তালিকার বাইরেই বরং যাওয়া যাক। মানে, এবারের টাইম প্রভাবশালী তালিকায় প্রযুক্তি সেক্টরের যারা বাদ পড়েছেন, সেটিও কম কৌতুহল উদ্দীপক নয়।
Published : 17 Apr 2025, 10:16 PM
উন্নয়ন কর্মী থেকে অধ্যাপক ইউনূসের পরিচিতি এখন সরকারপ্রধানের। একইভাবে প্রযুক্তি উদ্যোক্তা, বিদ্যুচ্চালিত গাড়ির পথপ্রদর্শক আর মহাকাশ অভিযানের মশালবাহক ইলন মাস্ক এখন মার্কিন প্রেসিডেন্টের ডান হাত।
টাইম সাময়িকীর রেওয়াজ অনুসারে প্রকাশিত বছরের শীর্ষ ১০০ প্রভাবশালীর তালিকায় এই দুজনই স্থান পেয়েছেন বটে, তবে তাদের চিরাচরিত পরিচয়ের বাইরের আবার ঠিক বাইরেও নয়- এমন একটি শাখায়।
এসবের বাইরে যাওয়া যাক। মানে, এবারের তালিকায় প্রযুক্তি খাতে যারা বাদ পড়েছেন, সেই তালিকাটিও কম কৌতুহল উদ্দীপক নয়।
আসুন চোখ বুলানো যাক তালিকায়-
জেনসেন হুয়াং
এনভিডিয়ার স্বল্পভাষী প্রধান নির্বাহী টাইমের তালিকায় স্থান পেয়েছিলেন ২০২৪ সালে। বাজার মূল্যে সে বছর এনভিডিয়ার লাফ যথেষ্ট বড় ছিল। স্বাভাবিকভাবেই হুয়াং স্থান করে নিয়েছিলেন তালিকায়।
এ বছর এনভিডিয়ার শেয়ার বাজারে উত্থান আগের চেয়ে স্তিমিত হয়ে এসেছে বটে, তবে, কোম্পানির গুরুত্ব আরও বেড়েছে।
এআইভিত্তিক আন্তর্জাতিক ইঁদুর দৌড়ে এনভিডিয়া হয়ে উঠেছে অন্যতম নিয়ন্ত্রক। চীন-মার্কিন টানাপোড়েনেও কোম্পানিটি আর এর উদ্ভাবন এখন আগের যে কোনও সময়ের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এর পাশাপাশি কিছুদিন আগেই বাজারমূল্যে তিন ট্রিলিয়নের ক্লাবে নাম লিখিয়েছে কোম্পানিটি।
বিল গেটস
টাইম লিস্টে বিরল হ্যাটট্রিকের মালিক বিল গেটস। ২০০৪ থেকে ০৬ পর্যন্ত তিনি ছিলেন তালিকায়। এরপর তার থাকার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল ২০২০-২১ সালে। সে সময় কোভিড ভ্যাক্সিন গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন তিনি। সে হিসাবে কোভিডের বছরগুলোয় তার থাকার সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু মিলেনিয়াম লিস্টে সর্বশেষবার এসেছেন বিশ্বের এক সময়ের এই শীর্ষ ধনী।
গুগল জুটি
বিশ্বে যতো পরিবর্তনই হোক না কেন, আধুনিক জীবনযাপনে গুগলকে নিজের সঙ্গে জড়াতেই হবে, অন্তত এখন পর্যন্ত সেটিই বাস্তবতা। আর এই গুগলের, পরবর্তীতে অ্যালফাবেটের, দুই প্রতিষ্ঠাতা ল্যারি পেইজ আর সার্গেই ব্রিন বিল গেটসের মতোই টাইম লিস্টে এসেছেন তিনবার। এদের বেলায় বছরগুলো ছিল ২০০৯, ২০১৪ এবং ২০২৩ সালে।
ল্যারি এলিসন
ওরাকলের এই প্রতিষ্ঠাতা তালিকায় ছিলেন গত বছরই। তারও অনেক আগে থেকেই তিনি প্রযুক্তি বিশ্বে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। ওরাকলের এই সহ প্রতিষ্ঠাতা এমন একটি কোম্পানি দাঁড় করিয়েছেন যেটি ডেটাবেইজ প্রযুক্তিতে বিপ্লব ঘটিয়েছে। সফটওয়্যার শিল্পের অন্যতম বড় এই কোম্পানিতে তার নেতৃত্ব উদ্ভাবনী ডেটাবেইজ ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম এবং ক্লাউড কম্পিউটিংয়ে দেওয়া এন্টারপ্রাইজ সেবা কার্যত বাণিজ্য দুনিয়ার চেহারা পাল্টে দিয়েছে। এ বছর টিকটক কেনার দৌড়েও ছিলেন তিনি।
টিম কুক
অ্যাপল সিইও যে এবার তালিকায় থাকবেন না, সেটি মোটামুটি ধরে নেওয়া গিয়েছিল। গত দুই বছর ধরে কোনো চমক আনতে পারেনি আইফোন। বিশ্বের সবচেয়ে মূল্যবান কোম্পানিটি, তর্কসাপেক্ষে বিশ্বের সবচেয়ে ভালো ফোনে সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত প্রযুক্তি– এআই আনতে সবচেয়ে দেরি করেছে। ফলে শেয়ার বাজারও সেভাবেই আচরণ করেছে অ্যাপলের সঙ্গে। এর পরও অ্যাপল মার্চ মাসের হিসাব অনুসারে বিশ্বের একমাত্র তিন ট্রিলিয়ন ডলারের কোম্পানি, আর এর ক্রেডিট যাবে টিম কুকের হাতেই।
অ্যাপলের স্বল্পভাষী এ অপরেশনাল মাস্টারমাইন্ড নির্বাহী টাইম তালিকায় উঠে এসেছিলেন সিইও’র দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই, ২০১২ সালে এবং এরপর ২০২১ সালে।
জেফ বেজোস
গত কয়েক বছরে অ্যামাজন প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোসের পরিচয় প্রযুক্তিপ্রেমীদের বাইরে বদলেছে একাধিকবার। অ্যামাজন সিইও থেকে তার পরিচয় হয়েছিল বিশ্বের শীর্ষ ধনী। এরপর এখন তিনি বেশি পরিচিত মহাকাশ যাত্রায় তার রকেট কোম্পানি ব্লু অরিজিনের জন্য। বিশেষ করে কিছুদিন আগেই ছয় নারীর মহাকাশ অভিযান তার কোম্পানিকে নিয়ে এসেছে পত্রিকার শিরোনামে।
মহাকাশ অভিযানে তার পরিকল্পনা ইলন মাস্কের চেয়ে আলাদা। মাস্ক যেখানে অন্য গ্রহে মানুষ পাঠাতে চান, বেজোস সেখানে বায়ুমণ্ডলের শেষ প্রান্তে লোকজনকে পাঠাতে চান ভরশূন্য মহাকাশে উঁকি মেরে আসার জন্য। গোটা বিষয়টিই মহাকাশ পর্যটনের অংশ। এর পাশাপাশি নাসার সঙ্গেও কাজ করছে কোম্পানিটি।
বেজোস টাইমের তালিকায় উঠেছিলেন ২০১৮ সালে।
স্যাম অল্টম্যান
পরপর দুই বছর টাইমের তালিকায় উঠেছিলেন ওপেনএআই সিইও স্যাম অল্টম্যান। এরপর থেকেই শনির প্রভাব উঁকি মারছে তার কোম্পানির প্রতি। তার লোকজন আদালতে গিয়ে নালিশ করেছেন, ইলন মাস্ক ক্রমাগত ওপেনএআইয়ের উন্নয়নে বাধা দেওয়ার জন্য মামলা করছে। এরই মধ্যে চীন থেকে উঠে এসেছে ডিপসিক। এক ধাক্কায় শেয়ার মূল্য অনেকটাই কমে গেছে ওপেনএআইয়ের।
ইলন মাস্কের সঙ্গে তার মামলা শিগগিরই ফয়সালা হয়ে যাওয়ার কথা। বিভিন্ন তথ্য আভাস দিচ্ছে অল্টম্যান সম্ভবত এতে জিতবেন। সেটি যদি ঘটে, তাহলে ওপেনএআইয়ের বাণিজ্যিক কোম্পানিতে রূপান্তরে আর কোনো বাধা থাকবে না।
দ্রুততম সময়ে বোর্ডরুম বিদ্রোহ সামলে ফের কোম্পানির ড্রাইভিং সিটে বসা অল্টম্যান সম্ভবত এ ঝড়ও সামাল দেবেন বলে আশা করা যায়।