শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী মো. বুলবুল আহমেদের খুনের ঘটনায় চার দফা দাবিতে উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন ওই বিভাগের শিক্ষার্থীরা।
বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের কার্যালয়ে তারা স্মারকলিপি দেন বলে ওই বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী আশরাফুল আলম আকাশ জানান।
একইদিন দুপুরে বুলবুলের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা বাড়িয়ে দেওয়ায় জন্য উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ।
লোক প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থীদের চার দফা দাবি হল- উচ্চতর তদন্তের মাধ্যমে বুলবুল হত্যায় প্রকৃত খুনিদের দ্রুত সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ শাস্তি কার্যকর করার লক্ষ্যে প্রশাসনের তৎপরতা বৃদ্ধি করতে হবে;
নিহতের পরিবারকে অতি দ্রুত ক্ষতিপূরণ হিসেবে এককালীন ৫০ লাখ টাকা এবং আগামী ১২ বছর পর্যন্ত প্রতি মাসে ৫০ হাজার টাকা প্রদান করতে হবে অথবা এককালীন ৫০ লাখ টাকা এবং তার পরিবারের এক সদস্যের চাকরি নিশ্চিত করতে হবে;
ক্যাম্পাসের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সিসিটিভি ক্যামেরাগুলো সচল এবং সংখ্যা বৃদ্ধি করতে হবে, অনিরাপদ এবং অন্ধকারাচ্ছন্ন স্থানে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করতে হবে, ক্যাম্পাসের টিলাগুলোতে নিরাপত্তা প্রহরীর সংখ্যা বৃদ্ধি এবং প্রাচীর সংলগ্ন স্থানে কাঁটাতারের ব্যবস্থা করতে হবে;
এবং বুলবুলের স্মৃতি রক্ষার্থে হত্যার স্থানে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ ও বুলবুল চত্বর ঘোষণা করতে হবে, একইসাথে ২৫ জুলাইকে বুলবুল হত্যা দিবস হিসেবে ঘোষণা করতে হবে।
স্মারকলিপি প্রদান শেষে আশরাফুল আলম আকাশ বলেন, "উপাচার্য আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন দাবিগুলো পূরণ করা হবে। ক্ষতিপূরণের বিষয়ে বুলবুলের পরিবারকে এক সপ্তাহের মধ্যে ডাকবেন এবং শিক্ষার্থীদের দাবির দিকে লক্ষ্য রেখে একটা সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।"
আশরাফুল আরও বলেন, ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা বৃদ্ধির বিষয়ে ইতোমধ্যে একটা বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপাচার্য। স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ ও বুলবুল চত্বর এবং দিবস ঘোষণার ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় বিষয়গুলো উত্থাপন করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন উপাচার্য।
স্মারকলিপি প্রদানকালে উপাচার্যের কার্যালয়ে লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক শামীমা তাসনীম, ফাতেমা খাতুন, আশরাফ সিদ্দিকী, ইসমত আরা; সহযোগী অধ্যাপক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল হোসাইনী, মোহাম্মদ সামিউল ইসলাম, মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন; সহকারী অধ্যাপক মো. মাহমুদ হাসান, কানিজ ফাতেমা, সাবিনা ইয়াসমিন, মোস্তফা কামাল ও জুবায়দা গুলশান আরা এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে ইমামুল হোসেন হৃদয়, আশরাফুল আলম আকাশ, মিলন মাহমুদ, নাঈম আহমেদ, হাবিব ও রাকিব উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে বৃহস্পতিবার দুপুরে বুলবুলের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ।
বুধবার সকাল ১১টায় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বুলবুলের পরিবারকে ৫ লাখ টাকা আর্থিক সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দেন। একই সঙ্গে বুলবুলের পরিবারের পাশে থাকারও আশ্বাস দেন।
ছাত্রলীগের স্মারকলিপিতে বলা হয়, তারা মনে করেন এটা তার পরিবারের জন্য যথেষ্ট নয়। বুলবুলের পরিবারের যাতে স্বচ্ছলভাবে জীবনযাপন করতে পারে এই দিক বিবেচনা করে আর্থিক সহায়তার পরিমাণ বৃদ্ধি করা হোক।
কিংবা স্থায়ী সমাধান হিসেবে বুলবুলের বোনকে যোগ্যতা অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি চাকরির ব্যবস্থা করার দাবি জানানো হয় স্মারকলিপিতে।
গত ২৫ জুলাই সন্ধ্যায় নিজ ক্যাম্পাসের গাজী কালুর টিলায় ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে বুলবুল নিহত হন বলে পুলিশ জানায়। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
এ পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এর মধ্যে বুধবার সন্ধ্যায় আদালতে ১৬৪ ধরায় জবানবন্দি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশের এলাকা টিলারগাঁওয়ের আনিছ আলীর ছেলে আসামি আবুল হোসেন (১৯)। জবানবন্দি শেষে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
গ্রেপ্তার অপর দুই আসামি হলেন টিলারগাঁওয়ের মো. গোলাব আহমেদের ছেলে কামরুল আহমদ (২৯), মৃত তছির আলীর ছেলে মো. হাসান (১৯)।
আরও পড়ুন: