ঘূর্ণিঝড় মোখা: ভাসানচরের রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তায় যে প্রস্তুতি

একজন আবহাওয়া পর্যবেক্ষক বলেন, “সেখানে ঝুঁকি আছে।”

নোয়াখালী প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 May 2023, 02:06 PM
Updated : 12 May 2023, 02:06 PM

ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাব মোকাবিলায় রোহিঙ্গাদের আশ্রয়কেন্দ্র ভাসানচরে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি ও স্থানীয় প্রশাসন।

ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানলে দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার ভাসানচরে থাকা রোহিঙ্গা শরণার্থীদেরকে নিরাপদে তাঁবুতে রাখা, খাওয়া ও চিকিৎসা সেবা দেওয়ার প্রস্ততি নিয়েছে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি।

শুক্রবার সকালে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও নোয়াখালী জেলা ইউনিটের সেক্রেটারি শিহাব উদ্দিন শাহিন সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “আমাদের ভাসানচর যে দ্বীপটি আছে সেখানে প্রায় ৩০ হাজার বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা রয়েছে। আমি ম্যানেজিং বোর্ড মেম্বার হিসেবে আমাদের ডিরেক্টরের সঙ্গে রাতে কথা বলেছি।

“তিনি আমাকে অবহিত করেছেন, আল্লাহ না করুক যদি দুর্যোগ এ এলাকাগুলোতে নোয়াখালী বা কক্সবাজারে হিট করে তাহলে একসঙ্গে ২০ হাজার রোহিঙ্গাকে অন্যত্র তাঁবুতে থাকা, খাওয়া, চিকিৎসাসহ সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার ব্যবস্থা আমরা গ্রহণ করেছি।”

ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় নোয়াখালীতে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। জেলায় সরকারি কর্মকর্তাদের সব ধরনের ছুটি বাতিল হয়েছে। প্রায় পাঁচ শতাধিক প্রশিক্ষিত স্বেচ্ছাসেবককে প্রস্তত রাখা হয়েছে। জরুরি খাবার ও চিকিৎসা সহায়তার জন্য জেলা ইউনিট থেকে পাঁচ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

আবহাওয়াবিদরা যেমন ধারণা করেছিলেন, সেভাবেই উত্তর উত্তর-পশ্চিম দিকের গতিপথ বদলে বাঁক নিয়ে উত্তর উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হতে শুরু করেছে এই ঘূর্ণিবায়ুর চক্র।

এভাবে চললে আগামী রোববার দুপুর নাগাদ ঘূর্ণিঝড়টি বাংলাদেশের কক্সবাজার এবং মিয়ানমারের কিয়াউকপিউয়ের মধ্যবর্তী এলাকা দিয়ে উপকূল অতিক্রম করতে পারে বলে আভাস দিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা।

বঙ্গোপসাগরের মধ্যে উপস্থিত একটি দ্বীপ ভাসানচর; যেখানে মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত প্রায় ৩০ হাজার রোহিঙ্গা অবস্থান করছেন। দ্বীপটির বয়স প্রায় ২০ বছর।

আবহাওয়াবিদরা বলছেন, এ ধরনের ঘূর্ণিঝড়ের সময় কক্সবাজার উপকূলজুড়ে সাধারণত ৪ থেকে ৬ ফুট উচ্চতায় জলোচ্ছ্বাস হয়ে থাকে। এবারও তেমনটাই আশঙ্কা করা হচ্ছে।

ভাসানচরকে জোয়ার এবং জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষার জন্য এর চারপাশে নয় ফুট উচ্চতার বেড়িবাঁধ রয়েছে। সমুদ্রের যে পাশ থেকে ঢেউ ভাসানচরে আঘাত হানে সেখানে শোর প্রোটেকশন রয়েছে।

শুক্রবার ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় ভাসানচরে শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কার্যালয়ের অতিরিক্ত কমিশনার মাহফুজুর রহমানের সভাপতিত্বে একটি সভা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ভাসানচর থানার ওসি হুমায়ুন কবির।

আশ্রয়ণ প্রকল্প-৩ এ এই সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে জানিয়ে ওসি বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের সময় ভাসানচরের ৫৯টা ক্লাস্টারের রোহিঙ্গাদেরকে ৫৫টি শেল্টারে রাখা হবে। সেখানে ৩০ হাজার মানুষের রান্নার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ঝড় ও বাতাসে শেল্টার হাউজে বসানো সোলার প্যানেলগুলো যাতে উড়ে না যায় তার জন্য সেগুলো পুনরায় বাঁধানোর কাজ চলছে। পশু ও রাখালদের বেড়িবাঁধের ভেতর নিয়ে আসা হবে।

তবে ভাসানচরের ঘূর্ণিঝড়ের প্রস্তুতি নিয়ে কিছু বলতে চাননি হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কায়সার খসরু। তিনি বলেন, “সেখানে প্রশাসন আলাদাভাবে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়। এ বিষয়ে আমরা কিছু জানি না “

ভাসানচরে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব সম্পর্কে কিছু বলতে রাজি হননি নোয়াখালী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কার্যালয়ের কোনো কর্মকর্তাও।

তবে একজন আবহাওয়া পর্যবেক্ষক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সেখানে ঝুঁকি আছে।”

ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) নোয়াখালীর উপ-পরিচালক রুহুল আমিনও বলেন, তারা ভাসানচরের ব্যাপারে কিছু জানেন না। সেখানে আলাদা প্রশাসন রয়েছে।

নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান জানান, জেলার উপকূলীয় চার উপজেলা হাতিয়া, সুবর্ণচর, কোম্পানীগঞ্জ ও কবিরহাটে প্রস্তুত রাখা হয়েছে ৪৬৩টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র ও সিপিপির ৮ হাজার ৩৮০ জন স্বেচ্ছাসেবক।

এ ছাড়া নগদ ৯ লাখ ৯৫ হাজার টাকা, ৩৮২ মেট্রিক টন চাল ও ২৪৩ বান্ডিল টেউ টিন প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলে তিনি জানান।