এমপিও ও ইএফটিতে বিতরণও উদ্বোধন হতে যাচ্ছে।
Published : 31 Dec 2024, 01:46 PM
নতুন বছরের প্রথম দিন পাঠ্যবইয়ের অনলাইন ভার্সন প্রকাশ করবে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)।
এছাড়া এদিন বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতার সরকারি অংশ বা এমপিও, অবসর ও কল্যাণ সুবিধা ইলেক্ট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার সিস্টেমে বা ইএফটিতে বিতরণও উদ্বোধন হতে যাচ্ছে।
রাজধানীর সেগুন বাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে বুধবার সকালে এসব কার্যক্রমের উদ্বোধন করবেন শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।
মঙ্গলবার সকালে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ তথ্য কর্মকর্তা সিরাজ উদ-দৌলা খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন শিক্ষা উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক এম আমিনুল ইসলাম।
পাঠ্যবইয়ের ‘অনলাইন ভার্সন’
বছরের প্রথম দিন এবার প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বড় একটি অংশের হাতে নতুন কোনো পাঠ্যবই পৌঁছাচ্ছে না। এজন্য অপেক্ষায় থাকতে হবে ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত।
স্কুলগুলোতে বই পৌঁছাতে দেরি হওয়ার কারণেই এই তিন শ্রেণির ২৮ শতাংশ শিক্ষার্থীদের অপেক্ষা অন্যদের চেয়ে বাড়বে।
প্রাথমিকের অন্য শ্রেণির মধ্যে প্রাক-প্রাথমিক, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা বই হাতে পাবেন আরও কয়েকদিন পর। আর মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীরা জানুয়ারির শুরুতে কিছু বিষয়ের বই পাবেন। এনসিটিবির কর্মকর্তারা বলছেন, এদের মধ্যে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বই পৌঁছাবে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে।
এমন বাস্তবতায় এবার বছরের প্রথম দিনই সব পাঠ্যবইয়ের সফট কপি অনলাইনে প্রকাশ করবে এনসিটিবি। এছাড়া প্রতিবারের মত এবার বই উৎসব হচ্ছে না।
চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ কে এম রিয়াজুল হাসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “১ জানুয়ারি আমরা সব শ্রেণির পরিমার্জিত ৪১১টি বইয়ের সফট কপি অনলাইনে প্রকাশ করবে।
“আমরা আশা করছি দশম শ্রেণির বইগুলো ৫ জানুয়ারির মধ্যে সব উপজেলার শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছে দিতে পারব। ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের কিছু বই আমরা জানুয়ারির প্রথমাংশে তাদের হাতে পৌঁছে দিতে চাচ্ছি। এসব শ্রেণির বাংলা, ইংরেজি ও গণিতের বই ১০ জানুয়ারির মধ্যে সব উপজেলায় পৌঁছে যাবে বলে আশা করছি।”
তিনি আরও বলেছেন ১০ জানুয়ারির মধ্যে সব উপজেলার প্রাক-প্রাথমিক, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, ইংরেজি ও গণিত বই শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়ার পরিকল্পনায় কাজ চলছে।
“আর সব শ্রেণির অন্যান্য সব বই চলে যাবে ২০ জানুয়ারির মধ্যে।”
ইএফটিতে বেতন পাবেন ২ লাখ ৮৯ হাজার শিক্ষক-কর্মচারী
জানুয়ারি মাস থেকে বেসরকারি স্কুল ও কলেজের ২ লাখ ৮৯ হাজার শিক্ষক-কর্মচারীর বেতন-ভাতার সরকারি অংশ বা এমপিও ইলেক্ট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার সিস্টেমে (ইএফটি) ছাড় করবে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর।
এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা ইএফটিতে ছাড় করা শুরু হবে বুধবার।
ওইদিন ১ লাখ ৮৯ হাজার শিক্ষক-কর্মচারী ইএফটিতে বেতন-ভাতা পাওয়ার ‘বার্তা’ পাবেন।
