Published : 28 Nov 2023, 09:45 PM
জালিয়াতি করে বিএনপি নেতাদের নামে নির্বাচন কমিশন থেকে মনোনয়পত্র তোলা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেন, “ন্যাশনাল আইডি কার্ডের মাধ্যমে তারা (ক্ষমতাসীনরা) প্রতারণা করার চেষ্টা করছে। এই ন্যাশনাল আইডি কার্ড, যার তিনি জানেন না… যেহেতু সকল তথ্য সরকারের হাতে, অতএব এটার মাধ্যমে মনোনয়ন ফরম কিনছে বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের নামে।
“অথচ তারা এটা জানেই না। কারণ এনআইডির কর্তৃত্ব তো সরকার তথা শেখ হাসিনার হাতে। এটিকে তিনি (শেখ হাসিনা) ব্যবহার করছেন মহাজালিয়াতি করার জন্য।”
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ভার্চুয়ালি সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছিলেন রিজভী।
তিনি বলেন, “নারায়নগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা গিয়াস উদ্দিন সাহেব তিনি জানেন না- তার নাম দিয়ে, হ্যাক করা ন্যাশনাল আইডি কার্ড নিয়ে তার ফরম তোলা হয়েছে। পরে তিনি সাংবাদিক সম্মেলন করে এর প্রতিবাদ জানিয়েছেন।”
গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির সমাবেশ ঘিরে সংঘর্ষের পর শীর্ষ নেতাদের অনেকে গ্রেপ্তার হয়ে কারাবন্দি আছেন, বাকিরা আছেন আত্মগোপনে। রিজভীও আত্মগোপনে থেকে দলের মুখপাত্রের ভূমিকা পালন করছেন।
তিনি বলেছেন, “শেখ হাসিনা বাংলাদেশে এক দীর্ঘমেয়াদি সংকটের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন শুধুমাত্র তার ব্যক্তিগত ইচ্ছায়, শুধুমাত্র তার ব্যক্তিগতভাবে ক্ষমতা কুক্ষিগত রাখা… একধরনের মানসিক রোগ থেকে তিনি এই কাজটি করছেন।
“ন্যূনতম যদি গণতন্ত্রের প্রতি তার আস্থা থাকত, গণতন্ত্রের প্রতি যদি আনুগত্য থাকত, গণতন্ত্রের যে সারবত্তা- তার যে উপাদানগুলো, এটির প্রতি যদি উনার ন্যূনতম শ্রদ্ধাবোধ থাকতো, তাহলে আজকে জোর করে জনগণকে থেঁতলে, জনগণকে দুর্মুজপিটা করে তিনি ক্ষমতায় রয়েছেন এবং এটা থাকতে গিয়ে তিনি হত্যা করা থেকে শুরু করে, রক্তপাত থেকে শুরু করে সবকিছুই তিনি করে যাচ্ছেন।”
রিজভী বলেন, “একটাই উদ্দেশ্য তোরা যে যা বলিস ভাই আমার সোনার হরিণ চাই। অর্থাৎ ক্ষমতার সোনার হরিণ তিনি তো ধরেনই রেখেছেন…এটা যাতে এখন পিছলে না যায়, এটা যেন সবাইকে চমকে দিয়ে বেরিয়ে না পড়ে- এই আশঙ্কায় তিনি আরও বেশি নির্মম, আরও বেশি নির্দয়, আরও বেশি নিষ্ঠুর হয়ে পড়েছেন। এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে শেখ হাসিনা সেই তাণ্ডবই চালাচ্ছেন তার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে।”
গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় সংঘর্ষের পর বিএনপির সমাবেশ ভণ্ডুল হয়ে যায়।
সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে রিজভী বলেন, “আমাদের শান্তিপূর্ণ মহাসমাবেশ ছিল। সমগ্র মানুষ জানে, ওইদিনের নাশকতার সাথে পুলিশের কর্মকর্তারা জড়িত, তারা প্রত্যক্ষভাবে এর মধ্যে জড়িত ছিলেন। ফকিরাপুল অথবা অন্যান্য জায়গায় যেখানে দিয়ে মিছিল আসছিল, ওদিকটাই গোলমাল হয়নি কেনো? এটা কি পূর্বপরিকল্পিত নয়, এটা কি পাতানো ঘটনা নয়?
“আওয়ামী লীগের কয়েকটি ট্রাক ওদিক থেকে যেতে দেওয়া হলো কেন? আসলে একটি নাশকতার ঘটনা ঘটিয়ে দায় চাপিয়ে বিএনপির সমাবেশকে পণ্ড করা… কিভাবে দায় চাপিয়ে এসব ঘটনা ১৫ বছর যাবৎ এই সরকার করে যাচ্ছে, সেটা দেশের জনগণ ও বিশ্বের গণতান্ত্রিক দেশগুলো জানে।”
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রিজভীর ভাষ্য, গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে দলটির অন্তত ৩৩৫ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
“৯টি মিথ্যা মামলায় ১ হাজার ১৩৫ জনের অধিক নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে।”
বুধবার ভোর থেকে যে অবরোধ কর্মসূচি শুরু হবে এবং পরদিন বৃহস্পতিবার সকাল-সন্ধ্যা হরতালের যে কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে তা সফল করতে সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টুর ফেনীর গ্রামের বাড়িতে বোমা নিক্ষেপের ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছেন রিজবী। একইসঙ্গে রাজধানীর লালবাগে একটি মামলায় দলের অর্ধশত নেতাকর্মীর ‘ফরমায়েশি’ রায়ে সাজা হওয়ার ঘটনার নিন্দা জানান রিজভী।