ইতালির প্রধানমন্ত্রীর ওয়াশিংটন সফরকালে আগামী তিন থেকে চার সপ্তাহের মধ্যে প্রতিটি দেশের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি হওয়ার আশা প্রকাশ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
Published : 18 Apr 2025, 06:21 PM
যুক্তরাষ্ট্রে ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনির সফরকালে ইউরোপ এবং চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য বাণিজ্য চুক্তির নিয়ে আশা প্রকাশ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) দেশগুলোর পণ্য আমদানিতে ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ এবং পরে তা স্থগিত করার পর মেলোনিই প্রথম ইউরোপীয় নেতা যিনি ওয়াশিংটন সফর করছেন।
মেলোনির সঙ্গে বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের মধ্যে বাণিজ্য চুক্তির সম্ভাবনা নিয়ে আলাপ করেন ট্রাম্প।
বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউজে সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, “বাণিজ্য চুক্তি হবে, একশতভাগ। নিশ্চিতভাবেই একটি চুক্তি হবে। তারা একটি চুক্তি করতে খুবই আগ্রহী আর আমরাও একটি চুক্তি করব। এটি পুরোপুরিই হবে বলে আশা করছি। তবে এটি একটি ন্যায্য চুক্তি হবে।”
আলাদাভাবে চীনের সঙ্গেও খুব ভাল একটি চুক্তি করার আশা প্রকাশ করেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, “চীনের সঙ্গে খুব ভাল একটি চুক্তি হবে। আমি নিশ্চিত, আমরা চীনের সঙ্গে একটা ভাল চুক্তি করব।”
তবে এ বিষয়ে কোনও নির্দিষ্ট সময়সীমা বা আলোচনার কাঠামো উল্লেখ করেননি তিনি। চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য আলোচনা বর্তমানে অচল অবস্থায় থাকলেও, ট্রাম্প বলেন, বেইজিং থেকে “অনেকবার” তাদের প্রতিনিধিরা যোগাযোগ করেছেন।
ট্রাম্প সম্প্রতি বিশ্বের অনেক দেশকে নতুন উচ্চহারের শুল্ক থেকে ৯০ দিনের জন্য রেহাই দিলেও চীনের পণ্যে শুল্ক আরও বাড়িয়েছেন। চীনের পণ্যে শুল্ক বর্তমানে ১৪৫ শতাংশ এবং চীনও পাল্টা যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য আমদানিতে ১২৫ শতাংশ শুল্কারোপ করে রেখেছে।
ট্রাম্প এ পরিস্থিতির মধ্যেই চীনের সঙ্গে ভাল বাণিজ্য চুক্তি করার আশা প্রকাশ করলেন। তবে চুক্তি করা নিয়ে আস্থা প্রকাশ করলেও তিনি বলেছেন, তিনি কোনও তাড়াহুড়ো করার মধ্যে নেই।”
ট্রাম্প বলেন, “সবাই চুক্তি করতে চায়। তারা যদি চুক্তি না করে আমরাই তাদের জন্য চুক্তি তৈরি করে দেব।” আগামী তিন থেকে চার সপ্তাহের মধ্যেই প্রত্যেকটি দেশের সঙ্গে চুক্তি হয়ে যাওয়ার আশা প্রকাশ করেন তিনি।
চীনের ওপর শুল্ক আর বাড়াবেন না বলেও জানান ট্রাম্প। তিনি বলেন, “আমি আরও বেশি শুল্কর পথে যেতে চাই না। আমি হয়ত আরও কমের দিকে যেতে চাইতে পারি। কারণ, আপনারা চান মানুষ পণ্য কিনুন।”
ওদিকে, ইতালির প্রধানমন্ত্রী মেলোনির সঙ্গে বৈঠকের পর এক সাংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প জানান, তারা প্রতিরক্ষা ব্যয়, অভিবাসন এবং শুল্ক নিয়ে আলাপ করেছেন।
মেলোনির সহযোগীরা তার এই সফরকে “বাণিজ্যিক শান্তি মিশন” বলে অভিহিত করেছেন, বিশেষ করে সব বিদেশি পণ্যে ট্রাম্পের ১০ শতাংশ সর্বনিম্ন শুল্ক ঘোষণার প্রেক্ষাপটে।
তবে ইউরোপের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তির আশা প্রকাশ করলেও ট্রাম্প বাণিজ্য নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কড়া সমালোচনাও করেছেন। তিনি বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রকে ঘায়েল করার জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন গঠন করা হয়েছে।”
বিবিসি জানায়, ইইউ-র পণ্যে ২০ শতাংশ 'পাল্টা' শুল্ক আগামী জুলাই পর্যন্ত সাময়িকভাবে স্থগিত রেখেছেন ট্রাম্প। মেলোনির এর আগে এই শুল্ককে 'একেবারেই ভুল' বলে অভিহিত করেছিলেন এবং বলেছিলেন যে, এটি ইইউ-কে "যুক্তরাষ্ট্রের মতোই" ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে মেলোনি শুল্কের বিষয়ে কোনও বাস্তব জয় অর্জন করতে পারেননি। তবে রোম সফরের আমন্ত্রণে ট্রাম্পকে রাজি করাতে পেরেছেন, যা তিনি ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে ট্রাম্পের সাক্ষাতের সুযোগ হিসেবে দেখছেন।
ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডার লিয়েনের সঙ্গে ট্রাম্পের সম্ভাব্য সাক্ষাতও এর আওতায় পড়বে।