“ধাপে ধাপে টাকা কোন পর্যায় থেকে কোন পর্যায়ে এসেছে, সেটি এখানে দেখা যাচ্ছে,” বলেন প্রদর্শনীতে আসা একজন।
Published : 19 Apr 2025, 01:09 AM
জাতীয় জাদুঘরে পুরনো মুদ্রার প্রদর্শনীতে এসেছিলেন আজিমপুরের নাহিদ আহমেদ শিবলী। ঘুরে ঘুরে সব মুদ্রা দেখে বললেন, এগুলো একসময় কেবল চাহিদা পূরণের জিনিসই ছিল না, সেই সময়কার ইতিহাসও ধারণ করেছে।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “মুদ্রার গ্রেড দেখলে বুঝা যায়, শাসনকালটা কেমন ছিল। যখন রাজনৈতিক অস্থিরতা থাকে, এটাও কিন্তু মুদ্রার মধ্যে প্রতিফলিত হয়। তখন মুদ্রাটা অত নিখুঁত হয় না।
“আবার একজন শাসক যখন দীর্ঘ সময় ধরে শাসন করেন, তখন তিনি ভিন্ন ডিজাইনের মুদ্রা নিয়ে আসেন। সেটা তার শাসনকালের স্থায়িত্ব বোঝায়। রাজনৈতিক আর্থসামাজিক অবস্থা সবই বুঝা যায়।”
শুক্রবার শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরে ‘ঢাকা নিউমিস শো’-তে এসে বিভিন্ন শাসনকালের মুদ্রা দেখছিলেন নাহিদ। শৌখিন ব্যক্তিদের সংগ্রহে থাকা এসব মুদ্রা প্রদর্শনের ব্যবস্থা করেছে ‘ওল্ড ঢাকা কালেক্টরস সোসাইটি (ওডিসিএস)’ নামের সংগঠন।
৫২ জনের কাছে থাকা পুরনো মুদ্রা নিয়ে শুক্রবার এই প্রদর্শনী শুরু হয়েছে, চলবে রোববার পর্যন্ত। বাংলার বিভিন্ন জনপদ, সুলতানি ও মুঘল আমলসহ বিভিন্ন শাসনামলের মুদ্রা এতে প্রদর্শন করা হচ্ছে। রয়েছে বিদেশি মুদ্রাও।
প্রদর্শনীতে মিরপুর থেকে আসা অপু আহমেদ বলেন, “ধাপে ধাপে টাকা কোন পর্যায় থেকে কোন পর্যায়ে এসেছে, সেটি এখানে দেখা যাচ্ছে। আরবি ফার্সি বিভিন্ন ভাষার মুদ্রা রয়েছে। তার মানে কত ভাষার বা অঞ্চলের শাসক এখানে (বাংলায়) এসেছেন, সেটাও বোঝা যায় মুদ্রার লেখা থেকে।”
উয়ারি বটেশ্বর, মহাস্থানগড় ও সোনারগাঁও অঞ্চলের মুদ্রা প্রদর্শন করেছেন মো. শামসুদ্দিন। তিনি বলেন, “সোনারগাঁও যে গুরুত্বপূর্ণ স্থান ছিল মুদ্রার সাক্ষ্যে তা প্রমাণিত। সেখানে স্বর্ণমুদ্রা পাওয়া গেছে, সেটা তো আসলে সমৃদ্ধ অর্থনীতির পরিচয় বহন করে। নাহলে তো স্বর্ণমুদ্রা তৈরি করা সম্ভব না।”
বিশ্বের ৩২টি দেশের এক টাকার মুদ্রা প্রদর্শন করছেন সুমন্ত কুমার। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “মুদ্রা থেকে একটি দেশের সংস্কৃতি, পশুপাখি এগুলো সম্পর্কে জানা যাচ্ছে। এখান থেকেই মূলত মুদ্রা সংগ্রহের প্রতি আকৃষ্ট হওয়া।”
‘ওল্ড ঢাকা কালেক্টর সোসাইটির’ সভাপতি শামসুল আলম বলেন, বিভিন্ন সময়ের মুদ্রা জনসাধারণের সামনে উপস্থাপনের পাশাপাশি সংগ্রহের আগ্রহ সবার মধ্যে ছড়িয়ে দিতে এই আয়োজন।
“আমার কাছে কী আছে আমি জানি, আরেকজনের কাছে কী আছে তারা জানে। প্রদর্শনী করলে, জনসম্মুখে আনলে সবাই দেখতে পারল। মুদ্রা যে শুধু মুদ্রা না, ইতিহাসও বহন করে। এবং কীভাবে মুদ্রা একপর্যায় থেকে আরেক পর্যায়ে এসেছে। এখনকার যারা তারা শুধু এখনকার জিনিসটা চেনে, অতীতে কী ছিল সেটাও তারা দেখল।”