ওবায়দুল কাদের বলেন, “এখন তো সবাই নীরব। এখন কেউ কিছু বলে না। ইউরোপও কিছু বলে না, আমেরিকাও কিছু বলে না।”
Published : 29 Nov 2023, 03:39 PM
হরতাল-অবরোধের কর্মসূচির মধ্যে যানবাহনে আগুন দিয়ে ‘নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা’ হলেও আন্তর্জাতিক মহল এখন কেন কথা বলছে না, সেই প্রশ্ন রেখেছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেছেন, “নির্বাচনকে যারা বাধাগ্রস্ত করছে, তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আসার কথা। এইসব যে চলছে, এ ব্যাপারে কারো কোনো কথা নেই, কোনো সভ্য গণতান্ত্রিক দেশ অনেক বিষয়ে কথা বলে, কিন্তু এখানে নীরব কেন?
“আমরা শুনেছিলাম আন্তর্জাতিকভাবে, নির্বাচন বাধাগ্রস্ত হবে এমন কোনো কর্মকাণ্ড হলে সেটা নির্বাচনবিরোধী কর্মকাণ্ড বলে বিবেচিত হওয়ার কথা। এখন তো সবাই নীরব। এখন কেউ কিছু বলে না। ইউরোপও কিছু বলে না, আমেরিকাও কিছু বলে না।”
ঢাকার ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে কথা বলছিলেন দলের সাধারণ সম্পাদক কাদের।
বাংলাদেশের আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই সরব যুক্তরাষ্ট্র। গত মে মাসে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করেন। এ নীতির অধীনে বাংলাদেশের ‘গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী’ ব্যক্তিদের যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা না দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়।
এরপর প্রধানমন্ত্রীর নিউ ইয়র্ক সফরের মধ্যেই গত ২২ সেপ্টেম্বর মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার জানান, সেই ভিসা নীতি আরোপ শুরু করেছে তার দেশ। যাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে, তাদের মধ্যে ক্ষমতাসীন এবং বিরোধীদলীয় নেতাকর্মী এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা আছেন। এসব ব্যক্তির পাশাপাশি তাদের পরিবারের সদস্যরাও যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের অযোগ্য হতে পারেন।
নির্বাচন ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের সেই নিষেধাজ্ঞার কথা মনে করিয়ে দিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, “আজকে বাংলাদেশের একটা দল এবং তার দোসররা এখন হরতাল ডাকছে, অবরোধ করছে। তারা প্রকাশ্যে হামলা করে পুলিশ হত্যা করেছে। প্রধান বিচারপতির বাড়িতে হামলা করেছে, এসব কর্মকাণ্ড যারা করছে, তারা তো নির্বাচনকে বাধা দেওয়ার জন্য করছে। আমাদের সংবিধানকে চ্যালেঞ্জ করছে। আমাদের গণতন্ত্রকে চ্যালেঞ্জ করছে। আমাদের স্বাধীন বিচার ব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ করছে। এটার কোনো প্রতিঘাত নেই।”
কাদের বলেন, “এটা কি আন্দোলন? এটা তো নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করা। তারা নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধা দিচ্ছে, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে বাধা দিচ্ছে, তারা গাড়ি পোড়াচ্ছে, ট্রেনে হামলা করছে, প্রতিনিয়ত গাড়িতে অগ্নিসংযোগ, বাসে অগ্নিসংযোগ, এসব ঘটনা ঘটাচ্ছে।…এটা তো নির্বাচনের বিরুদ্ধে, নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য এসব কর্মকাণ্ড করছে।”
‘খবর কি ওয়াশিংটনে পৌছাতে দেরি হচ্ছে?’
আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে ভোটগ্রহণের তারিখ থাকলেও নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার ও ক্ষমতাসীন সরকারের পদত্যাগের দাবিতে এখনও অনড় বিএনপি ও সমমনারা।
গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় সমাবেশের দিনে সংঘর্ষের পর থেকে হরতাল-অবরোধের পুরনো কর্মসূচিতে ফিরেছে বিএনপি। সমমনা দলগুলোও এতে সমর্থন জানিয়েছে। এসব কর্মসূচির মধ্যে সারা দেশে যানবাহনে আগুন ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটছে।
সেতুমন্ত্রী বলেন, “হরতাল অবরোধকে কি কোনোভাবে ঢেকে রাখা যায়? পুলিশ হত্যাকে কি কোনোভাবে ঢেকে রাখা যায়? প্রধান বিচারপতির বাড়িতে হামলা, গাড়িতে আজকে অগ্নি সংযোগ করছে, বাসে আগুন দিচ্ছে, এগুলো কি অন্ধকারে ঢেকে রাখা যাবে? এগুলো তো প্রকাশ্য হচ্ছে।
“আজকের বিশ্বে এখানকার খবর সারা দুনিয়া ছড়িয়ে যেতে কতক্ষণ লাগে? এখানকার কোনো খবর ল্যাটিন আমেরিকার কোনো দেশ বা দক্ষিণ আফ্রিকার কোনো দেশে পৌঁছাতে কি দেরি হচ্ছে? ওয়াশিংটনে পৌঁছাতে দেরি হচ্ছে? এসব নিয়ে তো কোনো কথা আমরা শুনছি না। বাধা দেওয়ার ব্যাপারে দেশে-বিদেশে কত কথা শোনা গেল, এখন প্রকাশ্যে তারা বাধা দিচ্ছে, প্রকাশ্যে তারা নির্বাচনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছে।”
একটি পক্ষ নিজেরাই নির্বাচনের বাইরে আছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “কেউ তাদেরকে বাইরে রাখেনি। আমরা বারবার বলে যাচ্ছি, আমরা চাই না কেউ নির্বাচনে বাইরে থাকুক। আমরা প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ইলেকশন চাই।
“নির্বাচনের একটা সময় সীমা আছে, সেই সময় সীমা অতিক্রম করে তফসিল পরিবর্তন আমরা কখনও সমর্থন করব না। সময়সীমাকে অতিক্রম করবে এমন কোনো পদক্ষেপ, এমন কোনো পরিবর্তন আমরা সমর্থন করব না।”