গভীর নিম্নচাপটি এগোচ্ছে ঘণ্টায় ১৭ কিলোমিটার গতিতে

এটি অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিয়ে রোববার উপকূলে আঘাত হানবে বলে আভাস রয়েছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 May 2023, 06:52 PM
Updated : 10 May 2023, 06:52 PM

অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় হওয়ার শঙ্কা জাগিয়ে সাগরে থাকা গভীর নিম্নচাপটি ঘণ্টায় ১৭ কিলোমিটার গতিতে এগোচ্ছে।

এর গতিপথ এখন উত্তর-উত্তর পশ্চিম দিকে হলেও বৃহস্পতিবার সকাল নাগাদ এটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার পর দিক পরিবর্তন করে উত্তর-উত্তর পূর্ব দিকে অগ্রসর হতে পারে।

তখন এর নাম হবে ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’; এটি অতি প্রবল ঝড়ে রূপ নেওয়ার পর আগামী রোববার দুপুর নাগাদ বাংলাদেশের কক্সবাজার ও মিয়ানমার উপকূলে আঘাত হানতে পারে।

ঘূর্ণিঝড়ের আভাসে ইতোমধ্যে উপকূলে আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত করেছে বাংলাদেশ সরকার। সমুদ্রবন্দরগুলোকেও সতর্ক করা হয়েছে।

বাংলাদেশের স্থলভাগে তাপপ্রবাহ বয়ে চলার মধ্যে সোমবার দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোসাগর ও এর সংলগ্ন আন্দামান সাগরে লঘুচাপ সৃষ্টি হয়।

তখন থেকে এর আরও ঘনীভূত হওয়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছিল। মঙ্গলবার এটি সুস্পষ্ট লঘুচাপ এবং আরও ঘনীভূত হয়ে নিম্নচাপে পরিণত হয়।

বুধবার এটি আরও ঘনীভূত হয়ে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে বলে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে জানান হয়েছিল।

তবে বুধবার রাতে সর্বশেষ অবস্থা জানিয়ে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের বুলেটিনে এর গভীর নিম্নচাপ হিসেবে অবস্থানের কথাই জানান হয়।

Also Read: সাগরে গভীর নিম্নচাপ, ‘অতি প্রবল’ ঘূর্ণিঝড়ের আভাস

বলা যায়, প্রায় ১২ ঘণ্টা ধরেই এটি গভীর নিম্নচাপ হয়ে আছে। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, প্রতিটি ঘূর্ণিঝড়ের একে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য আছে। তারা একেক সময় একেক আচরণ করে। নিম্নচাপ অঞ্চলের পারিপার্শ্বিক প্রেক্ষাপটের উপর ঘূর্ণিঝড়ের গতি-প্রকৃতি নির্ভর করে।

ভারতের আবহাওয়া বিভাগ জানিয়েছে, গভীর নিম্নচাপটি শক্তি বাড়িয়ে বুধবার সকালেই ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে।

তাদের বুলেটিনে বলা হয়, বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত আগের ছয় ঘণ্টায় গভীর নিম্নচাপটি ঘণ্টায় ১৭ কিলোমিটার গতিতে সঞ্চারণ করছিল। এর গতিমুখ ছিল উত্তর-উত্তর পশ্চিম দিকে।

অর্থাৎ এখন এর গতিপথ যেদিকে, সোজা সেদিকে যদি এটি এগোয়, তাহলে এটি ভারতের তামিলনাড়ু-ওড়িশা উপকূলের দিকে যাওয়ার কথা।

