সাগরের লঘুচাপটি নিম্নচাপে পরিণত

এটি আরও ঘনীভূত হয়ে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে বলে আভাস রয়েছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 May 2023, 05:09 PM
Updated : 9 May 2023, 05:09 PM

সাগরে থাকা সুস্পষ্ট লঘুচাপটি নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে; এটি আরও ঘনীভূত হয়ে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে বলে আভাস রয়েছে। আর তখন এর নাম হবে ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’।

বাংলাদেশের স্থলভাগে তাপপ্রবাহ বয়ে চলার মধ্যে সোমবার দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোসাগর ও এর সংলগ্ন আন্দামান সাগরে লঘুচাপ সৃষ্টি হয়।

তখন থেকে এর আরও ঘনীভূত হওয়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছিল। মঙ্গলবার এটি সুস্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হয়।

এটি আরও ঘনীভূত হয়ে নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে বলে মঙ্গলবার রাতে আবহাওয়া অধিদপ্তরের বুলেটিনে জানানো হয়।

এদিন সন্ধ্যা ৬টায় নিম্নচাপটি চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১৫৭৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১৪৯৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ১৫৮৫ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ১৫৩৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল।

এর পরবর্তী গতিপথ নিয়ে আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক বলেন, “নিম্নচাপটি আরও ঘনীভূত হয়ে ১১ মে পর্যন্ত উত্তর উত্তর পশ্চিম দিকে এবং পরবর্তীতে দিক পরিবর্তন করে ক্রমান্বয়ে উত্তর-উত্তর পূর্ব দিকে অগ্রসর হতে পারে।”

নিম্নচাপ তৈরি হওয়ায় দেশের সমুদ্রবন্দরগুলোকে এক নম্বর দূরবর্তী সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে গভীর সাগরে না যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড়ের গতিপ্রকৃতি

ঝড়-জ্বলোচ্ছ্বাসপ্রবণ বাংলাদেশে মূলত এপ্রিল-মে এবং অক্টোবর থেকে ডিসেম্বরে ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে। এ সময়ে উপকূলীয় এলাকায় ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ঝড় ও প্রচুর বৃষ্টিপাতও হয়ে থাকে। আবার ব্যাপক বৃষ্টিপাতের কারণে পাহাড়ি ঢল, জলোচ্ছ্বাস ও ভূমিধসের ঝুঁকিও তৈরি হয়।

বর্তমানে সাগরের নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিলে তার নাম হবে ইয়েমেনের দেওয়া মোখা (Mocha)।

আরব সাগর ও বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড়ের নাম দেয় বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার সাইক্লোন সংক্রান্ত আঞ্চলিক সংস্থা এসকাপ। এ অঞ্চলের ১৩টি দেশের দেওয়া নামের তালিকা থেকে পর্যায়ক্রমে নতুন নতুন ঘূর্ণিঝড়ের নাম ঠিক করা হয়।

গত ডিসেম্বরে দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘ম্যানদাউস’ ভারতের তামিলনাড়ু ও পুদুচেরি উপকূলে আঘাত হানার পর দুর্বল হয়ে পড়েছিল, এর প্রভাব বাংলাদেশে পড়েনি।

Also Read: বাংলাদেশে প্রাণঘাতী যত ঘূর্ণিঝড়

Also Read: ঘূর্ণিঝড়ে কী করবেন

Also Read: ঘূর্ণিঝড়: কোন সংকেতে কী বোঝায়

মোখা ঘূর্ণিঝড়ের উন্মেষ পর্বে এখন নিম্নচাপের কেন্দ্রে বাতাসের একটানা গতিবেগ এখন রয়েছে ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটারের মতো। তবে আরও ঘনীভূত হওয়ার সঙ্গে বাতাসের বেগও বাড়বে।

ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষেত্রে বাতাসের বেগ দাঁড়ায় ঘণ্টায় ৬২ থেকে ৮৮ কিলোমিটার। বাতাসের গতিবেগ ৮৯ থেকে ১১৭ কিলোমিটার হলে তাকে বলে প্রবল ঘূর্ণিঝড়, গতিবেগ বেড়ে ১৮ থেকে ২১৯ কিলোমিটার হলে তাকে হারিকেনের গতিসম্পন্ন ঘূর্ণিঝড় বলে, আর তার চেয়ে বেশি গতিবেগ হলে তাকে সুপার স্লাইকোন বলা হয়।

নিম্নচাপটির গতি-প্রকৃতি দেখে ধারণা পাওয়া যায়, এটা শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় হয়ে আগামী রোববার দুপুর নাগাদ বাংলাদেশের কক্সবাজার ও মিয়ানমার উপকূল দিয়ে স্থলভাগে আঘাত হানতে পারে।

তবে সময়ের সঙ্গে ঘূর্ণিঝড়ের গতিপথ বদলানোর নজির রয়েছে বলে এখনই নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না।

আবহাওয়াবিদ এ কে এম নাজমুল হক বলেন, “এর অবস্থান, গতি-প্রকৃতি পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে সতর্কবার্তা জানানো হবে।”

স্থলভাগে তাপপ্রবাহ

টানা চার দিন ধরে মৃদু থেকে তীব্র ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে গোটা বাংলাদেশের উপর দিয়ে।

মে মাসে যেখানে গড় স্বাভাবিক সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩২.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস, সেখানে মঙ্গলবারও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে অধিকাংশ জায়গায় ৩৬ থেকে ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে।

এদিন দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায় ৪১.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৯.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

এর আগে সোমবার চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্বোচ্চ ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছিল ৩৯.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।

তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠলে তাকে মৃদু তাপপ্রবাহ, ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসকে মাঝারি তাপপ্রবাহ এবং তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে উঠে গেলে তাকে তীব্র তাপপ্রবাহ বলে।

চলতি মৌসুমে ১৬ এপ্রিল ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ওঠে ৪০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে, যা গত ৫৮ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা।

আর ১৭ এপ্রিল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠেছিল ঈশ্বরদীতে, যা দেশের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা।

রাজশাহী, চুয়াডাঙ্গা, টাঙ্গাইল, কুমারখালী, খেপুপাড়ায় তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। রাজধানীসহ দেশের অন্যত্র মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে বলে জানান আবহাওয়াবিদ এ কে এম নাজমুল হক।

বিরাজমান তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকবে উল্লেখ করে এ আবহাওয়াবিদ জানান, বুধবার থেকে হয়ত আর তাপমাত্রা বাড়বে না, তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকবে। ১০ মে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

শুক্রবার থেকে ধীরে ধীরে তাপমাত্রা কমার আভাস রয়েছে।