“উল্লেখযোগ্য সংখ্যক লোকজন ঢুকে মালামাল, মেশিন লুট করে৷ এমনকি টয়লেটের কমোডও নিয়ে গেছে৷”
Published : 26 Aug 2024, 07:04 PM
গাজী টায়ারসের ছয়তলা ভবনে দুর্বৃত্তদের দেওয়া আগুন ২১ ঘণ্টাও নেভেনি৷ একদিকে ভবনটিতে আগুন জ্বলছে, অন্যদিকে দিনভর কারখানাটির বিভিন্ন অংশে লুটপাট চলমান দেখা গেছে৷
রোববার রাত ৯টার দিকে কারখানাটিতে আগুন দেওয়া হয়৷ এর আগে দুপুর থেকে চলে লুটপাট৷
সোমবার বিকালেও কারখানার মূল চত্বরের বাইরের অংশে লুটপাট অব্যাহত দেখা গেছে৷
ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক (ঢাকা) লেফটেন্যান্ট কর্নেল রেজাউল করিম সংবাদ কর্মীদের বলেন, “কারখানাটির একটি ছয়তলা ভবনে এখন আগুন জ্বলছে। আধুনিক সরঞ্জাম ব্যবহার করে আগুন নেভানোর চেষ্টা চলছে। আগুন আর ছড়ানোর কোনো শঙ্কা নেই।
“কারখানায় থাকা টায়ার প্রস্তুতকারক নানান দাহ্য পদার্থের কারণে আগুন নেভাতে সময় লাগছে। আগুন পুরোপুরি নেভানোর পর কারখানার ভেতরে থাকা নিখোঁজদের সন্ধান করা হবে।”
দুপুর ১২টার দিকে যখন ভবনটিতে দাউদাউ করে আগুন জ্বলছিল তখনও স্থানীয় কয়েকজন নারী- পুরুষকে কারখানার ভেতর থেকে বিভিন্ন জিনিসপত্র লুট করে বের হতে দেখা গেছে৷
কারখানাটির সামনে ও ভেতরে পুলিশ, সেনাবাহিনী ও শিক্ষার্থীদের অবস্থানের কারণে কারখানার মূল অংশে লুটপাট না হলেও সুবিশাল এই কারখানা চত্বরের আশেপাশে বিভিন্ন অরক্ষিত অংশে লুটপাট চলছে। তারা কারখানা থেকে বিভিন্ন যন্ত্রাংশ, স্টিল, প্লাস্টিক ও তামা লুট করে নিয়ে যাচ্ছেন।
ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশের খালে কারখানা থেকে নির্গত জ্বালানি তেল সংগ্রহ করতেও দেখা গেছে৷
কারখানার বাইরের অংশে কয়েকজন জানালা ভেঙে লুট করছিলেন৷ সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে তারা কথা বলতে রাজি হননি৷ কয়েকজন আবার ক্ষেপেও যান৷
তবে এক যুবক বলেন, “গাজী আমাগোরতে অনেক খাইছে৷ এইটা আমাগোই৷”
সকালে কারখানার সহকারী মহাব্যবস্থাপক সাইফুল ইসলাম জানান, রোববার দুপুরে কয়েকশ লোক কারখানায় ঢুকে পড়ে৷ তাদের বাধা দেওয়ার মতো পরিস্থিতি ছিল না৷ লুটপাটের সময় রাত ৯টার দিকে কারখানাটির ছয়তলা ভবনটির নিচতলায় আগুন লাগিয়ে দেয় লুটপাটকারীরা৷
দুপুরে লুটপাট শুরু হলে পুলিশসহ একাধিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বিষয়টি জানানো হলেও কেউ এগিয়ে আসেনি বলে অভিযোগ করেন তিনি৷ তবে পুলিশের পক্ষ থেকে অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার (গ-সার্কেল) হাবিবুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, “পুলিশ কোনো অবহেলা করেনি। আমরা কারখানার নিরাপত্তায় সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।”
‘তারা টয়লেটের কমোড পর্যন্ত নিয়ে গেছে’
শিল্প পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি মো. আসাদুজ্জামানও কারখানার নিরাপত্তা দেওয়ার কথা সাংবাদিকদের বলেছেন।
তিনি বলেন, “যারা কারখানাটিতে ঢুকেছিলেন তারা কারখানাটিতে লুটপাট করতেই ঢুকেছিলেন৷ এমনকি তারা টয়লেটের কমোড পর্যন্ত নিয়ে গেছে৷ খবর পাবার পর থেকে কাজ শুরু করেছি৷”
৫ অগাস্ট সরকার পতনের পর একবার কারখানাটিতে লুটপাট ও আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছিল জানিয়ে শিল্প পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, “তারপর থেকে কারখানাটিতে কোনো গার্ড ছিল না, নিরাপত্তা প্রহরী ছিল না, প্রাচীর বেষ্টনিও ছিল না৷ অর্থ্যাৎ কারখানাটি পুরোপুরি অরক্ষিত ছিল৷ এ অবস্থায় বিভিন্ন এলাকার উল্লেখযোগ্য সংখ্যক লোকজন ঢুকে মালামাল, মেশিন লুট করে৷ এমনকি টয়লেটের কমোডও নিয়ে গেছে৷”
তিনি বলেন, “আমাদের অনেকগুলো ইউনিট কাজ করছেন৷ আমরা রাত থেকে কন্টিনিউয়াস ডিউটি করছি, কেবল শিফটিং চেঞ্জ হয়েছেন৷ এটা তো একটা ক্রিমিন্যাল অফেন্স৷ আমরা আমাদের সক্ষমতা অনুযায়ী যথেষ্ট কাজ করেছি৷”
লুটপাটের বিষয়ে রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আহসান মাহমুদ রাসেল বলেন, “কারখানার লুটপাট ঠেকাতে পুলিশ, শিল্প পুলিশ, সেনাবাহিনী ও স্বেচ্ছাসেবীরা কাজ করছে। আমি সবাইকে অনুরোধ করেছি তারা যেন আরো শক্ত অবস্থান নেয়।”
আরও পড়ুন
গাজী টায়ার কারখানা লুটের পর আগুন: ফায়ার সার্ভিসের তালিকায় নিখোঁজ
লুটপাট-অগ্নিসংযোগ: ১৪ ঘণ্টায়ও নিয়ন্ত্রণে আসেনি গাজী টায়ার কারখানার আগুন