শাবির বুলবুলের গ্রামের বাড়িতে শোকের মাতম

পড়ালেখা শেষ করে পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর ইচ্ছে ছিল তার।

নরসিংদী প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 July 2022, 11:37 AM
Updated : 26 July 2022, 11:37 AM

মাত্র এক বছর আগেই স্বামীকে হারিয়েছিলেন, আর এখন বুকের ধন ছোটো ছেলেকে হারিয়ে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন বুলবুলের মা ইয়াসমিন বেগম। জ্ঞান ফিরলেই আবার বিলাপ করছিলেন। কোনোভাবেই তাকে সান্ত্বনা দিতে পারছিলেন না পরিবারের সদস্যরা।

সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) ছাত্র নিহত বুলবুল আহমেদের গ্রামের বাড়ি নরসিংদীতে চলছে এমন শোকের মাতম।

বুলবুলের পরিবারকে সান্ত্বনা দিতে বাড়িতে ভিড় জমিয়েছেন স্বজন, এলাকাবাসী ও বন্ধুরা। পরিবারের সদস্যদের কান্না ও আহাজারিতে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়।

বুলবুল আহমেদ নরসিংদী সদর উপজেলার চিনিশপুর ইউনিয়নের নন্দীপাড়া গ্রামে মৃত উহাব মিয়ার ছেলে। দুই ভাই ও দুই বোনের মধ্যে বুলবুল ছিল সবার ছোট। তিনি ২০১৮ সালে নরসিংদীর আবদুল কাদির মোল্লা সিটি কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেন।

পরে বুলবুল শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগে ভর্তি হয়। বর্তমানে তিনি তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহপরান হলের ২১৮ নম্বর কক্ষে থাকতেন।

সোমবার সন্ধ্যায় বুলবুলের নিহত হওয়ার খবর বাড়িতে এলে পরিবারের সদস্যরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। পরে রাতেই বুলবুলের বড় ভাই জাকারিয়া এলাকার কয়েকজনকে নিয়ে সিলেটের উদ্দেশে রওনা দেন।

এ সময় জাকারিয়ার সঙ্গে থাকা হাবিবুল্লাহ নামে একজন বলেন, “নিজের বিশ্ববিদ্যালয়ে বুলবুলের এমন নির্মম মৃত্যু আমরা কেউ মেনে নিতে পারছি না। ওর বড় ভাই গাড়িতে এখনও কান্না করছে।”

সাকিব নামে বুলবুলের এক বন্ধু বলেন, বুলবুল খুবই মেধাবী ছিল। মাত্র এক বছর আগে তার বাবা মারা গেছেন। পড়ালেখা শেষ করে পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর ইচ্ছে ছিল তার। এখন তার মৃত্যুতে পরিবার কীভাবে শোক সামলাবে। আমরা অবিলম্বে বন্ধু হত্যার বিচার চাই।

সাস্টের নরসিংদী জেলা ছাত্র কল্যাণ সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক লোকমান হোসেন বলেন, ক্যাম্পাসের ভেতরে সহপাঠীর এমন নির্মম মৃত্যু কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছি না। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে বুলবুল হত্যার বিচার দাবি করতেছি এবং বুলবুলের পরিবারকে প্রশাসনের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি করছি।

সোমবার সন্ধ্যায় ক্যাম্পাসের ভেতরে অজ্ঞাত হামলাকারীর ছুরিকাঘাতে প্রাণ হারান বুলবুল। বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের সামনের টিলায় বুলবুলকে আহত অবস্থায় পাওয়া যায়। হাসপাতালে নেওয়ার পর তার মৃত্যু হয়।

এ ঘটনার বিচার চেয়ে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন বুলবুলের সহপাঠীরা। পরে প্রশাসনের আশ্বাসে সড়ক থেকে সরে যান তারা। পরে এ ঘটনায় রাতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মুহাম্মদ ইশফাকুল হোসেন বাদী হয়ে সিলেটের জালালাবাদ থানায় মামলা করেন।

মামলায় বলা হয়, সোমবার সন্ধ্যা ৭টা ৪৫ মিনিটের দিকে বন্ধুদের নিয়ে ক্যাম্পাসের গাজীকালুর টিলা এলাকায় বেড়াতে গিয়ে দুষ্কৃতদের ছুরিকাঘাতে আহত হয় বুলবুল। রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারে নেওয়া হয়। পরে অ্যাম্বুলেন্সে করে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে চিকিৎসকেরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এ ঘটনায় মঙ্গলবার সকালে সন্দেহভাজন হিসেবে বহিরাগত তিনজনকে পুলিশ আটক করে বলে সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার বি এম আশরাফ উল্লাহ তাহের জানান।

আরও পড়ুন:

Also Read: ক্যাম্পাসে খুন হওয়া বুলবুলের মরদেহ বাড়ির পথে

Also Read: শিক্ষার্থী বুলবুল খুনের ঘটনায় শাবির তদন্ত কমিটি

Also Read: বুলবুলের খুনিদের গ্রেপ্তারে ২৪ ঘণ্টার ‘আল্টিমেটাম’ শাবি শিক্ষার্থীদের

Also Read: শাবি শিক্ষার্থী খুন: আশ্বাসে সড়ক ছাড়ল সহপাঠীরা, মামলা দায়ের

Also Read: শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ছুরিকাঘাতে নিহত