“২০ দিন তো হইয়া গেল, এতদিন ধইরা আশায় আছি, সন্ধান তো দিতে পারলেন না,” বলছিলেন নিখোঁজ এক ব্যক্তির স্ত্রী।
Published : 16 Sep 2024, 01:22 AM
গাজী টায়ারসের শ্রমিক মনির হোসেনের তিন সন্তানের মধ্যে বড় ছেলে সাত বছর বয়সী তামিম বুঝে গেছে, বাবা আর ফিরবে না। তবে চার বছরের মেজো ছেলে আমিনুল বাবার পথ চেয়ে বসে থাকতে থাকতে বিমর্ষ হয়ে পড়েছে।
‘বাবা আর ফিরবে না’- এটা তাকে কোনোভাবেই বোঝানো যাচ্ছে না। বাবা ‘মারা গেছে’ বললে সে উল্টো বলছে, “আব্বায় মরে নাই, কাকার মত বিদেশ গেছে, ফিইরা আইবো।”
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলায় গাজী টায়ারস কারখানার কাছেই মৈকুলী গ্রামের এক বাসায় পরিবার নিয়ে ভাড়া থাকতেন মনির। গত ২৫ অগাস্ট রাতে ওই কারখানায় লুটপাটের পর আগুন দেওয়া হয়। সেই খবর শুনে সেদিকে নিয়ে নিখোঁজ হন মনির। অনেক চেষ্টা করেও তার সন্ধান পায়নি পরিবার।
মনিরের গ্রামের বাড়ি সুনামগঞ্জ সদর উপজেলায়। ভাইয়ের নিখোঁজ হওয়ার খবর পেয়ে বাড়ি থেকে রূপগঞ্জে এসেছিলেন বড় ভাই জাকির হোসেন।
তিনি বলছিলেন, “মনিরের সবার ছোট মেয়ে মিম, ২ বছরের। সপ্তাহখানেক আগে ওর তীব্র জ্বর উঠল। সারারাইত মেয়েটা কানছে, আর বারবার বলছে, ‘বাবা কই, বাবারে ডাকো, আমারে কোলে নিব। বাবা আসে না ক্যান?”
এসব বলতে বলতে গলা ভারী হয়ে আসে জাকিরের। অসহায়ের মত কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, “ভাই, ছোট ছোট বাচ্চাগুলার দিকে তাকাইলে আর কান্না থামাইয়া রাখতে পারি না। আমার ভাইডার হাড়গোড়টাও কি পাওয়া যাইব না?”
জাকিরের জন্য অপেক্ষা করে গাজী টায়ারসের পুড়ে যাওয়া ছয়তলা ভবন থেকে ছাই-মাটি নিয়ে ৩০ অগাস্ট গ্রামে ফিরেছে পরিবারটি। মনিরের পরিবারকে এখন অন্য ভাইয়েরা দেখাশোনা করছেন।
মনির গাজী টায়ারসের টিউব সেকশনের শ্রমিক ছিলেন বলে জাকিরের ভাষ্য। তবে কারখানা কর্তৃপক্ষ বলে আসছে, লুটপাট-ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগের সময় কারখানায় কোনো শ্রমিক-কর্মকর্তা-কর্মচারী ছিলেন না।
জাকির জানান, মনির ‘মারা গেছেন’ ধরে নিয়ে ৩০ অগাস্ট তাদের গ্রামের বাড়িতে গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
গাজী টায়ারসের মালিক গোলাম দস্তগীর গাজী বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী ছিলেন। ৫ অগাস্ট সরকার পতনের পর রূপগঞ্জে তার কারখানায় এক দফা হামলা ও ভাঙচুর চালানো হয়।
২৫ অগাস্ট রাজধানীর শান্তিনগর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার হন গোলাম দস্তগীর গাজী। ওইদিনই একদল লোক দিনভর কারাখানায় লুটপাট ও ভাঙচুর চালিয়ে রাতে আগুন দিয়ে দেয়।
সেই আগুন প্রায় চারদিন ধরে চলে। পঞ্চম দিন সন্ধ্যায় আগুন পুরোপুরি নেভাতে সক্ষম হয় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স।