কিন্তু আবহাওয়াবিদরা বলছেন, এটি আরও ঘনীভূত হয়ে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত উত্তর-উত্তর পশ্চিম দিকেই এগোবে। এরপর এটি দিক পরিবর্তন করে ক্রমান্বয়ে উত্তর-উত্তর পূর্ব দিকে অগ্রসর হতে পারে। অর্থাৎ তখন এর গতিপথ হবে কক্সবাজার ও মিয়ানমার উপকূল।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের ঝড় সতর্কীকরণ কেন্দ্রের আবহাওয়াবিদ এসএম কামরুল হাসান বলেন, ১০ মে সন্ধ্যা থেকে রাতের যেকোনো সময়ের মধ্যে গভীর নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেওয়ার কথা। পরবর্তীতে উত্তর-উত্তর পশ্চিম দিকে একটি অগ্রসর হবে এবং ১২ মে সকাল পর্যন্ত এটা একই দিকে অগ্রসর হবে। শক্তি সঞ্চয় করে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের রূপ নেওয়ার পরে উত্তর-উত্তর পূর্ব দিকে ঘূর্ণিঝড়টির ‘টার্ন’ করবে।

ভারতের আবহাওয়া বিভাগের সতর্কবার্তা বলছে, শুক্রবার এটি অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেবে। এরপর এটি আরও শক্তি সঞ্চয় করলেও রোববার যখন উপকূলে আঘাত হানবে, তার আগে ঝড়ের তোড় কিছুটা কমবে।

তবে আভাস অনুযায়ী, তখনও ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রে বাতাসের একটানা গতি থাকবে ঘণ্টায় ১১০ থেকে ১২০ কিলোমিটার, যা দমকা হাওয়ার আকারে ১৩৫ কিলোমিটারে বাড়তে পারে।

বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের বুলেটিনে বলা হয়, চট্টগ্রাম থেকে প্রায় দেড় হাজার কিলোমিটার দূরে থাকা গভীর নিম্নচাপটির কেন্দ্রে এখন বাতাসের একটানা গতি ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটার, যা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৬০ কিলোমিটারেও বাড়ছিল।

বুধবার সন্ধ্যায় গভীর নিম্নচাপটি চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১৪২০ কিলোমিটার দক্ষিণে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১৩৪০ কিলোমিটার দক্ষিণে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ১৪০০ কিলোমিটা দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থান করছিল।

ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের কাছে সাগর উত্তাল থাকায় দেশের সমুদ্রবন্দরগুলোকে এক (১) নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

উত্তর বঙ্গোপসাগর এবং গভীর সাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে এবং গভীর সাগরে বিচরণ না করতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

এবারও সবদিক থেকে প্রস্তুতি: প্রতিমন্ত্রী

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান বুধবার সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারসহ উপকূলীয় এলাকায় যত আশ্রয় কেন্দ্র রয়েছে, তা প্রস্তুত রাখতে বলা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক, শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে।

“উপজেলার শেল্টার প্রিপারেশন কমপ্লিট। সেখানে ১৪ টন শুকনো খাবার ইতোমধ্যে পাঠানো হয়েছে। আগামীকালের মধ্যে ২০০ টন চাল চলে যাবে। চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে ২০ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছি শেল্টার ম্যানেজমেন্টর জন্য। আমরা সব দিক থেকে প্রস্তুত রয়েছি। প্রতিবারের মতো এবারও আমরা সফলভাবে ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলা করতে সক্ষম হবো।”

লোকজনকে আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে আসতে সেনাবাহিনী, পুলিশসহ সংশ্লিষ্টদের কাজ করার বিষয়টি তুলে ধরেন।

প্রতিমন্ত্রী জানান, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ পরিবহন, জনবল ও লোকজন আনা নেওয়ায় সহায়তা করে আসছে। লোকজনকে জোর করে আশ্রয় কেন্দ্রে আসতে পুলিশ সহায়তা করে। সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিজিবি, আনসার, কোস্টগার্ড প্রস্তুত রয়েছে।

“ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস পাওয়ার পর থেকে যে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে ক্ষয়ক্ষতি ও জনমালের ক্ষতি শূন্য পযায়ে নিয়ে আনতে পারব,” বলেন প্রতিমন্ত্রী।