সেদিনই অথবা পরদিন শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতার টাকা তাদের অ্যাকাউন্টে জমা হবে। আর জানুয়ারির প্রথমাংশে আরও ১ লাখ শিক্ষক ইএফটিতে ডিসেম্বর মাসের বেতন-ভাতা পাবেন বলে জানিয়েছে অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
শিক্ষকদের দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে বেসরকারি স্কুল-কলেজের ৩ লাখ ৮০ হাজার শিক্ষক-কর্মচারীর এমপিও আগামী জানুয়ারি মাস থেকে ইএফটি প্রক্রিয়ায় পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এজন্য শিক্ষক-কর্মচারীদের তথ্য সংগ্রহ ও যাচাই-বাছাই করা হয়েছে।
ইফটিতে বেতন দিতে শিক্ষকদের তথ্য যাচাই কমিটির প্রধান এবং অধিদপ্তরের অর্থ ও ক্রয় উইংয়ের পরিচালক অধ্যাপক মো. মোজাক্কার হোসেন চৌধুরী বলেন, “আমরা ১ লাখ ৮৯ হাজার এমপিওভুক্ত শিক্ষক কর্মচারীর তথ্য এনআইডি সার্ভার থেকে যাচাই করে নিশ্চিত হয়েছি। ১ জানুয়ারি থেকে তাদের ডিসেম্বর বেতন-ভাতা ইএফটিতে ছাড় করা হবে।
“এ শিক্ষক-কর্মচারীরা ১ জানুয়ারি ইএফটির মেসেজ পেয়ে যাবেন। আর ২ জানুয়ারি তাদের অ্যাকাউন্টে বেতন-ভাতার টাকা ঢুকবে। আমরা চেষ্টা করছি যেন এদিনই তাদের অ্যাকাউন্টে বেতন-ভাতার টাকা ছাড় করা যায়।”
তিনি আরও বলেন, “আরও ১ লাখ শিক্ষক-কর্মচারীর তথ্য এনআইডির সার্ভার থেকে যাচাই হয়ে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহেই আমাদের হাতে এসে পৌঁছাবে। আমরা তাদের বেতন-ভাতাও জানুয়ারি মাস থেকে ছাড় করব। জানুয়ারি প্রথম সপ্তাহেই তাদের ডিসেম্বর মাসের বেতন-ভাতা ইএফটির মাধ্যমে ছাড় হয়ে যাবে।
“বেসরকারি স্কুল-কলেজের ৩ লাখ ৮০ হাজার শিক্ষক-কর্মচারীর মধ্যে ২ লাখ ৮৯ হাজার শিক্ষক-কর্মচারীর তথ্য আমরা যাচাই করছি। আর ২৭ হাজার শিক্ষক-কর্মচারীর তথ্য আমরা পাইনি। তাদের মধ্যে ডাবল-এমপিও, মৃত্যুবরণ বা চাকরি ছেড়ে দেওয়ারা থাকতে পারেন। আর অন্যান্য শিক্ষক-কর্মচারীর তথ্য পেলেও তাতে ত্রুটি আছে, যেগুলো সংশোধনের প্রক্রিয়া চলছে।”
সরকারি কর্মচারীরা ইএফটিতে বেতন-ভাতা পান। অন্যদিকে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা সরকারি কোষাগার থেকে ছাড় হলেও তা রাষ্ট্রায়ত্ত আটটি ব্যাংকের মাধ্যমে অনেকটা ‘অ্যানালগ’ পদ্ধতিতে ছাড় হয়।
ব্যাংকগুলো মাধ্যমে বেতন-ভাতা ছাড়ের জন্য কয়েক পর্যায়ে অনুমোদনসহ সংশ্লিষ্ট কাজে অনেক ক্ষেত্রেই এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বেতন-ভাতা পেতে দেরি হয়। অনেক সময় পরের মাসের ১০ তারিখের পরও আগের মাসের বেতন-ভাতা জোটে।
বিগত সময়ে ঈদের পরে ঈদ উৎসব ভাতা পাওয়ার মত ‘বিব্রতকর’ পরিস্থিতিতেও পড়তে হয়েছে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের। ফলে তারাও সরকারি কর্মীদের মত মাসের শুরুতে ইএফটির মাধ্যমে বেতন-ভাতা পাওয়ার দাবি জানিয়ে আসছিলেন।
এ পরিপ্রেক্ষিতে গত ৫ অক্টোবর বিশ্ব শিক্ষক দিবসে ইএফটিতে বেসরকারি শিক্ষকদের এমপিওর বেতন-ভাতা দেওয়ার ঘোষণা দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
প্রাথমিকভাবে বেসরকারি এমপিওভুক্ত স্কুল-কলেজের ২০৯ জন শিক্ষক-কর্মচারীর অক্টোবর মাসের এমপিও ইএফটিতে ছাড় হয়।
এদিকে মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষকদের এমপিও ইএফটিতে বেতন-ভাতা দেওয়ার প্রক্রিয়াও শুরু করেছে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর ও কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর।
আরও পড়ুন :
'মানহীন' ৯০ হাজার পাঠ্যবই ধ্বংস
বছরের শুরুতে শিক্ষার্থীদের হাতে বই পৌঁছাবে তো?
নতুন বই ছাপানোর দরপত্র উন্মুক্ত হচ্ছে ৭ অক্টোবর
নতুন পাঠ্যবই ছাপানোর কাজ কতদূর?
'যথাসময়ে' নতুন বই পাবে শিক্ষার্থীরা: অর্থ উপদেষ্টা
হাতে হাতে নতুন বই, চোখে মুখে আনন্দ
বছরের প্রথম দিন প্রথম-তৃতীয় শ্রেণির বই, বাকিগুলো ধাপে ধাপে
জানুয়ারি থেকেই বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন ইএফটিতে