার, কৌতুক অভিনেতা, অভিনেতা ও সাবেক টেলিভিশন উপস্থাপক জো রোগানের নাম।
একই শ্রেণিতে ১২তম স্থানে রয়েছেন মেটা প্রধান ও ফেইসবুকের সহ প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ। এদিকে, ‘পাইওনিয়ার্স’ শ্রেণিতে ১১ তম স্থানে রয়েছেন ডিপসিক-এর সিইও লিয়াং ওয়েনফেং।
ইলন মাস্ক
ম্যাগাজিনে মাস্ককে নিয়ে মুখবন্ধ লিখেছেন টাইম-এর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক সাইমন শুস্টার। তিনি বলেছেন, উল্কাপিণ্ডের আঘাতের মতো ইলন মাস্কের বিস্ময়কর উত্থানের সঙ্গে সঙ্গে উন্মত্ত এক শক্তির তীব্র প্রভাব দেখা গিয়েছে তার মধ্যে, যা সাধারণত নতুন চ্যালেঞ্জ গ্রহণের সময় মাস্কের ওপর এসে ভর করে।
মাস্কের জীবনের সময়কে তার ‘ডেমন মোড’ হিসাবে বর্ণনা করেছেন ম্যাগাজিনটির সাবেক সম্পাদক ওয়াল্টার আইজ্যাকসন। তিনি বলেছেন, মাস্কের জীবনে কয়েকটি সেরা অর্জন রয়েছে। যার মধ্যে আছে, মার্কিন গাড়ি নির্মাতা কোম্পানি টেসলায় বিদ্যুচ্চালিত গাড়ির পুনর্নির্মাণ, টুইটার অধিগ্রহণ, বা রকেট কোম্পানি স্পেসএক্স-এর মাধ্যমে মহাবিশ্ব যাত্রা।
ডনাল্ড ট্রাম্প ও অন্যান্য রিপাবলিকান প্রার্থীদের নির্বাচিত করতে ২০২৪ সালে প্রায় ২৯ কোটি ডলার খরচ করেছেন মাস্ক। মার্কিন সংস্থা ‘ডিপার্টমেন্ট অফ গভর্নমেন্ট এফিসিয়েন্সি’ বা ডিওজিই-এর প্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। ফেডারেল আমলাতন্ত্রকে ভেঙে ফেলার কাজে এই একই শক্তি প্রয়োগ করতে দেখা গিয়েছে তাকে।
দক্ষতার নামে কয়েকটি সরকারি সংস্থায় কাজ করেন এমন হাজার হাজার কর্মীকে ছাঁটাই করেছেন এবং কয়েকটি বিভাগও পুরোপুরি বন্ধ করারও চেষ্টা করেছেন মাস্ক। জনগণের কাছে তীব্র সমালোচনার পরও তার এমন প্রচেষ্টাকে সাধুবাদ জানিয়েছেন ট্রাম্প। মাস্কের ‘ডেমন মোড’ যতটা গড়েছে তার চেয়ে অনেক বেশি ধ্বংস করেছে, লিখেছেন শুস্টার।
জো রোগান
জো রোগানকে নিয়ে ম্যাগাজিনে মুখবন্ধ লিখেছেন আমেরিকান টেলিভিশন উপস্থাপক ও কথক মাইক রো। তিনি বলেছেন, “রোগানের সঙ্গে সাক্ষাৎকারের প্রতিটি মুহূর্ত আমি উপভোগ করেছি। তিন ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে, আমরা নিজেরাই নিজেদের মধ্যে আড্ডা দিয়েছি। তিনি কিন্তু আমার সাক্ষাৎকার নেননি।”
কৌতুক অভিনেতা, কিকবক্সার, উদ্ভাবক, আইকনোক্লাস্ট, বিচ্ছিন্নতাবাদী, ভক্ত, চিকিৎসক, রাজনীতিবিদদের সাঙ্গেও তিনি একই ধরনের আড্ডা দিয়েছেন, যা কোনও এজেন্ডা ছাড়াই এক খাঁটি আলাপচারিতা। রোগান কেবল চেয়েছেন নিজের অতৃপ্ত কৌতূহলকে জানতে, যা তাকে প্রাণবন্ত ও উজ্জীবিত করে তুলেছে।
পডকাস্টিং তো বটেই, সম্প্রচারেও পরিবর্তন এনেছেন রোগান। তার আড্ডার ধরন ‘কথোপকথন’ বাজারকে নাড়া দিয়েছে, নির্বাচনকে প্রভাবিত করেছে ও লাখ লাখ মানুষকে এমন অসংখ্য বিষয়ের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে যেগুলোতে তারা আগ্রহী ছিলেন না বা তারা সে বিষয়ে জানতেন না।
মাইক রো বলেছেন, “তিনি তার শো’র অতিথিদের ভেতরের আসল মানুষটি বের করে আনার চেষ্টা করেছেন। অন্যভাবে বললে, মানুষকে তার নিজের কথাগুলো বলতে দিয়ে আমাদের শোনার ধরনে পরিবর্তন এনেছেন তিনি। আর তাতেই বদলে গিয়েছে সবকিছু।”
মার্ক জাকারবার্গ
জাকারবার্গকে নিয়ে ম্যাগাজিনে মুখবন্ধ লিখেছেন আমেরিকান ইন্টারনেট উদ্যোক্তা ও ড্রপবক্স-এর সহ প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও অ্যান্ড্রু ডব্লিউ হিউস্টন।
তিনি বলেছেন, মার্ক জাকারবার্গ বরাবরই ভবিষ্যত নিয়ে বাজি ধরার সাহস দেখিয়েছেন। অন্যরা সম্ভাবনা দেখার অনেক আগেই ভার্চুয়াল ও অগমেন্টেড রিয়ালিটি প্রযুক্তিতিতে আগ্রাসীভাবে বিনিয়োগ করেছেন তিনি। এমনকি মেটার পরিচয় এমন এক দৃষ্টিভঙ্গির ওপর দাঁড় করিয়েছেন জাকারবার্গ, যা অন্যরা এখনও দেখাতে পারেনি।
“জাকারবার্গের যে বিষয়টি আমি সবচেয়ে বেশি পছন্দ করি তা হচ্ছে তার অবিচল প্রত্যয়। তিনি কখনোই কিছুই অর্ধেক করে ছেড়ে দেন না, সেটি ব্যবসায় হোক বা জীবনে। যেমন– মার্শাল আর্ট আয়ত্ত করা, কাওয়াই নদীতে বড় স্রোতের মধ্যে সার্ফিং করা বা তার তিন মেয়েকে বিছানায় শুইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেওয়ার জন্য সময়মতো বাড়িতে পৌঁছানোর মতো বিষয়ও নিশ্চিত করেন জাকারবার্গ।”
লিয়াং ওয়েনফেং
ম্যাগাজিনে লিয়াং ওয়েনফেংকে নিয়ে মুখবন্ধ লিখেছেন টাইম-এর সিঙ্গাপুরভিত্তিক ব্যুরোর চার্লি ক্যাম্পবেল। তিনি বলেছেন, “লিয়াং ওয়েনফেং ঠিক কী করেছেন তা বুঝতে কিছুটা সময় লেগেছে সিলিকন ভ্যালির। তবে তা বোঝার পরই বাজারে মার্কিন শেয়ার ভেঙে পড়ে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তির আধিপত্য প্রকাশ্যে প্রশ্নবিদ্ধ হয় ও বিশ্বজুড়ে খ্যাতি অর্জন করেন লিয়াং।”
তার এআই স্টার্টআপ ডিপসিক জানুয়ারিতে একটি জেনারেটিভ এআই প্ল্যাটফর্ম উন্মোচন করে, যা ওপেনএআইয়ের চ্যাটজিপিটির সঙ্গে রীতিমতো প্রতিযোগীতা করেছে। ফেব্রুয়ারিতে চ্যাটজিপিটিকে ছাড়িয়ে অ্যাপলের মার্কিন অ্যাপ স্টোরে এক নম্বর ফ্রি অ্যাপ হয়ে ওঠে ডিপসিক।
চীনের দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রদেশ গুয়াংডংয়ের ছোট্ট এক গ্রামে বড় হয়েছেন লিয়াং এবং ‘ঝেজিয়াং ইউনিভার্সিটি’তে কম্পিউটার বিজ্ঞান নিয়ে পড়েছেন তিনি। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে দেখা করার জন্য আমন্ত্রিত চীনা প্রযুক্তিবিদদের মধ্যেও একজন তিনি।
৪০ বছর বয়সী লিয়াং চীনা গণমাধ্যমকে বলেছেন, “আমরা দ্রুত মুনাফা করতে চাই না। আমরা প্রযুক্তির সামনে দাঁড়াতে চাই এবং এর পুরো বাস্তুতন্ত্রকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সহায়তা করতে চাই।”