ভারতীয় আবহাওয়া অফিস বলছে, সম্ভাব্য এই ঘূর্ণিঝড় ১৪ মে দুপুর নাগাদ বাংলাদেশের কক্সবাজার এবং মিয়ানমারের কিয়াউকপিউয়ের মধ্যবর্তী এলাকা দিয়ে উপকূল অতিক্রম করতে পারে।
Published : 10 May 2023, 11:21 AM
বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত নিম্নচাপটি আরও ঘনীভূত হয়ে পরিণত হয়েছে গভীর নিম্নচাপে, যা বুধবার সন্ধ্যা নাগাদ ঘূর্ণিঝড়ের রূপ পেতে পারে বলে আভাস দিচ্ছেন আবহাওয়াবিদরা।
নিম্নচাপ থেকে ঘূর্ণিঝড়ের রূপ নিলে তখন এর নাম হবে ‘মোখা’ (Mocha)। এটি ইয়েমেনের দেওয়া নাম।
আবহাওয়ার বিশেষ বুলেটিনে বলা হয়েছে, গভীর নিম্নচাপটি বুধবার সকাল ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১৫৫০ কিলোমিটার দক্ষিণে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১৪৭০ কিলোমিটার দক্ষিণে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ১৫৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ দক্ষিণ-পূর্বে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ১৫০৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল।
গভীর নিম্নচাপ কেন্দ্রের ৪৮ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের সর্বোচ্চ একটানা গতিবেগ ছিল ৫০ কিলোমিটার; যা দমকা বা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়ছিল।
গভীর নিম্নচাপ কেন্দ্রের কাছে সাগর উত্তাল থাকায় দেশের সমুদ্রবন্দরগুলোকে এক নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
উত্তর বঙ্গোপসাগর এবং গভীর সাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে এবং গভীর সাগরে বিচরণ না করতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
আবহাওয়াবিদ মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক বলছেন, গভীর নিম্নচাপটি আরও ঘনীভূত হয়ে ১১ মে পর্যন্ত উত্তর উত্তর পশ্চিম দিকে এবং পরবর্তীতে দিক পরিবর্তন করে ক্রমান্বয়ে উত্তর-উত্তর পূর্ব দিকে অগ্রসর হতে পারে।
সম্ভাব্য গতিপথ
ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার পর এই ঘূর্ণিবায়ুর চক্র কবে কোন এলাকা দিয়ে উপকূল অতিক্রম করতে পারে সে বিষয়ে এখনও কোনো আভাস দেয়নি বাংলাদেশের আবহাওয়া অফিস।
তবে ভারতীয় আবহাওয়া অফিস বলছে, দক্ষিণ পূর্ব বঙ্গোপসাগরের বর্তমান অবস্থান থেকে উত্তর উত্তর-পশ্চিম দিকে এগিয়ে চলার পথে আরও শক্তি সঞ্চয় করে বুধবার সন্ধ্যা নাগাদ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে এ গভীর নিম্নচাপ।
এরপর আরও উত্তর উত্তর-পশ্চিম দিকে এগিয়ে এ ঘূর্ণিঝড় বৃহস্পতিবার দুপুর নাগাদ পরিণত হতে পারে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে। এ ঝড় আরও শক্তিশালী হয়ে বৃহস্পতিবার মধ্যরাত নাগাদ অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের রূপ পেতে পারে।
এরপর দক্ষিণপূর্ব বঙ্গোপসাগরের ওই অবস্থান থেকে ঝড়টি ধীর ধীরে বাঁক নিতে শুরু করবে এবং উত্তর উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হবে।
ভারতীয় আবহাওয়াবিদরা বলছেন, এ পর্যন্ত পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে যে অনুমান তারা করছেন, তা ঠিক থাকলে ১৪ মে দুপুর নাগাদ প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের আকারে মোখা বাংলাদেশের কক্সবাজার এবং মিয়ানমারের কিয়াউকপিউয়ের মধ্যবর্তী এলাকা দিয়ে উপকূল অতিক্রম করতে পারে।
অবশ্য ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার পর কোনো পর্যায়ে এর গতিপথ পাল্টে গেলে উপকূলে আঘাত হানার সম্ভাব্য স্থানও বদলে যেতে পারে।
মোখার উন্মেষ পর্ব
বাংলাদেশের স্থলভাগে তাপপ্রবাহ বয়ে চলার মধ্যে সোমবার দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোসাগর ও এর সংলগ্ন আন্দামান সাগরে লঘুচাপ সৃষ্টি হয়।
তখন থেকে এর আরও ঘনীভূত হওয়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছিল। মঙ্গলবার এটি সুস্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হয়।
এটি আরও ঘনীভূত হয়ে নিম্নচাপে এবং তারপর গভীর নিম্নচাপে পরিণত হল।
ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষেত্রে বাতাসের বেগ দাঁড়ায় ঘণ্টায় ৬২ থেকে ৮৮ কিলোমিটার। বাতাসের গতিবেগ ৮৯ থেকে ১১৭ কিলোমিটার হলে তাকে বলে প্রবল ঘূর্ণিঝড়, গতিবেগ বেড়ে ১৮০ থেকে ২১৯ কিলোমিটার হলে তাকে হারিকেনের গতিসম্পন্ন ঘূর্ণিঝড় বলে, আর তার চেয়ে বেশি গতিবেগ হলে তাকে সুপার স্লাইকোন বলা হয়।
ঝড়-জ্বলোচ্ছ্বাসপ্রবণ বাংলাদেশে মূলত এপ্রিল-মে এবং অক্টোবর থেকে ডিসেম্বরে ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে। এ সময়ে উপকূলীয় এলাকায় ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ঝড় ও প্রচুর বৃষ্টিপাতও হয়ে থাকে।
আবার ব্যাপক বৃষ্টিপাতের কারণে পাহাড়ি ঢল, জলোচ্ছ্বাস ও ভূমিধসের ঝুঁকিও তৈরি হয়।
সর্বশেষ গত ডিসেম্বরে দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘ম্যানদাউস’ ভারতের তামিলনাড়ু ও পুদুচেরি উপকূলে আঘাত হানার পর দুর্বল হয়ে পড়েছিল, এর প্রভাব বাংলাদেশে পড়েনি।