‘পাঠান’ সিনেমার সব সাফল্যের কৃতিত্ব ভক্ত-দর্শক আর সংবাদমাধ্যমকে দিয়ে শাহরুখ খান বলেছেন, কারো মনে আঘাত দিতে নয়, সাধারণ মানুষকে আনন্দ-খুশিতে ভরিয়ে দিতেই সিনেমা বানানো হয়।
‘পাঠান’ মুক্তির পর সোমবার সন্ধ্যায় মুম্বাইয়ের একটি হোটেলে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হন ‘বলিউড কিং’ শাহরুখ খান। দীপিকা পাড়ুকোন, জন আব্রাহাম ও পরিচালক সিদ্ধার্থ আনন্দও ছিলেন সংবাদ সম্মেলনে।
পাঠান নিয়ে নিজের অনুভূতি, সিনেমা নিয়ে দৃষ্টিভঙ্গি, মাঝে সিনেমা থেকে বিরতির সময়টা নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে খোলামেলা কথা বলেছেন শাহরুখ। শুধু কথায় নয়, নাচে-গানে-রসিকতাতেও তিনি মাতিয়ে রাখেন পুরোটা সময়।
শাহরুখ জানান, ২৫ জানুয়ারি পাঠান মুক্তির পরের চারটি দিন তার সিনেমার কাজ থেকে বিচ্ছিন্ন থাকার চারটি বছরকে ভুলিয়ে দিয়েছে।
এনডিটিভি, ইন্ডিয়া টুডে, টাইমস নাউসহ ভারতের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে সেই সন্ধ্যায় তিন তারকার নানা কথা।
‘ভালোবাসা ও ভ্রাতৃত্ব ছড়িয়ে দেওয়াই’ সিনেমার কাজ
শাহরুখ বলেন, “পাঠানের সব অর্জন দর্শক, ভক্ত-অনুরাগী এবং অবশ্যই সংবাদ মাধ্যমের মানুষদের। ৫৭ বছর বয়সে এসে তরুণদের বলতে চাই, ভুলভ্রান্তি আমাদের হয়, কিন্তু যে ভাষায় বা যে জনগোষ্ঠীর জন্যেই সিনেমা বানানো হোক না কেন, এর মূল উদ্দেশ্য হল মানুষকে খুশি করা, আনন্দ দেওয়া। এবং ভালোবাসা ও ভ্রাতৃত্ব ছড়িয়ে দেওয়া।
“খল চরিত্রও কিন্তু চরিত্র, তার কাজের মাধ্যমেও কোনো না কোনো বার্তা পাওয়া যায়। কখনও কারও মনে আমরা শিল্পীরা আঘাত দিতে চাই না। “
কী করেছেন বিরতির বছরে?
শেষবার শাহরুখকে বড় পর্দায় দেখা গিয়েছিল ‘জিরো’তে। তাও পাঁচ বছর আগে। ২০১৮ সালের সেই সিনেমা ফ্লপ হয়েছিল, এরপরে বিরতির ঘরে খিল এঁটেছিলেন এই নায়ক। যখন ফিরলেন, রাজসিক প্রত্যাবর্তনই ঘটল।
শাহরুখ বলেন, “আমার জন্য কঠিন সময়ই গেছে। যখন বিষণ্নতা প্রায় আমাকে খেয়ে ফেলেছে, এমন সময়ে মনে পড়ত ছোটবেলায় বড়রা আমাকে যা বলেছিলেন সেই কথাগুলো। তারা বলতেন, ‘যদি দুঃখ পেয়ে থাকো, তাহলে যারা তোমাকে ভালোবাসে, তাদের কাছে যাও।
“আমি মাঝেমধ্যে তাই করেছি। আমি খুব ভাগ্যবান যে লাখ লাখ মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি। তাই যখন বেশি খারাপ লেগেছে, মান্নাতের বারান্দায় দাঁড়িয়েছি, ভালোবাসার মানুষদের মুখগুলো দেখেছি। ঈশ্বরের আশীর্বাদে তিনি আমাকে একটি স্থায়ী বারান্দার টিকেট দিয়েছেন।“
এর মাঝে যে ভালো সময়ও গেছে, সে কথা তুলে ধরে শাহরুখ বলেন, “আমার তিন সন্তান আরিয়ান, সুহানা আর আব্রামকে বড় হতে দেখেছি। এমন সুযোগ আগে সেভাবে জীবনে আসেনি।“
রসিকতা করে তিনি বলেন, শেষ সিনেমা না চলায় তিনি জীবনে দ্বিতীয়বার ব্যবসায় নামার কথা ভেবেছিলেন। সেই পরিকল্পনা এগিয়ে নিতে হেঁশেলের কাজও ধরেছিলেন।
“ইতিলিয়ান খাবার তৈরি করা শিখেছিলাম। না এমনি এমনি না, ভেবেছিলাম ‘রেড চিলিজ ফুড ইটারি’ নামে রেস্তোরাঁ খুলব। ছবির শুটিংয়ের সময় অনেককে পিৎজা বানিয়ে খাইয়েছি। অবশ্য খাওয়ার পর তাদের মুখ দেখে বুঝেছি, সিনেমা ছাড়া গতি নেই আমার।“
‘পাঠান’ নিয়ে পরিবারের অনুভূতি
“বলতে দ্বিধা নেই, ‘পাঠান’ মুক্তির পর আমার পরিবারের সদস্যরা অনেকদিন পর স্বস্তিতে আছে। তাদের সময়ওটাও ভালো ছিল না।
“আমরা যতই ভাবি, পরিবার আর কাজের মাঝে ব্যবধান রাখব। কিন্তু সেটা হয় না আসলে। তারাও জড়িয়ে পড়েছে সিনেমা জগতের সাথে,“ বলেন শাহরুখ।
‘পাঠান ২’, হতে পারে?
সংবাদ সম্মলনে ‘পাঠান’র সিক্যুয়েল নিয়ে ইঙ্গিত এসেছে শাহরুখের কথায়।
তিনি বলেন, “এই সিনেমার সিক্যুয়েলে কাজ করার সুযোগ নিঃসন্দেহে আমার জন্য সম্মানের হবে।‘পাঠান ২’ এর জন্যেও সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা থাকবে।“
সহশিল্পীদের নিয়ে
কিং খান বলেন, শুটিং টিম যে কাজ করতে করতে একসময় পরিবার হয়ে যায়, এ কথা কারও অজানা নয়।
“আমরাও সবাই মিলেমিশে কাজ করেছি। সিরিয়াস মুডেই শুধু থাকতাম না নয়, হাসিঠাট্টাও চলত।।
দীপিকা পাড়ুকোনের সাথে ‘ওম শান্তি ওম’, চেন্নাই এক্সপ্রেস’, ‘হ্যাপি নিউ ইয়ারে’ জুটি বাধা শাহরুখ বলেন, “আমার আর দীপিকার দারুণ সম্পর্ক নিয়ে কি নতুন করে বলার কিছু আছে? তার সম্পর্কে আমাকে যে কথাই বলতে বলা হোক না কেন, আমি আগে তার হাতে চুমু খাব এবং এটাই হবে উত্তর।“
আর জন আব্রাহামকে নিয়ে শাহরুখের মন্তব্য, “জনকে আমি খুবই ভালোবাসি, আমরা বন্ধু। তবে পাঠানেই আমরা প্রথমবার একসঙ্গে কাজ করলাম। আমি সত্যিই মনেপ্রাণে অনুভবর করি, পাঠানের মেরুদণ্ড হল জন।”
‘দর্শকের মুখের হাসি বড় পুরস্কার’
২৫ জানুয়ারি মুক্তির পর পাঁচ দিনে সিনেমাটি বক্স অফিসে ৫০০ কোটি রুপির বেশি ব্যবসা করেছে। চলছে একশর বেশি দেশে।
পাঠানের ব্যবসায়িক সাফল্য কীভাবে দেখছেন জানাতে চাইলে শাহরুখ বলেন, “১০০ হোক বা ৫০০ বা হাজার কোটি, আমার কাছে প্রধান হল আমার সিনেমা দেখে আপনার মুখের প্রতিক্রিয়া। হল থেকে বের হওয়া দর্শকের মুখের হাসিই আমার সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। এর চেয়ে বড় কোনো পুরস্কার হয় না আমার কাছে।
শাহরুখের কাছে শেষ প্রশ্ন ছিল, সিনেমায় ফিরতে তিনি কতটা তাগিদ অনুভব করেছেন?
