বিএনপি ও তার সঙ্গে থাকা দলগুলোর ভোট বর্জনের ডাকের মধ্যে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন কীভাবে সম্ভব, সে বিষয়ে কোনো প্রশ্ন অবশ্য নেননি ইইউ রাষ্ট্রদূত।
Published : 29 Nov 2023, 05:44 PM
বিএনপি-জামায়াত ও সমমনা দলগুলোর ভোট বর্জনের ডাকের মধ্যে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা বলেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
তবে বিরোধীদের ভোট বর্জনের আহ্বান, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন, তফসিল পুনঃনির্ধারণ নিয়ে যে গুঞ্জন, এসব নিয়ে কোনো প্রশ্নে নেয়নি নির্বাচন কমিশন বা ইউরোপীয় ইউনিয়নের কেউ।
আগামী ৭ জানুয়ারি ভোটের তারিখ ধরে নির্বাচন কমিশন যে তফসিল ঘোষণা করেছে, তাতে মনোনয়নপত্র জমার সময় শেষ হচ্ছে বৃহস্পতিবার। তফসিল প্রত্যাখ্যান করে মঙ্গলবার ও সাপ্তাহিক ছুটির দুটি দিন বিরতি রেখে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো টানা অবরোধ ও হরতাল চালিয়ে যাচ্ছে।
এর মধ্যে বুধবার নির্বাচন কমিশনে যান ঢাকায় ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর রাষ্ট্রদূতরা। বেলা তিনটা থেকে দুই পক্ষে বৈঠক হয় প্রায় দুই ঘণ্টা।
সংসদের ভোট করতে স্থানীয় সরকারের পদ ছাড়লেন ৪৭ জন
‘স্বতন্ত্র’ প্রার্থীদের দলীয় শৃঙ্খলার কথা মনে করালেন হাছান মাহমুদ
তামাশারও শেষ আছে: গণতন্ত্র মঞ্চ
ভোট ঠেকাতে নাশকতা, আমেরিকা নীরব কেন: কাদের
জোটের আসন ভাগাভাগি কীভাবে, অপেক্ষা আরও এক সপ্তাহ
বৈঠকে ঢাকায় ইইউ রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলির নেতৃত্বে সুইডেন, স্পেন, ইতালি, নেদারল্যান্ডস, ডেনমার্ক, ফ্রান্স ও জার্মানির মিশন প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে গণতান্ত্রিক, গ্রহণযোগ্য, শান্তিপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখার আগ্রহের কথা বলেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূতরা। নির্বাচন কমিশনও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এমন একটা নির্বাচন আয়োজনের আশ্বাস দিয়েছে।
ইইউ রাষ্ট্রদূত সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা একটি গণতান্ত্রিক, বিশ্বাসযোগ্য, শান্তিপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখার অপেক্ষায় আছি।”
বৈঠকের বিষয়ে তিনি বলেন, “নির্বাচনের সার্বিক প্রস্তুতি সম্পর্কে আমরা সামগ্রিক বিষয় জেনেছি। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অংশীদার হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ এই নির্বাচনের খুঁটিনাটি জানতে পেরে আমরা আনন্দিত। প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও তার দল খোলামেলা আলোচনায় অংশ নিয়েছেন।”
‘ফুলের মালা’র ১২৩ প্রার্থী ঘোষণা
১২১ আসনে প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করল বিএসপি
বিএনপি নেতাদের নামে মনোনয়ন তোলা হচ্ছে, অথচ তারা জানেনই না: রিজভী
বিএনপি ও তার সঙ্গে থাকা দলগুলোর ভোট বর্জনের ডাকের মধ্যে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন কীভাবে সম্ভব, সে বিষয়ে কোনো প্রশ্ন অবশ্য নেননি ইইউ রাষ্ট্রদূত। আগের জানিয়ে দেন, তারা কোনো প্রশ্নের জবাব দেবেন না।
সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে: সিইসি
পরে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল সাংবাদিকদের বলেন, “ইইউ প্রতিনিধিরা এর আগেও একাধিকবার এসেছেন। সহসাই তাদের একটা এক্সপার্ট ইলেকশন টিম আসবে জানিয়েছেন।
“ইতোমধ্যে তাদের চার জনের এক্সপার্ট (ইলেকশন অবজারভার টিম) এসে গেছেন। তারা দীর্ঘ সময় ধরে আমাদের প্রস্তুতি সম্পর্কে জেনেছেন।
“এর মধ্যে আমাদের প্রস্তুতি এগিয়ে গেছে; এটা তো তারা জানতেন না । আমাদের কী কী অগ্রগতি হয়েছে তা জানিয়েছি।”
গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের বিষয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন যে প্রত্যাশার কথা বলেছে, সে বিষয়ে আশ্বস্ত করেন সিইসিও।
