শাবির বুলবুল হত্যার পেছনে ছিনতাই: পুলিশ

এ হত্যার পেছনে ব্যক্তিগত সম্পর্কের সংশ্লিষ্টতার কোনো তথ্য এখনও পায়নি পুলিশ।

শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 July 2022, 10:55 AM
Updated : 27 July 2022, 10:55 AM

‘ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতেই’ শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বুলবুল আহমেদ নিহত হয়েছেন বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে পুলিশ।

ঘটনার সময় বুলবুলের সঙ্গে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের এক ছাত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদ, তাকে নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যাওয়ার কারণে নানা সন্দেহের মধ্যে পুলিশ মঙ্গলবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে এই তথ্য জানিয়েছে।

ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার, আটক, জিজ্ঞাসাবাদ বিষয়ে জানাতে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) জালালাবাদ থানায় করা এ সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ আরও জানায়, এখন পর্যন্ত তারা এই ঘটনার সঙ্গে ব্যক্তিগত কোনো সম্পর্কের সংশ্লিষ্টতা খুঁজে পাননি।

সোমবার সন্ধ্যায় ক্যাম্পাসের ভেতরে ছুরিকাঘাতে প্রাণ হারান বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী বুলবুল আহমেদ। এ সময় তার সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের ওই ছাত্রী সঙ্গে ছিলেন।

ওই ছাত্রীর ভাষ্য, তিনজন মাস্ক পরা লোক এসে বুলবুলকে ডেকে নিয়ে ছুরিকাঘাত করে। তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

খুনের ঘটনায় তদন্তে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কমিটি গঠন করে। এর আগেই বুলবুলের সহপাঠীরা আন্দোলনে নেমে খুনিদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তারের আল্টিমেটাম দেয়। হত্যার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মুহাম্মদ ইশফাকুল হোসেন বাদী হয়ে জালালাবাদ থানায় সোমবার রাতে অজ্ঞাতদের বিরুদ্ধে মামলা করেন।

সংবাদ সম্মেলনে এসএমপির উপ-কমিশনার আজবাহার আলী শেখ, জালালাবাদ থানার ওসি নাজমুল হুদা খানসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে উপ-কমিশনার আজবাহার আলী শেখ জানান, এখন পর্যন্ত এ মামলায় মোট পাঁচজনকে আটক করেছে পুলিশ। এর মধ্যে তিনজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। তারা হলেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশের টিলারগাঁও এলাকার মো. গোলাব আহমেদের ছেলে কামরুল ইসলাম (২৯), আনিছ আলীর ছেলে আবুল হোসেন (১৯) ও তছির আলীর ছেলে মোহাম্মদ হাসান (১৯)।

প্রথম আটক করা হয় আবুল হোসেনকে। তার স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে বাকি দুজনকে আটক করা হয়। পরে কামরুলের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে তার টিলারগাঁওয়ের বাসা থেকে বুলবুল হত্যায় ব্যবহৃত ছুরি ও মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়েছে। কামরুল নিজে এগুলো বের করে দেন।

কেন এই হত্যাকাণ্ড ঘটনা হলো সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে আজবাহার বলেন, “এখন পর্যন্ত আমরা যেটা জেনেছি এটি একটি পরিপূর্ণ ছিনতাইয়ের ঘটনা। আসামিরা আগে থেকেই সেখানে অবস্থানে ছিল। বিকাল ৪টা থেকে চারজন ছিল। সাড়ে ৪টায় দুজন চলে যায়। সন্ধ্যার পরে কামরুল সেখানে আসে।

“ছিনতাইকারীরা বুলবুলের কাছে টাকা ও মোবাইল দাবি করে। এ নিয়ে ধস্তাধস্তি হয়। বুলবুলের শরীরে ও হাতে ধস্তাধস্তির চিহ্ন রয়েছে। এটা নিছক একটি ছিনতাইয়ের ঘটনা।”

“এ সময় ওই ছাত্রী কিছুটা দূরে ছিলেন। তার মোবাইল ফোন নেয়নি। বুলবুলের মানিব্যাগও খোয়া যায়নি। শুধু মোবাইলটা খোয়া যায়। সেটা উদ্ধার করা হয়েছে।“

ছিনতাইয়ের ঘটনা হলে তো বুলবুলের মানিব্যাগ নেওয়ার কথা, কেন নেয়নি- এ প্রশ্নের জবাবে পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, “ধস্তাধস্তির মধ্যে যখন রক্ত দেখেছে, বয়স কম, তারা ছিটকে তিনজন তিনদিকে চলে যায়। এর সঙ্গে আরও কেউ জড়িত আছে কি-না তা পরে তদন্ত করে জানা যাবে।“

বুলবুলের সঙ্গে থাকা ওই ছাত্রী কাউকে না জানিয়েই বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশের মাউন্ট এডোরা হাসপাতাল থেকে চলে আসে এবং তিনি তার মোবাইল ফোনের কল লিস্টও মুছে ফেলেন বলে সোমবার জানিয়েছিলেন এ ঘটনায় গঠিত বিশ্ববিদ্যালয় তদন্ত কমিটির সদস্য এবং ছাত্র উপদেশ ও নির্দেশনা পরিচালক আমিনা পারভীন।

ছাত্রী কেন কল লিস্ট মুছে ফেললেন- জানতে চাইলে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, “তার কল লিস্ট পরীক্ষা করা হয়েছে। সেখানে আটকদের সঙ্গে যোগাযোগের কোনো তথ্য নেই। এমনকি অপরাধপ্রবণ কোনো কিছু আমরা সেখানে পাইনি।”

ছাত্রী কেন কর্তৃপক্ষকে না বলে হাসপাতাল থেকে চলে এলো- এ ব্যাপারে পুলিশ বলছে, ওই ছাত্রী তার বন্ধুদের মাধ্যমে জানতে পারেন, বুলবুলের প্রথম জানাজা ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠিত হবে। সেই জানাজায় অংশ নিতেই মূলত তিনি হাসপাতাল ছেড়ে ক্যাম্পাসে চলে আসেন। পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে তাকে গিয়ে ক্যাম্পাসে খুঁজে পায়। এর মধ্যে অপরাধমূলক কিছু পুলিশ পায়নি।