“মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের তারিখ ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত আমাদের হাতে সময় আছে। এর মধ্যে আমরা অবজার্ভ করব, মনিটর করব, অ্যাডজাস্ট করব, অ্যাকোমোডেট করব।”
Published : 28 Nov 2023, 03:56 PM
সংসদ নির্বাচনে বিএনপি থেকে কারা কারা ভোটে আসছেন সেটা দেখার পর আওয়ামী লীগ ‘কৌশল সাজাবে’ বলে জানিয়েছেন ক্ষমতাসীন দল দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার তারিখ পেরোলেই বিএনপির ভোটে আসার বিষয়টি স্পষ্ট হবে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
মঙ্গলবার ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগের সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে কাদের বলেন, "বিএনপির কেউ কেউ নির্বাচনে আসতে পারেন। কেউ কেউ প্রস্তুতিও নিচ্ছেন। মনোনয়ন ফরম সেটা তো জমা দেওয়ার লাস্ট ডেট ৩০ তারিখ, কাল বাদে পরশু। এর মধ্যেই তো পরিষ্কার হয়ে যাবে কারা আসলেন।"
নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনে থাকা বিএনপি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের জন্য ঘোষিত তফসিল প্রত্যাখ্যান করেছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ ইতোমধ্যে ২৯৮ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে।
আবার কোনো আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তাদের প্রার্থী যেন বিজয়ী হয়ে না যান, সেজন্য ‘ডামি প্রার্থী’ রাখারও নির্দেশনা এসেছে আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায় থেকে। ফলে মনোনয়ন না পেলেও আওয়ামী লীগের অনেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিচ্ছেন।
এ পরিস্থিতিতে বিদ্রোহী প্রার্থীর ব্যাপারে আওয়ামী লীগ নমনীয় থাকবে কি না জানতে চাইলে দলের সাধারণ সম্পাদক বলেন, "বিএনপির কারা আসে, সবকিছু দেখে আমরা আমাদের কৌশল নির্ধারণ করব।"
৭ জানুয়ারির ভোটে বিএনপিকে আনার কোন কৌশল আওয়ামী লীগের আছে কি না, সেই প্রশ্নের উত্তরে কাদের বলেন, "আনার কৌশল আমাদের নেই। তারা (বিএনপি) এলে আমাদের আপত্তি নেই। তারা এলে স্বাগতম।"
কুষ্টিয়া-২ ও নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন ফাঁকা রেখে ২৯৮ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে আওয়ামী লীগ। আবার গত তিনটি জাতীয় নির্বাচনের মত এবারও জোটবদ্ধ নির্বাচনের সিদ্ধান্ত জানিয়েছে তারা। তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ এর আগে বলেছেন, জোটভুক্ত দলগুলোর সঙ্গে সমঝোতার পর আসন সমন্বয় করা হবে।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ওবায়দুল কাদের বলেন, "তারা কারা কারা প্রার্থী সেটা আমরা দেখি। আমাদের হাতে কিন্তু সময় আছে। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের তারিখ ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত আমাদের হাতে সময় আছে। এর মধ্যে আমরা অবজার্ভ করব, মনিটর করব, অ্যাডজাস্ট করব, অ্যাকোমোডেট করব। ডামি ক্যান্ডিডেটের ব্যাপারেও বিষয়টা এরকম, ১৭ তারিখের মধ্যে সবকিছু ফাইনাল হয়ে যাবে।"
জোটের সঙ্গে সমঝোতা হলে আওয়ামী লীগ কত আসনে প্রার্থী দেবে জানতে চাইলে কাদের বলেন, "একটা কথা বলি, আমরা ৩০০ আসনেই নৌকা দেব। অ্যাডজাস্টমেন্ট যখন হবে, তখন ছেড়ে দেবো। কোনো অসুবিধা নেই।"
আসনে আসনে স্বতন্ত্র হিসেবে মনোনয়নপত্র নেওয়া দলীয় প্রার্থীদের নিয়ে আওয়ামী লীগের তৃণমূলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে কী না- এ প্রশ্নে দলের সাধারণ সম্পাদক বলেন, কারা কারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে চাইছেন, তা দেখেশুনে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় তাদের হাতে আছে।
“নির্বাচন ফ্রি স্টাইলে হবে না। আমরা দেখি কারা কারা চাইছে। এর মধ্যে আমাদেরও একটা সিদ্ধান্ত আছে। আমাদের একটা কৌশলগত সিদ্ধান্ত আছে। সে সিদ্ধান্তের জন্য ১৭ তারিখ পর্যন্ত আমাদের হাতে সময় আছে। এর মধ্যেই আমরা পরিবর্তন, পরিবর্ধন, সংশোধন, সংযোজন, অ্যাকোমোডেশন সব কিছু করতে পারি।"
স্বতন্ত্র প্রার্থীরা পরে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালে ফের ‘প্রতিদ্বন্দ্বীহীন’ নির্বাচন হতে যাচ্ছে কী না জানতে চাইলে কাদের বলেন,”প্রথমেই নেগেটিভ ভাবছেন কেন? পজিটিভও থাকতে পারে। পরে আমরা যখন সিদ্ধান্ত নেব, তখন আপনি দেখবেন আমরা কি সিদ্ধান্ত নিই। সেটার ওপর আপনি মন্তব্য করতে পারেন। এখন বিষয়টাকে আমরা ‘না’ বোধক ভাবে দেখব কেন? ঘটনাটা ঘটে যাক, তারপর আমরা কমেন্ট করব।"
কাদেরের কাছে সাংবাদিকদের প্রশ্ন ছিল, আওয়ামী লীগ একেক আসনে একেক কৌশল নিচ্ছে কি না।
এক্ষেত্রেও তিনি ‘কৌশলগত’ সিদ্ধান্ত আছে জানিয়ে বলেন, "দলের কৌশল তো থাকবেই। আমাদের কৌশলগত দিক তো থাকবেই। আমরা ইলেকশন করছি, আমরা একটা রাজনৈতিক দল আমাদের কৌশলগত দিক তো থাকবেই।"
নির্বাচন নিয়ে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ও সিইসির মন্তব্যের ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, "প্রথম কথা হচ্ছে, দ্বাদশ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিভিন্নজন বিভিন্নভাবে মন্তব্য করছে। বিদেশি বন্ধুরাও এখানে পরিস্থিতি অবজার্ভ করছে। ইতোমধ্যে ১০০ পর্যবেক্ষক আসবে এমন আভাস আমরা পাচ্ছি। সংখ্যাটা আরও বাড়তে পারে। এখানে নানা মানুষের নানা মত থাকবেই।
“আমাদের টার্গেট হল একটা পিসফুল, ফ্রী, ফেয়ার, ক্রেডিবল ইলেকশন করা। ইলেকশন চলাকালে বিভিন্ন মানুষ বিভিন্ন কথা বলতে পারে। এখন আল্টিমেটলি আমরাও একটা পিসফুল ইলেকশন দিয়ে সবাইকে দেখিয়ে দিতে চাই আমরা ফ্রি, ফেয়ার ইলেকশনের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেছি। তারপর অনেক সমালোচনায় হয়ত বন্ধ হয়ে যাবে।“
নির্বাচন সুন্দরভাবে হয়ে যাওযার পর ভোট নিয়ে যাবতীয় সমালোচনা-জল্পনা-কল্পনার ‘অবসান ঘটবে’ জানিয়ে কাদের বলেন, “ভোট নিয়ে সিইসি কি বলছেন সেটা আপনি তাকে জিজ্ঞেস করুন। সিইসির মন্তব্যের ব্যাপারে আমাদের কিছু বলার নেই।"
সংসদ নির্বাচন ঘিরে বিরোধীদলীয় নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা ‘ক্ষমতাসীনদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে’ বলে বিবৃতি দিয়েছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। নির্বাচন ঘিরে ঘটে যাওয়া নানা ধরনের সহিংসতার নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করেছে তারা।
আবার দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ‘বাইরের থাবা এসেছে’ মন্তব্য করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, দেশের অর্থনীতি ও ভবিষ্যৎ বাঁচাতে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে হবে, এর কোনো বিকল্প নেই।
নির্বাচনী বিধি মানতে প্রার্থী ও দলীয় নেতা কর্মীদের শেখ হাসিনা সবাইকে নির্দেশনা দিয়েছেন জানিয়ে কাদের বলেন, “ সবাইকে আচরণ বিধি মেনে চলার জন্য, বিশেষ করে কাল পরশু মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার ব্যাপার আছে, এখন সেখানে একটা শোডাউন বা গ্যাদারিং করে যেটা নির্বাচন কমিশনের আচরণ বিধির পরিপন্থি হয় এমন কিছু করা যাবে না।"