টিন, বাঁশ, কাঠ ও পলিথিন দিয়ে বানানো ঘর ঝড়ে উড়ে যাওয়ার যেমন শঙ্কা আছে, তেমনই ভূমিধস, বন্যার শঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
Published : 12 May 2023, 01:31 AM
ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’র গতিপথ নিয়ে যে পূর্বাভাস আছে, তাতে কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়েছে লাখ লাখ রোহিঙ্গার।
এই ঘূর্ণিবায়ুর চক্র রোববার দুপুর নাগাদ বাংলাদেশের কক্সবাজার এবং মিয়ানমারের কিয়াউকপিউয়ের মধ্যবর্তী এলাকা দিয়ে উপকূল অতিক্রম করতে পারে বলে পূর্বাভাস রয়েছে।
এখন পর্যন্ত যতটুকু জানা যাচ্ছে, তাতে মোখার অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় হয়ে ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে। তাতে টিন, বাঁশ, কাঠ ও পলিথিন দিয়ে বানানো ঘরে রোহিঙ্গারা কীভাবে নিজেদের সামলাবেন, সেই প্রশ্নে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
বিভিন্ন সংস্থার তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে বুধবার আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা শেষে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান বলেন, “পূর্বাভাস অনুযায়ী-এটা সুপার সাইক্লোন হতে পারে বলে আভাস রয়েছে। এটা ১৮০-২২০ কিলোমিটার বেগে আঘাত হানবে।
“ঝড়টি টেকনাফের উপর দিয়ে গেলে ও এই গতিবেগ থাকলে রোহিঙ্গাদের যে বসতি রয়েছে, সেগুলো যেহেতু অস্থায়ী আবাসন গড়ে তোলা হয়েছে বাঁশ, টিন, পলিথিন দিয়ে, প্লাস্টিক টিন দিয়ে- সেখানে একটা ক্ষয়ক্ষতির শঙ্কা রয়েছে।”
ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস পাওয়ার পর থেকে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তাতে ক্ষয়ক্ষতি ও জনমালের ক্ষতি ‘শূন্য পর্যায়ে’ রাখার বিষয়ে আশাবাদী প্রতিমন্ত্রী। তিনি মনে করছেন, ওই এলাকায় জলোচ্ছ্বাসের শঙ্কা তেমন নেই। আর পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় ঝড়ের গতিবেগটা কিছুটা কম থাকতে পারে।
তবে ঝড়ের প্রভাবে ও ভারি বর্ষণে ভূমিধস, জোয়ারের যে ঝুঁকি রয়েছে, তা মানছেন শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান।
তিনি বৃহস্পতিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ফ্লাশ ফ্লাড, ল্যান্ডস্লাইড হতে পারে ঝড়ের প্রভাবে ও ভারি বর্ষণে। সেক্ষেত্রে তাদের রি-লোকেট করার প্লান করেছি, যেখানে ভূমিধসের বেশি শঙ্কা থাকে।
“প্রতিটি ক্যাম্পে ১০০ জন করে পুরুষ-নারী সিপিপি ভলান্টিয়ার্স রয়েছে। ৩৩টি ক্যাম্পে ৩৩০০ জন স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত। সরকারি-বেসরকারিভাবে সংশ্লিষ্টদের সমন্বয় করে কাজ চলবে।”
কক্সবাজারে যেসব ক্যাম্পে রোহিঙ্গারা আছেন; তার মধ্যে ২৬টিই উখিয়া উপজেলায়, বাকি ৭টি টেকনাফে। এসব ক্যাম্পে কেবল নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যাই প্রায় সোয়া ৯ লাখ।
সরকার ও জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার হিসাবে, এই বিপুল জনগোষ্ঠীর ৫২ শতাংশই শিশু, বয়স্ক মানুষের হার ৪ শতাংশ। বাকি ৪৪ শতাংশ মানুষ প্রাপ্তবয়স্ক।
২০১৭ সালের অগাস্টে মিয়ানমারের রাখাইনে সেনাবাহিনীর দমন অভিযান শুরুর পর সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে ঢোকে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা। তার আগে ১৯৯২ সাল থেকে কুতুপালং ও নয়াপাড়া রেজিস্টার্ড ক্যাম্পে নিবন্ধিত রোহিঙ্গা আছে ৩৭ হাজারের বেশি। দীর্ঘ দিন ধরে থাকা এই রোহিঙ্গা শিবিরে বংশবৃদ্ধিও ঘটে চলছে।
‘মোখা’ শক্তি বাড়িয়ে চলেছে। এটি এরই মধ্যে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিয়েছে। এটি শক্তি আরও বাড়িয়ে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে বলে আভাস রয়েছে। যেমন ধারণা করা হয়েছিল, এর গতিপথ তেমনি আছে। এভাবে চললে আগামী রোববার দুপুর নাগাদ ঘূর্ণিঝড়টি বাংলাদেশে কক্সবাজার ও মিয়ানমার উপকূলে আঘাত হানতে পারে। ভারতের আহাওয়া অধিদপ্তর আভাস দিয়েছে, উপকূলে আঘাত হানার সময় ঝড়টির কেন্দ্রে বাতাসের একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ১৫০ থেকে ১৬০ কিলোমিটার হতে পারে।
টেকনাফের লেদা ক্যাম্পের রোহিঙ্গা মাঝি আবু সুফিয়ান জানান, বৃহস্পতিবার ঘূর্ণিঝড়ের বিষয়ে বিভিন্ন ক্যাম্পে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও বিভিন্ন এনজিও কর্মীরা বৈঠক করেছেন।
“এছাড়া সবাইকে সতর্ক করা হচ্ছে। তবে ঘূর্ণিঝড়ে ভারি বর্ষণ হলে পাহাড়ধসে বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গাবসতি বিলীনের ঝুঁকিতে পড়তে পারে। বিশেষ করে পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসতিতে থাকাদের মাঝে ভয়ভীতি কাজ করছে।”
রোহিঙ্গাদের জন্য আশ্রয় কেন্দ্রের ব্যবস্থা করা হবে কি না- সেই প্রশ্নে শরণার্থী কমিশনার মিজানুর বলেন, “আশ্রয় কেন্দ্র প্রয়োজন হয় মূলত জলোচ্ছ্বাসের ক্ষেত্রে। আমরা আশা করছি, রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো যেখানে রয়েছে, সেখানে জলোচ্ছ্বাসের শঙ্কা নেই।”
অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ সামছু-দ্দৌজা বৃহস্পতিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ঘূর্ণিঝড় ও ধারাবাহিক বৃষ্টিতে আকস্মিক বন্যা ও ভূমিধসের শঙ্কা রয়েছে।
“পাহাড়ের উপর যারা বসবাস করে, কিছু স্থান চিহ্নিত করা হয়েছে- ভূমি ধসের আগে যাতে দ্রুত তাদের অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া যায়। যদি ফ্লাশফ্লাড হয়- সে বিষয়ে সতর্কতা রয়েছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আশ্রয় কেন্দ্র না থাকলেও দরকার হলে ঘূর্ণিঝড়ের সময় কমিউনিটি স্পেসগুলোতে আশ্রয় নেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।”
এক্ষেত্রে রামু ক্যান্টনমেন্ট, ক্যাম্পের এপিবিএন, পুলিশ, ফায়ার সার্ভিসসহ জেলা প্রশাসনের সার্বিক সহযোগিতা থাকবে বলে জানান তিনি।
জানতে চাইলে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় প্রস্তুতিমূলক সব ধরনের পদক্ষেপ আমাদের তরফ থেকে রয়েছে এবং সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।”
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার কার্যালয়ের তরফে বৃহস্পতিবার সকালে অনুষ্ঠিত বৈঠকের তথ্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, “রোহিঙ্গা ক্যাম্পের অস্থায়ী বসতিগুলো বাঁশ, টিন দিয়ে তৈরি; স্বাভাবিকভাবেই বেশি বেড়ে ঝড়ো হাওয়া হলেই তুলনামূলকভাবে ঝুঁকিতে থাকবে। তাদেরকে যে ধরনের সহায়তা দরকার হবে, আমরা করার জন্য প্রস্তুতি রয়েছে।”
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান জানান, বৈঠকে ইউএনএইচসিআর, ডব্লিউএফপি, আইএমও, পুলিশ, বিজিবি, সেনাবাহিনী, এপিবিএনসহ বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধি ছিলেন।
“ক্যাম্পের জন্য আলাদা আলাদা কো-অর্ডিনেশন সেল করেছি। কক্সবাজারে একটি, উখিয়া উপজেলার কুতুপালংয়ে একটি, টেকনাফের নয়াপাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে একটি। জেলা প্রশাসনসহ সেনাবাহিনী, পুলিশসহ সবার সহযোগিতা চেয়েছি। উনারাও এগিয়ে এসেছে। ডব্লিউএফবি, হেলথ সেক্টরে কো-অর্ডিনেটররা কাজ করবে।”
এ কর্মকর্তা জানান, ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরও ছুটি বাতিল করা হয়েছে। তারা স্টেশনে থাকবে।
অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ সামছু-দ্দৌজা বলেন, “৩৩ টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা বাস করে। সামনে যে ঘূর্ণিঝড় আসছে ‘মোখা’ মোকাবেলায় প্রস্তুতিমূলক সভা করেছি আমরা, কার কী করতে হবে তা জানানো হয়েছে…শুকনো খাবার ও রান্না করা খাবার সরবরাহ করার বিষয়েও পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বসতবাড়ি নির্মাণ কাজে দ্রুততম সময়ে সহায়তা ও প্রয়োজনে রাস্তাঘাট পরিষ্কার করার দরকার পড়তে পারে, তা করা হবে।”
টিন, বাঁশ, কাঠ ও পলিথিন দিয়ে বানানো ঘর উড়ে গেলে- রোহিঙ্গাদের কোথায় রাখা হবে-এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “দরকার হলে ক্যাম্প সংলগ্ন স্কুলগুলো খুলে দেওয়ার জন্য জেলা প্রশাসনকে অনুরোধ করেছি। এছাড়া ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানলে রোহিঙ্গারা ডিসপ্লেসড হলে সেক্ষেত্রে ক্যাম্পে বিভিন্ন স্থাপনা রয়েছে; তাতে যেন আশ্রয় নিতে পারে সেগুলোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।”
টেকনাফে ৬৩টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত
টেকনাফ উপজেলায় ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ মোকাবিলার জন্য ৬৩টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হচ্ছে। ইতোমধ্যে উপজেলা পর্যায়ের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে।
টেকনাফের ইউএনও কামরুজ্জামান বলেন, “সেন্ট মার্টিনসহ টেকনাফ উপজেলায় ৬৩টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ইতিমধ্যে সেন্টমার্টিনের জন্য শুকনো খাবার, নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ও ওষুধ পর্যাপ্ত পরিমাণে পাঠানো হয়েছে।”
অবস্থার অবনতি হলে প্রয়োজনে উপকূলের মানুষদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, স্বেচ্ছাসেবী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতায় আশ্রয় কেন্দ্র নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
“এছাড়া বিপদ সংকেত জারি হলে এলাকায় এলাকায় মাইকিংয়ের ব্যবস্থা করা হবে।”
সেন্ট মার্টিন বোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম জানান বলেন, টেকনাফ-সেন্টমার্টিন রুটে জরুরি কাজে ব্যবহৃত কয়েকটি ট্রলার ছাড়া সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে। সাগরে মাছ ধরতে যাওয়া সব ধরনের ট্রলার কূলে ফিরে আনা হয়েছে।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের প্রস্তুতি
জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, “ঘূর্ণিঝড় মোখা মোকাবেলায় প্রস্তুতিমূলক সভা করেছি। এ সভার মাধ্যমে জেলা, উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন থেকে ওয়ার্ড পযায়ে কমিটিগুলো যেন দ্রুত প্রস্তুতিমলূকসভা করে সে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে অধিকাংশই তাদের সভা করে সিদ্ধান্ত ও অগ্রগতি আমাদের জানিয়েছে।”
তিনি জানান, জেলার ৫৭৬টি আশ্রয়কেন্দ্রে দুর্গতদের সরিয়ে নেওয়ার প্রয়োজন হলে দ্রুত তা করার ব্যবস্থা থাকছে। এসব কেন্দ্রে ঝুকিপূর্ণ অন্তত ৫ লাখ মানুষকে আশ্রয় দেওয়া যাবে।
শেল্টার কমিটি যেন প্রস্তুত থাকে, ওয়াশরুম, বিদ্যুৎ না থাকলে চার্জ লাইট ও অন্যান্য সাম্রগী প্রস্তুত রাখা এবং খাদ্যের প্রস্তুতি রাখা হয়েছে বলে জানান তিনি।
সরকারিভাবে প্রাথমিকভাবে বরাদ্দ পাওয়া প্রায় ২০ লাখ টাকা এবং ৫৯০ মেট্রিন টন চাল রিজার্ভ রয়েছে। শুকনো খাবার, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, স্যালাইন, পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে।
