চট্টগ্রাম, কক্সবাজারে ৮ নম্বর মহাবিপদ সংকেত

ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উপকূলীয় নিচু এলাকা স্বাভাবিকের চেয়ে ৮ থেকে ১২ ফুট বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পরে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 May 2023, 03:47 PM
Updated : 12 May 2023, 03:47 PM

অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ ঘণ্টায় ১৬০ কিলোমিটার গতির বাতাসের শক্তি নিয়ে বাংলাদেশ উপকূলের সাড়ে আটশ কিলোমিটারের মধ্যে হাজির হওয়ায় জারি করা হয়েছে মহাবিপদ সংকেত। 

আবহাওয়া অফিস শুক্রবার রাত ৯টার বুলেটিনে কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত নামিয়ে তার বদলে ৮ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলেছে।

উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, ভোলা এবং অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ এই মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।

এছাড়া পায়রা ও মোংলা সমুদ্রবন্দরকে আগের মতই ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

আবহাওয়া অফিস বলেছে, ঘূর্ণিঝড়ের অগ্রবর্তী অংশ ও বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্যের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম এবং অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৮ থেকে ১২ ফুট বেশি উচ্চতার বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।

আর উপকূলীয় জেলা ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, ভোলা এবং অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৫ থেকে ৭ ফুট বেশি উচ্চতার বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।

আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, শুক্রবার সন্ধ্যা ৬ টায় এ ঘূর্ণিঝড় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৯৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৮৬০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৮৯০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৮৫৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল।

সে সময় ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১৪০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা বাড়ো হাওয়ার আকারে ১৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছিল।

এ ঝড় আরও উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর এবং ঘণীভূত হয়ে রোববার কক্সবাজার-উত্তর মিয়ানমার উপকূল অতিক্রম করতে পারে বলে পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে।

বুলেটিনে বলা হয়েছে, কক্সবাজার ও তৎসংলগ্ন উপকূলীয় এলাকায় মোখার অগ্রভাগের প্রভাব শুরু হতে পারে শনিবার সন্ধ্যা থেকেই।

ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ থাকায় উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।

কতটা শক্তি নিয়ে আঘাত হানবে মোখা?

বাংলাদেশের স্থলভাগে তাপপ্রবাহ বয়ে চলার মধ্যে সোমবার দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোসাগর ও এর সংলগ্ন আন্দামান সাগরে লঘুচাপ সৃষ্টি হয়। ধাপে ধাপে সুস্পষ্ট লঘুচাপ, নিম্নচাপ এবং গভীর নিম্নচাপ হওয়ার পর বৃহস্পতিবার তা ঘূর্ণিঝড়ের রূপ নেয়। এসকাপের আগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এটি ইয়েমেনের দেওয়া ‘মোখা’ নাম পায়।

বৃহস্পতিবার রাতে মোখা অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়ে দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোসাগর ও এর সংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছিল। শুক্রবার সকালে সেটা অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের রূপ পায় এবং দুপুরের দিকে দিক বদল শুরু করে উত্তর উত্তরপূর্ব দিকে এগোতে শুরু করে। 

ভারতীয় আবহাওয়া অফিসের বুলেটিনে বলা হয়েছে, উত্তর উত্তরপূর্ব দিকে এগোনোর পথে আরও শক্তি সঞ্চয় করে শুক্রবার মধ্যরাত নাগাদ মোখা প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়ের রূপ পেতে পারে।

শনিবার দুপুর নাগাদ এর বাতাসের শক্তি ঘণ্টায় ২১০ কিলোমিটারে পৌঁছাতে পারে, যা সুপার সাইক্লোনের কাছাকাছি।

