সুস্পষ্ট লঘুচাপটি বিকালে নিম্নচাপে এবং বুধবার ঘূর্ণিঝড়ের রূপ নিতে পারে।
Published : 09 May 2023, 10:36 AM
দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও সংলগ্ন আন্দামান সাগর এলাকায় অবস্থানরত লঘুচাপটি ঘনীভূত হয়ে সুস্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হয়েছে, আরও শক্তিশালী হয়ে ধাপে ধাপে ঘূর্ণিঝড়ের রূপ নিতে পারে।
সুস্পষ্ট লঘুচাপটি ঘূর্ণিঝড়ের রূপ নিলে তার নাম হবে মোখা (Mocha), এটা ইয়েমেনের দেওয়া নাম।
আরব সাগর ও বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড়ের নাম দেয় বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার সাইক্লোন সংক্রান্ত আঞ্চলিক সংস্থা এসকাপ। এ অঞ্চলের ১৩টি দেশের দেওয়া নামের তালিকা থেকে পর্যায়ক্রমে নতুন নতুন ঘূর্ণিঝড়ের নাম ঠিক করা হয়।
দক্ষিণ পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন দক্ষিণ আন্দামান সাগরে দুদিন আগে একটি ঘূর্ণিচক্রের (সাইক্লোনিক সার্কুলেশন) সৃষ্টি হয়, যা সোমবার লঘুচাপে পরিণত হয়।
রাতে সেটা সুস্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হয়েছে জানিয়ে আবহাওয়াবিদ মনোয়ার হোসেন বলেন, “এটি আরো ঘনীভূত হতে পারে।”
সুস্পষ্ট লঘুচাপ থেকে নিম্নচাপ, তারপর গভীর নিম্নচাপের ধাপ পেরিয়ে তবেই ঘূর্ণিঝড় হবে। মঙ্গলবার এটি নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে, তখন এর গতি-প্রকৃতি নিয়ে পরবর্তী পর্যবেক্ষণ জানাবে আবহাওয়া অফিস।
ভারতীয় আবহাওয়া অফিস তাদের পূর্বাভাসে বলেছে, মঙ্গলবার বিকালে নিম্নচাপে পরিণত হওয়ার পর বুধবার ঘূর্ণিঝড়ের রূপ পেতে পারে ওই ঘূর্ণিবায়ুর চক্র। প্রথম দিকে উত্তর উত্তর পশ্চিম দিকে অগ্রসর হলেও ১২ মে ঘূর্ণিঝড়টি ধীরে ধীরে বাঁক নিয়ে উত্তর উত্তর পূর্ব দিকে বাংলাদেশ-মিয়ানমার উপকূলের দিকে অগ্রসর হতে পারে।
সাগরে লঘুচাপের আগে ২৭ জেলায় মৃদু তাপপ্রবাহ
মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে ঘূর্ণিঝড়ের আভাস
তবে সম্ভাব্য সেই ঘূর্ণিঝড় কবে কোন এলাকা দিয়ে উপকূল অতিক্রম করবে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা স্পষ্ট হবে।
গত ডিসেম্বরে দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘ম্যানদাউস’ ভারতের তামিলনাড়ু ও পুদুচেরি উপকূলে আঘাত হানার পর দুর্বল হয়ে পড়ে, এর প্রভাব বাংলাদেশে পড়েনি।
এদিকে সাগরে যখন ঝড়ের জন্ম হচ্ছে, দেশের অধিকাংশ এলাকায় বয়ে যাচ্ছে তাপপ্রবাহ। তিন দিন ধরে চলা এ তাপপ্রবাহ আরও দুই-তিন দিন অব্যাহত থাকবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
মঙ্গলবার সকালে আবহাওয়ার বুলেটিনে বলা হয়েছে, রাজশাহী, নেত্রকোণা, খুলনা, চুয়াডাঙ্গা ও কুষ্টিয়া জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে তীব্র তাপপ্রবাহ। দেশের বাকি অঞ্চলে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে, যা অব্যাহত থাকতে পারে।
সোমবার চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্বোচ্চ ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছিল ৩৯.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।
তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠলে তাকে মৃদু তাপপ্রবাহ, ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসকে মাঝারি তাপপ্রবাহ এবং তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে উঠে গেলে তাকে তীব্র তাপপ্রবাহ বলে।
আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে। আকাশ আংশিকভাবে অস্থায়ী মেঘলা থাকতে পারে এবং সারা দেশে আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে।
চলমান তাপপ্রবাহ আরও ৪৮ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে, এরপর তাপমাত্রা ধীরে ধীর কমতে পারে এবং পাঁচ দিনের মাথায় বৃষ্টির দেখা মিলতে পারে।
ঘূর্ণিঝড়ের শঙ্কার মধ্যে কেমন যাবে আগামী সপ্তাহ
এ বছর এপ্রিল মাসে ২৬ দিন ছিল তাপপ্রবাহময়। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, এপ্রিল মাসে স্বাভাবিকের চেয়ে ৬৬ শতাংশ কম বৃষ্টিপাত হয়েছে এবার।
১৬ এপ্রিল ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ওঠে ৪০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে, যা গত ৫৮ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা।
আর ১৭ এপ্রিল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠেছিল ঈশ্বরদীতে, যা দেশের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা।