Published : 29 Nov 2023, 04:48 PM
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে স্থানীয় সরকারের পদে থাকা ৪৭ জন পদত্যাগ করেছেন। এদের মধ্যে করতে ৪৩ জনই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। বাকি চার জনের ৩ জন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবং একজন সদস্য।
স্থানীয় সরকার বিভাগ বুধবার বিকাল পর্যন্ত এদের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করে তাদের পদ শূন্য ঘোষণা প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।
যারা ভোটে দাঁড়ানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন, তাদের মধ্যে কেউ কেউ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন, কেউ কেউ অংশ নেবেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে।
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী, সরকারের লাভজনক পদে থেকে সংসদ সদস্য পদে প্রার্থী হওয়া যায় না। আইন অনুযায়ী স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের জনপ্রতিনিধির পদগুলো লাভজনক। ফলে পদত্যাগ না করে কারও পক্ষে ভোটে দাঁড়ানো সম্ভব নয়।
আগামী ৭ জানুয়ারি ভোট ধরে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের যে তফসিল ঘোষণা হয়েছে, তাতে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া যাবে। এরই মধ্যে অনেকেই মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন, বাকিদের পক্ষেও তোলা হয়েছে।
বুধবার বিকাল পর্যন্ত চট্টগ্রাম বিভাগে সবচেয়ে বেশি ১১ জন, ঢাকা বিভাগে ১০ জন, রাজশাহী বিভাগের ৬ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ৫, খুলনা ও রংপুর বিভাগে ৪ জন করে, সিলেট বিভাগে ২ জন এবং বরিশাল বিভাগে একজন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদত্যাগ করেছেন।
কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট ও হবিগঞ্জের জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এবং যশোর জেলা পরিষদের একজন সদস্যও পদ ছেড়েছেন।
স্থানীয় সরকার বিভাগের যুগ্মসচিব মো. মাসুম পাটওয়ারী বুধবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তাদের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করে পদ শূন্য দেখিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। যেসব উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান প্যানেল-১ এর দায়িত্ব আছেন তারা চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকবেন। আর যেসব উপজেলায় প্যানেল করা নেই সেখানে প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে নতুন কাউকে দায়িত্ব দেওয়া হবে।”
পদত্যাগ করলেন যারা
ঢাকা বিভাগে যারা পদত্যাগ করেছেন, তাদের মধ্যে ঢাকা ও আশেপাশের জেলার মধ্যে আছেন ধামরাই উপজেলার মো. মোহাদ্দেছ হোসেন, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার মো. শাহজাহান ভূঁইয়া, মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার মহিউদ্দিন আহমেদ, মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার মুশফিকুর রহমান খান।
এদের মধ্যে সিরাজদিখানের মহিউদ্দিন আহমেদ মুন্সীগঞ্জ-১ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন। গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সমর্থনে এখান থেকে জেতেন বিকল্পধারার মাহী বি চৌধুরী।
গোপালগঞ্জের মকসুদপুর উপজেলার মো. কাবির মিয়া, রাজবাড়ীর সদর উপজেলার মো. ইমদাদুল হক বিশ্বাস, নরসিংদীর মনোহরদী উপজেলার মো. সাইফুল ইসলাম খান বীরু, কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলার মো. নাসিরুল ইসলাম খানও পদত্যাগ করেছেন।
করিমগঞ্জ উপজেলাটি কিশোরগঞ্জ-৩ আসনে পড়েছে। এটি জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক মুজিবুল হক চুন্নুর আসন। গত তিনটি নির্বাচনে সেখানে আওয়ামী লীগ তাকে সমর্থন দিয়েছে। এবার সেখানে প্রার্থী করা হয়েছে নাসিরুলকে।
ঢাকা বিভাগে পদত্যাগী অন্য দুই উপজেলা চেয়ারম্যান হলেন টাঙ্গাইলের গোপালপুরের মো. ইউনুস ইসলাম তালুকদার ও মির্জাপুরের মীর এনায়েত হোসেন মন্টু।
চট্টগ্রাম বিভাগের মধ্যে চট্টগ্রামের উপজেলা চেয়ারম্যান আছেন চারজন। এরা হলেন সীতাকুণ্ডর এস এম আল মামুন, সাতকানিয়ার আব্দুল মোতালেব, পটিয়ার মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী এবং চন্দনাইশের মোহাম্মদ আবদুল জব্বার চৌধুরী।