আগুনের ঘটনায় নিখোঁজ অনেকের খোঁজে পরদিন সকাল থেকেই কারখানার সামনে জড়ো হন স্বজনরা। তারা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে নিখোঁজদের নাম, ছবি ও জাতীয় পরিচয়পত্র জমা দেন। সেই তালিকা থেকে জানা যায়, নিখোঁজের সংখ্যা দেড় শতাধিক।
সে সময় প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, গাজী কারখানায় লুটপাটে অংশ নিয়েছিল শত শত মানুষ। আশপাশের অনেকেও সেখানে গিয়েছিলেন। রাতে কারখানায় আগুন দেওয়ার পর অনেকে আর বের হতে পরেননি বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এর মধ্যে ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেলে সেখানে আর অভিযান চালাতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস। তখন প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়, কারখানায় প্রচুর রাসায়নিক ছিল। দীর্ঘ সময় ধরে আগুন জ্বলেছে। ফলে সেখানে মানুষের দেহাবশেষ পাওয়ার সম্ভাবনা খুব কম। কারণ এত আগুনে সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়ার কথা।
আগুন নেভানোর পর সেখানে দায়িত্বপ্রাপ্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ‘নিরাপত্তার স্বার্থে’ কাউকে সেখানে প্রবেশ করতে দেয়নি। তবু চোখ ফাঁকি দিয়ে সেখানে প্রবেশ করে কিছু হাড়গোড়-খুলি নিয়ে উদ্ধার করেছিলেন কয়েকজন নিখোঁজের স্বজন। পরে তারা সেসব প্রশাসনেসর কাছে হস্তান্তর করেন। তখন প্রশাসন জানিয়েছিল, প্রয়োজনে নিখোঁজদের পরিচয় শনাক্তে ডিএনএ পরীক্ষা করা হবে।
২০ দিন পেরিয়ে গেলে এ ব্যাপারে এখনও কোনো উদ্যোগের বিষয়ে জানতে পারেনি নিখোঁজদের স্বজনরা। তারা চোখের জলে দিন পার করছেন, হয়তো প্রিয়জন ফিরে আসবে কিংবা তার লাশটা হয়তো পাবেন এই আশায়।
‘বিল্ডিংয়ের আগুন তো নিভছে, আমার বুকে আগুন জ্বলতাছে’
গাজী টায়ারসের আগুনের ঘটনায় খোঁজ নেই ২০ বছর বয়সী তরুণ আমান উল্লাহর। ছেলের শোকে প্রতিদিনই চোখের জল ফেলছেন তার বৃদ্ধা মা রাশিদা বেগম। স্থানীয় একটি ব্যাটারি প্রস্তুতকারী কারখানায় কাজ করতেন আমান।
গত ২৫ অগাস্ট রাতে আগুনের ঘটনার পর গাজী টায়ারসের কারখানায় আটকা পড়ে ১০টার দিকে বাড়িতে ফোন দিয়েছিলেন আমান। আটকা পড়ার কথা বলতে বলতেই কল কেটে যায়। এরপর তার সঙ্গে আর যোগাযোগ করতে পারেনি পরিবার। পরে তার ফোন বন্ধ হয়ে যায়।
আমানের খোঁজে কারখানার সামনে ধরনা দেওয়ার পাশাপাশি ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের কয়েকটি হাসপাতালে গেছেন স্বজনরা। প্রশাসন, শিক্ষার্থী, ফায়ার সার্ভিস; যে যখন নিখোঁজদের তালিকা করেছেন, সবার কাছেই নিজের ছেলের নাম তালিকাভুক্ত করেছেন। সরকারি কোনো সংস্থাই আমিনুলকে তার মায়ের কোলে ফিরিয়ে দিতে পারেনি।
বৃদ্ধ রাশিদা বেগম বলছিলেন, “আমার আমানরে তো বাবা কেউ খুঁইজা দিতে পারল না? কঙ্কালডা চাইছিলাম, হেইডাও পাইলাম না। আমি তো কোনো কূল-কিনারা পাইতেছি না। বিল্ডিংয়ের আগুন তো নিইভা গেছে, আমার পোলার লাইগা তো আমার বুহে আগুন জ্বলতাছে।”
