একই দিনে নতুন বই তুলে দেওয়া হয়েছে সারাদেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় শিক্ষার্থীদের হাতে।
Published : 01 Jan 2024, 01:01 PM
নতুন পাঠ্য বই হাতে নিয়ে স্কুলের মাঠে আনন্দে নাচছিল আনসারা তাবাসসুম আরা। রঙিন ফিতা দিয়ে বাঁধা বই দেখিয়ে প্লেগ্রুপের এই শিশু শিক্ষার্থী জানাল, নতুন বই পেয়ে তার খুব ভালো লাগছে, সেই সঙ্গে বই বিতরণের এই উৎসবও তার পছন্দ হয়েছে।
খ্রিষ্টীয় বছরের প্রথম দিন সোমবার তাবাসসুমের মত ঢাকার বিভিন্ন স্কুল থেকে শত শত শিক্ষার্থী জড়ো হয় মিরপুরের ন্যাশনাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে ‘বই উৎসবে’ অংশ নিতে। তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয় নতুন ক্লাসের নতুন পাঠ্য বই। শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনেকেই আসে তাদের অভিভাবকদের হাত ধরে।
মিরপুরের ন্যাশনাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দিয়ে 'বই বিতরণ উৎসব ২০২৪' এর উদ্বোধন করেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে এই স্কুলে ‘বই উৎসব’ অনুষ্ঠিত হয়।
একই দিনে নতুন বই তুলে দেওয়া হয়েছে সারাদেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় শিক্ষার্থীদের হাতে; নতুন বই নিয়ে নতুন ক্লাসে ওঠার আনন্দে উচ্ছ্বসিত শিশুরা।
অনুষ্ঠানে বই বিতরণ ছাড়া গান, নাচসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক পরিবেশনা উৎসবের মাত্রাকে করে রঙিন। শিশুরা নতুন বই পেয়ে হাত উঁচিয়ে আনন্দ প্রকাশ করে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ। সভাপতিত্ব করেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াত।
আগেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ডামাডোলের মধ্যেই নতুন বছরের প্রথম দিন উৎসব করে শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেওয়ার আনুষ্ঠানিকতা সারবে সরকার। ৭ জানুয়ারির ভোটের কারণে বই উৎসবের তারিখে কোনো পরিবর্তন আসবে না। রোববার এই উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ন্যাশনাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অনুষ্ঠানে প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন বলেন, "বইয়ের পৃষ্ঠা শিশুর মনোজগতে বিস্ময় তৈরি করে। শিশুমনের এ আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ আগ্রহে বই বিতরণের সূচনা। সময়ের পরিক্রমায় এটি এখন বই উৎসবে পরিণত হয়েছে।
"মানসম্পন্ন শিক্ষার জন্য প্রয়োজন মানসম্পন্ন শিক্ষক। সরকার শিক্ষক নিয়োগ দিচ্ছে এবং শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ করে তুলছে। শিক্ষকদের ঘাটতি পূরণে আরও শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে।"
২০২৪ শিক্ষাবর্ষে ২ কোটি ১২ লাখ ৫২ হাজার ৬ জন শিক্ষার্থীর হাতে ৯ কোটি ৩৮ লাখ ৩ হাজার ৬০৬টি বই তুলে দিচ্ছে সরকার।
এর মধ্যে প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণির ৩০ লাখ ৯৬ হাজার ৯৩৯ জন, প্রাথমিকের ১ কোটি ৮০ লাখ ৭০ হাজার ৫৯৪ জন এবং ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ৮৪ হাজার ৪৭৩ জন শিক্ষার্থী পাঠ্যবই পাবে।
ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিশুদের জন্য নিজস্ব বর্ণমালা সম্বলিত মাতৃভাষায় প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণির পঠন-পাঠন সামগ্রী এবং প্রাথমিক স্তরের পাঠ্যবই প্রণয়ন এবং সরবরাহের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলেও উৎসবে জানান প্রতিমন্ত্রী।
এবারে ৫টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর (চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, গারো ও সাদরী) শিশুদের মাঝে প্রাক-প্রাথমিক এবং প্রাথমিক পর্যায়ে ১৯ জেলায় পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করা হচ্ছে।
এই জেলাগুলো হল- বান্দরবান, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, চট্টগ্রাম, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, শেরপুর, নেত্রকোণা, ময়মনসিংহ, টাংগাইল, নাটোর, সিরাজগঞ্জ, দিনাজপুর, জয়পুরহাট, চাঁদপুর, ফেনী, সুনামগঞ্জ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ এবং নওগাঁ।
অনুষ্ঠানে সচিব ফরিদ আহাম্মদ বলেন, "চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকার পুরোনো ধারার শিক্ষার খোলনলচে পাল্টে এমন এক নতুন শিক্ষার বীজ বপনের কাজে হাত দিয়েছে, যা শিক্ষার্থীর মস্তিস্ক ও পিঠ থেকে মুখস্থবিদ্যার বোঝা ঝেড়ে ফলে তাদের কৌতুহল, জিজ্ঞাসা, অনুসন্ধান, গবেষণা ও ভাবনার শক্তিকে জাগাবে ও নেতৃত্বের গুনাবলী তৈরিতে উপযোগী করে তুলবে।“
বরাবরের মত বছরের প্রথম দিন বই উৎসব করলেও ছাপার কাজ শেষ না হওয়ায় মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের সব বই পেতে অপেক্ষা করতে হবে জানুয়ারির মাঝামাঝি পর্যন্ত।
বই উৎসবের সূচনা হয় ১৩ বছর আগে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বছরের প্রথম দিন থেকে শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেওয়ার প্রচলন শুরু করেন ২০১০ সালে, যা নাম পেয়েছে ‘বই উৎসব’।
ক্ষমতাসীন সরকার ২০১০ শিক্ষাবর্ষ থেকে প্রাথমিক স্তরের শিক্ষাক্রম অনুসরণে সব ক্যাটাগরির বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে নতুন পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করছে।
শিক্ষার্থীদের কাছে পাঠ্যপুস্তককে আকর্ষণীয় করার জন্য ২০১২ শিক্ষাবর্ষ থেকে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত হোয়াইট পেপার, কভার পৃষ্ঠা, হিট থার্মাল পারফেক্ট বাইন্ডিংসহ চার রঙে পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ করা হচ্ছে বলে উৎসবে জানানো হয়।
২০১৩ শিক্ষাবর্ষ থেকে পরিমার্জিত কারিকুলাম অনুযায়ী প্রাথমিকস্তেরর পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ করা হচ্ছে।
বই উৎসবে দেশের স্কুলে স্কুলে শিক্ষার্থী-শিক্ষকরা ছাড়াও অভিভাবক, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, প্রাথমিক শিক্ষা সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তারাও উপস্থিত থাকেন।
আরো পড়ুন-
বিশ্বের নামি প্রতিষ্ঠান যেভাবে শিক্ষা দেয়, তাই করতে চাই: প্রধানমন্ত্রী