স্বেচ্ছাসেবক ৮৬০০ সিপিপি সদস্য, ফায়ার সার্ভিসের লোকবলসহ সবাই প্রস্তুত রয়েছে। প্রয়োজন হলে প্রশাসন অন্যদের সহযোগিতা নিয়ে লোকজন সরিয়ে নেবে।
উপকূলে ফিরছে ফিশিং ট্রলার
ঘূর্ণিঝড় মোখা পরিস্থিতি সাগরে মাছ শিকার না করে উপকূলে ফিরতে শুরু করেছে কক্সবাজারের জেলেরা। এরই মধ্যে উপকূলে নোঙর করেছে প্রায় ৩ হাজার ট্রলার।
বৃহস্পতিবার কক্সবাজার বাঁকখালী নদীর মোহনায় দেখা যায়, সাগরে মাছ শিকারে যেতে উপকূলে ট্রলারে মজুত করা হয়েছিল রসদ। সব প্রস্তুতি শেষে জেলেরাও উঠেছিলেন ট্রলারে। কিন্তু সাগরে মাছ শিকারে আর যাচ্ছেন না। বাঁকখালী নদীর মোহনায় ফিরছে মাছ ধরার একের পর এক ট্রলার।
সাগর থেকে ফিরে আসা জেলেরা জানালেন, সাগর উত্তাল হয়ে উঠছে তাই উপকূলে ফিরছেন তারা।
এফবি তরঙ্গ ট্রলারের মাঝি আবু তৈয়ব বলেন, “সাগর উত্তালের পাশাপাশি বাতাস বেড়েছে। তাই মাছ শিকার না করে ২১ জেলে নিয়ে উপকূলে ফিরে আসি।”
আরেক জেলে ছৈয়দ আলম বলেন, “জীবন বাঁচানোর জন্য উপকূলে অবস্থান। ঘূর্ণিঝড় কেটে গেলে তারপর সাগরে মাছ শিকার যাব।”
কক্সবাজার জেলা ফিশিং বোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. দেলোয়ার হোসেন জানিয়েছেন, যে ট্রলারগুলো এখনো সাগরে মাছ শিকার করছে, সংকেত বাড়লে তারা উপকূলে ফিরে আসবে। এরই মধ্যে তাদেরকে উপকূলে ফিরে আসতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এখনো সাগরে আছে দুই হাজারের মতো ট্রলার।
মন্ত্রণালয়ে ছুটি বাতিল
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় শুক্র ও শনিবার খোলা থাকছে। ঘূর্ণিঝড় 'মোখা' সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ ও আদান-প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় দায়িত্ব পালনের লক্ষ্যে মন্ত্রণালয় যথারীতি খোলা থাকবে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান জানিয়েছেন, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারসহ উপকূলীয় এলাকায় যত আশ্রয় কেন্দ্র রয়েছে, তা প্রস্তুত রাখতে বলা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক, শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে।
“পূর্বাভাস অনুযায়ী সতর্কতা ও প্রস্তুতি রয়েছে। দিক পরিবর্তন করলেও উপকূলের আশ্রয় কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত রয়েছে; শুধু ইভাকোয়েট করাটা কাজ থাকবে। এখন পর্যন্ত একটি জেলাকে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনা করা হচ্ছে। তবে বাংলাদেশ উপকূল স্পর্শ করলে কক্সবাজার জেলা টাচ করার সম্ভাবনা বেশি। কাছাকাছি চট্টগ্রাম জেলাকেও কনসিডার করে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।”
সংসদীয় কমিটির সভাতেও আলোচনা
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি’র ৩৩তম বৈঠক বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সংসদ ভবনে বৈঠক শেষে কমিটির সদস্য কানিজ সুলতানা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বৈঠকে ঘূর্ণিঝড় মোখাসহ সার্বিক ঘুর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির কার্যক্রম গ্রহণ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে।”
কমিটির সভাপতি এ বি তাজুল ইসলাম এর সভাপতিত্বে সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত হয়। কমিটির সদস্য মো. আফতাব উদ্দিন সরকার, মীর মোস্তাক আহমেদ রবি ও কানিজ সুলতানা বৈঠকে অংশ নেন।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের প্রতিনিধি, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন কক্সবাজার প্রতিনিধি শংকর বড়ুয়া রুমি ও টেকনাফ প্রতিনিধি জসিম মাহমুদ