এদের মধ্যে এস এম আল মামুন চট্টগ্রাম-৪ আসনে এবার নৌকা প্রতীক নিয়ে লড়বেন।
পদত্যাগীদের মধ্যে কুমিল্লা, চাঁদপুর ও কক্সবাজারের দুইজন করে উপজেলা চেয়ারম্যান আছেন। এরা হলেন কুমিল্লার দেবিদ্বারের মো. আবুল কালাম আজাদ ও চৌদ্দগ্রামের আবদুস ছোবহান ভূঁইয়া; চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জের মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম ও হাজিগঞ্জের গাজী মাঈনুদ্দিন এবং কক্সবাজারের মহেশখালীর মোহাম্মদ শরীফ বাদশা ও রামুর সোহেল সরওয়ার কাজল।
পদ ছেড়েছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার ফিরোজুর রহমানও।
রাজশাহী বিভাগে যারা পদ ছেড়েছেন তাদের মধ্যে দুই জন করে আছেন সিরাজগঞ্জ ও বগুড়ার।
এরা হলেন সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার মো. শফিকুল ইসলাম ও বেলকুচির মো. নুরুল ইসলাম সাজেদুল এবং বগুড়ার শেরপুরের মজিবুর রহমান মজনু ও আদমদীঘির মো. সিরাজুল ইসলাম খান রাজু।
উল্লাপাড়ার পদত্যাগী চেয়ারম্যান সিরাজগঞ্জ-৪ আসনে পেয়েছেন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন। শেরপুরের মজিবুর রহমান মজনু বগুড়া-৫ আসনে নৌকার প্রার্থী হচ্ছেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জের সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও পাবনার চাটমোহরের মো. আব্দুল হামিদও সংসদ নির্বাচনে দাঁড়াতে ছেড়েছেন উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ।
সর্বউত্তরের রংপুর বিভাগে ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার মো. আলী আসলাম, নীলফামারীর সৈয়দপুরের মো. মোখলেছেদুল মোমিন, রংপুরের মিঠাপুকুরের মো. জাকির হোসেন সরকার ও গাইবান্ধার সদর উপজেলার শাহ সারোয়ার কবীরও পদ ছেড়েছেন।
ময়মনসিংহ বিভাগে ময়মনসিংহ জেলার মুক্তাগাছার মো. আব্দুল হাই আকন্দ ও ঈশ্বরগঞ্জের মাহমুদ হাসান সুমন ছেড়েছেন পদ।
ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলাটি ময়মনসিংহ-৮ সংসদীয় আসনে পড়েছে। সেখানে গত তিনটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থন দিয়েছে জাতীয় পার্টির ফখরুল ইমামকে। এবার আওয়ামী লীগ সেখানে প্রার্থী করেছে আবদুস সাত্তারকে। তবে মাহমুদ হাসান সুমন সেখানে মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। গত নির্বাচনেও তিনি নৌকা চেয়েছিলেন।
শেরপুরের শ্রীবরদীর এ ডি এম শহিদুল ইসলাম ও ঝিনাইগাতীর এস এম আব্দুল্লাহেল ওয়ারেজ নাইম ও নেত্রকোণার দুর্গাপূর উপজেলার জান্নাতুল ফেরদৌসের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করে পদ শূন্য ঘোষণা করেছে স্থানীয় সরকার বিভাগ।
শ্রীবরদীর এ ডি এম শহিদুল ইসলাম এবার শেরপুর-৩ আসনে আওয়ামী লীগর মনোনয়ন পেয়েছেন।
খুলনা বিভাগে মেহেরপুর সদর উপজেলার মো. ইয়ারুল ইসলাম, সাতক্ষীরা সদরের মো. আসাদুজ্জামান বাবু ও শ্যামনগর উপজেলার এস এম আতাউল হক, কুষ্টিয়ার মিরপুরের মো. কামারুল আরেফিন পদত্যাগ করেছেন।
আসাদুজ্জামান বাবু এবার সাতক্ষীরা-২ আসনে এবং আতাউল হক সাতক্ষীরা-৪ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন।
সিলেট বিভাগে সুনামগঞ্জের শাল্লার চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মাহমুদ, মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার এ কে এম শফি আহমদ (সলমান) পদত্যাগ করেছেন।
বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শামসূল আলমও পদ ছেড়ে সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
এছাড়া কুড়িগ্রামের জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. জাফর আলী, লালমনিরহাট জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. মতিয়ার রহমান, হবিগঞ্জ জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. মুশফিক হুসেন চৌধুরী এবং যশোর জেলা পরিষদের সদস্য মো. আজিজুল ইসলাম পদত্যাগপত্র গ্রহণ করে পদ শূন্য দেখিয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগ।
এদের মধ্যে জাফর আলী কুড়িগ্রাম-২ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন, লালমনিরহাট-৩ আসনে পেয়েছেন মতিয়ার রহমান, হবিগঞ্জ-১ আসনে পেয়েছেন মুশফিক হুসেন চৌধুরী।