উত্তরে তিনি বলেন, “তাড়াহুড়ো শব্দটি আমার ক্যারিয়ারে নেই। আমি কোনোদিন কোনো সিনেমা তাড়াহুড়ো করে শেষ করেছি, এমন কথা নির্মাতারা বলতে পারবেন না। পাঠানের ক্ষেত্রেও তাই, বরং সময় বেশি নিয়েছি।”
সবশেষে পরিচালক সিদ্ধার্থ আনন্দের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে শাহরুখ খান বলেন, তার সিনেমা থেকে সরে থাকার সিদ্ধান্তের চারটি বছর তাকে ভুলিয়ে দিয়েছে পাঠান মুক্তির পরের চারটি দিন।
‘ভুল ভেঙেছে’ জন আব্রাহামের
জন আব্রাহাম ‘পাঠান’ সিনেমার খলনায়ক। অ্যাকশন মশলার এই সিনেমায় জন নিজেকে দারুণভাবে মেলে ধরেছেন। সংবাদ সম্মেলেন এসে তিনি বলেছেন নিজের সম্পর্কে উপলব্ধির কথা।
“আমি ভাবতাম ভারতে আমার চেয়ে বড় অ্যাকশন হিরো আর কে আছে। কিন্তু আমার ধারণা পাল্টে নিয়েছি। দেশের এক নম্বর অ্যাকশন হিরো শাহরুখ খান। শাহরুখজির সঙ্গে কাজের সুযোগ আমাকে করে দিয়েছেন নির্মাতা আদিত্য চোপড়া, তাকে আমি ধন্যবাদ জানাই।“
এমনকি অ্যাকশন দৃশ্য ধারণের সময় শাহরুখকে আঘাতে করতে ‘ইতস্তত বোধ হত’ বলে জানালেন জন।
“আমি বলতাম, আপনি হলেন জাতীয় সম্পদ। আপানাকে কি করে আঘাত করি বলেন তো?”
দরাজ গলায় জন বলেন, “শাহরুখ একটি আবেগের নাম। তাই তাকে আমি একটি চুমু উপহার দিতে চাই।“
এ কথায় হাসির রোল ওঠে সংবাদ সস্মেলনে। তখন শাহরুখ নিজের চেয়ার ছেড়ে উঠে গিয়ে জনের গালে চুম্বন এঁকে দেন।
‘অ্যাকশন আমার কাছে নাচের মত’
পাঠানে গেরুয়া বিকিনির ঝড় তোলা নায়িকা দীপিকা পাড়ুকোনের ভাষ্য, অ্যাকশন তার কাছে ‘নাচের মত’।
কথায় আক্ষেপ ঝরিয়ে দীপিকা বলেন, তিনি যে একজন খেলোয়াড়, সেকথা অনেকে ভুলতে বসেছেন।
“আমাকে অ্যাকশনে এতদিন ব্যবহার করা হয়নি। কিন্তু পাঠানে একটু-আধটু সুযোগ পেয়েছি।“
পাঠান মুক্তির পর দর্শকের ভালোবাসায় ‘অভিভূত’ বলে জানালেন দীপিকা।
“আকাশছোঁয়া সাফল্যে আমি একদম আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছি। শুধু বলতে চাই, পাঠান দুঃসময় পেরিয়ে সবার জন্য খুশির জোয়ার এনেছে।“
আরও পড়ুন: