“এরা বাংলাদেশের মানুষের টাকা চুরি করে বাইরে গিয়ে মোজ-ফুর্তি করছেন। তাদের ফেরানো অবশ্যই আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। এই কাজটা আমরা করব,” বলেন তিনি।
Published : 21 Apr 2025, 07:09 PM
দুর্নীতি, হত্যা মামলা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে বিদেশে পালিয়ে থাকা আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক মন্ত্রীদের ফিরিয়ে আনতে সরকারের পদক্ষেপের অংশ হিসেবে ‘প্রত্যাবাসন’ চাওয়া হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
তিনি বলেন, “যারা যারাই অভিযুক্ত, যাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ, খুনের মামলা আছে তাদের ব্যাপারে আমরা সিরিয়াস এবং প্রত্যেকের আমরা প্রত্যাবাসন চাইব। তাদের বাংলাদেশের আইনের মুখোমুখি হতে হবে। তাদের আইনের আওতায় আনা আমাদের এবং পরবর্তী সরকারের নৈতিক দায়িত্ব।”
সোমবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে প্রেস সচিবের কাছে ওই সাংবাদিক প্রশ্ন রাখেন– সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সম্প্রতি কয়েকটি ছবি দেখেছি, যেখানে পলাতক শেখ হাসিনা সরকারের মন্ত্রীরা লন্ডনে বিয়ের অনুষ্ঠানে ভোজে অংশ নিচ্ছেন, বিভিন্ন দেশে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। শেখ হাসিনাকে তো ফেরত চাওয়া হয়েছে– এই পলাতক মন্ত্রীদের ফেরত আনার ব্যাপারে আপনারা কী পদক্ষেপ নিয়েছেন?
এর জবাবে পলাতক নেতাদের ‘দুর্নীতিবাজ’ আখ্যা দিয়ে প্রেস সচিব আরও বলেন, “এরা বাংলাদেশের মানুষের টাকা চুরি করে বাইরে গিয়ে মোজ-ফুর্তি করছেন। তাদের ফেরানো অবশ্যই আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। এই কাজটা আমরা করব।”
বিদেশে পালিয়ে যাওয়া বেশির ভাগ আওয়ামী লীগের নেতার হাতে ‘রক্ত লেগে আছে’ অভিযোগ করে তিনি বলেন, “তারা মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে অভিযুক্ত। বড় বড় দুর্নীতিতে যুক্ত।”
নারী সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবের বিষয়ে ইসলামপন্থি দলগুলোর আপত্তির বিষয়ে শফিকুল আলম বলেন, “প্রতিবেদনটি ঐকমত্য কমিশনে যাবে। তা নিয়ে তারা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কথা বলবেন। কারণ অনেকগুলো বিষয় রাজনৈতিকভাবে আলাপ-আলোচনার বিষয়। রাজনৈতিক দলগুলোই সিদ্ধান্ত নেবে আমরা প্রতিবেদনের কতটুকু নেব, কতটুকু নেব না।”
সন্ধ্যায় কাতার সফরে যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা
’আর্থনা’ সম্মেলনে অংশ নিতে প্রধান উপদেষ্টা সোমবার সন্ধ্যা ৭টায় কাতারের উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করবেন। ২৪ এপ্রিল মধ্যরাতের পর তার দেশে ফেরার সুচি রয়েছে।
এ সফরের বিষয়ে প্রেস সচিব বলেন, এ সফরে কাতারের সঙ্গে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দ্বিপক্ষীয় বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে।
সফরে জ্বালানি উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান যাবেন তুলে ধরে তিনি বলেন, “কাতারের সঙ্গে আমাদের এলএনজি নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি রয়েছে। ভিসা সংক্রান্ত ইস্যু নিয়ে আলাপ করবেন। এছাড়া অর্থনৈতিক সহযোগিতা নিয়েও আলাপ হবে। কাতারের উদ্যোক্তাদের নিয়ে ২৩ এপ্রিল বাণিজ্য সম্মেলন হবে, আশা করি সাড়া পাব।”
প্রধান উপদেষ্টা আল-জাজিরাকে সাক্ষাৎকার দেবেন বলেও তুলে ধরেন তিনি।
কাতারে রোহিঙ্গাদের নিয়ে আড়াই ঘণ্টার একটি সম্মেলন হবে, এমন তথ্য দিয়ে তিনি বলেন, ”প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে সম্মেলনে রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে সম্পৃক্ত অনেকেই অংশ নেবেন। আশা করি ফলপ্রসূ বৈঠক হবে। আগামী সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে অনুষ্ঠিত রোহিঙ্গা সম্মেলনের প্রাক-প্রস্তুতি বৈঠক এটি।”
কাতার প্রবাসী বাংলাদেশি শ্রমিকদের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা হবে কি না জানতে চাইলে প্রেস সচিব বলেন, ''এ পরিকল্পনা আমাদের অনেক দিন ধরেই আছে। এ বিষয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে কথা বলছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী। যাতে করে দেশটির বাজার আমাদের জন্য উন্মুক্ত হয়। আরও শ্রমিক বাংলাদেশ থেকে নেয়, সে বিষয়ে আমরা দেখছি।
”একইভাবে অন্যান্য যেসব দেশে আমাদের ভাই-বোনেরা কাজ পেতে পারেন তা নিয়ে কাজ করছি।''
শ্রমবাজারগুলোতে আরও ভালো বেতনে, বেশি সংখ্যক কর্মী যাতে যেতে পারেন সেটা সরকারের অগ্রাধিকার বলে তুলে ধরেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার উপপ্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার, সিনিয়র সহকারী প্রেস সচিব ফয়েজ আহম্মদ ও সহকারী প্রেস সচিব সুচিস্মিতা তিথি।