তবে রোববার সকাল নাগাদ বাতাসের শক্তি সামান্য কমতে পারে। আর বর্তমান গতিপথ ঠিক থাকলে মোখা রোববার দুপুরের দিকে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের আকারে বাংলাদেশের কক্সবাজার এবং মিয়ানমারের কিয়াউকপিউয়ের মধ্যবর্তী এলাকা দিয়ে উপকূল অতিক্রম করতে পারে।

সে সময় মোখার বাতাসের শক্তি থাকতে পারে ঘণ্টায় ১৫০ থেকে ১৬০ কিলোমিটার, যা দমকা বা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১৭৫ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়তে পারে।

তবে টাইফুন ওয়ার্নিং সেন্টার বলছে, শনিবার মোখার শক্তি যখন সর্বোচ্চ পর্যায়ে থাকবে, তখন বাতাসের গতি ঘণ্টায় ২৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত উঠতে পারে। রোববার সকালে তা কমে হতে পারে ২৪০ কিলোমিটার।

ঘূর্ণিঝড়ে বাতাসের গতি ঘণ্টায় ২২০ কিলোমিটার ছাড়িয়ে গেছে তাকে বলা হবে সুপার সাইক্লোন।

ঝরাবে বৃষ্টি

ঘূর্ণিঝড় এগিয়ে আসায় কক্সবাজারে শুক্রবার দুপুরে একদফা মাঝারি বৃষ্টির পর ঝিরিঝিরি বৃষ্টি হয়েছে। শনিবার থেকে উপকূলীয় এলাকায় বৃষ্টিপাত বাড়তে শুরু করবে বলে আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে।

পুরো চট্টগ্রাম বিভাগ এর আওতায় থাকবে, সঙ্গে উপকূলীয় জেলাগুলোতেও অতি ভারি বর্ষণ হবে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক আজিজুর রহমান বলেন, “ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে শনিবার সন্ধ্যা নাগাদ উপকূলে বৃষ্টিপাত বেড়ে যাবে এবং দমকাসহ ঝড়ো হাওয়া বেড়ে যাবে।”

তিনি বলেন, এক সপ্তাহ ধরে বৃষ্টি নেই, সব মেঘ গেছে সাইক্লোনের কেন্দ্রে। ঘূর্ণিঝড়ের সঙ্গে সেই ঝড় স্থলভাগে ফিরবে।

এ ঘূর্ণিঝড়ে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়তে পারে কক্সবাজার জেলায়। তার মধ্যে টেকনাফ উপজেলা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকবে। বান্দরবান ও রাঙ্গামাটিতে মাঝারি ধরনের প্রভাব পড়বে।

উপকূলীয় এলাকায় সংশ্লিষ্টদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়ে বলেন, “ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের মূল অংশটা যাবে সেন্টমার্টিন এলাকায়, সেজন্যে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন উপকূল ঝুঁকিতে রয়েছে বেশি। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ব্যস এখন ৭৪ কিলোমিটার। ওই সেন্টারটাই যখন একদম ক্লিয়ার হয়ে যাবে, এখানে কোনো ক্লাউড থাকবে না, তখনই বলা হয় আই ফরমেশন। ঘূর্ণিঝড়ের চোখ স্পষ্ট হলে সেক্ষেত্রে কিছু বৈশিষ্ট স্পষ্ট হয়, সাইক্লোনের চতুর্পাশে উইন্ড, বৃষ্টিপাত, ঝড়, বজ্রপাত বেড়ে যায।”

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান ভুইয়া জানান, আগামী ৪৮ ও ৭২ ঘণ্টায় দেশের দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলীয় উপকূলয় এলাকা ও পার্বত্য অববাহিকায় এবং দক্ষিণাঞ্চলীয় উপকূলীয় এলাকায় কিছু স্থানে মাঝারি থেকে ভারি অথবা অতি ভারি বর্ষণের পূর্বাভাস রয়েছে।

“এসময় সংশি।রষ্ট নদ-নদীর পানি দ্রুত বাড়তে পারে এবং কিছুনিম্নাঞ্চলে আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।”

পুরনো খবর