তিনি বলেন, “আমরা আগের মতই স্পষ্ট করে বলেছি, ফ্রি, ফেয়ার, পিসফুল অ্যান্ড ক্রেডিবল নির্বাচন যাতে হয় সেটা নিশ্চিত করতে আমরা সর্বোচ্চ পর্যায়ের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
“আমরা তাদেরকে (ইইউ রাষ্ট্রদূত) জানিয়েছি- আমাদের নির্বাচন কমিশনাররা দুই সপ্তাহ ধরে জেলা, বিভাগীয় পর্যায়ে গেছেন। তারা প্রশাসন, জনগণকে এ বিষয়গুলো অবহিত করছেন, যাতে করে প্রশাসন স্থানীয়ভাবে তাদের সব শক্তিতে সমন্বিত করে; যাতে অবাধ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনটা নিশ্চিত হয়।”
তারেকের নেতৃত্ব মানতে না পেরে ভোটে বিএনপি নেতারা: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
‘বিএনপির কারা ভোটে আসছে দেখে’ কৌশল সাজাবে আওয়ামী লীগ
ইসির অবস্থানে ইইউ সন্তুষ্ট বলেও মনে করেন সিইসি।
তিনি বলেন, “তারা আমাদের বক্তব্যে যতদূর বুঝেছি সন্তুষ্ট হয়েছেন। একটা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্বাচন করতে আমরা আইনত ও সাংবিধানিকভাবে বাধ্য, সেটা আমরা খুব স্পষ্ট করে তাদের বুঝিয়েছি। আমার বিশ্বাস আমাদের এ সাংবিধানিক সীমাবদ্ধতা তারা বুঝতে পেরেছেন।”
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিরোধীদের যে আন্দোলন তাকে ‘রাজনৈতিক বিষয়’ উল্লেখ করে সিইসি জানান, কমিশন নিজেদের এই রাজনৈতিক বিষয়ে সম্পৃক্ত করবে না।
সিইসি বলেন, “আমরা বলেছি-রাজনৈতিক অঙ্গনে যদি কোনো মতবিরোধ, বিভেদ, বিভাজন থাকে, সেখানে কোনোভাবেই আমরা হস্তক্ষেপ করতে পারি না। আমরা নিজেদের সেখানে এনগেজ করতে পারি না।”
Frank and detailed exchange with the Chief Election Commissioner and his team on the prospects of holding free, fair, participatory, and peaceful elections. Instrumental for us diplomats to understand the process and preparations being made. pic.twitter.com/WpF1VGYkTO
— Jan Janowski (@JRJanowski85) November 29, 2023
সিইসি ছাড়াও নির্বাচন কমিশনার আহসান হাবিব খান, রনাশেদা সুলতানা, মো. আলমগীর, মো. আনিছুর রহমান এবং ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম সভায় অংশ নেন।
ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র জমার শেষ সময় ৩০ নভেম্বর, বাছাই ১-৪ ডিসেম্বর ও প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ১৭ ডিসেম্বর।
গৃহবিবাদ নিয়েই ভোটে জাতীয় পার্টি
একরামুজ্জামান ও শাহ আবু জাফরকে বিএনপি থেকে বহিষ্কার
নৌকা না পেয়ে স্বতন্ত্রের মিছিলে আওয়ামী লীগ নেতারা
‘আমরা ও মামুরার’ নির্বাচন: রিজভী
বৈঠক আগেও হয়েছে
বিরোধী জোটের আন্দোলনের মধ্যে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে গত জুলাইয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি প্রাক-নির্বাচনী অনুসন্ধানী দল বাংলাদেশে আসে। দলটি নির্বাচন কমিশনসহ অংশীজনের সঙ্গে বৈঠকও করে।
গত ২১ সেপ্টেম্বর নির্বাচন কমিশন সচিব মো. জাহাংগীর আলম জানান, ‘বাজেট স্বল্পতার’ কথা বলে আগামী নির্বাচন পর্যবেক্ষণে পূর্ণাঙ্গ পর্যবেক্ষক দল না পাঠানোর সিদ্ধান্ত জানায় ইইউ।
তিন দিন পর ২৪ সেপ্টেম্বর সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল ঢাকায় ইইউর রাষ্ট্রদূতকে চিঠির জবাব দেন এবং নির্বাচন পর্যবেক্ষণের আহ্বান জানান। তিনি এতে লেখেন- কমিশন আশা করে, ইইউ ছোট পরিসরে হলেও একটি দল পাঠাবে।
সবশেষ গত ১৯ অক্টোবর নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ জানান, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ইইউর চার সদস্যের কারিগরি বিশেষজ্ঞ দল আসছে নভেম্বরে। দলটি ভোটের আগে পরে মিলিয়ে প্রায় দুই মাস (২১ নভেম্বর থেকে ২১ জানুয়ারি পর্যন্ত) পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে।
ইইউ সদরদপ্তর থেকে এ সংক্রান্ত চিঠি স্থানীয় দূতাবাসের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনে এসেছে বলে জানিয়েছিলেন তিনি।