৫ ডিসেম্বরের মধ্যে পৌনে চার লাখ শিক্ষক-কর্মচারীর তথ্য ‘এডুকেশন ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমে’ (ইএমআইএস) অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
Published : 02 Dec 2024, 12:53 AM
জানুয়ারি থেকে বেসরকারি স্কুল-কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন ভাতার সরকারি অংশ বা এমপিও ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার (ইএফটি) প্রক্রিয়ায় পাঠাতে তথ্য অন্তর্ভুক্তির সময় তিন দিন বাড়িয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর জানিয়েছে, আগামী ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের তথ্য ‘এডুকেশন ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমে’ (ইএমআইএস) অন্তর্ভুক্ত করা যাবে, যে সুযোগ সোমবার শেষ হওয়ার কথা ছিল।
ইএফটিতে বেতন-ভাতা পরিশোধের লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠানপ্রধানদের মাধ্যমে ৩ লাখ ৮০ হাজার এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীর তথ্য সংগ্রহ শুরু হয় গত বৃহস্পতিবার। কিন্তু এ বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে এ বিষয়ে ঘোষণা আসে ওই দিন রাতে।
এরপর শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় তথ্য অন্তর্ভুক্তির কাজ এগোয়নি। তথ্য অন্তর্ভুক্তি সুযোগ ছিল কেবল রবি ও সোমবার।
এ অবস্থায় দুই দিনে পৌনে চার লাখ শিক্ষক-কর্মচারীর তথ্য মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের সার্ভার ‘এডুকেশন ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমে (ইএমআইএস)’ অন্তর্ভুক্ত করা যাবে কি না, তা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়।
অতীতে এমপিওভুক্তিসহ নানা কাজে এ সার্ভারের ধীর গতি শিক্ষকদের ভুগিয়েছে। তাই সবার এমপিও যেন জানুয়ারি থেকে ইএফটির মাধ্যমে পরিশোধ করা যায়, তা নিশ্চিত করতে শিক্ষা প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়েছিলেন শিক্ষক-কর্মচারীরা।
সেই দাবিতে সাড়া দিয়ে রোববার সময় বাড়ানোর কথা জানাল মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর।
সরকারি কর্মচারীরা ইএফটিতে বেতন-ভাতা পান। অন্যদিকে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা সরকারি কোষাগার থেকে ছাড় হলেও তা রাষ্ট্রায়ত্ত আটটি ব্যাংকের মাধ্যমে অনেকটা ‘অ্যানালগ’ পদ্ধতিতে ছাড় হয়।
ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ছাড়ের জন্য কয়েক পর্যায়ে অনুমোদনসহ অন্যান্য কাজে অনেক ক্ষেত্রেই এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বেতন-ভাতা পেতে দেরি হয়। অনেক সময় পরের মাসের ১০ তারিখের পর আগের মাসের বেতন-ভাতা জোটে।
বিগত সময়ে ঈদের উৎসব ভাতা ঈদের পরে পাওয়ার মত ‘বিব্রতকর’ পরিস্থিতিতেও পড়তে হয়েছে শিক্ষাব্যবস্থার সিংহভাগ পরিচালনা করা বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের। ফলে শিক্ষকরাও সরকারি কর্মীদের মত মাসের শুরুতে ইএফটির মাধ্যমে বেতন-ভাতা পাওয়ার দাবি জানিয়ে আসছিলেন।
এ পরিপ্রেক্ষিতে গত ৫ অক্টোবর বিশ্ব শিক্ষক দিবসে ইএফটিতে বেসরকারি শিক্ষকদের এমপিওর বেতন-ভাতা দেওয়ার ঘোষণা দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
প্রাথমিকভাবে বেসরকারি এমপিওভুক্ত স্কুল-কলেজের ২০৯ জন শিক্ষক-কর্মচারীর অক্টোবর মাসের এমপিও ইএফটিতে ছাড় হয়। অন্য শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিও ইএফটিতে ছাড় করতে গত বৃহস্পতিবার রাতে তথ্য অন্তর্ভুক্তির নির্দেশনা জারি করে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর।
গত বৃহস্পতিবার রাতে ওই নির্দেশনা প্রকাশিত হলেও দুই দিন ছুটি থাকায় তথ্য অন্তর্ভুক্তির কাজ করতে পারেননি প্রতিষ্ঠান প্রধানরা। বেশির ভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রোববার শিক্ষকদের তথ্য প্রতিষ্ঠানে পৌঁছে দেওয়ার কথা বলেছিলেন।
জানতে চাইলে যশোরের কেশবপুর পাইলট মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষা মো. আব্দুল মান্নান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আসলে বৃহস্পতিবার নোটিস প্রকাশিত হলেও শুক্রবার বিষয়টি আমাদের নজরে আসে। শুক্র-শনি দুদিন তো ছুটি। তাই রোববার শিক্ষকদের তথ্য দিতে বলা হয়েছিল।”
এর মধ্যে রোববার ইএফটির তথ্য দেওয়ার সময় বাড়ানোর কথা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান অধিদপ্তরের ফিন্যান্স এন্ড প্রকিউরমেন্ট উইংয়ের উপপরিচালক আবু সাঈদ মজুমদার।
নতুন নির্দেশনায় বলা হয়েছে, আগামী বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) পর্যন্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা তথ্য অন্তর্ভুক্তির সুযোগ পাবেন। আর ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত উপজেলা ও থানা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও আঞ্চলিক পরিচালকরা তথ্য যাচাই-বাছাই করতে পারবেন।
জানুয়ারি থেকে স্কুল-কলেজের সব শিক্ষকের এমপিও ইএফটিতে
অনলাইনে শিক্ষকদের জাতীয় পরিচয় পত্রের নম্বর (১০ থেকে ১৭ ডিজিটের), এনআইডি অনুসারে শিক্ষক কর্মচারীদের নাম, জন্মতারিখ, এনআইডি দ্বারা নিবন্ধিত নাম, মোবাইল ফোন নম্বর, এমপিওর টাকা যে ব্যাংকে আসে তার নাম, শাখার রাউটিং নম্বর, ব্যাংক হিসাব নম্বর (১৩ থেকে ১৭ ডিজিটের) ও ব্যাংক হিসাবের নাম প্রতিষ্ঠান প্রধানের মাধ্যমে এন্ট্রি দিতে হবে।
এদিকে হার্ড কপিতে প্রতিষ্ঠানের সর্বশেষ এমপিও কপি, অনলাইনে ডাউনলোড করা প্রতিষ্ঠানের রিপোর্ট, অনলাইন থেকে ডাউনলোড করা প্রত্যেক শিক্ষক-কর্মচারীর পৃথক রিপোর্ট ও প্রত্যেক শিক্ষক-কর্মচারীর ব্যাংক চেকের কভার পাতার ফটোকপি প্রতিষ্ঠান প্রধানের সত্যায়নসহ জমা দিতে হবে।
স্কুলের এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের কাগজপত্র উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস ও কলেজের এমপিওভুক্ত শিক্ষক কর্মচারীদের তথ্য আঞ্চলিক পরিচালকের কার্যালয়ে জমা দিতে হবে।
বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) সুপারিশপ্রাপ্ত শিক্ষকদের সংগঠন ‘বাংলাদেশ শিক্ষক ফোরামের (বাশিফ)’ এর সভাপতি ও পাবনার সুজানগরের খলিলপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. হাবিবুল্লাহ রাজু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা শিক্ষকরা ইএফটি নিয়ে অনেক আশায় আছি। কিন্তু বিগত সময়ে দেখেছি ইএমআইএসের সার্ভার স্লো থাকার কারণে কয়েক হাজার শিক্ষক তথ্য দিতে পারেনি।
“যদিও তথ্য আগে থেকে সংগ্রহ করে রাখতে অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, কিন্তু সার্ভার অনেকক্ষেত্রে স্লো কাজ করছে। কয়েক লাখ শিক্ষক ইএমআইএসে তথ্য দিতে পারবেন কিনা, তা নিয়ে শঙ্কায় ছিলেন। সময় বাড়ানোর পরও সে শঙ্কা কাটেনি।"
বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সার্ভার ঠিকভাবে কাজ করলে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সব শিক্ষক-কর্মচারী তথ্য অন্তর্ভুক্ত করতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, "কোনো শিক্ষক যেন বঞ্চিত না হন, সেটাই আমাদের প্রত্যাশা।”
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার কসবা টি আলী ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক সান্ত আলী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তথ্য অন্তর্ভুক্তির জন্য রোববার সকালে প্রবেশ করে দেখা যায় সার্ভার অনেক স্লো। আমরা চাই কোনো শিক্ষক যেন বঞ্চিত না হন। সার্ভার ঠিকভাবে কাজ করলে আশা করছি সব শিক্ষক ৫ ডিসেম্বরের মধ্যে তথ্য অন্তর্ভুক্তির সুযোগ পাবেন।"