“শহরের অন্য দেয়ালগুলোও যদি এভাবে সাজানো যায়, তাহলে এই শহর আরও প্রাণবন্ত মনে হবে,” বলছিলেন একজন পথচারী।
Published : 22 Apr 2024, 08:17 AM
একসময় ছেয়ে থাকত পোস্টারে, আর সেই দৃশ্য পীড়া দিত চোখে; এখন সেখান থেকে চোখ ফেরানোই দায়।
রাজধানীর মহাখালী ফ্লাইওভার রং তুলির আঁচড়ে সাজছে নতুন রূপে। কংক্রিটের কাঠামোতে ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে দেশীয় সংস্কৃতির নানা মোটিফ। এ পর্যন্ত ৭০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। পুরো কাজ শেষ হতে লাগবে আরও দুই মাস।
নান্দনিক এই কাজের উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন। এর আগে মৌচাক-মগবাজার ফ্লাইওভারেও এ ধরনের চিত্রকর্ম আঁকা হয়, যা নগরবাসীর ব্যাপক প্রশংসা কুড়ায়।
মহাখালী ফ্লাইওভারের নিচে কথা হয় পথচারী তাহসেন আহমেদের সঙ্গে। তার ধারণা, এমন চিত্রকর্ম মানুষের ভাবনার জগতেরও পরিবর্তন আনতে পারে।
“এবার জায়গাটা নতুন করে প্রাণ ফিরে পাচ্ছে। শহরের অন্য দেয়ালগুলোও যদি এভাবে সাজানো যায়, তাহলে এই শহর আরও প্রাণবন্ত মনে হবে। চিত্রকর্মের দিকে তাকালে কিছুক্ষণের জন্য হলেও চোখে শান্তি পাওয়া যায়। আরও কিছুক্ষণ তাকিয়ে দেখতে ইচ্ছে করে।”
গেল বছরের ডিসেম্বরে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশের সহযোগিতায় মহাখালী ফ্লাইওভারে এ চিত্রকর্মের কাজ শুরু হয়। প্রোঅ্যাক্ট অ্যাডভ্যারটাইজিং অ্যান্ড কমিউনিকেশনসের পক্ষে শিল্পী দলের প্রধান হিসেবে কাজ করছেন মো. মাহবুব হাওলাদার।
জুনের মধ্যে পুরো ফ্লাইওভারের কাজ শেষ করা হবে জানিয়ে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সবচেয়ে ভাল রং এখানে ব্যবহার করা হচ্ছে। এ রঙের গ্যারান্টিই আছে সাত বছর। আমরা রঙের স্থায়িত্ব বাড়াবার চেষ্টা করেছি এবং ধারণা করছি বছর বিশেক এটি টিকে থাকবে। কাজের বেশিরভাগ অংশ মানুষের নাগালের বাইরে হওয়ায় এবং এখানে সহজে বৃষ্টির পানি আসবে না বলে স্থায়িত্ব বাড়বে।”
এ কাজে রং মিস্ত্রি ও স্বশিক্ষিত শিল্পী মিলে ২৬ জন যুক্ত রয়েছেন। মহাখালীর আমতলী মোড়, রেল ক্রসিং ও মহাসড়ক রোডসহ মোট পাঁচটি পয়েন্টে এখনো কাজ বাকি। সেগুলো ক্রেন দিয়ে সারতে হবে বলে জানালেন মাহবুব হাওলাদার।
ফ্লাইওভারজুড়ে কোথাও শহীদ মিনার, কোথাও আবার বাংলা ভাষার নানা বর্ণ আঁকা হয়েছে। আছে গ্রামীণ মেলা, ঐতিহ্যবাহী পুতুল, বাউল, পাখি, রিকশাচিত্র ও আল্পনা।
সচেতনতা বাড়াতে ‘হর্ন বাজানো নিষেধ’ ও ‘গাছ বাঁচাও, জীবন বাঁচাও’ – এমন সব স্লোগানও লেখা হয়েছে কোথাও কোথাও।
ফ্লাইওভারে আঁকার কাজে যুক্ত মো. রাসেল রানা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সব শ্রেণির মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য করতে ফোক সাবজেক্ট পছন্দ করা হয়েছে। আর কালারফুল করতে দেশীয় আল্পনার একটা সমন্বয় রয়েছে, যাতে উৎসব বিষয়টি ফুটে ওঠার সাথে পথিকের মনে রং ছুঁয়ে যায়।”
শিল্পী দলের প্রধান মো. মাহবুব হাওলাদার বলেন, “মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণের পাশাপাশি চোখ যেন শান্তি পায় সেভাবেই আর্ট করছি। চোখের জন্য আরামদায়ক ও সহনীয় রং ব্যবহার করেছি।”
মাহবুবের ধারণা, এ কাজে ফ্লাইওভারের ১ লাখ ৮১ হাজার বর্গফুট জায়গায় আঁকতে হবে। ২০০ বর্গফুটে এক গ্যালন রং লাগছে। এক গ্যালন রংয়ের দাম ৩,৮০০ টাকা। সেই হিসেবে পুরো কাজে রংয়ের খরেই লাগবে প্রায় ৩৫ লাখ টাকা।
মহাখালী ও মগবাজার ফ্লাইওভার ছাড়াও ফার্মগেট থেকে বিজয় সরণি পর্যন্ত রাস্তার মাঝের বিভাজকেও রঙের ছোঁয়া লেগেছে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ মাকসুদ হাসেম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নগরীকে দৃষ্টিনন্দন করতেই আমাদের এ উদ্যোগ। ফ্লাইওভারের নিচে সবুজ ঘাস লাগনো হবে। আর ফাঁকা জায়গায় মানুষের সাময়িক বিশ্রামের জন্য বসার ব্যবস্থা, শিশুদের কিছু খেলনা, এমনকি নাগরিকদের বিনোদনের জন্য দাবা ও টেবিল টেনিস খেলার বোর্ডের ব্যবস্থাও করা হবে। এ কাজগুলো এখন অনেকটাই দৃশ্যমান হয়েছে।”
চিত্রকর্ম এবং এসব জিনিস যাতে কেউ নষ্ট করতে না পারে, সেজন্য ফ্লাইওভারের পিলারে সিসি ক্যামেরা বসানো হবে বলে জানান মাকসুদ হাসেম।
তিনি বলেন, “এই দৃষ্টিনন্দন স্ট্রিট আর্টের ওপর কেউ পোস্টার লাগালে বা কোনোভাবে নষ্ট করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নিচে যেসব জায়গা পড়ে আছে, সেগুলোও ব্যবহার উপযোগী করার পরিকল্পনার কথা বলেন প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ।
তিনি বলেন, “এখানে টয়লেট এবং বসার ব্যবস্থা থাকবে। আর শহরে খেলাধুলার মাঠ কমে গেছে, তাই সুষ্ঠু বিনোদনের যেন অভাব না হয়, সেজন্য এখানে বিনোদনেরও ব্যবস্থা থাকবে।
“প্রথম কাজটা হবে কুড়িল বিশ্বরোড এলাকায় এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নিচে প্রায় এক কিলোমিটারজুড়ে। সেখানে সফলতার ওপর নির্ভর করবে বাকি জায়গাগুলো একইভাবে করা হবে কি না।”