শাবি শিক্ষার্থী খুন: আশ্বাসে সড়ক ছাড়ল সহপাঠীরা, মামলা দায়ের

মামলায় অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করা হয়েছে।

শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 July 2022, 05:30 AM
Updated : 26 July 2022, 05:30 AM

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বুলবুল আহমেদ নিহতের ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।

এ ঘটনার বিচার চেয়ে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন একদল শিক্ষার্থী। এ সময় প্রক্টরের কাছে কয়েকটি দাবিও তুলে ধরেন তারা। পরে প্রশাসনের আশ্বাসে সড়ক থেকে সরে যান আন্দোলনকারীরা।

সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার বি এম আশরাফ উল্লাহ তাহের জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মুহাম্মদ ইশফাকুল হোসেন বাদী হয়ে সিলেটের জালালাবাদ থানায় সোমবার রাতে মামলাটি দায়ের করেন। বুলবুলের বুকের বামপাশে ছুরিকাঘাতে প্রচুর রক্তক্ষরণের কারণে তার মৃত্যু হয় বলে মামলায় বলা হয়েছে।

এ ঘটনায় সন্দেহভাজন হিসেবে তিনজনকে আাটক করা হয়েছে। তারা সবাই বহিরাগত বলে জানান এ পুলিশ কর্মকর্তা।

এর আগে সোমবার সন্ধ্যায় ক্যাম্পাসের ভেতরে অজ্ঞাত হামলাকারীর ছুরিকাঘাতে প্রাণ হারান শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী বুলবুল।

বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের সামনের টিলায় বুলবুলকে আহত অবস্থায় পাওয়া যায়। পরে হাসপাতালে নেওয়ার পর তার মৃত্যু হয়। বুলবুলের বাড়ি নরসিংদী জেলায়।

আহত অবস্থায় তাকে প্রথমে উদ্ধার করেছেন পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী শরিফুল ইসলাম জয়।

মামলার বিষয়ে জানতে রেজিস্ট্রার ইশফাকুল উল্লাহর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, মামলা নম্বর ২৮। এতে অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যাডে লিখিত অভিযোগে রেজিস্ট্রার উল্লেখ করেন- “সোমবার সন্ধ্যা ৭টা ৪৫ মিনিটের দিকে বন্ধুদের নিয়ে ক্যাম্পাসের গাজীকালুর টিলা এলাকায় বেড়াতে গিয়ে দুষ্কৃতিদের ছুরিকাঘাতে আহত হয় বুলবুল।

“রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারে নেওয়া হয়। পরে অ্যাম্বুলেন্সে করে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে চিকিৎসকেরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।”

Also Read: শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ছুরিকাঘাতে নিহত

বুলবুলের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য সিলেট ওসমানি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে জালালাবাদ থানার ওসি কর্মকর্তা নাজমুল হুদা জানান।

বুলবুল হত্যার ঘটনায় সোমবার রাত ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে সিলেট-সুনামগঞ্জ মহাসড়কে গাড়ির টায়ার ও কাঠ পুড়িয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় ওই সড়কে গাড়ি চলচল বন্ধ হয়ে গেলে যানজটের সৃষ্টি হয়।

আধাঘণ্টা পর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদ, প্রক্টর ইশরাত ইবনে ইসমাইল ও সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার আজবাহার আলী শেখ সেখানে গিয়ে শিক্ষার্থীদের আশ্বস্ত করলে তারা সড়ক থেকে সরে যান।

এ সময় শিক্ষার্থীরা প্রক্টরের কাছে কয়েকটি দাবি তুলে ধরেন। দাবি মেনে নিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে মঙ্গলবার বিকাল ৫টা পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে বলে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী শাহেরিয়ার আবেদীন জানান।

দাবিগুলো হল-দ্রুত হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনতে হবে, বুলবুলের পরিবারকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিতে হবে, ক্যাম্পাসে সিসি ক্যামেরা এবং পর্যাপ্ত লাইটের ব্যবস্থা করতে হবে, নিরাপত্তা কর্মীর সংখ্যা বাড়াতে হবে ও ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

এ সময় উপাচার্য বুলবুলের পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বলেন, "বুলবুল নিহতের ঘটনায় আমরা গভীরভাবে ব্যথিত। বুলবুল আমাদের সন্তান। তার পরিবারের সঙ্গে কথা হয়েছে। ওই পরিবারকে কিভাবে একটা কম্পোর্টেবল জায়গায় নিয়ে আসা যায় সেইটা আমরা করবো।

“প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের লোকদের সঙ্গে কথা হয়েছে, তারা আমাদেরকে আশ্বস্ত করেছে। যারা এ ঘটনায় জড়িত তাদেরকে দ্রুত বিচারের আওতায় আনা হবে। এ ঘটনায় ইতোমধ্যে মামলা রুজু করা হয়েছে।"

তিনি বলেন, “আমাদের আর কোনো সন্তানকে যাতে এভাবে জীবন দিতে না হয়, তাই বিশ্ববিদ্যালয়ে নিরাপত্তার জন্য আমরা আপনাদের সহযোগিতা ও পরামর্শ চাই। আমরা সাড়ে ৬ কিলোমিটার সীমানা প্রাচীর দিয়েছি। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে বহিরাগতদের আনাগোনা চলছে সবসময়। আমরা চেষ্টা করতেছি, কিভাবে এই ব্যাপারটা নিয়ন্ত্রণে আনা যায়।"

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ফরিদ উদ্দিন আরও বলেন, "আপনারা যে দাবি করেছেন, ঘটনার জায়গায় আলোর ব্যবস্থা করা, বিশ্ববিদ্যালয়ে আরও সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো, এই কাজগুলো আমরা অল্প সময়ের মধ্যেই করবো। আর পুরো বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা যাতে নিরাপদ বলয়ে থাকে সেই ব্যবস্থা করবো। আমরা আপনাদের কথা দিচ্ছি।"

সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার আজবাহার আলী শেখ বলেন, তারা ঘটনাটি তদন্ত করছেন। জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে।