আওয়ামী লীগে শুদ্ধি অভিযানের অংশ হিসেবে ‘আলবদর পরিবারের সদস্য’ ওয়াহেদকে ওয়ার্ড সভাপতি পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
Published : 14 Sep 2022, 11:40 PM
বাইসাইকেলে বিশ্ব ভ্রমণকারী রামনাথ বিশ্বাসের বাড়ির ‘দখলকারী’ আব্দুল ওয়াহেদ মিয়াকে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
বুধবার রাতে বানিয়াচং উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মো. আমীর হোসেন ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আঙ্গুর মিয়া স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
আওয়ামী লীগের শুদ্ধি অভিযানের অংশ হিসেবে ‘আলবদর পরিবারের সদস্য’ আব্দুল ওয়াহেদ মিয়াকে বানিয়াচং ২ নম্বর উত্তর-পশ্চিম ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ড সভাপতি পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয় বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
আব্দুল ওয়াহেদ মিয়া হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলার বানিয়াচং গ্রামের বিদ্যাভূষণপাড়ায় রামনাথ বিশ্বাসের বাড়িটি ‘অবৈধভাবে’ দখল করে রেখেছেন।
বাড়িটি দেখতে গিয়ে এবং এ বিষয়ে সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে বিভিন্ন সময় পর্যটক ও সাংবাদিকরা হামলার শিকার হয়েছেন। সর্বশেষ হামলা হয় গত রোববার বিকালে।
এদিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের স্পেশাল অ্যাসাইনমেন্ট এডিটর রাজীব নূর, বানিয়াচং প্রেস ক্লাবের সভাপতি ও কালের কণ্ঠের বানিয়াচং প্রতিনিধি মোশাহেদ মিয়া, হবিগঞ্জ সমাচারের বানিয়াচং প্রতিনিধি তৌহিদ মিয়া এবং দেশসেবা পত্রিকার বানিয়াচং প্রতিনিধি আলমগীর রেজার উপর হামলা হয়।
এ অভিযোগে আব্দুল ওয়াহেদ ও তার তিন ছেলের বিরুদ্ধে তৌহিদ মিয়া বানিয়াচং থানায় মামলা করেছেন; ওই মামলায় ওয়াহেদের এক ছেলেকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে।
ওয়াহেদকে অব্যাহতির বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সম্প্রতি উপজেলা আওয়ামী লীগ জানতে পারে ওয়াহেদ মিয়া ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে বিরোধিকারী আলবদর বাহিনীর পরিবারের সদস্য। তাই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের শুদ্ধি অভিযানের অংশ হিসেবে তাকে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
একই সঙ্গে এই ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি মো. ময়না মিয়াকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয় বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মো. আমীর হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সম্প্রতি আমরা জানতে পেরেছি তিনি ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে বিরোধিকারী পরিবারের সদস্য। তার বড়ভাই আবু ছালেক মিয়া ছিলেন আলবদর বাহিনীর সদস্য। তাই তাকে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “ওয়াহেদ বানিয়াচংয়ের বিখ্যাত রামনাথ বিশ্বাসের বাড়িটি দখল করে রেখেছেন। এ ছাড়া তিনি সাংবাদিকের ওপরও হামলা করেছেন। আমরা চাই এই বাড়িটি ওয়াহেদের কবল থেকে উদ্ধার হোক।”
রামনাথ বিশ্বাস বাইসাইকেলে বিশ্বের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ঘুরেছেন তিনবার। সেসব অভিজ্ঞতা থেকে লিখেছেন ভ্রমণবিষয়ক ৪০টি বই। ১৯৫৫ সালের ১ নভেম্বর কলকাতায় তিনি মারা যান।
বানিয়াচং গ্রামের বিদ্যাভূষণপাড়ায় অনেক বড় এলাকা নিয়ে রামনাথের বসতভিটা। ৪ একর ৪৮ শতাংশ জমিতে বসতঘরের পাশাপাশি ছিল দৃষ্টিনন্দন মন্দির ও পুকুর। বর্তমানে পুরোনো সব ভবন ভেঙে ফেলেছে দখলদার ওয়াহেদ মিয়ার পরিবার। শুধু মন্দিরের একটি অংশ এখনও টিকে আছে। সেটিও ধীরে ধীরে ভাঙা হচ্ছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
স্থানীয়রা জানান, রামনাথ ভারতে স্থায়ীভাবে চলে যাওয়ার পর দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত ছিল বাড়িটি। ১৯৮০-এর দশকে ওয়াহাব উল্লাহ নামে প্রভাবশালী একজন এই সম্পত্তি দখল করে নেন। ২০০০ সালের পর তিনি আবদুল ওয়াহেদের কাছে জায়গাটির দখল বিক্রি করেন। এরপর থেকে রামনাথ বিশ্বাসের বাড়িটি দখলে রেখেছেন আব্দুল ওয়াহেদের পরিবার।
আরও পড়ুন
হবিগঞ্জে সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় বরিশাল প্রেসক্লাবের নিন্দা
হবিগঞ্জে রামনাথ বিশ্বাসের বাড়িতে সাংবাদিকদের উপর ‘দখলদারদের’ হামলা
হবিগঞ্জ প্রেসক্লাবের জরুরি সভা, সাংবাদিকের উপর হামলাকারীদের গ্রেপ্তার দাবি