অবশেষে রামনাথের ভিটায় পাঠাগারের সাইনবোর্ড

বাড়িটি অবৈধ দখলে যাওয়ার সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে একদল সাংবাদিক হামলার শিকার হলে রামনাথ বিশ্বাসের ভিটা উদ্ধারের দাবিতে দেশজুড়ে আন্দোলন গড়ে ওঠে।

হবিগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Nov 2022, 10:28 AM
Updated : 21 Nov 2022, 10:28 AM

হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ের ভূ পর্যটক রামনাথ বিশ্বাসের বসতভিটা পুনরুদ্ধার করে ‘রামনাথ বিশ্বাস স্মৃতি পাঠাগার’ নামে সাইনবোর্ড লাগিয়ে দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।

সোমবার দুপুরে বানিয়াচং উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) কার্যালয়ের সার্ভেয়ার মো. হাবিবুর রহমান, ২ নম্বর উত্তর পূর্ব ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা রেজাউল করিম ও চেইনম্যান নূরুল আমীন সেখানে খুঁটি পুঁতে সাইনবোর্ড লাগিয়ে দেন।

বানিয়াচং থানার এসআই রাকিব হোসেনের নেতৃত্বে একদল পুলিশ সদস্য সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পদ্মাসন সিংহ বলেন, “সময় সুযোগে এবং বরাদ্দ সাপেক্ষে রামনাথ বিশ্বাসের নামে এখানে স্মৃতি পাঠাগার স্থাপন করা হবে।”

বানিয়াচং উপজেলার ২ নম্বর ইউনিয়নের বিদ্যাভূষণ পাড়ায় রামনাথ বিশ্বাসের বাড়িটি দীর্ঘদিন ধরে ‘দখলে’ রেখেছেন বানিয়াচং উত্তর পশ্চিম ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল ওয়াহেদ।

Also Read: রামনাথ বিশ্বাস: বিশ্বজোড়া পাঠশালা তাঁর

Also Read: রামনাথ বিশ্বাসের বাড়ির পথে বাইসাইকেল শোভাযাত্রা

Also Read: রামনাথ বিশ্বাসের স্মৃতি রক্ষার দায়িত্ব সরকারের: শত নাগরিকের বিবৃতি

Also Read: হবিগঞ্জে রামনাথ বিশ্বাসের বাড়িতে সাংবাদিকদের উপর ‘দখলদারদের’ হামলা

চিরকুমার রামনাথ বিশ্বাস ভারতে মারা যাওয়ার পর বানিয়াচং গ্রামের বিদ্যাভূষণপাড়ার বিশাল এলাকাজুড়ে তার পৈত্রিক বাড়িটি পরিত্যক্ত ছিল।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, রামনাথেরে পরিত্যক্ত বাড়িটি ওয়াহাব উল্লাহ নামে এক ব্যক্তি দখলে নেন। এর কয়েক বছর পর আব্দুল ওয়াহেদ ও তার ভাই আবু ছালেক ওয়াহাব উল্লাহর কাছ থেকে ওই সম্পত্তির দখল নেন। আওয়ামী লীগ সরকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করলে আবু ছালেক এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যান।

কিন্তু তার ভাই আব্দুল ওয়াহেদ ওই বাড়ি নিজের নামে ‘অবৈধভাবে’ নামজারি করান। তবে স্থানীয় সাংস্কৃতিক কর্মী ও রামনাথ স্মৃতি সংসদের নেতাকর্মীরা বিষয়টি প্রশাসনের নজরে আনলে সেই নামজারি বাতিল করা হয়।

কিন্তু স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা কোনোভাবে এই প্রভাবশালী ব্যক্তির দখল থেকে এই বাড়ি মুক্ত করতে পারেননি বলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, আওয়ামী লীগ নেতা ও রামনাথ স্মৃতি সংসদের নেতাকর্মীদের ভাষ্য।

বাড়িটি দেখতে গিয়ে এবং এ বিষয়ে সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে বিভিন্ন সময় পর্যটক ও সাংবাদিকরা হামলার শিকার হয়েছেন। সর্বশেষ ১২ সেপ্টেম্বর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের স্পেশাল অ্যাসাইনমেন্ট এডিটর রাজীব নূর, বানিয়াচং প্রেস ক্লাবের সভাপতি ও কালের কণ্ঠের বানিয়াচং প্রতিনিধি মোশাহেদ মিয়া, হবিগঞ্জ সমাচারের বানিয়াচং প্রতিনিধি তৌহিদ মিয়া এবং দেশসেবা পত্রিকার বানিয়াচং প্রতিনিধি আলমগীর রেজার উপর হামলা হয়।

এরপর রামনাথের ভিটা উদ্ধারের দাবিতে সারা দেশে শুরু হয় আন্দোলন। সেই দাবি অনুযায়ী সেখানে পাঠাগার প্রতিষ্ঠা করা হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেন স্থানীয় প্রশাসনের কর্মারা।

Also Read: রামনাথের জীবনী পাঠ্যবইয়ে রাখার দাবি, দিবস ঘোষণা

Also Read: সাইকেল শোভাযাত্রা-অনশনে রামনাথের বসতভিটা পুনরুদ্ধারের দাবি

Also Read: তরুণ প্রজন্মের জন্য বাঁচাতে হবে রামনাথের স্মৃতি

Also Read: রামনাথের পৃথিবী পুনরুদ্ধার

Also Read: রামনাথের বাড়ি দখলকারী ওয়াহেদের পদ গেল আওয়ামী লীগ থেকে

১৮৯৪ সালের ১৩ জানুয়ারি হবিগঞ্জের বানিয়াচং গ্রামের বিদ্যাভূষণপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন রামনাথ বিশ্বাস। তার বাবা বিরজানাথ বিশ্বাস ও মা গুণময়ী দেবী।

রামনাথ বানিয়াচংয়ের হরিশ্চন্দ্র উচ্চবিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন। সাইকেল নিয়ে তিনি পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ঘুরেছেন তিন বার।

সেসব অভিজ্ঞতা থেকে বাংলা ভাষায় ৪০টি বই লিখেছেন। ১৯৫৫ সালের ১ নভেম্বর কলকাতায় তিনি মারা যান।

বিদ্যাভূষণপাড়ায় ৪ একর ৪৮ শতাংশ জায়গায় রামনাথ বিশ্বাসের বসতঘরের পাশাপাশি ছিল একটি দৃষ্টিনন্দন মন্দির ও পুকুর। বাড়িটিকে ঘিরে রেখেছে বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালা আর সবুজ লতাপাতা।

দখলদাররা সেই পুকুরে মাছ চাষ করছেন। বর্তমানে বাড়িতে থাকা পুরনো সব ভবন ভেঙে ফেলেছেন তারা। শুধু মন্দিরের একটি অংশ এখনও রয়ে গেছে।