ঘূর্ণিঝড়ের শঙ্কায় সব আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখার নির্দেশ

“আমরা সব দিক থেকে প্রস্তুত রয়েছি। প্রতিবারের মত এবারও আমরা সফলভাবে ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলা করতে সক্ষম হব,” বলেন প্রতিমন্ত্রী।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 May 2023, 01:45 PM
Updated : 10 May 2023, 01:45 PM

সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় সব দিক থেকে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে জানিয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান বলেছেন, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারসহ উপকূলীয় এলাকায় যত আশ্রয় কেন্দ্র রয়েছে, তার সবগুলো প্রস্তুত রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বুধবার বিকালে সচিবালয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বয় কমিটির সভা শেষে তিনি সাংবাদিকদের এ নির্দেশনার কথা জানান। 

প্রতিমন্ত্রী বলেন, “আমরা সব দিক থেকে প্রস্তুত রয়েছি। প্রতিবারের মত এবারও আমরা সফলভাবে ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলা করতে সক্ষম হব।”

স্থলভাগে তাপপ্রবাহ বয়ে চলার মধ্যে সোমবার দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোসাগর ও এর সংলগ্ন আন্দামান সাগরে লঘুচাপ সৃষ্টি হয়, যা ধাপে ধাপে শক্তিশালী হয়ে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে।

এটি আরও ঘনীভূত হয়ে বুধবারই প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের রূপ পেতে পারে; তখন এর নাম হবে ‘মোখা’ (Mocha)। 

বর্তমান গতি প্রকৃতি অনুযায়ী এগোলে বা দিক না পাল্টালে সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড় মোখা ১৪ মে বাংলাদেশের কক্সবাজার এবং মিয়ানমারের কিয়াউকপিউয়ের মধ্যবর্তী এলাকা দিয়ে উপকূল অতিক্রম করতে পারে বলে পূর্বাভাস দিচ্ছেন আবহাওয়াবিদরা। 

এ পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর প্রতিনিধিদের নিয়ে সচিবালয়ে  সমন্বয় সভায় বসেন প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান।

সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড়ের গতি প্রকৃতি ও অবস্থান নিয়ে দেশি ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর পর্যালোচনা তথ্য তুলে ধরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ১৩ মে সন্ধ্যা থেকে ১৪ মে সকালের মধ্যে সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড়টি উপকূলে আঘাত হানতে পারে বলে পূর্বাভাস পাওয়া গেছে।

“রিপোর্ট পর্যালোচনা করে দেখেছি- বাংলাদেশ উপকূল থেকে গড়ে ১৫০০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছে। ১২ মে নাগাদ এটি উত্তর পূর্ব দিকে বাঁক নেবে এবং কক্সবাজার জেলা ও মিয়ানমার উপকূল দিয়ে আঘাত হানবে। আঘাতের সময় বাতাসের বেগ ১৮০-২২০ কিলোমিটার থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।”

ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি কমাতে এসওডি (স্থায়ী আদেশবালী) অনুযায়ী সরকার সব ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে বলে জানান এনামুর রহমান।

তিনি বলেন, “এ পূর্বাভাস অনুযায়ী মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলেছি। কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক, শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনের সঙ্গে কথা বলেছি। সভায় মুখ্য সচিব রয়েছেন, সশস্ত্রবাহিনী বিভাগের পিএসও এর সঙ্গে বলেছি। ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি-সিপিপিকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে আগাম সতর্কবার্তা প্রচারের জন্য।”

চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারসহ উপকূলীয় এলাকার সব আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখার নির্দেশনা দেওয়ার কথা জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “উপজেলার শেল্টার প্রিপারেশন কমপ্লিট। সেখানে ১৪ টন শুকনো খাবার ইতোমধ্যে পাঠানো হয়েছে। আগামীকালের মধ্যে ২০০ টন চাল চলে যাবে। চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে ২০ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছি শেল্টার ম্যানেজমেন্টর জন্য।”

ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার বাসিন্দাদের আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে যেতে সেনাবাহিনী, পুলিশসহ সংশ্লিষ্টরা কাজ করবে বলে জানান তিনি।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, “সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ পরিবহন, জনবল ও লোকজন আনা নেওয়ায় সহায়তা করে আসছে। লোকজনকে জোর করে আশ্রয় কেন্দ্রে আনতে পুলিশ সহায়তা করে। সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিজিবি, আনসার, কোস্টগার্ড প্রস্তুত রয়েছে।”

ইতোমধ্যে সমুদ্রবন্দরগুলোকে ১ নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।সব মাছ ধরার নৌযানকে গভীর সাগরে না যাওয়ার পাশাপাশি যারা গভীর সমুদ্রে রয়েছে, তাদের ফিরে আসতে বলা হয়েছে।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, “ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস পাওয়ার পর থেকে যে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তাতে ক্ষয়ক্ষতি ও জনমালের ক্ষতি শূন্য পর্যায়ে নিয়ে আসতে পারব।”

ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় ফায়ার সার্ভিসও বিশেষ প্রস্তুতি নিয়েছে।

এক সংক্ষিপ্ত বার্তায় ফায়ার সার্ভিস জানায়, ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় উপকূলবর্তী জেলাগুলোতে তাদের ১৪৯টি ফায়ার স্টেশন প্রস্তুত রয়েছে । সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীকে ‘সতর্ক ডিউটি’তে রাখা হয়েছে।

ঝড়-জলোচ্ছ্বাসপ্রবণ বাংলাদেশে মূলত এপ্রিল-মে এবং অক্টোবর থেকে ডিসেম্বরে ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে। এ সময়ে উপকূলীয় এলাকায় ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ঝড় ও প্রচুর বৃষ্টিপাতও হয়ে থাকে।

আবার ব্যাপক বৃষ্টিপাতের কারণে পাহাড়ি ঢল, জলোচ্ছ্বাস ও ভূমিধসের ঝুঁকিও তৈরি হয়।

Also Read: সাগরে গভীর নিম্নচাপ, ‘অতি প্রবল’ ঘূর্ণিঝড়ের আভাস

Also Read: ঝড়ের ক্ষতি এড়াতে পাকা ধান দ্রুত কাটার পরামর্শ