এ ঘটনায় পরিবারের তিন সদস্যকে ‘হারিয়েছেন’ আসমা খাতুন (২৫)। স্বামী মো. সুজন মিয়া (২৮), তার ননদ মাফিয়া বেগম (৩০) এবং ননদের স্বামী মো. রতন মিয়া (৩৫)।
রূপগঞ্জ উপজেলার বরাব এলাকায় একটি ভাঙারির দোকান ছিল সুজনের। গাজী টায়ারস কারখানায় লুটপাট চলাকালে আরো অনেকের সঙ্গে তারাও ভেতরে ঢুকেছিলেন এবং পরে সেখানে আটকা পড়েন।
স্বামীকে হারিয়ে অসহায় গৃহিনী আসমা খাতুন সংসারের হাল ধরতে একটি মেলামাইন কারখানায় চাকরি নিয়েছেন। দুই সন্তানসহ চার সদস্যের পরিবারটি সুজনের একার উপার্জনেই চলত।
আসমা খাতুন বলেন, “আগে থাকতাম ঢাকায়। করোনার সময় স্বামীর লগে সন্তান লইয়া আইলাম বরাবতে। আমার সংসারটা ভালো চলছিল, কী ভুলে যে তারা ওইহানে গেছিল। পোলা-মাইয়াডির দিকে চাইতে পারি না। খালি বাবার লাইগা কান্দে।”
আসমার ১৪ বছরের একটি মেয়ে এবং আট বছরের এক ছেলে সন্তান আছে।
“মাইয়াটা ক্লাস এইটে পড়ে। ওর পড়ার খরচ আছে। এতদিন তো ঘরে বইয়া ছিলাম, এই বুঝি ওগো আব্বুর কোনো খোঁজ পামু। কেউ তো কোনো খোঁজ দিতে পারল না। খালি তালিকায় নাম নিলো, ছাইটাও তো দিতে পারল না। করে কী হেরা?”
স্বজনহারা এই নারী তীব্র ক্ষোভের সুরে কথাগুলো বলেন।
একইভাবে নিখোঁজ রাজমিস্ত্রি রাশেদ খান (৪০), সিমেন্ট কারখানার শ্রমিক আব্দুর রহমান (৩০), জামদানি শাড়ির কারখানার মালিক সজীব ভূঁইয়া (৩২), দিনমজুর মজনু ইসলাম (১৯), মশারি কারখানার শ্রমিক রেজাউল করিমের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেছে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।
তারা বলেছেন, ২০ দিন পেরিয়ে গেলে তারা নিখোঁজদের কোনো সন্ধান পাননি। জীবিত পাবেন সেই আশাও এখন ছেড়ে দিয়েছেন।
রাশেদের স্ত্রী পোশাককর্মী মনি আক্তার ক্ষোভের সুরে বললেন, “২০ দিন তো হইয়া গেল, এতদিন ধইরা আশায় আছি, সন্ধান তো দিতে পারলেন না। ছবি নিলেন, নাম নিলেন, তালিকা করলেন, মানুষটার ছাইডাও তো দিতে পারলেন না।”
২২০ জন নিখোঁজের দাবি, যাচাই-বাছাই হচ্ছে
আগুনের ঘটনার ২০ দিন পেরিয়ে গেলেও সরকারিভাবে নিখোঁজদের চূড়ান্ত কোনো তালিকা প্রকাশ করা হয়নি। পোড়া ভবন থেকে পাওয়া মানুষের মাথার খুলি ও হাড়গোড় নিয়েও কোনো সুরাহা হয়নি।
আগুনের ঘটনায় জেলা প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হামিদুর রহমান বলেন, “আমরা নিখোঁজদের ব্যাপারে একাধিক তালিকা পেয়েছি। স্বজনদের দাবি অনুযায়ী, ২২০ জনের নাম লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। যদিও গণশুনানিতে মাত্র ৮০টি পরিবার অংশগ্রহণ করেছিল।
“পুলিশসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা নামগুলো যাচাই-বাছাই করছে। যাচাই-বাছাই শেষে চূড়ান্তভাবে তালিকা জানানো হবে।”
১ সেপ্টেম্বর বিকালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাধা উপেক্ষা করে পোড়া ভবনটিতে ঢুকে পড়ে নিখোঁজ ব্যক্তিদের স্বজনরা। পরে তারা ভবনটির তৃতীয় তলা থেকে মানুষের খুলি ও হাড়গোড় নিয়ে বেরিয়ে আসেন। প্রশাসনের নির্দেশে এসব খুলি ও হাড়গোড় জমা নেয় পুলিশ। ওইদিন মানুষের দেহাবশেষের ১৫টি টুকরো পাওয়া যায় বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট।
তিনি বলেন, “হাড়গোড়গুলোর ডিএনএ পরীক্ষা করা হবে। এজন্য নিখোঁজ ব্যক্তিদের স্বজনদের ডিএনএ স্যাম্পল সংগ্রহের কাজও শুরু করা হবে।”
‘ভবন গুঁড়িয়ে দিয়ে উদ্ধার অভিযান’
ছয়তলা বিশিষ্ট ভবনটিতে আগুন লাগার পর ফায়ার সার্ভিসের কয়েকটি ইউনিটের পাঁচ দিনের চেষ্টায় আগুন পুরোপুরি নেভে।
ভবনটির ভেতরে বিপুল পরিমাণ রাসায়নিক পদার্থ ও টায়ার তৈরির রাবার ও প্ল্যাস্টিক জাতীয় কাঁচামাল থাকায় আগুনের ব্যাপ্তিকাল বেশি ছিল বলে জানায় ফায়ার সার্ভিস।
আগুনে ভবনটির চতুর্থ, পঞ্চম ও ষষ্ঠ তলার মেঝে ধসে তৃতীয় তলায় এসে পড়েছে। ভবনটি ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ হওয়ায় সেখানে ঢুকে কোনো প্রকার উদ্ধার অভিযান চালানো যাবে না বলে জানিয়েছে প্রশাসন।
তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হামিদুর রহমান বলছেন, ভবনটি ‘অত্যাধুনিক যন্ত্রের’ মাধ্যমে পুরোপুরি গুঁড়িয়ে দিয়ে ভেতরে উদ্ধার অভিযান চালানো হবে। ভেতরে পোড়া কোনো দেহাবশেষ পাওয়া যায় কি-না তা দেখা হবে।
‘এখনও আগুন দিয়ে লুটপাট’
প্রায় ৯৬ বিঘা জমির উপর নির্মিত কারখানাটিতে সব ধরনের যানবাহনের (রিকশা থেকে ট্রাক) টায়ার প্রস্তুত করা হত। বাংলাদেশের টায়ারের বাজারের প্রায় অর্ধেক ছিল গাজী টায়ারের দখলে। প্রতি মাসে অন্তত দেড় হাজার কোটি টাকার ব্যবসা ছিল গাজী টায়ারসের। প্রতিদিন সাত হাজারের বেশি টায়ার প্রস্তুত হত এ কারখানায়।
৫ ও ২৫ অগাস্ট দুই দফায় দেওয়া আগুনে কারখানাটি এখন ধ্বংসস্তূপ। প্রতিটি শেড, ওয়্যারহাউজ, পাকা ভবন ধ্বংসপ্রাপ্ত বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
পোড়া ছয়তলা ভবনটি থেকে ১২ সেপ্টেম্বরও ধোঁয়া উড়তে দেখা গেছে। কারখানার চারদিকে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া হলেও স্থানীয় বিভিন্ন লোকজন বেড়া কেঁটে ভেতরে প্রবেশ করছেন বলে নিরাপত্তা রক্ষীদের অভিযোগ। তারা বলছেন, এখনও লুটপাট অব্যাহত রয়েছে।
কর্মকর্তারা জানান, এ কারখানা এখন নিরাপত্তাহীন। লুটপাট কোনোভাবেই থামানো যাচ্ছে না। ৬ সেপ্টেম্বর বিকালেও কারখানাটির পূর্ব অংশে ফেলে রাখা বাতিল মালামালে আগুন ধরিয়ে দেয় লুটপাটকারীদের একটি অংশ।
এর আগের রাতেও একটি ওয়্যারহাইজ শেডে আগুন দেওয়া হয়। উভয় ঘটনায় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের লোকজন গিয়ে আগুন নেভায়। পরদিন ৭ সেপ্টেম্বর কয়েকশ মানুষ কারখানায় ঢুকে পড়ে সেখানে থাকা যন্ত্রাংশ লুটপাট করে।
‘অনিশ্চয়তায়’ শ্রমিক ছাঁটাই
গাজী টায়ারসের এ কারখানায় কবে নাগাদ আবার উৎপাদন শুরু করা যাবে, আদৌ আর যাবে কি না, তা নিয়ে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা। এরই মধ্যে কারখানার অন্তত ২০০০ কর্মী ও শ্রমিককে ছাঁটাই করা হয়েছে।
কারখানার নির্বাহী পরিচালক মো. কামরুজ্জামান বলেন, “প্রথমবারের ভাঙচুর, লুটপাট, আগুনের পরও আমরা ঘুরে দাঁড়ানোর পরিকল্পনা করেছিলাম। কিন্তু ২৫ অগাস্টে এবং এরপর যা হল, তাতে আমরা বাঁচলেও আর উৎপাদনে যেতে পারব কিনা জানি না।”
তিনি বলেন, “কারখানার এ অবস্থার ফলে কেবল মালিকের ক্ষতি হয়নি, আমরা শ্রমিক-কর্মী ছাঁটাই করতে বাধ্য হয়েছি। যাদের রেখেছি, তাদেরও বেতন ঠিকমত দিতে পারব কিনা অনিশ্চয়তা রয়েছে।”
এ অবস্থায় রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ জরুরি বলে মনে করেন নির্বাহী পরিচালক। তিনি বলেন, “এটি শুধু মালিকের ক্ষতি না, বৃহৎ কর্মসংস্থান জড়িত এর সঙ্গে। সবার ক্ষতি।”
মামলা হয়নি
ঘটনার পর ২০ দিন পেরিয়ে গেলে এখন পর্যন্ত আগুনের ঘটনায় মামলা হয়নি। তবে কারখানা কর্তৃপক্ষ মামলার প্রস্তুতি নেওয়ার কথা বলেছে।
নির্বাহী পরিচালক মো. কামরুজ্জামান বলেন, “আমরা মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছি। খুব শিগগির মামলা করব।”
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে রূপগঞ্জ থানার ওসি লিয়াকত হোসেন বলেন, “প্রাথমিকভাবে আমরা জেনেছি, লুটপাটের এক পর্যায়ে কারখানাটিতে আগুন দেওয়া হয়েছে। আগুনের ঘটনার পরও লুটপাটের অভিযোগ আমরা পেয়েছি। এই ঘটনায় সেনাবাহিনী ১০ জনকে আটক করেছে। পরে তাদের ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে জরিমানা করা হয়।”
“তবে, আগুনের ঘটনায় এখনও মামলা হয়নি। আমরা কারখানার মালিকপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। তারা মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। মামলা হলে অভিযোগ অনুযায়ী তদন্ত করে, এই আগুন ও লুটপাটের ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের খুঁজে বের করা হবে।”
আরও পড়ুন:
গাজী টায়ারস: ভবনের বেজমেন্টে আগুন পৌঁছায়নি, সেখানে কোনো ‘ভিক্টিম’ নেই
গাজী টায়ারস: ক্ষতিগ্রস্ত ভবনে ঢুকে উদ্ধার অভিযান চালানো ‘খুবই বিপজ্জনক’
গাজী টায়ারসে উদ্ধার অভিযান নিয়ে সিদ্ধান্ত বৃহস্পতিবার
গাজী টায়ারসে আগুন-লুটপাট: জেলা প্রশাসনের ৮ সদস্যের তদন্ত কমিটি
গাজী টায়ারস: ৪ দিনেও শুরু হয়নি উদ্ধার অভিযান
গাজী টায়ারসে আগুন-লুটপাট: জেলা প্রশাসনের ৮ সদস্যের তদন্ত কমিটি
গাজী টায়ারসে আগুন: এবার নিখোঁজদের তালিকা করছে প্রশাসন ও শিক্ষার্থ
'আমার ভাইয়ের লাশটাও পাইতেছি না গো'
গাজী টায়ারস: ৩২ ঘণ্টা পর নিভেছে আগুন, ভবন ধসের শঙ্কা
গাজী টায়ারস: মাইকে ঘোষণা দিয়ে লোক জড়ো, তারপর লুটপাট-আগুন
গাজী টায়ার: ২২ ঘণ্টা পর আগুন নিয়ন্ত্রণে, তবে পুরোপুরি নেভেনি
গাজী টায়ারস: ২১ ঘণ্টায়ও নেভেনি আগুন, লুটপাট চলছেই
লুটপাট-নাশকতা: ১৪ ঘণ্টায়ও নিয়ন্ত্রণে আসেনি গাজী টায়ার কারখানা