Published : 04 May 2025, 06:52 PM
ঢাকার ধানমণ্ডির ৫ নম্বর সড়কের ‘মাহবুব ভবন’ এ কয়েকদিন ধরেই চরছে সাজসজ্জা আর গোছানোর কাজ। সাবেক নৌবাহিনী প্রধান রিয়াল অ্যাডমিরাল মাহবুব আলী খানের বাসভবন এটি।
দীর্ঘ প্রায় দেড় যুগ পর দেশে ফিরছেন তার ছোট মেয়ে, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যা্ন তারেক রহমানের স্ত্রী জোবাইদা রহমান। ঢাকায় তিনি উঠবেন বাবার ধানমন্ডির বাড়িতেই।
মঙ্গলবার শাশুড়ি সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সাথে দেশে ফিরবেন জোবাইদা রহমান, যিনি ১৭ বছর আগে ২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর তারেক রহমানের সঙ্গে ঢাকা ছেড়েছিলেন।
‘মাহবুব ভবন’ এ এখন থাকেন মাহবুব আলী খানের স্ত্রী সৈয়দা ইকবাল মান্দ বানু এবং বড় মেয়ে শাহীনা জামান ও তার পরিবারের সদস্যরা। সৈয়দা ইকবাল মান্দ বানু অবশ্য কয়েকদিন আগে রাজধানীর একটি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য আতিকুর রহমান রুমন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমানের ওয়াইফ জোবাইদা রহমান আসবেন এই বাসায়। সেজন্য বাসার সাজসজ্জা, নিরাপত্তা ব্যবস্থা, সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন, পানি-বিদ্যুৎ-গ্যাস, জেনারেটর প্রভৃতির কাজ চলছে।
“উনি আসার আগেই সব কাজ শেষ হবে। উনাকে রিসিভ করার জন্য বাসা প্রস্তুত হয়ে যাবে।”
রুমন ভবনের পুরো কাজ-কর্ম তদারকি করছেন।
তিনি বলেন, “আমাদের চেয়ারম্যান সাহেবের স্ত্রী জোবাইদা রহমানের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে বাসার ভেতরে এবং বাইরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঠিক করেছি। বাসার চারপাশে দেয়ালের ওপরে সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। নিরাপত্তার ব্যবস্থার সাথে জড়িত পুলিশ সদস্য ছাড়া বিএনপি চেয়ারপারসনের সিকিউরিটি ফোর্স (সিএসএফ) সদস্যরাও দায়িত্ব পালন করবেন।”
বাসার আঙিনায় সামনের দিকে রয়েছে ফুলের বাগান। আছে নিরাপত্তায় কর্মীদের জন্য গার্ড রুম।
রুমন বলেন, “বাসভাবনের তিন দিকে বিভিন্ন জনের বাসা-অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেছেন…আমাদেরকে নির্দেশনা দিয়েছেন ‘নিরাপত্তার নামে এমন কিছু করতে যেও না যাতে প্রতিবেশীদের কোনো অসুবিধা হয়, যাতে মানুষজনকে ডিসটার্ব না করা হয়’।
“সবদিক বিবেচনায় রেখে আমরা নিরাপত্তা ব্যবস্থা সাজিয়েছি।”
জোবাইদা রহমানের জন্য আলাদা গাড়ি ও তার নিরাপত্তায় নিয়োজিত সদস্যদের জন্যও গাড়ির ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
গত ৩০ মে বিএনপির চেয়ারপারসনের একান্ত সচিব এবিএম আবদুস সাত্তার পুলিশের মহাপরিদর্শকের কাছে জোবাইদা রহমানের নিরাপত্তার ঝুঁকি রয়েছে জানিয়ে গানম্যান, পুলিশ প্রটেকশন, বাসায় পুলিশ পাহারা, আর্চওয়ে বসানোর জন্য চিঠি দিয়েছেন।
রুমন বলেছেন, পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা ইতিমধ্যে এই বাসভবন দেখে করণীয় ঠিক করে গেছেন।
এক-এগারোর পর জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ২০০৮ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর তারেক রহমান, জোবাইদা রহমান, ইকবাল মান্দ বানুর বিরুদ্ধে কাফরুল থানায় একটি মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন।
ওই মামলায় জুবাইদা রহমানকে ৩ বছরের কারাদণ্ড ও ৩৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড দেয় ঢাকার একটি আদালত।
গত বছর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর জোবাইদা রহমানের ওই সাজা স্থগিত করা হয়।
মাহবুব আলী খানের দুই মেয়ের মধ্যে জোবাইদা রহমানের জন্ম সিলেটে। তবে পড়ালেখা করেছেন ঢাকায়।
মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হওয়ার পর ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন। এমবিবিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ১৯৯৫ সালে বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন সরকারি চিকিৎসক হিসেবে।
জোবাইদা বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বিসিএস-স্বাস্থ্য) পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করেছিলেন।
২০০৮ সালে শিক্ষা ছুটি নিয়ে লন্ডন যাওয়া পর সরকার তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করে। পরে তিনি সেখানকার ইম্পেরিয়াল কলেজ থেকে মেডিসিনে এমএসসি ডিগ্রি নেন।
জোবাইদা রহমানের বাবা রিয়ার অ্যাডমিরাল মাহবুব আলী খান ১৯৭৮ সালের ৪ নভেম্বর থেকে ১৯৮৪ সালের ৬ অগাস্ট পর্যন্ত বাংলাদেশের নৌবাহিনীর প্রধান ছিলেন। এরপর হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সরকারের সময়ে তিনি যোগাযোগ ও কৃষিমন্ত্রী ছিলেন।
বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল এম এ জি ওসমানী জোবাইদা রহমানের চাচা।