বুলবুলের পরিবারকে ৫ লাখ টাকা দেওয়ার ঘোষণা, সহপাঠীদের বিক্ষোভ

শিক্ষার্থীরা মিছিল থেকে বুলবুলের পরিবারকে এককালীন ৫০ লাখ টাকা দেওয়ার দাবি তুলেন।

শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 July 2022, 01:06 PM
Updated : 27 July 2022, 01:06 PM

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বুলবুল আহমেদ নিহতের ঘটনায় তার পরিবারকে পাঁচ লাখ টাকা সহায়তা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন; তবে তা ‘যথেষ্ট’ নয় বলে বিক্ষোভ করেছে সহপাঠীরা।

বুধবার সকাল ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ সংবাদ সম্মেলনে করে সহায়তার ঘোষণা দেন।

তারপর বিকাল সোয়া ৪টায় ক্যাম্পাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শতাধিক সাধারণ শিক্ষার্থীর এক মিছিল থেকে বুলবুলের পরিবারকে এককালীন ৫০ লাখ টাকা দেওয়ার দাবি আসে।

সোমবার সন্ধ্যায় ক্যাম্পাসের ভেতরে ‘ছিনতাইকারীদের’ ছুরিকাঘাতে প্রাণ হারান বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী বুলবুল আহমেদ। সঙ্গে থাকা এক ছাত্রীর ভাষ্য, তিনজন মাস্ক পরা লোক এসে বুলবুলকে ডেকে নিয়ে ছুরিকাঘাত করে। তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

খুনের ঘটনায় তদন্তে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কমিটি গঠন করে। এর আগেই বুলবুলের সহপাঠীরা আন্দোলনে নেমে খুনিদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তারের আল্টিমেটাম দেয়। হত্যার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মুহাম্মদ ইশফাকুল হোসেন বাদী হয়ে জালালাবাদ থানায় সোমবার রাতে অজ্ঞাতদের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এখন পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার ও দুজনকে আটক দেখিয়েছে পুলিশ।

নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন বলেন, “শিক্ষার্থীরা কিছু দাবি-দাওয়া উত্থাপন করেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আগামী সপ্তাহের মধ্যে বুলবুলের পরিবারের হাতে পাঁচ লাখ টাকা পৌঁছিয়ে দেওয়া হবে। পরবর্তীতে কোনো সাহায্য লাগলে আমরা আমাদের সাধ্য অনুযায়ী চেষ্টা করে যাব। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সবসময় তাদের পাশে থাকবে।"

"বুলবুল হত্যার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের পক্ষ থেকে আমরা গভীরভাবে শোকাহত। তার শোকাহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করছি। বুলবুল হত্যার পর থেকে আমরা সবার সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ করার চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমাদের সাথে পুলিশ প্রশাসন, গোয়েন্দা সংস্থা ও সরকারের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কাজ করে যাচ্ছেন। তাদেরকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।"

তিনি আরও বলেন, "বুলবুল হত্যার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, লোক প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন দাবি-দাওয়া উত্থাপন করেছেন। আমরা তাদের দাবির সাথে একাত্মতা পোষণ করছি। আমরা চেষ্টা করছি তাদের দাবিগুলো পূরণ করার। এরই মধ্যে বুলবুল হত্যায় জড়িত তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতে আমরা কাজ করে যাব।"

নিরাপত্তা নিশ্চিতের বিষয়ে ফরিদ উদ্দিন বলেন, "শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তায় আমরা পুরো ক্যাম্পাসে সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ করেছি এবং কাঁটাতারের বেড়া দিয়েছি। আমরা চাই, শিক্ষার্থীদের যাতে শতভাগ নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়। সাম্প্রতিক সময়ে বন্যায় ক্যাম্পাস পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় অনেকগুলো সিসি ক্যামেরা নষ্ট হয়ে গিয়েছে। আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে এগুলো মেরামত করা চেষ্টা করছি।”

এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আনোয়ারুল ইসলাম, ছাত্র উপদেশ ও নির্দেশনা পরিচালক অধ্যাপক আমিনা পারভীন, প্রক্টর ইশরাত ইবনে ইসমাইল উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে বুলবুল হত্যার ক্ষতিপূরণ যথেষ্ট না হওয়ায় বিক্ষোভ মিছিল করে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

বিক্ষোভ মিছিল শেষে লোক প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী আশরাফুল আলম আকাশ বলেন, "আমাদের গতকালকের চার দফা দাবির দ্বিতীয় দাবিটি ছিল বুলবুল হত্যার ক্ষতিপূরণ সম্পর্কে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বুলবুলের পরিবারকে পাঁচ লাখ টাকা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।

“এই অর্থ অতি নগন্য। আমরা চাই, ক্ষতিপূরণ হিসেবে তার পরিবারকে এককালীন ৫০ লাখ টাকা দিতে হবে এবং প্রতি মাসে ৫০ হাজার টাকা করে দিতে হবে। এজন্যই আমাদের এই বিক্ষোভ কর্মসূচি।"