তদন্ত কমিটির প্রধান বলেন, “তবে আগুনের সময় ভবনটিতে শতাধিক ব্যক্তি ছিলেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন৷”
Published : 28 Aug 2024, 07:44 PM
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের গাজী টায়ারসে লুটপাটের পর দেওয়া আগুনের ঘটনার চার দিন পেরিয়ে গেলেও ক্ষতিগ্রস্ত ছয়তলা ভবনটিতে উদ্ধার অভিযান শুরু করতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স৷
প্রায় ‘তিন দিন ধরে’ জ্বলতে থাকা ভবনটির অবস্থা ‘অনিরাপদ’ থাকায় উদ্ধার অভিযান শুরু করা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন তারা৷
এতে অপেক্ষা বেড়েছে আগুনের সময় ভবনটিতে আটকেপড়া নিখোঁজ ব্যক্তিদের স্বজনদের৷
বুধবার বিকালে জেলা প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্যরা কারখানাটি পরিদর্শন করে জানিয়েছেন, উদ্ধার অভিযানের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হবে বৃহস্পতিবার৷
স্থানীয় জনবলের মাধ্যমে উদ্ধার অভিযান চালানো সক্ষম না হলে জাতীয়ভাবে অভিজ্ঞদের সহযোগিতা চাওয়া হবে। প্রয়োজনে সেনাবাহিনীর অভিজ্ঞ দলকেও ব্যবহার করা হবে বলে জানিয়ছেন তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হামিদুর রহমান৷
তিনি বলেন, “এমনকি লোকালি যারা এক্সপার্ট আছেন, তারা যদি ব্যর্থ হন, তাদের ইক্যুপমেন্টগুলো দিয়ে যদি উদ্ধারকাজ চালাতে সক্ষম না হয় তাহলে ন্যাশনালি সাপোর্ট আমরা নেব৷”
প্রয়োজনে স্বাস্থ্য বিভাগের অভিজ্ঞদের সহযোগিতাও নেবেন তারা৷
বিকালে কারখানাটি পরিদর্শনে আসেন আট সদস্যের কমিটি৷ কমিটির সদস্য ফায়ার সার্ভিস, জেলা পুলিশ, উপজেলা প্রশাসন, কলকারখানা অধিদপ্তর, গণপূর্ত বিভাগ, তিতাস গ্যাস ও পল্লী বিদ্যুতের প্রতিনিধিরা ছিলেন৷
তারা কারখানা কর্তৃপক্ষ, প্রত্যক্ষদর্শী, নিখোঁজদের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলেন৷
পরে কমিটির প্রধান হামিদুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, “২৫ অগাস্ট কিছু অনুপ্রবেশকারী কারখানাটিতে ঢুকে লুটপাট চালায়। তারা ভবনটির বিভিন্ন তলায় ছড়িয়ে পড়ে৷ রাতের কোনো একটা সময় ভবনটিতে আগুন দেওয়া হয় নিচতলায়৷ তখন অনেকে ভবনটিতে আটকা পড়েন, যারা মারা গেছেন বলে দাবি করেছেন৷”
তিনি বলেন, “কমিটির লোকজনকে নিয়ে প্রাথমিকভাবে আজ পরিদর্শন করেছি৷ ভবনটির ভেতরে কোনো কাজ চালাতে পারবেন কিনা তা টেকনিক্যাল পারসনরা আমাদের মতামত দিবেন৷ যদি লোকালি ওনারা না পারেন তাহলে ন্যাশনালি আরও অত্যাধুনিক ইকুইপমেন্ট ব্যবহার করার জন্য সুপারিশ করবো৷”
নিখোঁজদের ব্যাপারে প্রশাসনের পক্ষ থেকে তালিকা করা হয়েছে জানালেও কতজন তালিকাভুক্ত হয়েছেন সে ব্যাপারে নির্দিষ্ট কোনো সংখ্যা জানাননি তিনি৷
হামিদুর বলেন, “যে ব্যক্তি এসে বলছেন যে, তার স্বজন নিখোঁজ আছেন তাদের নাম-ঠিকানা আমরা লিপিবদ্ধ করছি৷ আমরা প্রকৃত সংখ্যা বলতে পারছি না৷ তবে আগুনের সময় ভবনটিতে শতাধিক ব্যক্তি ছিলেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন৷
“যদিও নির্দিষ্ট কোনো প্রুফ আমরা পাইনি৷ কিন্তু এখানে একজন মানুষ থেকে থাকলেও সেটি গুরুত্ব সহকারে নেব৷ আমাদের মূল চেষ্টাটা হল ভেতরের অবস্থাটা কী তা দেখা৷”
ফায়ার সার্ভিসের ড্রোন, বড় মই (টিটিএল) দিয়ে ভবনের ভেতরে একাধিকবার অনুসন্ধান চালিয়েছে৷ ভবনটির চতুর্থ থেকে ষষ্ঠ তলা পর্যন্ত মেঝে ধসে পড়েছে৷ কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো মরদেহের সন্ধান মেলেনি বলে জানান তদন্ত কমিটির প্রধান৷
“এখানে যেহেতু অনেক বেশি কেমিকেল পুড়েছে, সুতরাং কোনো মানুষ যদি আদৌ থেকেও থাকে তা অক্ষত অবস্থায় পাওয়ার সম্ভাবনা তেমন নেই৷ কেননা অন্তত ২২ ঘণ্টা টানা আগুন জ্বলেছে৷ যেখানে তিন-চার ঘণ্টার মধ্যেই একটা মানুষের দেহ পুড়ে কয়লা হয়ে যাওয়ার কথা।”
এদিকে, সন্ধ্যা ৭টার দিকে ভবনটিতে আবারও আগুন জ্বলতে দেখা গেছে৷
এ ব্যাপারে নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক আব্দুল মন্নান বলেন, “কিছুটা ফ্লেইম এখনো রয়েছে৷ কারণ, সব তো প্ল্যাস্টিক আর রাবার। এগুলো গলে গলে পড়ে আবার উত্তাপ থেকে আগুন ধরে যায়৷ তবে, এ আগুন ছড়ানোর কোনো সুযোগ নেই৷ আমরা কাজ করছি৷”
আরও পড়ুন:
গাজী টায়ারস: ৪ দিনেও শুরু হয়নি উদ্ধার অভিযান
গাজী টায়ারসে আগুন-লুটপাট: জেলা প্রশাসনের ৮ সদস্যের তদন্ত কমিটি
'আমার ভাইয়ের লাশটাও পাইতেছি না গো'
গাজী টায়ারস: ৩২ ঘণ্টা পর নিভেছে আগুন, ভবন ধসের শঙ্কা
গাজী টায়ারস: মাইকে ঘোষণা দিয়ে লোক জড়ো, তারপর লুটপাট-আগুন
গাজী টায়ার: ২২ ঘণ্টা পর আগুন নিয়ন্ত্রণে, তবে পুরোপুরি নেভেনি
গাজী টায়ারস: ২১ ঘণ্টায়ও নেভেনি আগুন, লুটপাট চলছেই
গাজী টায়ারস: ৪ দিনেও শুরু হয়নি উদ্ধার অভিযান
লুটপাট-অগ্নিসংযোগ: ১৪ ঘণ্টায়ও নিয়ন্ত্রণে আসেনি গাজী টায়ার কারখানার আগুন